দেশে এখন চারদিকে আমের মেলা। ভরা মৌসুমে সুমিষ্ট আর রসাল পাকা আমের স্বাদ, সুবাস আর টেক্সচারে মজে আছে সবাই। সকাল, বিকেল বা রাতেও আম ছাড়া চলছেই না। একেক আম একেক ফ্লেভার নিয়ে রসনা, উদর আর হৃদয়—সবই ভরিয়ে রাখছে আমাদের। আর ডায়াবেটিস বা এমন কোনো বিশেষ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে আম খেতে মানা নেই। বরং আমের পুষ্টিগুণের আদ্যোপান্ত জানলে অবাক হতে হয়।
২০টির বেশি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ফল আম। তাই ফলের রাজা আমের শুধু রূপ আর স্বাদ নয়, রয়েছে প্রচুর গুণও। আমের পৌনে এক কাপ টুকরা এক সার্ভিং বলে নির্দেশ করেন পুষ্টিবিদেরা। এ থেকে দিনের ভিটামিন সির চাহিদার অর্ধেকই মিটে যায়। আর সেই সঙ্গে মেলে দৈনিক চাহিদার ৮ শতাংশ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-সিক্স। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে করে শক্তিশালী। আবার এই পরিমাণ আম থেকে দিনের প্রয়োজনীয় আঁশের ৭ শতাংশ পাওয়া যায়। আবার দিনের চাহিদার ১৫ শতাংশ ফোলেটও মিলবে পৌনে এক কাপ আম খেলে। এ ছাড়া কপার, ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি তো আছেই।
আমে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর এসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে বাঁচায়। তাই সাধারণভাবে নীরোগ আর সবল থাকে দেহ।
আমের পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া বয়সের ছাপ রোধ করতে পারে আম।
আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখতে সাহায্য করে আম। ভিটামিন এ আর ভিটামিন সির মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে এতে প্রচুর।
আম মিষ্টি হলেও সামগ্রিকভাবে আম ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এক কাপ আমে আছে ২.৬ গ্রাম আঁশ, আর ১০০ ক্যালরি। আঁশের কারণেই আম খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। আর তাই উল্টাপাল্টা খাওয়া হয় না ক্ষুধার মুখে। সাদা চিনিযুক্ত ডেজার্টের চেয়ে আম খাওয়া অনেক ভালো।
গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানে ভরপুর আম। এর মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-সিক্স আর ফোলেট আছে।
আমে আছে প্রচুর আঁশ। আর খাদ্য-আঁশ যে পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো, তা সবারই জানা। আঁশ বা ফাইবার কোষ্ঠ পরিষ্কার করে, খাবার হজমে সহায়তা করে। আবার রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে, এমনকি হৃদ্রোগ থেকে বাঁচাতেও আঁশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের খাদ্যতালিকায় আম রাখলে কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে তা একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলোর প্রদাহরোধী ক্ষমতার জন্যই তা সম্ভবপর হয়।
পাকা আমের চোখজুড়ানো কমলা রং যে রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতির জানান দেয়, তা হলো ক্যারোটিনয়েড। এই গোত্রের ফাইটো নিউট্রিয়েন্টের মধ্যে লুটেইন আর জিয়াজ্যানথিন প্রচুর পরিমাণে থাকে পাকা আমে। ভিটামিন এ আর বিটা ক্যারোটিনের খুব ভালো উৎস আম। সব মিলে চোখের কার্যকারিতায় খুবই উপকারী আম।
ছবি: হাল ফ্যাশন