চিকিৎসকদের মতে, মানুষের শরীরে বেশ কিছু রোগের উপসর্গ বাসা বাঁধতে শুরু করে যখন তার মন খারাপ বা ব্যাড মুড থাকে। মন খারাপের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারলে অনেক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। অর্থাৎ সুস্থ থাকতে মন ভালো রাখা ও হাসির কোনো বিকল্প নেই। অনেকেই বলতে পারেন মন ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি কী? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতে, মন ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ সমাধান—হাসি। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে সারা দিন যদি কেউ হাসে আর মন ভালো রাখে, তবে অনেকের তুলনায় সে বেশি সুস্থ থাকে, যা গবেষণায়ও প্রমাণিত। তাই কারণ কিংবা অকারণে হাসতেই হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক হাসির উপকারিতা ও কীভাবে আরও বেশি হাসবেন সেই পদ্ধতি।
–হাসির কারণে মানুষের শরীর অনেক বেশি বাতাস গ্রহণ করে ফলে রক্তে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রবাহিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
–হাসলে শরীরে ‘কর্টিসল’ ও ‘অ্যাড্রিনালাইন’ নামের স্ট্রেস হরমোন কমে যায়, যা দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
–হাসি-খুশি মানুষদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গোমড়ামুখোদের চেয়ে বেশি।
–যখন কেউ হাসে, তখন তার শরীর থেকে এন্ড্রোফিন হরমোন নির্গত হয়। এই হরমোনকে বলে ‘ফিল-গুড’ বা ভালো বোধ করার হরমোন, যা আমাদের পুরো শারীরিক ব্যবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
–যদি কেউ এক মিনিট সময় ধরে হাসে, তবে শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি বার্ন হয়, সেই পরিমাণ ক্যালরি বার্ন করতে ট্রেডমিলে হাঁটতে হবে ৬ থেকে ১০ মিনিট।
–হাসির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পায়।
–হাসির মাধ্যমে দ্রুত ব্যথা উপশম হয়।
–হৃদ্রোগীদের জন্য হাসি হতে পারে বড় ওষুধ। কারণ, হাসলে হৃদ্যন্ত্র ভালো থাকে।
–মানবিক সম্পর্ক ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ দৃঢ় করে তুলে হাসিমুখ।
–বেশি হাসতে চাইলে হাসির রুটিন করে নিন। যেমনটা প্রাত্যহিক ব্যায়াম কিংবা খাদ্যাভ্যাসের জন্য আছে, তেমন নির্দিষ্ট সময়ে সেটা হতে পারে প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে হাসুন। তার জন্য প্রতি সকালে একটি করে কৌতুক পড়তে পারেন। আজকাল অ্যাপস স্টোরে জোকসের বিভিন্ন অ্যাপস পাওয়া যায়, অ্যাপসই প্রতিদিন আপনাকে সকালে কৌতুক সরবরাহ করবে, এমন একটি অ্যাপস ইনস্টল করেই দেখুন না।
–কিছু মানুষ আছেন যাঁরা বেশ মজা করে কথা বলেন, কৌতুক করেন, হাসি-খুশি থাকেন। এমন কারও বন্ধু হয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে থেকে নিজেও হাসিতে মেতে থাকুন।
–আজকাল ইউটিউব, ফেসবুকে স্ট্যাডআপ কমেডিয়ানদের প্রচুর মজার মজার ভিডিও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখুন। তাদের চ্যানেল বা পেজ লাইক দিয়ে রাখুন। প্রতিদিন একটি ভিডিও আপনার মন ভালো করে দেবে নিশ্চিত।
–সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বন্ধুদের মধ্য থেকে যাঁদের কথা বা স্ট্যাটাস ভালো লাগে বা মজার, তাঁদের ফলোয়ার হয়ে যান। এটাও হতে পারে আপনার হাসির উৎস।
–প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একবার কোনো ফানি বা কমেডি সিনেমা দেখুন। এ ছাড়া আজকাল বিভিন্ন ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে হরহামেশাই কমেডি সিরিজ প্রচারিত হচ্ছে। সময় করে প্রতিদিন একটি এপিসোড দেখে হাসিতে ভরিয়ে তুলুন সেই সময়গুলো।
–প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে বেশি সময় কাটান। তার সঙ্গে মজার এবং সুখের স্মৃতির রোমন্থন করুন। দেখবেন কেমন মন খুলে হাসছেন আর দ্রুত মনও ভালো হয়ে যাবে।
–ঘরের বা পরিবারের সবচেয়ে ছোট মানুষটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলুন। তার সঙ্গে কথা বলে, ঘুরতে গিয়ে বা খেলাধুলা করলে আপনা–আপনিই হাসি পাবে।
–কুকুর বা বিড়ালের মতো মজার কোনো পোষা প্রাণী পালতে শুরু করে দিন। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আপনাকে বেশি বেশি হাসতে সাহায্য করবে।
–বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা অফিসের কলিগদের সঙ্গে সময় বের করে নিয়ে কোনো ফান গেম খেলতে পারেন। শারীরিকভাবে সম্ভব না হলে অনলাইনেও গ্রুপ তৈরি করে খেলতে পারেন কোনো মজার খেলা।
–মজার কথার বা ছবি দিয়ে স্ক্র্যাপবুক তৈরি করা শুরু করে দিন। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের বেছে নিতে পারেন। কারণ, পরিবারের চেয়ে আনন্দের আর মজার জায়গা যে নেই। পরিবারের সদস্যদের কোনো মজার কথা বা ছবি স্ক্র্যাপবুকে লাগান বা টুকে রাখুন। দিনের সেরা মজার কথাও থাকতে পারে সেই স্ক্র্যাপবুকে। পরবর্তী সময় সেগুলো দেখলে আপনাই হাসি পাবে।
–নিজেকে নিয়ে ভাবুন। এর আগে কোনো কাজে বা ঘটনায় বেশ মজা পেয়ে হেসেছিলেন, সেটার পুনরাবৃত্তি করুন।
ছবি: সাইফুল ইসলাম