যে সময় সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি পাওয়া যায়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের দেশে বর্ষাকালেও এখন যে গরম পড়েছে, প্রয়োজন ছাড়া কেউ গায়ে রোদ লাগতে চায় না। বাইরে বের হলেও সানস্ক্রিন মেখে, ত্বক ঢেকে বের হচ্ছি আমরা। সব সময় ঘরে থাকলে, শরীর সারাক্ষণ ঢেকে রাখলে ত্বকে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে বি (ইউভিবি) অর্থাৎ অতিবেগুনি বি রশ্মি ত্বকে পৌঁছাতে পারে না। আর এ কথা তো আমরা সবাই জানি যে সূর্যালোক ত্বকের সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয় আর সূর্য ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো। তাই প্রায়ই আমরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগে থাকি। আবার আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের গায়ের রং সাধারণত গাঢ় হয়। এ ধরনের ত্বকে মেলানিন নামের রঞ্জক বেশি থাকায় এমনিতেই ভিটামিন ডি কম তৈরি হয়।

তা ছাড়া সূর্যের ইউভিবি রশ্মি জানালা ভেদ করেও আসতে পারে না। তাই যাঁরা রোদ পড়ে এমন জানালার পাশে বসে সারা দিন কাজ করেন, তাঁদেরও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এর ফলে  ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত রোগব্যাধি অনায়াসে বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।  

বিজ্ঞাপন

ভিটামিন ডি-এর অভাবে কী হয়

ভিটামিন ডি-এর  অভাবে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, পেশি দুর্বল হয়ে যায়, একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা বোধ হয়, ওজন বেড়ে যায় এমনকি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে থাকে। শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড়ের দৃঢ়তা কমে যায়।  তা ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘটলে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনও তৈরি হয়। যেকোনো ভিটামিন পেতে আপনাকে পয়সা খরচ করতে হয়। কিন্তু  ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই বিনা পয়সার ভিটামিন ডি-এর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য।

বিনা পয়সার ভিটামিন ডি

কমবেশি সবারই জানা আছে কড মাছের যকৃৎ থেকে তৈরি তেল, টুনা ও স্যামন জাতীয় মাছ, মাশরুম ইত্যাদি খাদ্যে আছে বেশ পরিমাণে  ভিটামিন ডি। তার মানে  ভিটামিন ডি পেতে খাদ্যতালিকায় আপনাকে যোগ করতে হবে নানা রকম খাবার, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। অথচ আমাদের প্রত্যেকের শরীর প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি করতে পারে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি। আর তা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে।  

শিশুদের মাদুর পেতে তেল মেখে সকালের রোদে বসিয়ে বা শুইয়ে রাখার দৃশ্য খুব পুরোনো নয়। গ্রামাঞ্চলে এখনো এই প্রচলন আছে। শহরের বাচ্চাদের অভিভাবকেরাও চেষ্টা করেন ব্যালকনিত কিংবা ছাদে রোদে রেখে খেলতে দিতে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায়। এই প্রচলনের পেছনে আছে একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।

যেভাবে সূর্য থেকে ত্বকে তৈরি হয় ভিটামিন ডি

হাড় ও হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে শরীরে যে ভিটামিন ডি প্রয়োজন, তার ৯০ শতাংশ তৈরি হয় ত্বক থেকে। মানুষের ত্বকের নিচে একধরনের কোলেস্টেরল  থাকে যা সূর্যের অতিবেগুনি বি রশ্মির উপস্থিতিতে গলে গিয়ে ভিটামিন ডি তৈরি করে। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে, যা দাঁত, নখ ও হাড়কে মজবুত করে। তবে এই রোদ শুধু বাচ্চাদের জন্য নয়, সব বয়সীদের জন্যই প্রয়োজন।  

বিজ্ঞাপন

সূর্যের আলো এক জাদুকরি ওষুধ

গবেষণা অনুযায়ী জন্ডিস, সোরিয়াসিস, ব্রন, অ্যাকজিমা—এসব ত্বকের রোগ সূর্যের আলো দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। সূর্যের আলোর এই চিকিৎসা পরিচিত হিলিওথেরাপি নামে। সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো প্রশমিত করতে অত্যন্ত কার্যকর এই রোদ-চিকিৎসা। তা ছাড়া শরীরে ভিটামিন ডি অস্টিওপোরোসিস, ক্যানসার, ডিপ্রেশন, পেশির দুর্বলতাও কাটায়। রক্তের উপাদানগুলোর মাত্রা ঠিক রাখতেও ত্বকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো প্রয়োজন হয়। মন–মেজাজ ভালো রাখার জন্য ও ভালো ঘুমের জন্যও সূর্যের আলো খুব প্রয়োজন। সূর্যের আলোতে গেলে মস্তিষ্কে সুখী হরমোন সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে।

মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমাদের মন খারাপ থাকে। এটি সাধারণ বিশ্বাস হলেও এ কথা প্রমাণিত—যেসব দেশে সূর্যের আলো কম থাকে, সেসব দেশের মানুষ বিষাদে ভোগেন বেশি। বিষাদ কমাতে সেসব দেশে ‘লাইট থেরাপি’ ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে আলো প্রস্তুত করে চিকিৎসা দেওয়া হয় অথবা সরাসরি রোদে যেতে বলা হয়।  

কোন সময় সূর্যের আলো বেশি কার্যকর

দিনের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ দুপুরে গায়ে রোদ লাগানোর কথা বললে অনেকের কাছেই অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকে ৩টা পর্যন্ত সূর্যের আলোতে সর্বোচ্চ পরিমাণ অতিবেগুনি বি রশ্মি থাকে। অল্প সময়েই বেশি ভিটামিন ডি তৈরি করা সম্ভব এই সময়। তবে বিশেষজ্ঞরা বিকেলের রোদের চেয়ে সকালের রোদকেই কার্যকারিতার দিক থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে তিন-চার দিন ১০-৩০ মিনিট সূর্যের আলো গায়ে লাগানো উচিত। তবে এখনকার মতো গরমকালে ১০-১৫ মিনিট যথেষ্ট এ জন্য।

গায়ের রং অনুযায়ী রোদে থাকা

ত্বকের রঙের পার্থক্য হয় মেলানিন নামক রঞ্জকের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে। মেলানিন  প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবেও কাজ করে। এট সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের কোষগুলোতে ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে ভিটামিন ডি উৎপাদন প্রক্রিয়া মন্থর হয়। কাজেই শ্যামবর্ণের ত্বকের অধিকারীদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল বর্ণের মানুষের চেয়ে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি হতে পারে। তাই যাঁদের গায়ের রং গাঢ়, তাদের তুলনামূলকভাবে আরও একটু বেশি সময় রোদে  থাকতে হবে।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে কি না

আমরা সাধারণত সানস্ক্রিন ব্যবহার করি ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে। সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত উপাদানগুলো ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি বি রশ্মিকেও ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে ভিটামিন ডি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। তাই ভিটামিন ডি পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করেই সকালের রোদ পোহানো উচিত। তবে ১০-৩০ মিনিট রোদ লাগানোর পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বেশি সময় ধরে কড়া রোদ ত্বকের জন্য কোনোভাবেই উপকারী নয়। ত্বকের সহনশীলতা ও তাপমাত্রা বুঝেই সূর্যের সাহায্য নিয়ে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সূর্যের আলো যেমন ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে, তেমনি অতিরিক্ত ক্ষতিকর রশ্মিতে ত্বক পুড়ে যায়। এমনকি এতে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই দু-তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন পুনর্ব্যবহারের কথা বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩, ০৪: ০০
বিজ্ঞাপন