পিসিওএস যেকোনো বয়সের নারীদের হতে পারে। এর কারণে অনিয়মিত মাসিক চক্র, শরীরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত চুল, ব্রণ, ওজন বৃদ্ধি, মাথার চুল পড়াসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা না গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার পাশাপাশি এই নিয়মগুলো মেনে চললে পিসিওএস নিয়েও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী ১০টি টিপস।
পিসিওএসে আক্রান্ত নারীরা ইনসুলিন সংবেদনশীলতায় ভোগেন। অর্থাৎ তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। এটি ওজন বৃদ্ধি ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা ব্যায়াম ও নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস করতে পারে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যেকোনো ধরনের বীজজাতীয় খাবার, যেমন বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ছোলা, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর বীজ, শিমের বীজ, ফ্ল্যাক্সের বীজ, চিয়ার বীজ ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন। এতে শরীরে ভিটামিন ই ও ওমেগা থ্রির চাহিদা পূরণ হবে। গবেষণা বলে, এসব পুষ্টি উপাদান পিসিওএসের লক্ষণ কমিয়ে আনে।
পিসিওএস থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। এ রোগে হরমোনের অসামঞ্জস্যের কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বেশি ফাইবার ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সযুক্ত খাবার, যেমন হোলগ্রেইন ওটস, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত প্রভৃতি খেতে হবে।
নিয়মিত গ্রিন টি ও স্পিয়ারমিন্ট (পুদিনাপাতা) টি চুল পড়া, ব্রণ এবং চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল ও শাকসবজি রাখুন। তিনবেলার খাদ্যতালিকাতেই টাটকা সবজি যোগ করুন। প্রতিবেলা অন্তত এক কাপ সবজি খাবেন। টকজাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনি শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ ইত্যাদি কম চর্বিযুক্ত আমিষ খেয়ে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করুন। গরু-খাসির মাংস ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত যেকোনো ধরনের আমিষ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
চিনি ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা আপনার পিসিওএসের লক্ষণগুলোকে আরও তীব্র করে দিতে পারে। তাই আলগা চিনিযুক্ত যেকোনো খাবার পরিহার করুন।
ঠিকমতো ঘুম না হওয়া পিসিওএসের একটি বড় লক্ষণ। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যেতে। এর আগে যেকোনো ধরনের ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ডার্ক চকলেট ম্যাগনেশিয়াম, তামা, জিংক ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানে ভরপুর। পিসিওএসের রোগীদের দেহে এসব উপাদানের ঘাটতি থাকে। তাই প্রতিদিন স্বল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট পিসিওএসের রোগী খেতে পারেন।
শুধু ওজন কমানো নয়, পিসিওএসে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও খুবই জরুরি। কোন খাবার কতটুকু গ্রহণ করলে আপনার শরীরের জন্য ভালো হবে, সে ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো সাহায্য করতে পারবেন একজন পুষ্টিবিদ। এ রোগের ডায়েট যেহেতু একটু ভিন্ন, তাই একজন পুষ্টিবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করে নিয়মিত ডায়েট ফলো করলে পিসিওএসের জন্য ভালো ফল পাওয়া যায়।
মানসিক চাপ পিসিওএসের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করে দেয়। তাই চেষ্টা করবেন নিজের মনকে সব সময় ভালো রাখতে। যোগব্যায়াম, দিনে কিছুটা সময় নিজের যত্নের পেছনে দেওয়া, শখের কাজ করা ইত্যাদি মাধ্যমে নিজের মনকে সব সময় ভালো রাখুন।
ছবি: পেকজেলসডটকম
তথ্যসূত্র: পিসিওএস নিউট্রিশন সেন্টার, হেলদি পিসিওএস