ভয় ধরানো সব নামের এক নিরীহ গাছের গল্প
শেয়ার করুন
ফলো করুন

স্নেক প্ল্যান্ট অতি পরিচিত এক ইনডোর প্ল্যান্ট। বাসা, অফিস, রেস্টুরেন্টের আনাচকানাচে প্রায়ই দেখা যায় এই গাছ। এই গাছ চিরসবুজ। তলোয়ার আকৃতির পাতাগুলো ওপরের দিকে সোজা হয়ে থাকে। স্নেক প্ল্যান্টের বৈজ্ঞানিক নাম সেনসিভেরিয়া (Sansevieria)। ‘শাশুড়ির জিব’ নামেও এ গাছটি পরিচিত।

ঘরের সাজসজ্জাকে নতুন মাত্রা দিতে অনেকেই ঘরে রাখেন স্নেক প্ল্যান্ট। এরা খুব কম পানিতে বাঁচে। আলাদা করে কোনো যত্নও নিতে হয় না। নান্দনিকতার পাশাপাশি স্নেক প্ল্যান্টের রয়েছে অনেক গুণ। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এগুলো।

বাতাসকে দূষণমুক্ত করে

অন্যান্য গাছের মতো স্নেক প্ল্যান্টও দিনের বেলা কার্বন ডাই-অক্সাইড দূর করে বাতাস পরিষ্কার রাখে। তবে স্নেক প্ল্যান্টের রয়েছে এক অনন্য গুণ। রাতেও এটি কাজ করে সমানভাবে অর্থাৎ সেসময়ও কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করে গাছটি। তাই চাইলে আপনি আপনার শোবার ঘরেই রাখতে পারেন একটি স্নেক প্ল্যান্ট। এতে আপনার ঘরের বাতাস থাকবে দূষণমুক্ত, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর।

বিজ্ঞাপন

বাতাসের বিষাক্ততা দূর করে

বাতাসে যে শুধু ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইডই থাকে, তা নয়। বেনজিন, ফরমালডিহাইড, জাইলিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, টলুইনের মতো ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থও থাকে, যা ক্যানসারের মতো রোগের জন্যে দায়ী। স্নেক প্ল্যান্ট বাতাসের এসব দূষিত পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে তোলে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে হর্টিকালচার থেরাপি দিয়ে থাকেন অনেক চিকিৎসক। হর্টিকালচার হচ্ছে ফুল, ফল, সবজি, নানান গুল্মজাতীয় গাছ চাষ ও পরিচর্যা করার পদ্ধতি। যদিও শুধু স্নেক প্ল্যান্টের সঙ্গে মানসিক সুস্থতার কোনো গবেষণালব্ধ প্রমাণ নেই। তবে ২০১৮ সালের এক গবেষণা বলছে, সবুজ গাছ আমাদের হতাশাজনক মনোভাব কমায়, উদ্বেগ হ্রাস করে, কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। এতে আমাদের মনও ভালো থাকে।

কম যত্নেও বাঁচে

অন্যান্য ঘরে জন্মানো গাছের সঙ্গে তুলনা করলে স্নেক প্ল্যান্ট একটি অসাধারণ গাছ। এটির যত্ন নেওয়া খুব সহজ। আলাদাভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় না।
এটি রোদেও বাঁচে, ছায়াতেও বাঁচে। ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য রোগে সংক্রমিত হয় না বললেই চলে। খুব কম পানি দিলেও বেঁচে থাকে। আবার রি-পটিং করারও প্রয়োজন হয় না। এমনকি এদের বংশবিস্তার করানোও খুব সহজ। একটি পাতা আড়াআড়িভাবে তিন-চার টুকরা করে ভেজা মাটিতে অর্ধেক পুঁতে রাখলেই চলে। এতে দেড়-দুই সপ্তাহের মধ্যেই শেকড় গজায়।

বিজ্ঞাপন

বাতাসে আদ্রতা বাড়ায়, অ্যালার্জি থেকে বাঁচায়

স্নেক প্ল্যান্ট বাতাসে অক্সিজেন নিঃসরণ করে। এতে বাতাসের আদ্রতা বাড়ে। এর ফলে বাতাসে ধুলাবালু, ফুলের রেণু, নানা ছোট ছোট কণা—এসব কমে। এগুলো আমাদের অ্যালার্জি ও হাঁপানির মতো অসুখের কবল থেকে রক্ষা করে। বাতাসের ভারসাম্য রক্ষা করে, মান উন্নত করে স্নেক প্ল্যান্ট।

একটুখানি ‘ফেং শুই’য়ের সৌভাগ্য

চীনা সংস্কৃতিতে ‘ফেং শুই’ খুবই জনপ্রিয়। ‘ফেং শুই’ অর্থ বাতাস ও পানির পথ। অর্থাৎ ঘর সাজানোর সময় বাতাস ও পানি চলাচলকে প্রাধান্য দেয় এ শিল্প। এর মাধ্যমে ঘরে সাদৃশ্য এবং ভারসাম্য আনা হয়। অনেকে নিজের সৌভাগ্য বাড়াতে ঘর সাজান ফেং শুই পদ্ধতি মেনে। তবে ফেং শুই শুধু যে চীরাই মেনে চলেন, তা নয়। পশ্চিমা সংস্কৃতিতেও ফেং শুই পদ্ধতিতে ঘর সাজানো খুবই জনপ্রিয়।

চাইনিজরা মনে করে, ঘরের নেতিবাচক শক্তিকে শোষণ করতে পারে স্নেক প্যান্ট। এটি সম্পর্কে তিক্ততা ও ঈর্ষা দূর করে। তাই যাঁদের ঘরে অশান্তি বেশি হয়, তাঁদের শোবার কক্ষে স্নেক প্ল্যান্ট রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঘরে স্নেক প্ল্যান্ট রাখাতে বলা হয় শিক্ষার্থীদেরও; কারণ, এতে নাকি পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ে। যদিও এসব ক্ষেত্রে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে আপনি চেষ্টা করে একবার দেখতেই পারেন! এত গুণবান গাছ আপনার সৌভাগ্য বাড়ালেও বাড়াতে পারে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন