জীবনের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়। কোনোটিতে আমরা আনন্দিত হই, গর্বিত হই; আবার কোনোটি নিয়ে লজ্জিত। কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে দায়ী মনে হয়। অনুশোচনা আর হীনম্মন্যতা গ্রাস করে রাখে মনকে। কিন্তু এমন অনেক ব্যাপার আছে, যেসব নিয়ে কখনো দুঃখ প্রকাশ করা উচিত নয়। নিজেকে দায়ী করে মানসিক অবসাদে ডুবে যাওয়া থেকে দূরে থাকতে এই সাত ব্যাপারে কখনোই সরি বলা যাবে না কাউকে। নিজেকে তো নয়ই।
১. অনুভূতি
অনুভূতি অদ্ভুত এক উপলব্ধি, যা আমাদের হাসায় আবার কাঁদায়ও। কাছের মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি ভাগাভাগি করার পর অনেকেই আবার ভাবতে বসি, ‘কেন তখন কাঁদতে গেলাম!’ বা ‘তখন এমন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও হতো’। কিন্তু এই অনুভূতিগুলো আসলে প্রকাশ করে ব্যক্তির সত্তাকে। অনুভূতি খুবই সহজাত। এটা জোর করে দেখানোর কিছু নয়। আপনি অন্যদের চেয়ে কম আবেগপ্রবণ কিংবা বেশি আবেগপ্রবণ হলেও এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই কারও সামনে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলার পর সেটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই; বরং এটি প্রমাণ করে, আপনি সহজাত আবেগ প্রকাশ করার মতো সাহসী।
২. অতীত
অতীতের কোনো ভুল বা কোনো সম্পর্ক কিংবা প্রাক্তন—অতীতের কোনো কিছু ভেবে নিজেকে দায়ী করা উচিত নয়। যাঁর বা যাঁদের সঙ্গে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালানোর পরও সম্পর্ক নষ্ট হয়, বুঝে নিতে হবে, তাঁরা কখনোই আপনার ছিলেন না। অতীতের কিছু নিয়ে নিজেকে ‘গিল্ট ট্রিপে’ রাখা খুবই বোকামি। তাই সেসব ঘটনা নিয়ে নিজেকে বা কাউকে ‘সরি’ না বলে সামনে এগোনো উচিত। অতীত হতেই পারে অনেকের কাছে স্মরণীয়, আবার অনেকেই সেসব মনে করতে চান না। কিন্তু এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা বর্তমানের ‘আমরা’ হয়ে উঠি। অতীতের জয় আমাদের যেমন সাহসী করে তোলে, তেমনি ভুল করে তোলে জ্ঞানী। অতীত নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা আপনার বর্তমানকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করা উচিত নয়। তাই এসব ক্ষেত্রে সরি না বলে বরং কর্তব্য বুঝে নিয়ে সামনে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. স্বপ্ন ও লক্ষ্য
আমাদের সবার আলাদা কিছু স্বপ্ন ও লক্ষ্য আছে, যেগুলো আমাদের কাজ করার আগ্রহ জোগায়, অনুপ্রেরণা দেয়। সেই স্বপ্নগুলো নিয়ে কখনোই হীনম্মন্যতায় ভোগা উচিত নয়। নিজের পছন্দ করা পথ চলতে ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। কারও কথা শুনে নিজের স্বপ্ন নিয়ে ‘সরি’ হওয়া অনুচিত। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’, সেই ভয়ে ‘বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেললাম নাকি’, ‘আমাকে দিয়ে হবে না’, ‘এ পেশা আমার জন্য নয়’—এসব না ভেবে বরং সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার জন্য নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। থেমে যাওয়া কোনো সমাধান নয়।
৪. বাহ্যিক রূপ
পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই আলাদা। আর এই বৈচিত্র্যের জন্যই পৃথিবী সুন্দর। প্রত্যেক মানুষের ফ্যাশন সেন্স, স্টাইল, শরীরের কাঠামো, গায়ের রং আলাদা হয়—এমনকি একজন ব্যক্তির হাতের ১০টি আঙুলের ছাপও ১০ রকম হয়। আর এ সবকিছুই অন্যদের চেয়ে আপনাকে আলাদা করে। আপনি খাটো-লম্বা, সাদা-কালো—যেমনই হোন না কেন, কোনো কিছুই বড় বিষয় নয়। এটার জন্য কখনো দুঃখবোধ করাও উচিত নয়। শ্যামবর্ণ হলে এসব রং পরা যাবে না, স্বাস্থ্যবান হলে এসব পোশাক পরা যাবে না, চুল কোঁকড়া হলে এভাবে হেয়ার স্টাইল করা যাবে না—এসব ভেবে নিজেকে হীনম্মন্যতায় ডোবানোর কোনো মানে নেই;বরং যা আপনার করতে ভালো লাগে, সবকিছুই উপভোগ করুন।
৫. বিশ্বাস
আমাদের নিজেদের পৃথিবীকে দেখার কিছু দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস আছে। এসব মূল্যবোধ থেকেই আমরা জীবন চালানোর যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। নিজের বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত করে সেটাতেই স্থির থাকা উচিত।
রাজনৈতিক হোক কিংবা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, আপনি যেটাতেই বিশ্বাস করেন, সেটা নিয়ে ‘সরি’ হওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই নিজের বিশ্বাস নিয়ে অন্যদের মূল্যবোধে আঘাত করা যাবে না।
৬. 'না' বলা
সবাইকে খুশি করা কখনোই সম্ভব নয়। আর সবাইকে খুশি করার গুরুদায়িত্বও আপনাকে দেওয়া হয়নি। তাই কারও কোনো প্রস্তাব আপনার জন্য সুবিধাজনক না হলে ‘না বলা’ শিখুন। এটা নিয়ে দুঃখবোধ করারও কিছু নেই। অন্যদের কথা রাখতে গিয়ে নিজের কাজ পেছানো বা নিজেকে কষ্ট দেওয়া কখনোই সুখকর কাজ নয়।
ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও ‘না’ বলা শিখুন। আপনার কাছে যথেষ্ট কাজ থাকলে বাড়তি কাজের স্ট্রেস নেওয়া উচিত নয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী না বলতে হলে ‘সরি’ অনুভব করে নিজের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করার কোনো মানে নেই।
৭. নিজের পছন্দ
ক্যারিয়ার, জীবনসঙ্গী কিংবা বন্ধু নির্বাচনে কখনো অন্যের কথায় দ্বিধান্বিত হওয়া যাবে না। কারণ, এগুলো একান্তই আপনার। তাই সিদ্ধান্তগুলোও আপনারই হওয়া উচিত। তা ছাড়া নিত্যদিনের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে।
আপনার পেশা, আপনার জীবনযাপন—সবার পছন্দ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি যে পথ বেছে নিয়েছেন, সেটা দীর্ঘ হতে পারে; কিন্তু কারও কথা শুনে হীনম্মন্যতায় ভোগা যাবে না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা জরুরি। কারণ, আপনার চাইতে ভালো আপনাকে কেউ চেনে না।
তথ্যসূত্রঃ থট ক্যাটালগ
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম
হিরো ইমেজঃ সাইফুল ইসলাম