আমাদের দেহের জন্য আমিষ এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আমিষ বা প্রোটিন অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরকে সঠিক ভাবে কাজ করতে হলে ২০ ধরনের অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন। আর এইগুলো সব আপনার দেহে নিজে উৎপাদিত হতে পারে না। দেহে কেবল ৯টি অ্যামিনো এসিড নিজে থেকে উৎপাদিত হতে পারে। তাই বাকিগুলো আমাদের অবশ্যই খাবারের তালিকায় রাখা আবশ্যক। নয়তো আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় নিজেও বুঝে উঠতে পারছেন না যে আপনার শরীরে আমিষের কোনো ঘাটতি রয়েছে। তখন শেষ পর্যন্ত একদিন ঘটে বিপত্তি। তবে আপনার শরীরে আমিষ বা প্রোটিন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম থাকলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলো দেখে খুব সহজেই বুঝে নিতে পারেন আপনার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে কিনা। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৫টি লক্ষণ সম্পর্কে।
১.পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া
আপনি যদি পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনার পা ও গোড়ালিতে ফোলা ভাব দেখা যেতে পারে। কারণ প্রোটিনের অভাব কোষগুলোতে তরলের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। অ্যালবুমিনের মতো প্রোটিনগুলো রক্তনালী ও দেহের কোষগুলোর মধ্যে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখে। পর্যাপ্ত প্রোটিন ছাড়া এই ভারসাম্য ব্যাহত হয়। এর ফলে অনেক সময় ভুল স্থানে তরল জমা হতে থাকে।
২. মেজাজে পরিবর্তন
অনেক নিউরোট্রান্সমিটার অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি, যার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক ও কোষগুলোর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। প্রোটিন সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো হ্যাপি হরমোনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো এসিড সরবারহ করে। এটি আপনার মেজাজকে স্থিতিশীল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, দেহে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে মেজাজ তুলনামূলকভাবে খিটখিটে থাকে।
৩. চুল, নখ ও ত্বকে সমস্যা
প্রোটিন আপনার চুল, নখ ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন শরীরে প্রোটিন সঠিক মাত্রায় সরবারহ হতে থাকে, তখন আপনার চুল,নখ ও ত্বক সুন্দর থাকে। অ্যামিনো এসিড সিস্টাইন ক্যারাটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি চুল, ত্বক ও নখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করলে আপনার চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রোটিনের অভাবে কোলাজেনের উৎপাদনও ব্যাহত হয়, যা আপনার ত্বকের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে।
৪. ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে যাওয়া
পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ইমিউন সিস্টেমের প্রধান কাজ হলো রোগ প্রতিরোধক কোষ ও অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করা। শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে এই কাজ ব্যাহত হতে থাক। ফলে আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ঘন ঘন অসুস্থতা দেখা দেয়।
৫. মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি
অনেক সময় দেখা যায়, আপনার মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি প্রবল আসক্তি কাজ করছে। এর মূল কারণ হলো প্রোটিনের অভাব। কারণ, প্রোটিন কার্বোহাইড্রেটের হজম ও শোষণকে ধীরগতির করে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। আপনি যখন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করেন, তখন এটি রক্ত প্রবাহে চিনির শোষণকে মন্থর করে দেয়। ফলে আপনার মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি এত বেশি আসক্তি কাজ করে না।
সূত্র: হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলস ডট কম