আমাদের নিত্যদিনের সাজের একটি বড় অংশ হলো চোখ সাজানো। ‘প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’—যুগ যুগ ধরে নারীর চোখের চাহনিতে মুগ্ধ হয়ে কবিরা কত গান আর কবিতা রচনা করেছেন, তার হিসাব নেই। তাই তো চোখ দুটোকে সাজিয়ে সবাই আরও একটু সুন্দর ও মায়াময় করে তুলতে চান। আর চোখ সাজানোর একটি অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো আইলাইনার।আই মেকআপের নিখুঁত লুক পেতে সঠিকভাবে আইলাইনার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
অনেকের কাছেই আইলাইনার দেওয়া একটি কঠিন ব্যাপার, যুদ্ধই বলা চলে। এ সময় এক চোখে খুব মোটা হয়ে যাওয়া তো অন্য চোখে খুব চিকন হয়ে যাওয়া, চোখে বেমানান লাগা, ছড়িয়ে পড়া বা লাগানোর সময় হাতকাঁপাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, নিখুঁত আইলাইনার প্রয়োগের সহজ কিছু নিয়ম।
আইলাইনার প্রয়োগের সময় হাতকাঁপা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। আই মেকআপ করতে অনেক সময় আমরা আয়নার খুব কাছে দাঁড়িয়ে মেকআপ করে থাকি। কিন্তু এটি করা সম্পূর্ণ অনুচিত। এর ফলে আইলাইনার দেওয়া আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আয়নার সামনে টুল বা চেয়ারে বসে অথবা সামনে কোনো একটি টেবিলে একটি ছোট আয়না সেট করে নিয়ে তারপর আইলাইনার প্রয়োগ করুন। এতে হাতকাঁপার সমস্যা থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যায়।
আইলাইনার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো চোখ প্রস্তুত করা। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই পছন্দমতো রেগুলার ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর একটি টিস্যু অথবা তোয়ালে দিয়ে আপনার মুখ মুছে শুকিয়ে নিন। এবার ত্বকে টোনার ও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর চোখের চারপাশে আইক্রিম লাগিয়ে নিন। আইক্রিম চোখের বলিরেখা ও চোখের চারপাশের বিবর্ণ ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
আইলাইনার দেওয়ার এটি সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপে সর্বপ্রথম চোখের পাতায় ও চারপাশে প্রাইমার লাগিয়ে নিন। প্রাইমার ত্বক মসৃণ এবং মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। প্রাইমার লাগানোর পর চোখের পাতায় ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন। ফাউন্ডেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ম্যাট ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। ম্যাট ফাউন্ডেশন ত্বকে ভালোভাবে বসে যায়। এর ফলে তার ওপর আইলাইনার দিলে সেটাও ভালোমতো সেট হয়ে যাবে। এতে হালকা হয়ে যাওয়া বা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক কম হয়।
চোখের বেস তৈরি করে নেওয়ার পর এ ধাপে চোখের পাতায় আইলাইনার প্রয়োগ করতে হবে। আইলাইনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেকোনো ওয়াটারপ্রুফ জেল লাইনার বা লিকুইড লাইনার বাছাই করা উচিত। কেননা, সাধারণ আইলাইনারের চেয়ে এগুলো চোখে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় আর লাগানোও সহজ। একটি চিকন ব্রাশ দিয়ে অথবা আইলাইনারের সঙ্গে যে ব্রাশটি আছে, সেটি ব্যবহার করে চোখের পাতার রেখা বরাবর লাইন টানুন। প্রথমে ছোট ছোট লাইন ও স্ট্রোক দিয়ে শুরু করতে হবে। ছোট ছোট স্ট্রোক সুন্দর ফিনিশিং দেবে। একবারে পুরো লাইন আঁকা ঠিক নয়। এতে লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যথাযথভাবে আইলাইন আঁকার পরে অপর চোখেও ঠিক একইভাবে আইলাইনার প্রয়োগ করুন। চেষ্টা করবেন যেন দুই চোখে আইলাইনার প্রয়োগ সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
আইলাইনার যাতে হালকা হয়ে বা লেপটে না যায়, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার। চোখের মেকআপ শেষ হলে আইশ্যাডো ব্রাশে সামান্য ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার নিয়ে চোখের মেকআপের ওপর হালকাভাবে বুলিয়ে নিন। এতে আইলাইনার সারা দিন নিখুঁত থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ এল ম্যাগাজিন, ভোগ
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম