নতুন কালার ট্রেন্ড নিয়ে মিলান ফ্যাশন উইকে গুচি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

২০১৫ থেকে ২০২২—এই সাত বছর দাপটের সঙ্গে গুচির সাম্রাজ্যে রাজত্ব করেছেন আলেসান্দ্রো মিকেল। চমকে ভরা কালেকশন উপহার দেওয়ার পাশাপাশি গুচি ভক্তদের দিয়েছেন স্বকীয়তা উদ্‌যাপনের দীক্ষা। নিজের সৃষ্টি দিয়ে ফ্যাশনে জেন্ডার কনসেপ্টকে (লিঙ্গের ধারণা) বারবার চ্যালেঞ্জ বা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সেই মিকেল গুচির দায়িত্ব থেকে যখন ইস্তফা দিলেন, তখন থেকে সব ফ্যাশনবোদ্ধার মনে এক প্রশ্ন—‘গুচির জন্য এমন আরেকজন মিকেল কি আর পাওয়া যাবে?’ আরেকজন মিকেল পাওয়া না গেলেও এবার গুচি পেয়েছে এক সাবাতোকে।

ফ্যাশনজগতের খুঁটিনাটি ব্যাপারে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের কাছে সাবাতো দে সারনো নামটা খুব একটা অপরিচিত নয়। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে এই ইতালিয়ান ডিজাইনার কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডে। শুরু হয়েছিল প্রাদায়। এরপর কিছুদিন ছিলেন ডলসে অ্যান্ড গাবানায়। সেখান থেকে ভ্যালেন্টিনো। ১৪ বছর তিনি ভ্যালেন্টিনোর নারী ও পুরুষদের রেডি-টু-ওয়্যার কালেকশনের ফ্যাশন ডিরেক্টর ছিলেন।

ফ্যাশনজগতের সবাই তাঁকে চেনে এই ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর পিয়েরপাওলো পিচিওলির ‘ডান হাত’ হিসেবে। জানুয়ারিতে যখন মিকেলের উত্তরসূরি হিসেবে সাবাতোর নাম ঘোষণা করা হয়, তখন থেকেই গুচিতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছিল। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর গুচির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর প্রথম কালেকশন প্রদর্শন করেন সাবাতো।

বিজ্ঞাপন

গুচির নতুন এই বসন্ত ও গ্রীষ্মের সংগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আনকোরা’। এই সংগ্রহ প্রকাশ্যে আসার পর যে মিকেলের সঙ্গে সাবাতোর তুলনা করা হবে, এটা মোটামুটি সবাই জানত। মিকেলের নকশা যেমন ম্যাক্সিমালিস্ট ও নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল, সাবাতোর নকশা ঠিক তার উল্টো। তিনি আগাগোড়া মিনিমালিস্ট। তাঁর নকশা বেশ সরল ও পরিশীলিত। নতুন সংগ্রহ তিনি মিনিমাল পোশাকআশাক দিয়ে সাজিয়েছেন।

বসন্ত ও গ্রীষ্মের গরমে ফ্যাশনপ্রেমীরা যেমন স্টাইলিশ ও আরামদায়ক পোশাক পরতে পছন্দ করবেন, তেমন পোশাকই তিনি তৈরি করেছেন। এই সংগ্রহে আছে মিনি ড্রেস, মিডি ড্রেস, স্লিপ ড্রেস, শর্ট-স্যুট, ফ্রিঞ্জ দেওয়া স্কার্ট, থাই স্লিট স্কার্ট, স্লাউচি জিনস, জ্যাকেট, ওভারকোট, ফ্রিঞ্জ দেওয়া ওভারকোট ইত্যাদি। এখানে নজর কেড়েছে লেদারের মিনি ড্রেস ও এ-লাইন স্কার্ট, ক্রিস্টাল এমবেলিশড সাটিনের আরামদায়ক পার্টি ড্রেস ও লেসের সিম্পল স্লিপ ড্রেসগুলো।

কিছু পোশাক দেখলে বোঝা যায় যে সাবাতোর ডিজাইনে ষাট ও নব্বই দশকের প্রভাব বেশি। অনেক ফ্যাশন সমালোচকেরা বলছেন, ‘সাবাতোর গুচি মিকেলের মতো না হলেও টম ফোর্ডের কাছাকাছি হয়েছে।’ মন্তব্যটা বেশ নেতিবাচক শোনালেও আদৌ কিন্তু তা নয়। সাবাতোর টম ফোর্ড দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, ফ্যাশন-শিল্পে টম ফোর্ডকে মিনিমালিস্ট ডিজাইনের রাজা বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই সংগ্রহের জন্য রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করেননি সাবাতো। সাদা, কালো, নিয়ন সবুজ, প্যাস্টেল গোলাপি, খাকি, নেভি ব্লু, আকাশি—এসব রং বেশি দেখা গেছে। আর সাবাতোর হাত ধরে গুচির বিশেষ লাল রং ‘গুচি রোসো’ নতুন করে লাইমলাইটে এল। ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যালেন্টিনো পিংকের মতো এই ‘গুচি রোসো’ খুব দ্রুত ট্রেন্ডের শীর্ষে উঠে আসতে পারে। কারণ, ভুলে গেলে চলবে না, সাবাতো কিন্তু ভ্যালেন্টিনো থেকেই এসেছেন।

এবার একটু গুচির নতুন সংগ্রহের অনুষঙ্গের কথায় আসা যাক। জুতা, ব্যাগ ও গয়না—এই তিন ধরনের অনুষঙ্গে ক্ল্যাসিক গুচির ডিজাইনে তেমন একটা পরিবর্তন আনেনি সাবাতো। কেবল জ্যাকি ব্যাগ বানাতে নরম চামড়া ব্যবহার করেছেন। ফলে ব্যাগে ক্রিস্টাল বুনতে বেশ সুবিধা হয়েছে। ক্রিস্টাল এমবেলিশড জ্যাকি ব্যাগ ছাড়াও মডেলদের পায়ে পার্টিবান্ধব আলট্রা ওয়েজেস হিল, কিটি হিল, পাম্প হিল, আরামদায়ক লোফার ও স্নিকারগুলো বেশ চোখে পড়েছে।

এমন একটি চমৎকার, সরল, পরিশীলিত সংগ্রহের ফ্যাশন সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসছেন সাবাতো। এভাবেই গুচিতে সাবাতো যুগের শুভসূচনা হলো। তিনি যে ফ্যাশনের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে চলেছেন, এটা ছিল তারই একটি আভাস।

ছবি: এএফপি

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ১৭
বিজ্ঞাপন