
প্রিয়জনদের সঙ্গে আমরা অনেক সময় সহজেই রাগ দেখাই, অথচ অপরিচিতদের সঙ্গে থাকি শান্ত। সম্পর্ক কোচ কাইল কক্স বলছেন, এর পেছনে আছে মস্তিষ্কের তিনটি কারণ। ইমোশনাল সেফটি, প্রক্সিমিটি ট্রিগার ও স্ট্রেস রিলিজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রিয়জনের সঙ্গে বেশি রাগ দেখানো মানেই সম্পর্কের অবনতি নয়, বরং মানসিক চাপ মুক্তি ও আস্থার প্রকাশও হতে পারে।

প্রিয়জনের সঙ্গে মস্তিষ্কের আচরণ আলাদা হয়। কক্স বলেন, “আপনার মস্তিষ্ক জানে-এই মানুষগুলো আপনাকে ছেড়ে যাবে না, তাই সামাজিক মুখোশ খুলে ফেলে। অপরিচিতদের সঙ্গে আমরা সব কথা ফিল্টার করি, কারণ মনের অজান্তেই অনিশ্চয়তা ও ভয় কাজ করে।”
পরিবার, সঙ্গী বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণেই আপনি নিজের সম্পূর্ণ আবেগ প্রকাশ করতে পারেন, যা কখনো কখনো রাগ বা ঝাঁজালো কথার রূপ নেয়। কিন্তু অপরিচিতদের সামনে আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে একধরনের ‘ভদ্রতা মোড’ চালু থাকে সব সময়। অর্থাৎ তখন আবেগও ফ্লিটার হয়ে প্রকাশ পায়।

দ্বিতীয় কারণটি হলো ‘প্রক্সিমিটি ট্রিগার অ্যাকিউমুলেশন’। কক্সের ভাষায়, “প্রতিদিন যাদের সঙ্গে দেখা হয় বা আমরা যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করি। তাদের ছোট ছোট বিরক্তিকর অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের ‘লাইব্রেরি’তে জমা হয়। ফলে তাদের কোনো পুরোনো অভ্যাস যেমন খাবার চিবানোর শব্দ, নাক ডাকা ইত্যাদি সহজেই বিরক্তি বাড়ায়।”
অপরিচিত কারও একই অভ্যাস প্রথমবার দেখলেও আপনার তেমন প্রতিক্রিয়া হয় না, কিন্তু প্রিয়জনের ক্ষেত্রে দিনের পর দিন সেই অভ্যাসের ‘স্ট্যাক’ জমতে জমতে একসময় রাগ বিস্ফোরণ ঘটায়।

তৃতীয় কারণটা অবাক করার মতো। কক্স জানান, “কখনো কখনো আপনি প্রিয়জনকে স্ট্রেস রিলিজের নিরাপদ জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন। ঝগড়া করে মনের চাপ কমিয়ে ফেললে শরীরের স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয় এবং পরে কাছের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।”
অর্থাৎ আপনি আসলে প্রিয়জনের ওপর রাগ ঝাড়ছেন না, বরং তাদের উপস্থিতিকে ‘ইমোশনাল লাইটনিং রড’ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। ঝগড়ার পর যে শান্তি বা ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি আসে, সেটি এই প্রক্রিয়ার অংশ।

* রাগের সময় কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকুন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মন দিন।
* প্রিয়জনকে বোঝান যে আপনি তাদের ওপর নয়, নিজের মানসিক চাপের সঙ্গে লড়ছেন।
* প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করতে পারেন।
প্রিয়জনের সঙ্গে রাগ দেখানো সব সময় খারাপ নয়, তবে সচেতন না হলে তা সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। তাই রাগের পেছনের আসল কারণ বুঝে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।