২০টির বেশি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ফল আম। তবে গাছ পাকা আম সবচেয়ে বেশি উপকারী। একটি পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে। তাই কাঁচা আমের তুলনায় আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো। পাকা আমে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে। যা পাকস্থলীতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখের চারপাশের শুষ্ক ভাবও দূর করে। ডায়াবেটিস বা এমন কোনো বিশেষ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে আম খেতে মানা নেই। বরং আমের পুষ্টিগুণের আদ্যোপান্ত জানলে অবাক হতে হয়।
একজন ব্যক্তির কতটা আম খাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নে সাধারণভাবে বলতে হয়, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই দৈনিক দুইটি আম খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস থাকলে মাত্রা কমাতে হবে। ওজন বেশি থাকলে সেই পরিমাণ আরও কমাতে হবে। একটা আমের বদলে তখন এক ফালি আম খেতে হবে। আমে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুকটোজ রয়েছে। অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের আম খেতে হবে পরিমাণ মতো। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, একজন ডায়াবেটিস রোগী দিনে মাত্র ৩০ গ্রাম আম খেতে পারবেন।
আবার আমে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ শর্করা। ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা পরিমাপ করে খাওয়া উচিত। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি মাত্রার, ৬০ থেকে ৮৫। বেশি আম খেলে তাই রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় ওজন ও সুগার। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা মাঝারি একটি আমের অর্ধেক খাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্করা (যেমন-ভাত) কমিয়ে দিয়ে খাদ্যতালিকায় আম যুক্ত করতে হবে।
আবার খালি পেটে কখনো আম খেতে নেই। অন্যথায় পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। দুপুরে খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর আম খেতে পারেন। দুপুর ও বিকেলের খাবারের মাঝে আম খান। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে আম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
হৃদ্রোগে আক্রান্তরা কতটা আম খেতে পারবেন। পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হৃদ্রোগে জন্য উপকারী। তাই ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগ না থাকলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে আম খাওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আমে যেহেতু চিনির ভাগ বেশি, তাই আমের সঙ্গে সব সময় প্রোটিন অথবা ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। যাতে আম খেলে আচমকা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে না যায়। আমের সঙ্গে দই খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া চিয়া বীজ, ভেজানো বাদামের সঙ্গে আম খেলেও তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না।
ফলের রাজা আম শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও অনন্য। তবে একটু অসতর্কতা বা অবহেলার কারণে এই সুস্বাদু ফলই হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।
ছবি: পেকজেলসজটকম