মাকে নিয়ে যত কিছু
শেয়ার করুন
ফলো করুন

‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।’

শৈশবে মাকে নিয়ে কত কিছুই না ভাবি আমরা। মা-ই তখন আমাদের পৃথিবী, সুখ-দুঃখের সাথি। জ্বরের রাতগুলোর জলপট্টি মানেই মায়ের স্পর্শ। মায়ের হাতে মাখা ভাতের লোকমাগুলো অমৃতকে হার মানায়। বাবার শাসন, খেলতে গিয়ে ছিলে যাওয়া কনুই বা হাঁটু—মায়ের একটু আদরে সব কষ্ট মিলিয়ে যায় নিমেষেই। তারপর দিন যায়, বয়স বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে মায়ের সঙ্গে দূরত্ব।

মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম

কৈশোরে পা পড়লে, ‘মা, সবার সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরে আদর করো কেন!’ অথবা ‘উফ, মা তুমি সবকিছুতে এত বারণ করো!’—এমনতর অনেক অনুযোগ ভিড় জমায়। পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা, বন্ধুদের আড্ডা অথবা কম্পিউটার-মুঠোফোনে ডুবে যেতে যেতে মা যেন ঘরেরই এক আটপৌরে অংশ, জীবনের মাঠে এক নীরব দ্বাদশ সদস্যে পরিণত হয়ে যান। দিনের শুরুতে আর শেষে এক পলকের দেখা আর টুকরোকথনে কি আর মায়ের আশ মেটে! জীবিকার নৈমিত্তিক টানাপোড়েনে আটকে মায়ের প্রতি কি টান কমে যায়? জীবনের নতুন সম্পর্কগুলো গড়তে গিয়ে কি জীবনকে চেনানো মানুষটিকে পাশ কাটিয়ে বাঁচি আমরা?

বিজ্ঞাপন

বছর ঘুরে আসে মা দিবস। মাকে নানা রকম উপহার দেওয়া হয়। মাকে নিয়ে হয়তো খেতেও যাওয়া হয় রেস্তোরাঁয়। কিন্তু ঘরে মায়ের সঙ্গে একটু ‘কোয়ালিটি টাইম’ বা ভালো সময় কাটানোর মতো উপহার আর হয় না। শুধু মা দিবসে নয়, প্রতিদিনই তা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন একটু খেয়াল রাখা আর যত্ন নেওয়া। যত্ন ছাড়া কি আর ভালোবাসার গাছ বাঁচে!

মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম

প্রায়ই দেখা যায়, মায়েদের এক প্রিয় শখ বাগান করা। ছাদবাগান বা বারান্দায় মায়ের নিত্যদিনের পরিচর্যা রুটিনে যোগ দিলে কাটতে পারে দারুণ সময়। কোন গাছটি মায়ের বেশি প্রিয়, কেমন যত্ন লাগে কোন গাছের—এমন সব কথোপকথনের মধ্যে দুজনে মিলে মাটি নিড়ানো, গাছে পানি দেওয়ার মতো কাজগুলো করা যায়। শখের আর পরম যত্নের গাছে ফুল ফুটলে, মরিচ বা লেবু ধরলে তা উদ্‌যাপন করা যায় দুজনে মিলেই।
শেষ কবে মা প্রাণ খুলে হেসেছেন, মেতেছেন রসিকতায়—ভেবে দেখি তো সবাই। খুনসুটি আর দুষ্টুমিতে তাঁকে হাসি-খুশিতে ভরা একটি বিকেল উপহার দেওয়া যায় অনায়াসে। সানগ্লাসে মাকে দারুণ দেখাবে অথবা নতুন কোনো চুলের স্টাইলেও। মজার এসব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে রাখলে সে নিয়ে পরে মন খুলে হাসা যাবে দুজন মিলে আরেক বিকেলে।

বিজ্ঞাপন

আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো দিনযাপনের জন্যই অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে। যে মা আমাদের কলম আর চামচ ধরতে শিখিয়েছেন, তাকে মুঠোফোনের সেটিংস, হোয়াটসঅ্যাপের কায়দাকানুন, খাবার ও বাজার অর্ডার দেওয়া বা গাড়ি ডাকার পদ্ধতি শেখাতে গিয়ে বিরক্ত হলে, সেটি সত্যিই অন্যায়। এই একটি ব্যাপারে তারা আমাদের ওপর নির্ভর করেন আসলেই। ফোনের মেসেজ উদ্ধার করে দিলেই তার কাছে আমরা টেক-বিশেষজ্ঞের মর্যাদা পাই।

মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম

মায়েরা বড়ই স্মৃতিকাতর। আমাদের ছোটবেলার প্রতিটি খুঁটিনাটি গল্প তাদের মনে থাকে। পুরোনো ছবির অ্যালবাম খুলে বহুবার শোনা গল্পগুলো আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা যাক নাহয়। স্মৃতির পাতায় সযত্নে রাখা সময়গুলো অ্যালবামের পাতা ওল্টাতে গিয়ে আবার জীবন ফিরে পাক। বাবা হয়তো নেই আর। অথবা নেই সেই সময়। টাইমমেশিন তো পারেনি কেউ আবিষ্কার করতে; আপাতত স্মৃতির জাদু-গালিচাই সম্বল।

মা দিবসটি বিশেষ করে তুলতে মাকে নিয়ে করা যায় ঘরেই সময় কাটানোর দারুণ পরিকল্পনা। চুপিচুপি ইন্টারনেট ঘেঁটে বা মায়েরই চিরচেনা রন্ধনপদ্ধতিতে তাঁর অগোচরে বানিয়ে ফেলা যায় তারই প্রিয় কোনো খাবার। ছল করে মাকে প্রিয় কোনো শাড়ি পরিয়ে খাবার টেবিলে বসানো যাক এবার।

মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও  আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম
মডেল: রেহানা হক ও আজিম উদ্দৌলা; ছবি: সাইফুল ইসলাম

নিজেও নাহয় একটু ফিটফাট হয়ে সেজেগুজে আসা হলো। এবার সুন্দর করে সাজিয়ে মায়ের প্রিয় পদটি ট্রেতে করে নিয়ে এলে তাঁর মুখটি দেখতে ভুললে চলবে না। বিস্ময়, ভালোবাসা আর অপার্থিব আনন্দ—সবকিছু নিখুঁতভাবে মেশালে মনে হয় এমনই লাগে দেখতে। ক্যামেরাবন্দী করতেই হয় এমন মুহূর্তগুলো। মাকে নিয়ে দারুণ সময় কাটুক আজ সবার।

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০৬: ৫৭
বিজ্ঞাপন