বিয়ে আমাদের জীবনের এক অনন্য উৎসব। আর এ সময় সবকিছুই হওয়া চাই যেন সবচেয়ে সুন্দর আর বিশিষ্ট। আর বিয়ের অনুষ্ঠানের আসল মজা রাত জেগে গানের সুরে সুরে বিয়ের তত্ত্বের আয়োজনে। কনের বাড়ির ডালাকুলা বেশি সুন্দর নাকি বরের বাড়ির, এই নিয়ে চলে খুনসুটি আর প্রতিযোগিতা। বরকনের বিয়ের পোশাক অর্থাৎ শেরওয়ানি, শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি তো বটেই, প্রসাধনী, জুতা, নাগরা, নিকটাত্মীয়দের জন্য উপহারস্বরূপ পোশাকসহ খুঁটিনাটি সব তত্ত্বের ডালা কুলায় সাজিয়ে পাঠানো হয়।
তাই তো এই ভরা বিয়ের মৌসুমে ডালাকুলার দোকানে নভেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে ব্যস্ত সময়। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল মোড়ে আর চকবাজারের পাইকারি মার্কেটে ডালাকুলার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এগুলোর রকমসকম আর দরদাম।
এলিফ্যান্ট রোডের বধূবরণ দোকানের কর্মচারী মুসা জানালেন এই ডালাকুলার দোকানগুলো ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সেই আশির দশকের সময় থেকে ধীরে ধীরে কাগজের ডালাকুলার প্রচলন শুরু হয়। এরপর নব্বইয়ের দশকে আসে বাঁশের তৈরি ডালা। ২০০০ হাজার সালের পর থেকে বেশি জনপ্রিয় কাঠ ও প্লাস্টিকের ডালাকুলা।
বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, শেরওয়ানি স্ট্যান্ডে সাজানো যায় যে ডালাকুলা, সেগুলোর চাহিদা বেশি। এই ডালাগুলোর দাম ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে কমের মধ্যে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় ডালা। আকার যত বড় হয়, ডালার দাম তত বেশি। ডালার একপাশে কৃত্রিম বাহারি রঙের ফুল ও পুঁতি বসানো পাড় জনপ্রিয়। এ ছাড়া দেখা যায়, বরকনের পুতুল দিয়ে সাজানো ডালার চাহিদা বেশি। সেটা আবার নিজের পছন্দমতো সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাটা সিগন্যাল মোড়ের শাহেরা ট্রপিক্যাল সেন্টারের নিচতলা এবং দোতলায় আবদুল্লাহ জরি হাউস, বিয়েবাড়ি, চাঁদনী, সাফওয়ান গয়না গ্যালারি, বাঁধন ইত্যাদি নামের অনেক দোকানে বিয়ের তত্ত্বের ডালা পাওয়া যায়। মার্কেটের তৃতীয় তলায় রয়েছে তাদের কারখানা। কেবল মঙ্গলবার ছাড়া অন্য দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই দোকানগুলো খোলা থাকে।
বিয়ে আর হলুদে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে কনে ও বরের হাতের রাখি। ঝুল ও কাজের পরিমাণ যত বেশি, দামও তত বাড়ে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা ও ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন রকমের রাখি। দেখা গেল, রাখির নিচে পুঁতির ঝালর থাকে, যাকে বলা হয় কালিরা।
চকবাজারে মূলত পাইকারি দামে ডালাকুলা পাওয়া যায়। চকবাজার শাহী মসজিদের ১ নম্বর গেটের কাছে কালাচান মার্কেট। পাশেই শরীফ ম্যানশন। সেখানকার শশী ডালাকুলা হাউসের স্বত্বাধিকারী পাভেল জানালেন, সিঙ্গেল ডালার চাহিদা অনেক বেশি।
পাইকারিতে ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা ডজন বিক্রি হয়। যদি খুচরা নিতে চান কেউ, তাহলে ন্যূনতম এক সেট ডালা নিতে হবে। স্টেজ ডেকোরেশন করা কুলার চাহিদা অনেক বেশি। সিঁড়ি দেওয়া স্টেজ কুলার দাম ৫৫০ টাকা। ঝুড়ি আর কুলার দাম ৭০০ টাকা থেকে শুরু। আয়নার ডিজাইন করা কুলার দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু।
লেস দেওয়া ঝুড়ি, ডালা, কুলা সাজানো হয় স্যাটিনে লেস দিয়ে। এমন ডালা তিনটি একসঙ্গে ৬০০ টাকা। মাছ আকৃতির ডালা ৩০০ টাকা, বেতের মাছের ডালা ৬৫০ টাকা জোড়া, কুলা ৪০০ টাকা, কাচের আয়নার দাম ৪৫০ টাকা, পালকি ৪৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এখানে। দেখা মিলল ময়ূরের পালক দিয়ে ডেকোরেশন করা কাবিননামা সই করার বিশেষ কলম।
যাঁরা একটু সাশ্রয়ী মূল্যে তত্ত্বের ডালাকুলা খুঁজছেন, তাঁরা চলে যেতে পারেন চকবাজারের পাইকারি মার্কেটে। চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসে এখানে এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এগুলো। উৎসবের আনন্দে এসব ডালাকুলা যেমন কাজ সহজ করে দেয়, তেমনি সৌন্দর্য বাড়ায় বিয়ের পুরো আয়োজনে।
ছবি: হালফ্যাশন