রোজ কতক্ষণ কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে, জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ব্যায়াম আমাদের সুস্বাস্থ্যের বাহক ও দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি। কিন্তু জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে ব্যায়াম করার জন্য জুতসই সময় আলাদা করে খুঁজে পাওয়া অনেকের জন্যই একটু কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ১৮ বছর বয়স ও এর ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মাঝারি ধরনের ব্যায়ামের ব্যাপ্তিকাল হওয়া উচিত সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা। অর্থাৎ, প্রতিদিন ২১ মিনিট ব্যায়াম করাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে যথেষ্ট। এটুকু সময় কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিছুই না। কিন্তু এ গবেষণায় এটাও বলা হচ্ছে যে রোজ একেবারে ছাড় না দিয়ে এটুকু সময় সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে হবে, যদি সুফল পেতে চাই আমরা।

যাঁরা ব্যায়াম করতে চান কিন্তু সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অ্যাকটিভিটি করতে পারেন না, তাঁদের জন্য কার্ডিও বেশ উপযোগী। কার্ডিও হলো এমন যেকোনো ব্যায়াম, যা আপনার হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখে আর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়ায়। এটি রক্তচাপ কমাতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক করতে আর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আপনি যদি কার্ডিওজাতীয় ব্যায়াম নতুন নতুন শুরু করে থাকেন, তাহলে কীভাবে শুরু করবেন তা জেনে নিন:

১. হৃৎস্পন্দনের হার পর্যবেক্ষণ করুন

প্রথম প্রথম কার্ডিও শুরু করা কিছুটা কঠিন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে আপনি এটিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। কার্ডিও করার সময় নিজের হৃৎস্পন্দনের দিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন আপনার জন্য আদর্শ হৃৎস্পন্দনের হারের সীমা কতটুকু। তা ছাড়া আপনি আপনার স্বাভাবিক সর্বোচ্চ হার্ট রেটের (HR) ৬০%- ৭০% বেশি হার্ট রেট থেকেও কার্ডিও শুরু করতে পারেন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পরিসরকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কার্ডিওর জন্য সর্বোচ্চ হার্ট রেট নির্ধারণ করার একটি সাধারণ সূত্র হলো:  
সর্বোচ্চ হার্ট রেট = ২২০ - আপনার বয়স।
অর্থাৎ যদি আপনার বয়স ৪০ হয়, উদাহরণস্বরূপ, আপনার জন্য সর্বোচ্চ হার্ট রেট হলো ১৮০ বিট প্রতি মিনিটে (BPM)। কার্ডিও চলাকালে এর চেয়ে ওপরে BPM যাওয়া মানে আপনি হার্টের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছেন, যা ঠিক নয়।
রোজ ব্যায়ামের অভ্যাস গড়তে প্রথম প্রথম এমন সব ব্যায়াম বেছে নিন, যেগুলো করার সময় কারও সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে মেতে না ওঠা গেলেও আপনি শ্বাসপ্রশ্বাসের ফাঁকে কথা বলতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

২. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

অনেকেই মনে করেন, কার্ডিওয়ের জন্য প্রথমেই একটা কষ্টসাধ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। যেমন পাঁচ ঘণ্টা ব্যায়াম করা, প্রতি সপ্তাহে অত্যন্ত ভারী ওয়ার্কআউট বা ম্যারাথন দৌড়ের প্রশিক্ষণ নেওয়া।

এত কষ্টসাধ্য কিছু না করে বরং ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা অর্জন করলে আরও ভালো ফল আশা করা যায়। কার্ডিও করে ভালো করতে প্রথমে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। যেমন দৈনিক ১৫ মিনিট হাঁটুন। এক বা দুই সপ্তাহজুড়ে নিয়মিত হাঁটার পর ধীরে ধীরে আপনার ব্যায়ামের ব্যাপ্তিকাল এবং লোড বাড়ান যতক্ষণ না আপনি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি কার্ডিও করতে সক্ষম হন।

৩. ব্যায়ামকে পরিশ্রম হিসেবে না দেখে উপভোগ করুন

যেসব ব্যায়ামে আপনি প্রচণ্ড হাঁপিয়ে ওঠেন, তা পরিহার করুন। আপনার পছন্দের আর জীবনধারার সঙ্গে মানানসই শারীরিক ব্যায়ামগুলো খুঁজুন। এটা নাচ, সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে খেলাধুলার মতো যেকোনো কিছু হতে পারে। শারীরিক অ্যাকটিভিটির ওপরে বিরক্ত হওয়া এড়াতে আপনি কিছু টিপস ফলো করতে পারেন। একাধিক ধরনের ব্যায়াম চেষ্টা করে দেখুন আপনার কোনটা ভালো লাগে। তারপর সেটিই অনুশীলন করুন যতক্ষণ না এটি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়। ভবিষ্যতে আরও নতুন কী কী ব্যায়াম চেষ্টা করে দেখবেন, তার পূর্বপরিকল্পনা করুন। এতে আপনি ব্যায়াম করতে সব সময় অনুপ্রাণিত থাকবেন।

৪. একজন ওয়ার্কআউট করা বন্ধু খুঁজুন

আপনি যদি মিশুক স্বভাবের হন, তাহলে একজন বন্ধু থাকলে আপনার ওয়ার্কআউট আরও আনন্দ পূর্ণ হবে। আপনি পার্কে দল বেঁধে শরীর চর্চা করে এমন দলেও যোগ দিতে পারেন। বা যেতে পারেন জিমে।

একটি নতুন ব্যায়ামের রুটিন শুরু করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে এটি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে আপনি শিগগিরই আপনার নিজের স্বাস্থ্য এবং ফিটনেসে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের সুফলগুলো দেখতে পাবেন। আর এই ব্যায়াম নিয়মিত দিনে ২০ মিনিট করাই যথেষ্ট, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সূত্র: সিএনবিসি

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন