চুল পাকা নিয়ে আমাদের ভেতর একধরনের ভয় কাজ করে। বিশেষ করে তরুণ বয়সে হঠাৎ দু-একটা সাদা চুল দেখা দিলে অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এর সঙ্গে বহুদিন ধরে প্রচলিত একটি ধারণা আছে। একটি পাকা চুল তুললে আশপাশের আরও অনেক চুল একসঙ্গে পেকে যাবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আসলে নিছকই একটি মিথ।
মাথার প্রতিটি চুল গজায় একটি নির্দিষ্ট ফলিকল বা শিকড় থেকে। যখন একটি চুল টেনে ফেলা হয়, তখন সেই ফলিকল থেকেই নতুন চুল জন্ম নেয়। একসঙ্গে একাধিক চুল হঠাৎ করে গজানো বা অন্য ফলিকলের চুলের রং পরিবর্তন হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই একটি চুল তোলার কারণে আশপাশের চুল পেকে যায় না।
চুলের রং নির্ধারণ করে মেলানিন নামের প্রোটিন বা পিগমেন্ট। মেলানিন যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে চুল কালো বা গাঢ় রঙের হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা জেনেটিক কারণে মেলানিন উৎপাদন কমতে থাকে। তখনই চুল সাদা বা ধূসর হয়ে যায়। মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসে ঘাটতি কিংবা অতিরিক্ত রোদের সংস্পর্শও মেলানিন কমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে সময়ের সঙ্গে চুল পাকা স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে থাকে।
যদিও পাকা চুল তুললে অন্য চুল পেকে যায় না, তবে বারবার টেনে তুললে মাথার ত্বকের ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে নতুন চুল গজাতে দেরি হয়, কখনো কখনো স্থায়ীভাবে সেই জায়গা থেকে চুল ওঠাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি মাথার ত্বকেও স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই চুল পাকা শুরু হয়। পাশাপাশি মানসিক চাপ, ঘুমের অনিয়ম, পুষ্টির ঘাটতি কিংবা পরিবেশগত প্রভাব—সবকিছু মিলিয়ে হঠাৎ একসঙ্গে কয়েকটি চুল পেকে যেতে পারে। তখন অনেকেই ভুলভাবে ধরে নেন, একটি চুল তুলে ফেলার কারণেই আশেপাশেরগুলো পেকে গেছে।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে দরকার সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। চাইলে বাজারে সহজলভ্য ভালো মানের হেয়ার কালার ব্যবহার করা যায়। তবে সবচেয়ে সুন্দর সমাধান হলো চুল পাকার বিষয়টিকে জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে মেনে নেওয়া। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাই আসল সৌন্দর্য।