সূর্যের আলো যেমন জীবনের জন্য অপরিহার্য, তেমনি এর অতি বেগুনি (UV) রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শুধু সানবার্নই ঘটায় না, দীর্ঘ মেয়াদে ত্বক ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায় বহুগুণ। অথচ অনেকে এখনো সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের দ্বিধায় ভোগেন। কেউ ভাবেন এটি অকার্যকর, কেউ আবার ভেবে বসেন এতে রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এই সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সম্প্রতি জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারপারসন ড. আশানি উইরারাটনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন।
ড. আশানি জানান, “ত্বক ক্যানসার যে কারও হতে পারে। কেবল রোদে পোড়া নয়, হাতের তালু, পায়ের পাতা এমনকি নখের নিচেও এই ক্যানসার হতে পারে। বিশেষ করে উজ্জ্বল ত্বকের মানুষের মধ্যে এ ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।” তাই বছরে একবার হলেও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া এবং ত্বক পরীক্ষা করানো জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় প্রচার করা হয়, সানস্ক্রিনে থাকা রাসায়নিক নাকি ত্বকের জন্য বিষাক্ত। তবে ড. আশানি স্পষ্ট জানালেন, “এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে সানস্ক্রিন সূর্যের ইউভি (UV) রশ্মির চেয়ে বেশি ক্ষতি করে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি খুব চিন্তিত থাকেন, তাহলে মিনারেল-ভিত্তিক সানস্ক্রিন যেমন জিংক অক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া উপিএফ (UPF) মানসম্পন্ন কাপড়ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।”
হ্যাঁ, সানস্ক্রিনেরও মেয়াদ থাকে। তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে থাকা মেয়াদ যাচাই করতে হবে।
অনেকেই মনে করেন, ফাউন্ডেশন বা পাউডারে থাকা এসপিএফ (SPF)-ই যথেষ্ট। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো কখনোই এককভাবে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয় না। আলাদা করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
ড. আশানি বলেন,“ সব সানস্ক্রিন এক না। সানস্ক্রিন কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন ব্রড-স্পেকট্রাম হয়, যাতে উইভিএ ও উইভিবি (UVA ও UVB) দুই ধরনের রশ্মি থেকেই সুরক্ষা দেয়। আর এসপিএফ (SPF) ৩০ বা তার বেশি হওয়া উচিত।”
গবেষণায় দেখা গেছে, ডিইইটি (DEET) সমৃদ্ধ মশার স্প্রে সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা প্রায় ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। তাই একসঙ্গে ব্যবহার করলে সানস্ক্রিন ঘন ঘন পুনরায় লাগাতে হবে।
ড. আশানির মতে, অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন যতই ওয়াটার-রেসিস্ট্যান্ট লেখা থাকুক না কেন, প্রতি ৯০ মিনিট পরপর পুনরায় লাগাতে হবে। কারণ পানির প্রতিফলনে সূর্যের উইভি (UV) রশ্মি আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।”
ত্বক সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, সময়মতো পুনরায় লাগানো এবং ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত থাকা। সূর্যের আলো আমাদের শক্তি ও প্রাণশক্তির উৎস হলেও, এর ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচতে সচেতনতা এবং বিজ্ঞানের পরামর্শ মানাই শ্রেষ্ঠ উপায়।
সূত্র: জনস হপকিনস–এর ইনস্টাগ্রাম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম