ত্বকের খুব সাধারণ ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার মধ্যে ব্রণকে এগিয়ে রাখতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালে বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে এই সমস্যায় ভোগে। ত্বকের যত্নের অভাব, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও ব্রণ হয়। এরপর কোনোভাবে যদি ব্রণ সেরেও যায়, স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে যায় দাগ। এই দাগ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। মনে রাখতে হবে, ব্রণ সারানো ও এর দাগ সারানো কিন্তু এক জিনিস নয়। ব্রণের চেয়ে ব্রণের দাগ সারাতে বেশি সময় লাগে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে কিছু নিয়ম মেনে চললেই সমাধান পাওয়া যাবে।
ত্বক-বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর উপাদান হলো রেটিনল বা রেটিনয়েড। এ দুটি উপাদান ব্রণের দাগের টেক্সচার ও রং ঠিক করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি নতুন করে ব্রণ ওঠার আশঙ্কা প্রতিরোধ করে। রেটিনল বা রেটিনয়েড ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে দাগ হালকা হয়ে আসে। এ ছাড়া রেটিনল বা রেটিনয়েড ত্বকে কোলাজেনের বৃদ্ধি ঘটায়, যা ত্বকের টেক্সচার মসৃণ করে। ঠিক এ কারণেই ব্রণ বা ব্রণের দাগ কমে যাওয়ার পরও বিশেষজ্ঞরা রেটিনল বা রেটিনয়েড ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ব্রণের দাগ দূর করার অন্যতম কার্যকর পণ্য হলো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট। আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড যেমন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড অথবা বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ত্বকের মৃতকোষ দূর করে। এতে ত্বক মসৃণ ও কোমল হয়। ত্বকের রং বা স্কিন টোন ও টেক্সচার ভালো হয়। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ নিয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁদের জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে আদর্শ। অন্যদিকে হাইপারপিগমেন্টেশন বা দাগছোপের সমস্যা থাকলে গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক ও ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জুড়ি মেলা ভার। ব্রণের দাগ সারাতেও এটি বেশ কার্যকর। এ জন্য রূপচর্চার রুটিনে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা জেল যোগ করা উচিত। ব্রণের দাগ দূর করতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, নায়াসিনামাইড সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
পকেটের টাকা খরচ করে ত্বকের জন্য যতই দামি পণ্য ব্যবহার করুন না কেন, যদি সানস্ক্রিন ব্যবহার না করেন, তাহলে সব চেষ্টা ও অর্থ পানিতে যাবে। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ও ফ্রি র্যাডিকেল ব্রণের দাগ বাড়াতে খুব বাজে ভূমিকা রাখে। এ জন্য কোনোভাবেই সানস্ক্রিন ছাড়া থাকা যাবে না। ব্রণপ্রবণ ত্বকে অয়েল ফ্রি ফর্মুলার, নন-কমেডোজেনিক মিনারেল বা ফিজিক্যাল; অর্থাৎ জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাজারে এখন নতুন প্রজন্মের কিছু মিক্সড সানস্ক্রিন পাওয়া যায়, যা ব্রণপ্রবণ ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী। যাঁরা ব্রণ বা ব্রণের দাগ সারানোর জন্য রেটিনল বা রেটিনয়েড ব্যবহার করেন, তাঁদের অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে। কারণ, এই উপাদান ত্বককে ফটোসেনসেটিভ বা আলোর প্রতি সংবেদশীল করে ফেলে।
ত্বকের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য রূপচর্চার পাশাপাশি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে ডায়েট ও ঘুমের দিকে। এই সময় পুষ্টিকর খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম বেশি করে খেতে হবে। অনেকের দুধ বা দুধজাতীয় খাবার খেলে ব্রণের প্রকোপ বেড়ে যায়। যদি এমন হয়, তাহলে দুধ খাওয়া যাবে না। আর এমন না হলে ডায়েটে দুধ রাখা যাবে। চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং ধূমপান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
যেকোনো ধরনের ত্বকের চিকিৎসায় ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আছেন, এক দিন ত্বকে ময়েশ্চারাইজার বা সিরাম ব্যবহার করেন তো দুই দিন বন্ধ রেখে আবার শুরু করেন। আবার কোনো পণ্য ব্যবহারের দুই দিনের মধ্যেই ফলাফল আশা করেন, এমন মানুষও আছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, একটা ত্বকের যত্নের পণ্য টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহারের পর কাজ করা শুরু করে। তাই ধৈর্য ধরে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওপরের নিয়ম মেনে চললে ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম