মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আগেই রুখে দেওয়ার ৬ পদ্ধতি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মাইগ্রেন কেবল মাথাব্যথা নয়, এটি একটি স্নায়ুবিক অবস্থা। এর অত্যন্ত কষ্টদায়ক লক্ষণগুলো কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আগেই তা রুখে দেওয়া যায়।
ডার্টমাউথ হিচকক ক্লিনিকের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ও গিসেল স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোলজির ক্লিনিক্যাল সহকারী অধ্যাপক রোহিত রেড্ডি বলেন, মাইগ্রেন প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, জীবনযাত্রার পরিবর্তন।


জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যেমন দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা কমিয়ে এনে এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মাইগ্রেন অ্যাটাকের সময় ও তীব্রতা উভয়ই কমিয়ে আনা যেতে পারে। কারণ, এগুলো সামগ্রিকভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপরই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া যেহেতু মাইগ্রেনের কোনো প্রতিকার নেই, তাই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাই একমাত্র স্থায়ী উপায় এর কষ্ট থেকে বাঁচার। এসব নিয়মের নিয়মিত অনুশীলন আপনাকে মুক্তি দিতে পারে অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে।

বিজ্ঞাপন

চলুন জেনে নিই মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আগেই রুখে দেওয়ার বিশেষজ্ঞ-সমর্থিত ছয়টি টিপস—

১. ঘুমের নিয়মিত সময়সূচি রাখুন

ডা. রেড্ডি বলেন, সারা দিনের কোলাহলের পর মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একই সময় জেগে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সারা দিন অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এগুলোর বিশ্রামের জন্যও ভালো ঘুমের প্রয়োজন। এটি আপনার দুশ্চিন্তা কমানোর পাশাপাশি মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে মাইগ্রেন আক্রমণের সম্ভাবনাকেও কমিয়ে আনে।


২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

আপনি কী খাচ্ছেন, তা আপনার পুরো শরীরের ওপরই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই খাবারের দিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। ডা. রেড্ডি বলেন, এমন সব খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। তবে বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যা মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে। সেসব খাবার এড়িয়ে চলুন।
ডা. রেড্ডি বলেন, ব্যক্তিভেদে মাইগ্রেনের ওপর খাবারের প্রভাব পরিবর্তিত হয়। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা কারও মাইগ্রেনকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। এসব ট্রিগার আপনাকে নিজেই শনাক্ত করতে হবে। তবে সাধারণত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়গুলোর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন এনার্জি ড্রিংকস, সারা দিন অত্যধিক পরিমাণ কফি পান ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।

বিজ্ঞাপন

৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করুন

ডা. রেড্ডি বলেন, প্রতিদিন এক থেকে দুই লিটার তরল পান করুন। সেই সঙ্গে বিশেষত রাতের দিকে চিনিযুক্ত বা ভারী ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়গুলো এড়িয়ে চলুন। যদিও চাইলে দিনের বেলা অল্প পরিমাণে এসব গ্রহণ করতে পারেন। তবে হালকা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বা গ্রিন-টি অনায়াসে পান করতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না। আপনি যখন ডিহাইড্রেটেড থাকেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক ও আপনার দেহের অন্যান্য টিস্যু সংকুচিত হয়। এটি স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলতে পারে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. ব্যায়ামকে অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টা করুন

দ্য জার্নাল অব হেডেক অ্যান্ড পেইনে প্রকাশিত ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যায়াম মাইগ্রেনের আক্রমণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
ডা. রেড্ডির মতে, হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম সামগ্রিক মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম আদর্শ সময় হিসেবে ধরা হয়।

৫. মাইগ্রেন ট্রিগারগুলো শনাক্ত করুন ও এড়িয়ে চলুন

শুধু খাবারই কিন্তু মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে না। এমন আরও অনেক কিছুই রয়েছে, যা আপনার মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে। এসব আপনাকে শনাক্ত করে এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন উজ্জ্বল বা ফ্ল্যাশিং আলো, উচ্চ ভলিউমের মিউজিক, ক্যাফেইন কিংবা আকস্মিক আবহাওয়ার পরিবর্তন।


৬. দুশ্চিন্তা করবেন না

দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা সহজ কোনো কাজ নয়, তবে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। দুশ্চিন্তা কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, ধ্যানের মতো কাজগুলো করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২: ০৯
বিজ্ঞাপন