সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ৯টি কাজ করলে আপনি ট্রলের শিকার হতে পারেন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বর্তমানে আমাদের মধ্যে জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনা কিংবা কাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার প্রবণতা দেখা যায়। এমনও হয়তো অনেকবার হয়েছে যে ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামে কোনো কিছু পোস্ট করার পর আমরা তা ডিলিট করে দিয়েছি। হয়তো রাতের পর রাত এ-ও ভেবেছি যে পোস্টটি ইতিমধ্যেই যারা দেখে ফেলেছে, তারা আমাদের বিরক্তিকর কিংবা বোকা ভাবছে কি না। আর আজকাল যেকোনো ইস্যুতে পোস্ট ভাইরাল হয়ে প্রায়ই ট্রলের শিকার হতে হয় যে কাউকে। তাই এখানে পা ফেলতে হবে বুঝেশুনে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাই বা না চাই, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকটা সময় আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করি। কোন বন্ধু নতুন চাকরি পেল, কে বিদেশে বেড়াতে গেল, কে কোন রেস্তোরাঁয় কী খেয়েছে ইত্যাদি নানা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের সামনে আসতেই থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে।

নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে একটি পাবলিক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরার আগে আমাদের চিন্তাভাবনা করে নেওয়া উচিত। কারণ, আমাদের করা প্রতিটি পোস্ট আমাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধারণা তৈরি করে। আজকাল আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে যা পোস্ট করি, তা সত্যিই মানুষ আমাদের কীভাবে দেখে, তা নির্ধারণ করতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও আমরা না বুঝে এমন অনেক কিছু পোস্ট করে থাকি, যা আমাদের মানুষের সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। আর এমন বিভিন্ন কারণে আমরা ট্রলের শিকার হই, যা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে। এবার এমন ১০টি জিনিস দেখে নেওয়া যাক, যা সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের অনলাইন ব্যক্তিত্বকে সমালোচনার মুখোমুখি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

১. ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া

মোটামুটি আমাদের সবার বন্ধু মহলে এমন একজনকে পাওয়া যাবে, যে সকালের নাশতা থেকে শুরু করে নতুন কেনা চিরুনি-প্রতিটি জিনিস সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পছন্দ করে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি তেমন দৃষ্টিকটু মনে না হলেও প্রতিনিয়ত নিজের জীবনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরলে মানুষ আপনার ব্যক্তিগত জীবনে মতামত দেওয়ার সুযোগ পাবে। এবং যেহেতু আপনি নিজেই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার জনসম্মুখে তুলে ধরছেন, তাই সবাই আপনার জীবনে নাক গলানোকে নিজেদের অধিকার হিসেবে মেনে নেবে। গোপনে আপনাকে নিয়ে চায়ের কাপে চর্চাও হবে প্রতিনিয়ত। তাই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত রাখাটাই শ্রেয়।

বিজ্ঞাপন

২. প্রতিনিয়ত নেতিবাচক কথা বলা

ভালো-খারাপ মিলিয়েই আমাদের প্রতিদিনের জীবন। কখনো হয়তো সকালে জ্যামে পড়ে দুই ঘণ্টা দেরি হয়ে যেতে পারে কিংবা আসার পথে চলন্ত কোনো গাড়ি আপনাকে কাদাপানিতে ভিজিয়ে দিতে পারে। এসব টুকটাক বিষয়ে মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাও নতুন কিছু নয়। তবে বিপত্তি ঘটে যখন প্রতিনিয়ত আপনি শুধু জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোই সবার সামনে তুলে ধরবেন।

আবার হয়তো কোনো সুন্দর ছবি বা পোস্ট সবাই শেয়ার করছেন, প্রশংসায় ভাসছেন। আর আপনি আপনার নেতিবাচকতার ঝুলি খুলে দিলেন এ নিয়ে এক অভিযোগে ভরা স্ট্যাটাস বা পোস্টে। এমনিতে মানুষ হিসেবে আমরা নেতিবাচক ব্যাপারগুলোর সঙ্গে সহজেই মানসিকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারি। তাই আপনার পোস্ট করা নেতিবাচক অনুভূতিগুলো আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা অন্যদের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। আর ক্রমাগত এমন হলে আপনাকে একজন নেতিবাচকতা ছড়ানো মানুষ বলেই মানুষ ধরে নেবে।

৩. প্রায়ই বিতর্কিত মতামত পোস্ট করা

আমাদের সমাজে ক্রমাগত বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ের জন্ম হচ্ছে। ডিম আগে নাকি মুরগি আগে থেকে শুরু করে কোন রাজনৈতিক দল সবচেয়ে ভালো, কার বিয়ের সাজ কেন কেমন হলো, এমন কোনো বিষয় নেই, যা নিয়ে আমরা নিজস্ব মতামত দিতে ভালোবাসি না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার। তাই যেকোনো জায়গায় আমরা চাইলেই আমাদের মতামত দৃঢ় কণ্ঠে পোষণ করতে পারি। তবে প্রতিটি বিতর্কিত বিষয়ে পোস্ট করা এবং ভিন্ন মতামতের মানুষের সঙ্গে কি-বোর্ড যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আপনার নিউজ ফিডকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে। এমনকি এই ভিন্নমত মেনে নেওয়ায় অপারগতা আপনাকে অন্যের দৃষ্টিতে ছোট ও ‘নার্সিসিস্টিক’ হিসেবেও প্রমাণ করতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলেও ভিন্নমতের মানুষের সঙ্গে যুদ্ধে নামবেন না। অন্যের মতামতকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করুন। কারণ, এমন আচরণ ট্রলের জন্ম দিতে পারে।

৪. সর্বক্ষণ সেলফি পোস্ট করা

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুসারে, যাঁরা প্রচুর সেলফি পোস্ট করেন, তাঁরা বেশি হীনম্মন্যতায় ভোগেন ও জীবনে কম সফল হন বলে ধারণা করা হয়। তবে এ কথা তখনই সত্য, যদি তা সীমা ছাড়িয়ে যায়। আপনি নিজের ও অন্যদের ভালো লাগার জন্য সেলফি পোস্ট করতেই পারেন। কিন্তু আপনার লেখা পোস্টের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো ছবি পোস্ট না করে সব লেখার সঙ্গে সেলফি পোস্ট করলে মানুষ আপনাকে অ্যাটেনশন সিকার বা অযথা সারাক্ষণ সবার মনোযোগ চান—এমন ভাবতে পারে। আর ট্রলিং হতেই পারে এ নিয়ে।

৫. ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ

বন্ধু হোক কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা, সম্পর্কে বিচ্ছেদ কখনোই সহজ নয়। আপনি একই সঙ্গে রাগ, কষ্ট, অনুতাপ ইত্যাদির মতো কঠিন কঠিন অনুভূতির মুখোমুখি হতে পারেন। তাই বলে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ করা, আপনার বন্ধু কিংবা সঙ্গীর ব্যাপারে আজেবাজে কথা বলা আপনার ব্যাপারে মানুষের ধারণা খারাপ করে দেয়।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্যরা অস্বস্তি তো বোধ করেই, পাশাপাশি এ-ও ভাবতে পারে যে আপনি নিজের কিংবা অন্য কারও গোপনীয়তাকে সম্মান করেন না। তাই  মানসিক অশান্তির সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার পরিবর্তে বিশ্বস্ত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার কথা বিবেচনা করুন।

৬. অতিরিক্ত দেখানিপনা ধরনের পোস্ট করা

বিদেশ ভ্রমণের বাহারি ছবি, নতুন ডিজাইনার ব্যাগ, জামা নিয়ে হরদম পোস্ট করে এমন মানুষ আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। আড়েঠাড়ে ব্র্যান্ড বা দামের ব্যাপারে বেশি জানান দেন অনেকে বুঝে বা না বুঝেই। নিজের জীবনের ছোট থেকে বড়—সব অর্জন উপভোগ করা খুবই সুন্দর একটি অনুভূতি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অর্জনগুলো নিয়ে ঢাকঢোল পেটালে আপনাকে মানুষের সামনে তা অতিরিক্ত বস্তুবাদী হিসেবে প্রমাণ করতে পারে। এসব দেখানিপনা নিয়ে কিন্তু ট্রল হয় অহরহই।

৭. বিভ্রান্তিকর তথ্য পোস্ট করা

অজান্তে হোক বা জেনেশুনে, বিভ্রান্তিকর বা ভুল তথ্য শেয়ার করা আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। চাঞ্চল্যকর শিরোনাম দেখে, সত্যতা যাচাই না করেই খবর শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। অমুক পাতা খেলে এই দুরারোগ্য ব্যাধি পালায় বা না জেনেই ওই তারকা মারা গেছেন—এসব পোস্ট করে নিজেকে ছোট করবেন না। আর রাজনৈতিক ব্যাপারে এসব পোস্ট আপনাকে শ্রীঘরেও নিয়ে যেতে পারে।  

৮. হ্যাশট্যাগের অত্যধিক ব্যবহার

মাঝেমধ্যে এক লাইনের পোস্ট বা নিজের একটি ছবির নিচে তিন হাত লম্বা হ্যাশট্যাগের তালিকা দেখে বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচির কথা মনে পড়ে যায়। হ্যাশট্যাগের সঠিক ব্যবহার না জানলে আপনি বিদ্রূপের শিকার হতে পারেন। তাই হ্যাশট্যাগের সঠিক ব্যবহার জানা ও অতিমাত্রায় ব্যবহার না করা গুরুত্বপূর্ণ।
এলোমেলো হ্যাশট্যাগের বন্যার চেয়ে প্রাসঙ্গিক কয়েকটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা ভালো।

৯. মন্তব্য এবং মেসেজ উপেক্ষা করা

অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকলেও পোস্টে করা মন্তব্য কিংবা মেসেজের রিপ্লাই দেন না। মুখের ওপর উপেক্ষা না করলেও এই বিষয়গুলো সমানভাবে অপমানজক। তাই যথোপযুক্ত কারণ না থাকলে মন্তব্য কিংবা মেসেজ উপেক্ষা করবেন না। প্রয়োজনে একটি সাধারণ ইমোজি কিংবা ধন্যবাদ দিন। সম্ভব হলে পরে যোগাযোগ করুন। এমন আচরণ আত্মম্ভরিতার পর্যায়ে পড়ে আর এতে আপনার যেকোনো ভুলচুক পেলেই সবাই ট্রল করবে আপনাকে নিয়ে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন