যেখানে স্বমূর্তিতে নিদ্রামগ্ন রয়েছেন কুম্ভকর্ণ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পুরো রাইডে অসংখ্য দেবতার মূর্তি আর দেবালয় দেখা হয়েছে, এবার নাহয় একটা রাক্ষসের মূর্তি দেখা হোক! ভারতের সর্ব উত্তরের শ্রীনগর থেকে শুরু করেছি সাইকেলের দুই চাকায় চেপে পথচলা। উত্তর ও মধ্য ভারতের নানা রাজ্য পেরিয়ে এখন আমার অবস্থান ভারতের দক্ষিণে। অন্ধ্র প্রদেশের শহর পেনুকোন্ডার দিকে যেতে যেতে বিখ্যাত কোরিয়ান গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিয়া মটরসের বিশাল কারখানা সামনে পড়ল। দৈর্ঘ্যে এক কিলোমিটারের চেয়ে লম্বা এই কারখানা থেকে এগোতেই বায়ুর পুত্র হনুমানের মন্দিরের ঠিক পেছনেই দানবীয় বায়ুকল।

১৪২ ফুট দীর্ঘ মূর্তিতে রাবণের অনুজ তাঁর প্রিয় ভঙ্গিতে শায়িত
১৪২ ফুট দীর্ঘ মূর্তিতে রাবণের অনুজ তাঁর প্রিয় ভঙ্গিতে শায়িত
বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ মহাসড়ক
বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ মহাসড়ক
সরু রাস্তা ধরে খানিকটা যেতেই কুম্ভকর্ণের শায়িত মূর্তি
সরু রাস্তা ধরে খানিকটা যেতেই কুম্ভকর্ণের শায়িত মূর্তি

বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ মহাসড়ক ছেড়ে পাশের সরু রাস্তা ধরে খানিকটা যেতেই কুম্ভকর্ণের শায়িত মূর্তির সামনে। ১৪২ ফুট দীর্ঘ মূর্তিতে রাবণের অনুজ তাঁর প্রিয় ভঙ্গিতে শায়িত। জিহ্বার মোচড় তথা টাংটুইস্টের ত্রুটিতে ইন্দ্রাসন চাইতে গিয়ে নিদ্রাসন চেয়ে ফেলা কুম্ভকর্ণ সেই শৈশব থেকেই আমার কাছে দারুণ এক চরিত্র।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটা একটু খুলেই বলা যাক। পুরাণে আছে, মৈনাক পর্বতের মতো বিশাল বপুর অধিকারী কুম্ভকর্ণের সর্বগ্রাসী ভোজনস্পৃহা অসুবিধায় ফেলতে শুরু করে স্বর্গবাসীদের। খাদ্যের পাশাপাশি সম্ভব সবকিছুকে সে উদরস্থ করতে শুরু করলে দেখা দেয় আকাল। সবাই মিলে তখন শরণাপন্ন হন দেবপতি ইন্দ্রের।

কুম্ভকর্ণকে জাগানোর যাবতীয় এন্তেজাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পেনুকোন্ডা শহরের কাছের এই ভাস্কর্যে
কুম্ভকর্ণকে জাগানোর যাবতীয় এন্তেজাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পেনুকোন্ডা শহরের কাছের এই ভাস্কর্যে

দুজন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর রাক্ষস কুম্ভকর্ণ উদ্যোগ নেন দেবরাজ ইন্দ্রকে স্বর্গ থেকে বিতাড়নের। তখন ভগবান ব্রহ্মাকে তুষ্ট করার জন্য কঠিন তপস্যা শুরু করেন কুম্ভকর্ণ। দেবচর্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা বরদানের সময় ইন্দ্রের প্ররোচনায় দেবী সরস্বতী তাঁর জিহ্বা আড়ষ্ট করে দেন। দেবপতি ইন্দ্রের সিংসাহনের বদলে দেবারি কুম্ভকর্ণের কপালে জোটে শয্যা! রাম-রাবণের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য কুম্ভকর্ণকে জাগানোর যাবতীয় এন্তেজাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পেনুকোন্ডা শহরের কাছের এই ভাস্কর্যে। নিদ্রার প্রতিভূকে জাগানোর জন্য হাতি শুঁড় দিয়ে চুল টানছে, কয়েকজন অসুর প্রাণপণে বাজাচ্ছে ঢাক, কেউবা শিঙায় ফুঁ দিচ্ছে, আবার কোনো অসুর তার বিশাল দেহের ওপর সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। নাকে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে চলছে আরেকজন। বগলে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগানোর চেষ্টায়ও রত আছে জনাকয়েক। একদল অসুর স্থূল উদরে দড়ি লাগিয়ে ওপরে উঠছে। কেউ কেউ সম্ভব সব উপায়ে নিদ্রাভঙ্গে ব্যর্থ হয়ে পাশেই বসে পড়েছে। নিদ্রাবিষ্ট কুম্ভকর্ণের অবশ্য তাতে কর্ণপাত করতে বয়েই গেছে!

বিজ্ঞাপন

কুম্ভ তথা কলসের মতো কান বলেই তাঁর নাম কুম্ভকর্ণ। ঘুমকাতুরে ও অলস ব্যক্তির সমার্থক হয়ে গেছে এই অসুরের নাম। ছয় মাস ঘুমিয়ে কাটানো এই রাক্ষসের কাছাকাছি দক্ষতার নিদ্রাদেবীর আরাধনা করা কয়েকজনকে আমি চিনি। অবশ্য তাদের জাগাতে কুম্ভকর্ণের মতো শরীরের ওপর শ খানেক হাতি হাঁটিয়ে দিতে হয় না! কুম্ভকর্ণের মূর্তির আশপাশে আর কিছু না থাকলেও বেশ কয়েকটা খাবারের দোকান আছে।

কুম্ভকর্ণের মূর্তির আশপাশে আর তেমন কিছু নেই।
কুম্ভকর্ণের মূর্তির আশপাশে আর তেমন কিছু নেই।
কাছেই গাছে ভরা বন, শাখামৃগদের দখলে সেটি
কাছেই গাছে ভরা বন, শাখামৃগদের দখলে সেটি

ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তাঁর রাক্ষুসে ক্ষুধা নিবারণের জন্যই এসব দোকান কি না কে জানে! চাইলে আক্ষরিক অর্থেই ভাস্কর্যের এই অসুরের পেটে ঢোকা যায়। সেখানে অবশ্য পাকস্থলী কিংবা অন্ত্রের বদলে আছে সুসজ্জিত কক্ষ। বিশাল মূর্তির ভেতর কক্ষের সংখ্যা তিন। রামায়ণে অনেক বানর সেনার কুম্ভকর্ণ কর্তৃক নিকেশ হওয়ার উল্লেখ থাকলেও কুম্ভকর্ণের মূর্তি আর এর আশপাশের জায়গাটি পুরোপুরি শাখামৃগদের দখলে।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯: ০০
বিজ্ঞাপন