রোজা রেখে কিটো ডায়েট করলে হতে পারে যেসব বড় ক্ষতি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গত কয়েক বছরের ডায়েট ট্রেন্ড অনুযায়ী ওজন কমানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ডায়েট ছিল কিটো ডায়েট। কিটো ডায়েটের সাহায্যে যেহেতু দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব তাই আজকাল এর সম্পর্কে  অনেকেই অবলম্বন করেন এ পন্থা। কিন্তু কিটো ডায়েটের সাহায্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওজন কমানো সম্ভব হলেও এর বেশ কিছু মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যা নিয়ে অনেকেরই বিশেষ কোনো ধারণা নেই। যেহেতু বর্তমান সময়ে এসেও অনেকেই না জেনে বুঝেই ওজন কমানোর জন্য কিটো ডায়েটকে বেছে নিচ্ছেন, তাই এর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা বেশ জরুরি। বিশেষ করে রোজা রেখে কিটো ডায়েট করলে হিতে বিপরীত ঘটে যেতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক, স্বাস্থ্যে কিটো ডায়েট কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

রোজা রেখে কিটো ডায়েট করলে হিতে বিপরীত ঘটে যেতে পারে।
রোজা রেখে কিটো ডায়েট করলে হিতে বিপরীত ঘটে যেতে পারে।


১. কিটো ডায়েটে আপনি যে দ্রুত ওজন কমান, তা কেবলই পানি

দ্রুত ওজন কমানোর জন্যই মূলত কিটো ডায়েট জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তবে জেনে অবাক হবেন, কিটো ডায়েটে প্রাথমিকভাবে যে ওজন হ্রাস হয়, তা কেবলই পানি। এই পানি মূলত আপনার লিভারের কোষগুলোয় গ্লুকোজের সঙ্গে জমা থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ঠিক নয়। বিশেষ করে, রোজার সময় লম্বা সময় ধরে পানি পান করা হয় না বলে এই পানিশূন্যতা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বিজ্ঞাপন

২. আপনার কিডনিতে চাপ পড়তে পারে

ডিম, মাংস ও পনিরের মতো উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারগুলোই মূলত কিটো ডায়েটের প্রধান অংশ। কারণ, এই ডায়েটে কার্বস কিংবা কার্বোহাইড্রেট থাকে মাত্র ৫ শতাংশ। এই উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারগুলোর অতিরিক্ত গ্রহণ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এর কারণ হলো অতিরিক্ত প্রাণিজ চর্বিযুক্ত খাবার আপনার রক্ত ও প্রস্রাবকে আরও অ্যাসিডিক করে তুলতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের নির্গমন বৃদ্ধি পায়। আরও বেশ কিছু গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, কিটো ডায়েট আপনার প্রস্রাবে সাইট্রেটের পরিমাণ হ্রাস করে। এই সাইট্রেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে আবদ্ধ হয় এবং কিডনিতে পাথর গঠনে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই এর পরিমাণ কমে গেলে পাথরের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই যাঁদের দীর্ঘস্থায়ীভাবে কিডনিতে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই কিটো ডায়েট এড়িয়ে চলতে হবে।

ডিম, মাংস ও পনিরের মতো উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারগুলোই মূলত কিটো ডায়েটের প্রধান অংশ
ডিম, মাংস ও পনিরের মতো উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারগুলোই মূলত কিটো ডায়েটের প্রধান অংশ


৩. পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে

যেহেতু কিটো ডায়েট বেশ কয়েকটি খাদ্য উপাদানে সীমাবদ্ধ, তাই এটি সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হতে পারে।বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায়, কিটো ডায়েট পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহ করতে পারে না। তাই মাসব্যাপী রোজা রেখে এই চরম ডায়েট অনুসরণ করলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

৪. হাড়ের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে

কিটো ডায়েট মোটেও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিটো ডায়েটের ফলে হাড়ে দেখা দিতে পারে সমস্যা। হাড়ে খনিজের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ভাঙনের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

৫. দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে

হৃদরোগ বা ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় কেটোজেনিক ডায়েটের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে এগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া অনেক গবেষণা থেকে জানা যায়, উচ্চ চর্বিযুক্ত এবং কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ডায়েটগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।এক লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে জানা যায়, এই ধরনের লো-কার্বযুক্ত ডায়েটগুলো মানুষের হৃদরোগ, ক্যানসার থেকে শুরু করে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত ঘটাতে পারে। মোট কথা, কিটো ডায়েট অতি দ্রুত ওজন হ্রাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসুবিধা দিলেও এটি পুষ্টির ঘাটতি, হজমজনিত সমস্যা, হাড়ের দুর্বলতা এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই এসব জটিলতা ও পুষ্টির ঘাটতির ঝুঁকি হ্রাস করতে সুষম খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে এবং এই ডায়েটে থাকাকালীন আপনার পুষ্টির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শও নিতে পারেন। বিশেষ করে রোজা রাখলে এমনিতেই খাবারে অনিয়ম হয়ে যায় বলে এসময় কিটো ডায়েট থেকে দূরে থাকাই ভালো।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, হার্ভার্ড হেলথ

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ২১: ৫৩
বিজ্ঞাপন