ইফতারের পর এক কাপ চা না হলে কি চলে! একদিকে চায়ের অভ্যাস বাদ দেওয়া যেমন মুশকিল, অন্যদিকে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে কি না, এ নিয়েও দুশ্চিন্তার কোনো কমতি নেই আমাদের। কিন্তু চা জীবন থেকে একেবারেই বাদ দেওয়া কি সম্ভব? আমাদের রোজকার জীবনের সব সমস্যার সমাধান তো চা। চা ছাড়া একটা দিন কাটানোও যেন মুশকিল! তবে ফিট থাকতে বেছে নিতে পারেন এমন কিছু উপকারী চা, যা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক, রোজ পান করলেও স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না, এমন কিছু চা সম্পর্কে।
১. ব্ল্যাক–টি
আপনি স্বাস্থ্যসচেতন হলে খুব সহজে বেছে নিতে পারেন ভালো ব্লেন্ডের চিরচেনা ব্ল্যাক টি। এই চায়ের প্রতি ৮ আউন্সে থাকে মাত্র ৪৭ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, যা এক কাপ কফিতে থাকা ক্যাফেইনের প্রায় অর্ধেক। এ ছাড়া ব্ল্যাক টির রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। সেই সঙ্গে এর পলিফেনলিক যৌগগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তবে এ ক্ষেত্রে লিকার চা পান করাই উত্তম।
২. আদা–হলুদ চা
আদা–হলুদ চা দুটি সুপারফুডের ভেষজ গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। হলুদে থাকা কারকুমিন প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়। অন্যদিকে আদা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যথা উপশমেও সহায়তা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই চায়ে কোনো ক্যাফেইন থাকে না। সুতরাং আপনি ক্যাফেইনমুক্ত চা পান করতে চাইলে খুব সহজেই বেছে নিতে পারেন এই আদা–হলুদ চা।
৩. হোয়াইট–টি
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মনকে চনমনে রাখতে হোয়াইট–টির কোনো জুড়ি নেই। এই চায়ের ঘ্রাণ মনকে প্রশান্ত করে। সেই সঙ্গে এতে অন্যান্য চায়ের তুলনায় ক্যাফেইনের মাত্রাও থাকে অনেক কম। ফলে যাঁরা বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করতে চান না, কিন্তু চায়ের ফ্লেভারের জন্য ব্যাকুল থাকেন, তাঁদের জন্য হোয়াইট–টির কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া এই চা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। শুধু তা–ই নয়, হোয়াইট–টি ক্ষত নিরাময় করতে পারে এবং ত্বক ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
৪. হিবিস্কাস–টি
জবা ফুলের পাউডার থেকেই মূলত তৈরি হয় এই চা। এটি বিভিন্ন ভেষজ গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। সেই সঙ্গে এই চা সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত। বিপাকপ্রক্রিয়া ঠিক রাখতেও এই চায়ের জুড়ি নেই। এই চা পানে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, হিবিস্কাস চা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
৫. ক্যামোমাইল–টি
ক্যামোমাইল চা মন ও শরীরকে প্রশান্ত করার গুণের জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এই চা সারা দিনের সব ক্লান্তি দূর করে শরীর ও মনে এনে দিতে পারে ফুরফুরে এক সতেজ অনুভব। সেই সঙ্গে এই চা ঘুমের জন্য বেশ ভালো। তাই যাঁদের অনিদ্রাজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁরা খুব সহজেই বেছে নিতে পারেন ক্যামোমাইল চা। ক্যামোমাইলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণও রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায়, ক্যামোমাইল রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ উন্নত করতে পারে এবং প্রাক্–মাসিক সিনড্রোম বা পিএমেসের লক্ষণগুলোও প্রশমিত করতে পারে। এ চায়ের তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
৬. পুদিনা চা
অন্যান্য চা বাদ দিয়ে ইফতারের পর রাখতে পারেন পুদিনা চা। কারণ এই চা ক্যাফেইনমুক্ত এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চেহারার ক্লান্ত ও ফোলাভাব দূর করতে এই চায়ের কোনো জুড়ি নেই। পাশাপাশি হজমের সমস্যা, কাশি ও সাইনাসের সংক্রমণের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বেছে নিতে পারেন পুদিনা চা।
সূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট