দুই বাংলার আমেজ পেতে ঘুরে আসুন 'বাবুমশাই হেরিটেজ' থেকে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

থিমভিত্তিক রেস্তোরাঁর প্রতি নগরবাসী একধরনের আলাদা টান অনুভব করে। ঢাকার কলাবাগানের ‘বাবুমশাই হেরিটেজ’–এর খাবার আর আবহ যেন ওপার বাংলার বইয়ের পাতাগুলোর জীবন্ত রূপ। সঙ্গে রয়েছে খাঁটি বাংলাদেশি কিশ আর্টের ছোঁয়া। রেস্তোরাঁয় বাজতে থাকা আবহসংগীত আর অন্দরসজ্জায় একবার হলেও মনে হবে যেন বাংলা সাহিত্য আর চলচ্চিত্রের মহারাজা সত্যজিৎ রায়ের গল্প বা ছবির কোনো মহলে ঢুকে পড়া হয়েছে বা জাদুর দরজা দিয়ে কলকাতার কোনো রেস্তোরাঁয় চলে যাওয়া হয়েছে। এদিকে আমাদের খাঁটি বাংলাদেশি রিকশা আর্ট আর ভিনটেজ সাজসজ্জার পরিবেশের সঙ্গে পরিবেশিত খাবারে ওপার বাংলার ছোঁয়া—সব মিলে জবরদস্ত এক কম্বিনেশন এই ‘বাবুমশাই হেরিটেজ’।

রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই বিশাল ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই, মাত্র ২৬ মে যাত্রা শুরু হয়েছে বাবুমশাই হেরিটেজের। ১৮ শতকের দিকে বাঙালিদের মধ্যে ‘বাবু’ শ্রেণির বেশ উত্থান ঘটেছিল, যাঁদের অবস্থান ছিল মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত পর্যায়ে। ব্রিটিশ সরকারের কাছেও সেই সম্বোধনেই পরিচিত ‘আপিসে’ চাকরি করা বাঙালি বাবুমশাইদের নস্টালজিয়া থেকেই রেস্তোরাঁটির নামকরণ।

বিজ্ঞাপন

ফটোজেনিক ও নান্দনিক অন্দরসজ্জা

রেস্তোরাঁয় ঢোকার পরই যে জিনিসটি মুগ্ধ করবে, তা হলো বাবুমশাই হেরিটেজের অন্দরসজ্জা। দেশীয় রিকশা আর্টে ঝুলছে হারিকেন, কেটলি, ৮০ দশকের সুইচবোর্ড, ৯০ দশকের ল্যান্ডলাইন ফোন। সারাক্ষণ বাজতে থাকে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুর করা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় ব্যবহৃত আবহসংগীত। দেয়ালের শোভা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর বিভিন্ন চলচ্চিত্রের পোস্টার।

এক কোনায় রাখা হয়েছে কলকাতার সেই বিখ্যাত টানা রিকশা। সেখানে লেগে থাকে সেলফি তোলার ধুম। কবিতা ও গানের বিভিন্ন লাইনের পাশাপাশি কাঠের তাকে পুরোনো কিছু ক্যামেরা, টাইপরাইটার, রেডিও, মাটির গরুর গাড়ি, খেলনা ঢেঁকি, টেপা পুতুল ইত্যাদি দেয়ালের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ। ভারী সোফা বা কাঠের চেয়ারের বদলে স্থান পেয়েছে বেতের চেয়ার, কাঠের টেবিল। এখানে খাবার পরিবেশন করা হয় মাটির তৈজসে।

বিজ্ঞাপন

দেয়ালে বাবুমশাই আর সুরমিলার গল্প

বাবুমশাই হেরিটেজের দেয়ালচিত্রে আছে বাবুমশাই আর সুরমিলার গল্প। রেস্তোরাঁয় ঢুকেই বাঁ পাশের দেয়ালে আঁকা হয়েছে সুরমিলা আর বাবুমশাইয়ের বিয়ের আগের প্রেমময় দৃশ্য। তাঁদের শুভ প্রণয়ের পরের ছবিটি আঁকা আছে ভেতরের আরেকটি কক্ষের দেয়ালে। তৃতীয় দৃশ্যেই দেখায় যায় সুরমিলা বাবুমশাইয়ের ঘরের কাজ করছেন হাতপাখা আর বটি নিয়ে এলো চুলে, তাঁর শাড়ির আঁচলও মাটিতে লুটিয়ে আছে। বাঙালি সংসারের এই রোজনামচার গল্প বড়ই হৃদয়গ্রাহী।

বাবুমশাইয়ের খাবারদাবার

খাবারে কলকাতার স্বাদ রাখতে বাবুমশাই হেরিটেজ-এ ওপার বাংলার রন্ধনপ্রণালিতে প্রশিক্ষিত রন্ধনশিল্পীই এখানে সব রাঁধেন। বাবুমশাই হেরিটেজে বাংলাদেশের ফ্লেভারে ইলিশ–খিচুড়ি, চুই–খিচুড়ি থেকে শুরু করে ওপার বাংলার আমেজ দেওয়া লুচি–আলুর দম, লুচি–কষা মাংস, ডাব–চিংড়ি, চিকেন কাটলেট, ফিশ কাটলেট, কফি হাউজ স্পেশাল স্যান্ডউইচ—এমন সব মজার খাবার মিলছে বেশ সুলভে। বিশেষ করে এখানকার ডাব–চিংড়ি চেখে দেখছেন সবাই।

অতিথি নারায়ণ

খাবারকে যদি আসল ধরা হয়, তবে অতিরিক্ত মুনাফা হচ্ছে আপ্যায়ন। রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী শাকির জামান ও তাঁর মা—দুজনই মেহমানের মতো আপ্যায়ন করে যান অচেনা খাবারপ্রেমীদের। বাংলার ঘরে ঘরে যেমন অতিথিদের নারায়ণ মেনে সেবা করা হয়, এই রেস্তোরাঁয়ও সেই প্রতিচ্ছবিই পাওয়া যাবে।

বাড়তি পাওনা

তা ছাড়া বাবুমশাই হেরিটেজে রয়েছে ছোট একটি বুটিক। সেখানে দেখা মিলবে দেশীয় পোশাকের। তাঁতের আর হাতে কাজ করা কাপড় জায়গা পেয়েছে এই বুটিকে। একটি কর্নারে রয়েছে বেশ কিছু পাখিও। ক্রমাগত পশ্চিমাকরণের কবলে পড়া এই নগরীতে বাঙালিয়ানায় পরিপূর্ণ এই রেস্তোরাঁর মজার খাবার আর মুগ্ধ করা পরিবেশে আকৃষ্ট হয়ে সেখানে রোজই ছুটছেন ভোজনরসিক মানুষজন।

ছবি : কানিজ ফাতেমা ও বাবুমশাই

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১৩: ৩০
বিজ্ঞাপন