জাম গ্রীষ্মকালের একটি জনপ্রিয় ফল। জাম বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। জাম খাওয়াও খুব সহজ। কারণ, এর খোসা ছাড়াতে হয় না। ত্বক, চুল ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী জাম।
জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, স্যালিসাইলেটসহ অসংখ্য উপাদান।
মানসিকভাবে সতেজ রাখে: জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা কাজ করার শক্তি জোগায়। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে সাহায্য করে: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম খুব উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস কমে গেছে। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জাম ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখে।
ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর করে: জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা দেহে ভিটামিন সির ঘাটতি পূরণ করে এবং একই সঙ্গে ভিটামিন সির অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।
মুখের স্বাস্থ্যে: মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাড়ি শক্ত এবং মাড়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই।
ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে: জামে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাশিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠান্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে দেখা মেলে বেশি পরিমাণের আয়রনেরও, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।
হার্ট ভালো রাখে: জাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে। এ ছাড়া শরীরের দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: জামে কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যাঁরা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাঁদের খাদ্যতালিকায় আসতে পারে জাম।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকেরা তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার সুপারিশ করে থাকেন। জামে সেসব উপাদান আছে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে: কালো জাম উপকারী, মানুষের মুখের লালার মধ্যে একধরনের রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়, যা থেকে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে মুখে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যানসারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে জামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।
রোগপ্রতিরোধে: জামে ফাইটোকেমিক্যালস আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান, যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামের একধরনের অ্যাসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক অ্যাসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
চোখের যত্নে: বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও সড়বায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে জাম। জাম চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাতকানা রোগ এবং যাঁদের চোখের ছানির অপারেশন হয়েছে, তাঁদের জন্য জাম খুব উপকারী।
মানসিক স্বাস্থ্যে: কালো জাম টিস্যুকে টান টান হতে সাহায্য করে, যা ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত হতে সাহায্য করে। জাম ব্রেন অ্যালার্ট হিসেবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এ ছাড়া জামে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে বলে হাইড্রেটেড থাকতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে। ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে জাম।
লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ