সিজনস বুটিকানো, সাতরঙ, কারুসুতা ও মুনমুন’স—এই চার উদ্যোগ নিয়েই রুপাই। নামকরণেও এটি বিশেষ, পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের ‘রুপাই’ চরিত্রটি থেকে ফ্যাশন হাউসটির নামকরণ করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের ভাবনা, ‘রুপাই আমাদের বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের প্রতীক, যাদের ঘামে তৈরি করা পণ্য আমরা ব্যবহার করি।’
উদ্যোক্তা জান্নাত সুলতানা ২০০৬ সালে নিজস্ব ডিজাইনের দেশি পণ্য নিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। এরপর ২০১৪ সালে অনলাইনে শুরু করেন নিজের বুটিক। তাঁর মূল পণ্য ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, জামদানি ইত্যাদি। তবে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করা প্রথমে সহজ ছিল না জান্নাত সুলতানার। বিদেশি কাপড়ের প্রতি সবার একটু ঝোঁক বেশি। প্রতিনিয়ত লেগে থেকে আজ দেশি পণ্য নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। বর্তমানে তাঁর পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে। নিজের পথচলা নিয়ে তিনি জানান, ‘“চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব” কর্তৃক আয়োজিত আনিসুল হক কোহর্টে যোগ দেওয়ার ফলে বিজনেসের বিভিন্ন বিষয় এক্সপার্ট রিসোর্স পারসনদের থেকে জেনে নিতে পেরেছি এবং ভুলগুলো সংশোধন করতে পেরেছি। ব্যবসার আদর্শ মডেল অনুসারে পরিচালনা করার দিকনির্দেশনা পেয়েছি।’
অনলাইনে ব্যবসা করে ছোট একটি কারখানাও শুরু করেছিলেন এই উদ্যোক্তা। কিন্তু কোভিড-১৯–এর সময়ে বন্ধ করে দিতে হয়। ‘আনিসুল হক কোহর্ট ফর গ্রোথ অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস’ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় অন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলে শোরুম শুরু করেন। জান্নাত সুলতানা এখন স্বপ্ন দেখেন ১০ বছর পর বড় পরিসরে কারখানাসহ ৩টি শোরুম প্রতিষ্ঠা করার।
সাতরঙের উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের ডিজাইন করা পণ্য নিজস্ব কারখানায় তৈরি করে অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। ২০২২ সালে ‘আনিসুল হক কোহর্ট ফর গ্রোথ অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস’ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই উদ্যোক্তা সঙ্গে আরও তিনজনকে নিয়ে প্রথম অফলাইন শোরুম চালু করেন। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার জামতলায় অবস্থিত শোরুমটি এরই মধ্যে বেশ পরিচিতি পাচ্ছে।
সেই শোরুমে সফল হওয়ার পর এবার স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় করে নিজের কাজগুলো ক্রেতার কাছে তুলে ধরার জন্য। গত রমজানের শুরুতে তিনি আরও একটি শোরুম চালু করেছেন। অনলাইন ব্যবসাকে অফলাইন (শোরুম) ব্যবসায় নিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ‘আনিসুল হক কোহর্ট ফর গ্রোথ অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস’।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে কলেজে পড়ার সময় নিজের উদ্যোক্তাজীবন শুরু করেছিলেন শারমিন আক্তার হীরা। যেটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরে অনার্সে পড়ার সময় কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে কাপড়ের ব্লকের উদ্যোগ শুরু করেছিলেন, কিন্তু মতের মিল না থাকায় সেটাও ছেড়ে দেন। নিজের স্কুল, ছাত্র পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। করোনাকালে যখন স্কুলসহ সব বন্ধ বাসায় দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা, তখন ফেসবুকে উই গ্রুপে যুক্ত হয়ে ২০২০ সালে আবারও উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
হাতের কাজের প্রতি ভালো লাগা এবং জামালপুরের ঐতিহ্যের অংশ নকশিকাঁথাকে বিশ্বের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে কারুসুতার জন্ম। এটার আগের নাম ছিল এক্সক্লুসিভ হ্যান্ডিক্রাফট।
উই গ্রুপ থেকেই পরিচয় হয় ফারহানা ইয়াসমিন মুক্তা, জান্নাত সুলতানার মতো অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে। ‘গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ মুক্তা আপু ও জান্নাত আপু আমাকে অফার করেন রুপাইয়ে যোগ দেওয়ার জন্য। একই ছাদের নিচে চারটা ব্র্যান্ড নিজেদের পণ্য, ব্র্যান্ডকে প্রমোট করবে, বিষয়টা অনেক ভালো লাগে আমার। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলাম,’ জানান শারমীন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার পক্ষে এ রকম শোরুম দেওয়া কষ্টের ব্যাপার এবং সময়সাপেক্ষ হতো। আপুদের জন্য সুযোগটা পেয়েছি। রুপাইয়ের সঙ্গে কারুসুতা আরও এগিয়ে যাবে, এমনটাই স্বপ্ন দেখি।’
শাহতাজ মুনমুন নিজেই একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। দুই যুগের বেশি সময় ধরে পোশাক ডিজাইন করে আসছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘মুনমুন’স’।
রুপাই শোরুমের চারটি উদ্যোগের মধ্যে মুনমুন’স অন্যতম। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সব পোশাকের মধ্যে নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা সব সময় থাকে বলে জানান শাহতাজ মুনমুন।
মুনমুন’সের পোশাকগুলোতে ভিন্নতার জন্য ব্যবহার করা হয় বাহারি কারুকার্য। যেমন ব্লক, হ্যান্ডপ্রিন্ট, হাতের কাজ (সুই–সুতা), কুন্দন, এমব্রয়ডারি, স্কিন প্রিন্ট ইত্যাদি।
বর্তমানে জামদানি শাড়ি নিয়ে বেশি কাজ করছে মুনমুন’স।
ছবি: রুপাই