সকালে, বিকেলে বা রাতে—এই দিনে আম থাকবেই। কোথাও বেড়াতে গেলেও সেই আম কেটে পরিবেশন করা হয়, কেউবা দেন আমের জুস বা মিল্কশেক। সব মিলিয়ে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা পড়েন বিপাকে। আবার অমৃতসম আম–দুধ কারও কারও হজমে সমস্যা করে, পেটের পীড়ার কারণ হয়।
একদিকে এই দিনে আম না খেলে জীবনটাই বৃথা। তার ওপর চারদিকে শুধু আম আর আম। এড়ানোও কঠিন এমন আমের হাতছানি। ভাতের পাতে, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে বা এমনি এমনিই আম-দুধ ছাড়া কল্পনাই করা যায় না এ মৌসুমে।
প্রথমেই আসি ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া নাসরীন বললেন, ডায়াবেটিস হলেই যে আমের সুমিষ্ট স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে হবে, তা নয়। তবে এ ব্যাপারে তিনি কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। সবার আগে দেখার বিষয় হচ্ছে ডায়াবেটিস একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত কিনা। সে ক্ষেত্রে আমের শর্করা দ্রুত শোষিত হয় বলে হঠাৎ ব্লাড সুগার বেড়ে বিপদ হতে পারে।
যদি ডায়াবেটিস মোটামুটি বাগে থাকে, তবে অধ্যাপক তানিয়ার মতে দিনের প্রথম দিকে আম খেলে তেমন অসুবিধা হয় না। রাতের খাবারে শেষপাতে আম–দুধ না খাওয়াই ভালো এক্ষেত্রে। আমের এক সার্ভিং বা একবারে যতটুকু আম খাওয়া উচিত তার পরিমাণ হচ্ছে একটি মাঝারি আকারের আম। আর তা এমনি ফল হিসেবে, জুস করে বা আম–দুধ করেও খাওয়া যাবে। দিনে ৩০ গ্রাম শর্করা ফল থেকে এলে তা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ঠিক আছে। আর একটি ছোট আমে ১৫ গ্রাম শর্করা থাকে।
আবার কিছু কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আম খাওয়া নিয়ে এত ভাবতে হয় না। একটু কম মিষ্টি স্বাদের আম বেছে নেওয়া যায়। আম মিশিয়ে অন্য ফল সহযোগে স্মুদি বা সালাদ খেলেও ভালো হয়।
তবে জুস, স্মুদি বা মিল্কশেক খেলে মনে হবে তা দ্রুত শেষ হয়ে গেল। এর চেয়ে খোসাসুদ্ধ খেটে বা আস্ত আম ছিলে সময় নিয়ে খেলে তৃপ্তি আসবে বেশি।
আবার কারও যদি রক্তে পটাশিয়াম খুব বেশি হয়, তবে আম কম খাওয়া উচিত। আম এমনিতে খুবই পুষ্টিকর। দিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি–র ৬৭ শতাংশ পাওয়া যায় আম থেকে। ভিটামিন এ আর ফোলেটও আছে আমে প্রচুর।
তবে এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৫৫ আর গ্লাইসেমিক লোড ৫ যাকে মাঝামাঝি বলা চলে। কোনো খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দিয়ে বোঝায়, এই খাবার খেলে কত দ্রুত রক্তে চিনি রূপে তা থেকে শর্করা শোষিত হয়। তাই যাঁরা ডায়াবেটিসের ওঠা–নামায় ভুগছেন, তাঁদের একবারে আধা কাপের বেশি আম না খেলেই ভালো।
আমের সঙ্গে দুধ দিয়ে আমরা সবাই খাই। আম–দুধ মানে যেন এক আবেগের নাম। খাওয়ার পর শেষপাতে আম–দুধের খুব কদর এই মৌসুমে। কিন্তু অনেকেরই দুধে হজমের সমস্যা করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, গ্যাস্ট্রিক আলসার, দীর্ঘমেয়াদি বদহজম ও আমাশয় হওয়ার প্রবণতা আছে, এমন ব্যক্তিদের আম আর দুধ মিশিয়ে না খাওয়াই ভালো।
বিশেষ করে, এর সঙ্গে যদি ভারী খাবার ও অতিরিক্ত তেল-মসলাদার খাবার খাওয়া হয়, তবে তা আরও ক্ষতি করতে পারে পেটের। হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে অবশ্যই ননীমুক্ত দুধ ব্যবহার করতে হবে। নয়তো আম–দুধের ফ্যাট বিপদ ডেকে আনবে রোজ রোজ খেলে।
ছবি: সেলিনা শিল্পী