রোজায় মেটাবলিজম ঠিক রাখবে এই ৯টি খাবার ও পানীয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া আসলে কী? আমরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করি, তা আমাদের নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যয় হয়। যেমন খাদ্য হজম করা, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখা, দৈনন্দিন কাজের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি মজুত করা ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া। মজার ব্যাপার হলো, সব মানুষের মেটাবলিজম সমান হয় না। কারওটা দ্রুত হয়, আবার কারও কারও ধীরগতির। মেটাবলিজম দ্রুত হলে শারীরবৃত্তীয় কাজে বেশি ক্যালরি ব্যয় হয়। এতে করে অতিরিক্ত খাবার খেলেও তা ব্যয় হয়ে যায়। মন্থর মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে ঘটে একদম উল্টোটি। তাই ধীর মেটাবলিজমের মানুষেরা নিজেদের অভাগাই ভেবে থাকেন। তবে কিছু কিছু খাবার ও পানীয় রয়েছে, যাতে থাকা পুষ্টিগুণ আপনার বিপাকক্রিয়ার গতিকে কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। এই খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবারে যোগ করলে তা ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।

১. ডিম

একটি সেদ্ধ ডিমে প্রায় ৬.২ গ্রাম প্রোটিন থাকে।আমাদের বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়াতে সবচেয়ে উপকারী খাদ্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। প্রোটিন–জাতীয় খাবার হজম করতে দেহকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়। ফলে শর্করা বা চর্বিজাতীয় খাবারের তুলনায় প্রোটিন জাতীয় খাবার ওজন দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় ক্যালরির বেশির ভাগ অংশ প্রোটিন–জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করেন, তাঁদের মেটাবলিক রেট সাধারণত অন্যদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

২. ফ্ল্যাক্স সিড

এতে একধরনের ফাইবার থাকে যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়া প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকযুক্ত খাবার নিয়ে বেশ সচেতন। যার মূল লক্ষ্য অন্ত্র উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা, যা হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ফাইবার জাতীয় খাবার হজমে বেশ অনেকটা সময় লাগে। তাই মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, তিসির বীজ সম্ভাব্য স্থূলতা থেকে রক্ষা করে এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

৩. ডাল

২০১৬ সালে ৪১টি ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে বিভিন্ন ধরনের ডাল খাবারে যোগ করলে তা মেটাবলিজমের সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। ডালে থাকা প্রোটিন মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়ক, অপর দিকে ডালে থাকা ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

বিজ্ঞাপন

৪. মরিচ

তাজা বা শুকনা মরিচ আছে, এমন ঝালজাতীয় খাবার বিপাকক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। মরিচে ক্যাপসাইসিন নামক একটি যৌগ থাকে। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন বিপাকীয় হারকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় আরও উঠে আসে যে এটি শরীরের চর্বি পোড়ার গতি বাড়িয়ে এবং ক্ষুধা হ্রাস করে। এমনকি ২০১২ সালের একটি গবেষণায় এ–ও উঠে আসে যে ক্যাপসাইসিন–সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫০ ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে।

৫. আদা

আদা শরীরের তাপমাত্রা এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, পাশাপাশি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আদা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।  

৬. গ্রিন টি

কয়েক বছরে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রিন টি। ওজন কমাতে সাহায্য করে বলে ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রিতেও জনপ্রিয় এই পানীয়। গবেষকদের দাবি, গ্রিন টিতে বিদ্যমান উপাদানগুলো বিশ্রামরত অবস্থায়ও চর্বির বিপাকে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। তবে গ্রিন টির আরও বেশ কিছু গুণাগুণ আছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬৩ জন ব্যক্তির ওপর ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দিনে ৪ কাপ গ্রিন টি পান করলে শরীরের ওজন, বিএমআই, কোমরের আকার এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।

৭. কফি

কফিতে থাকা ক্যাফেইন বিপাকক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে। তবে দুধ-চিনি যুক্ত কফিতে ক্যাফেইনের ঘনত্ব কমে যায়, ফলে এটি শুধু ক্যালরি বৃদ্ধি করে। তাই বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ানোর জন্য দুধ চিনি ছাড়া, অর্থাৎ ব্ল্যাক কফিই শ্রেয়।

৮. সবুজ শাকসবজি

শাকসবজি আপনার বিপাকের হার বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কারণ, এতে থাকা আয়রন বিপাক, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য। দেহে আয়রনের শোষণ বাড়ানোর জন্য ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। তাই সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার, যেমন লেবু, টমেটো ইত্যাদি যোগ করুন। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা বিপাকীয় হারকে ত্বরান্বিত করে এবং ৩০০টির বেশি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে।


৯. পানি

শুনে অদ্ভুত মনে হলেও পানি মেটাবলিজ বৃদ্ধি করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু জার্মান বিজ্ঞানীর পরীক্ষায় উঠে এসেছে যে প্রতি ৫০০ মিলি পানি পান করায় মেটাবলিজম ৩০ শতাংশ এবং শক্তির ব্যয় ১০০ কিলোজুল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে অতিমাত্রায় পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন, অতিমাত্রায় পানি পান করা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪, ২২: ৫৯
বিজ্ঞাপন