পোল্যান্ডে ছড়িয়ে থাকা হিটলারের হাত-পা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পোল্যান্ডে হিটলারের হাত-পা নেই। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চার বছরে পোল্যান্ডের বড় অংশ জার্মানির অংশ হওয়ায় পোল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে হিটলারের বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা ও স্থাপনার নিদর্শন রয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত ভ্রসউয়াফ যেহেতু জার্মানির শহর ছিল, সেহেতু নাৎসিদের, এমনকি খোদ হিটলারের পদচিহ্ন ভ্রসউয়াফের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। পদচিহ্ন ছাড়াও হিটলারের স্বপ্নের অনেক ছাপও রয়ে গেছে ভ্রসউয়াফ ও এর আশপাশে।

ভ্রসউয়াফে গেলে আমি মনোপল হোটেলে উঠি। এটি এমন ঐতিহাসিক হোটেল, যেখানে দ্বিতীয় যুদ্ধের পর আতিথেয়তা নিয়েছেন চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, আর যুদ্ধের সময় খোদ হিটলার।

পাবলো পিকাসো বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। তখন তিনি ফ্রান্স কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই নোবেল বিজয়ী—আইরিন কুরি ও মাইকেল সলোকভ। আর হিটলার শুধু মনোপলে রাত কাটিয়েছেন, তা নয়। তিনি হোটেলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে তাঁর জন্য নির্মিত এক ব্যালকনি থেকে জনতার উদ্দেশে বক্তব্যও দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

হোটেল ম্যানেজারকে একদিন ধরলাম।
—পাবলো পিকাসোর কক্ষটা দেখতে চাই। এডলফ হিটলারের কক্ষটাও।
—নিশ্চই। তবে কক্ষগুলোর যথেষ্ট সংস্কার করা হয়েছে। হিটলার বা পিকাসো যেভাবে থেকেছেন, সেই স্বাদ আর পাওয়া যাবে না। সেই কক্ষ নম্বরও আর এখন ব্যবহৃত হয় না, সেই চাবিও নয়।
আমার প্রশ্ন থামে না। জিজ্ঞাসা করি,
—চাবি ধরে নিলাম ব্যবহৃত হয় না। তাই বলে পুরোনো চাবি সংগ্রহে নেই, তা কেমনে সম্ভব। ওই সব তো জাদুঘরের আইটেম। জানি না কত দিন ধরে ম্যানেজার আপনি। খোঁজ নেন। আমি ওই সব দেখতে চাই।

শওঞ্চ দুর্গে শাপলা ফুল
শওঞ্চ দুর্গে শাপলা ফুল
ছবি: লেখক

ম্যানেজার বুঝতে পারেন, তিনি এক নাছোড়বান্দার পাল্লায় পড়েছেন। আমাকে আশ্বস্ত করে একদিন সময় চেয়ে নিলেন। পরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখি, আমার জন্য এক খাম অপেক্ষা করছে। আমার কখন সময় হবে, তা ম্যানেজার জানতে চেয়েছেন। রিসেপশনে আমার দিনের শিডিউল জানিয়ে চলে গেলাম। লাভ হয়েছে অনেকটুকু। শুধু তাঁদের কক্ষ বা চাবি নয়, তাঁদের ব্যবহৃত রোব ও টাওয়েল পর্যন্ত যত্নে সংগ্রহ করা আছে। প্রদর্শনীর অনুমতি মেলেনি বলে সেই সব এখনো আগ্রহীদের জন্য উন্মুক্ত নয়। আমি কেবল পলিথিনে মোড়া অবস্থায় সেই সব অবলোকন করে সন্তুষ্ট হলাম।

কথিত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার ভ্রসউয়াফ থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভায়োভজেগ অঞ্চলের এক দুর্গেও ছিলেন। আর সেই অঞ্চলের প্যাঁচার পাহাড়ে মাটির নিচে গোপন ও নিরাপদ এক দুর্গ বানাচ্ছিলেন। এই দুর্গ বানানোর পরিকল্পনা এতই বিশাল ছিল যে সেই প্রকল্পের জার্মান নামও ছিল ‘রিজে’—জায়ান্ট, বৃহৎ বা বিশাল।

বিজ্ঞাপন

ভায়োভজেগের দুর্গ ও প্যাঁচার পাহাড়ের রিজে প্রকল্প—দুই–ই রহস্যঘেরা। নাৎসি বাহিনী পশ্চাদপসরণের সময় অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস করে গিয়েছে। তারা কোথাও কোনো প্রমাণ রাখতে চায়নি। কিন্তু ভায়োভজেগের দুর্গ মোটামুটি অক্ষত আছে। ভায়োভজেগের দুর্গের নাম ‘জামেক শওঞ্চ’—যুবরাজের দুর্গ। জার্মান নাম ছিল ‘শ্লশ ফার্স্টেন্টাইন’।

হোটেল মনোপল থেকে বাসে করে বহুজাতিক একটা দলের সঙ্গে শওঞ্চ দুর্গে আসি। ২০১৬ সালের এপ্রিল। রোদেলা দিন হলেও তাপমাত্রা ১৫–১৬ ডিগ্রি হওয়ায় শীতের কাপড়সহ বাসে উঠেছিলাম।

শওঞ্চ দুর্গ পর্যন্ত বাস যায় না। আমরা সিকি কিলোমিটার দূরে বাস পার্ক করে পায়ে হেঁটে বাকি পথটুকু গিয়েছি। তখন রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন রকম স্টল ছিল—খাবারের, পোলিশ হস্তশিল্পের, বিভিন্ন রকম পানীয় ও খেলনার, শীতের কাপড়ের। এ ধরনের স্টলে সাধারণত ভালো মধু আর চিজ পাওয়া যায়। ফেরার পথে সেগুলো সংগ্রহ করার চিন্তা করে আমি অন্যদের সঙ্গে পা মিলিয়ে শওঞ্চ দুর্গের সামনে হাজির হলাম।

শওঞ্চ দুর্গের সামনে লেখক
শওঞ্চ দুর্গের সামনে লেখক
ছবি: লেখক

৭০০ ফুট উঁচু শওঞ্চ পাহাড়ের ওপর শওঞ্চ দুর্গ। দুর্গটি সাততলা উঁচু। এখানে ছোট–বড় মিলিয়ে কক্ষের সংখ্যা চার শতাধিক। আশপাশে দুর্গসংশ্লিষ্ট আরও ছোট–বড় ডজনখানেক স্থাপনা আছে। দুর্গের সঙ্গে টাওয়ার আছে একটা। দুর্গের সামনে আমাদের গ্রুপ ফটো নেওয়া হবে। গ্রুপ ফটোর পর কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে আমরা এক গাইডকে অনুসরণ করলাম। গাইডের সঙ্গে আবার দুজন সহকারী আছেন। যদি কেউ পিছিয়ে পড়ি বা কারও অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকে, তবে সেই সহকারীরা আছেন সাহায্যের জন্য।

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এখানে একটা দুর্গ ছিল বলে জানা যায়। সাইলেসিয়ান এক ডিউক এখানে প্রথম স্থাপনা তৈরি করেন। পরে বেশ কবার তা বোহিমিয়ান ও হ্যাবসবার্গ রাজাদের মধ্যে হাতবদল হয়ে একসময় মালিকানায় আসেন বোহিমিয়ান ও লুক্সেমবার্গের রাজা চতুর্থ ভেনসেল, যিনি পরে রোমান রাজাও হন। ১৪৬৬ সালে বোহিমিয়ান রাজপরিবার থেকে দুর্গটি কিনে নেন হ্যান্স ফন শিলেনদর্ফ ও এর নাম দেন ফার্স্টেনটাইন। এর পর থেকে তা জার্মানদের মালিকানাতেই থাকে।

পোলিশ সরকার এ দুর্গের যে ইতিহাস, এখন তা বিবৃত করছেন একটু ভিন্নভাবে। পোলিশ ভাষ্যমতে, ১৫০৯ সাল পর্যন্ত সম্পত্তিটা বোহিমিয়ান ও হাঙ্গেরিয়ান রাজপরিবারের মালিকানায় ছিল এবং সেখান থেকে কনরাড ফন হোবার্গ নামের এক নাইট দুর্গটি কিনে নেন। তাঁরই পরিবার বংশপরিক্রমায় ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এ দুর্গ ব্যবহার করছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুর্গটির মালিক পঞ্চদশ হ্যান্স হাইনরিখের এক সন্তান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ও অপর সন্তান পোলিশ সেনাবাহিনীতে নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন।

১৯৪১ সালে নাৎসিরা এ দুর্গ দখল করার পর এখানে প্রথমে প্রুশিয়ান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে।

দুই বছর পর তা হিটলারের পছন্দের টোঠ কোম্পানিকে দেওয়া হয়, যারা সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করত। নাৎসিদের পতন হলে দুর্গটি সোভিয়েত রেড আর্মির দখলে যায়। তারা ফিরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে যা পায়, তা–ই নিয়ে চলে যায়। এর মধ্যে প্রুশিয়ান লাইব্রেরির সংগ্রহ ছিল। হয়তো ভেবেছিল, সেগুলো নাৎসিদের দলিল দস্তাবেজ ও ঘাঁটাঘাঁটি করলে নাৎসিদের কীর্তি ও কুকীর্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। পরে যখন দেখেছে, ওইগুলো নিছক লাইব্রেরির বই ও প্রকাশনা, তখন ২০১৫ সালে এসে সেগুলো পোলিশদের ফেরত দিয়ে দিয়েছে।

রেড আর্মি চলে গেলে এ দুর্গে জার্মান নিশানা থাকায় পোলিশ সরকার ১৯৫৬ পর্যন্ত সব সম্পত্তি পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখেছিল। এতে লোকেরা যে যা পেরেছেন, লুট করে নিয়ে গেছেন।

শওঞ্চ দুর্গের রহস্যময় পাথর
শওঞ্চ দুর্গের রহস্যময় পাথর
ছবি: লেখক

গাইড আমাদের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন, আর সেই কক্ষের সাজসজ্জা কোন আমলে কে করেছে, কোন আসবাব কোথা থেকে কে এনেছে—এসবের বিবরণ দিচ্ছিলেন। প্রতিটি কক্ষের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। কোনো কোনো নাম রাজা, ডিউক বা তাঁদের স্ত্রীদের নামে; কোনো কোনটি ব্যবহার বা চরিত্রের ওপর। রাজকীয় দুর্গগুলো এমনই হয়। সবচেয়ে বড় শোবার কক্ষটি নাইট কনরাডের নামে। দেয়ালে তেলচিত্র শোভা পাচ্ছে। কোথাও বনেদি ঝাড়বাতি।

কিন্তু আমার মাথায় হিটলারের পদচিহ্ন। আমি গাইডের এক সহকারীকে ফিসফিস করে বললাম, ‘শুনেছি, কোনো এক কোঠায় এডলফ হিটলার থাকতেন!’
সহকারী একজন উৎসুক প্রশ্নকারী পেয়ে বর্তে গেলেন। তিনি সহাস্যে বললেন, ‘হু, এমন কথা শোনা যায়। কিন্তু নাৎসিরা চরম গোপনীয়তা রক্ষা করত। সে জন্য কোথাও কোনো প্রমাণ রাখেনি। যেহেতু প্রমাণ নেই, সেহেতু গাইডও এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাবে।’
আমি বললাম, ‘তা–ই? নাকি আপনারা হিটলারকে ঘৃণা করেন বলে তাঁর সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে যান?’

সহকারী তখনো হাসলেন। তবে এবার স্মিত হাসি। হয়তো বিব্রত ভাব এড়ানোর কৌশল। তিনি বললেন, ‘আমরা যখন দুই ফ্লোর নিচে নামব, তখন আপনাকে একটা সুড়ঙ্গ দেখাব। মনে করা হয়, এ সুড়ঙ্গপথে হিটলার পালিয়েছিলেন।’
আমি কৌতূহলী হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সুড়ঙ্গপথ কোথায় গেছে? আমরা কি সুড়ঙ্গপথ ধরে এগোতে পারি?’

শওঞ্চ দুর্গের পশ্চিম দেওয়াল
শওঞ্চ দুর্গের পশ্চিম দেওয়াল

সহকারী বললেন, ‘এখন না। আমাদের হাতে সময় কম।’
পৃথিবীতে এই একটা জিনিসের আকাল—সময়। ২০১৬ সালে অতৃপ্ত হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে শওঞ্চ থেকে।

হিটলার মহোদয়ের পদধূলি যেখানে পড়েছে, সেই জায়গা স্বর্ণখচিত না হলেও ইতিহাস জানার স্বার্থে তার একটা গুরুত্ব তো আছেই। সুযোগ পেলে তা খুঁটিয়ে দেখতে দোষ কী! কিন্তু সময় আমারও সহসা হয়নি শওঞ্চে দ্বিতীয়বার আসতে।

এভাবে দুই–আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। তবে মাথায় যেহেতু ছিল, সেহেতু ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ইয়েলেনা গুরা শহর থেকে ফেরার পথে হাইওয়েতে শওঞ্চ দুর্গের রোড সাইন দেখে মত বদলিয়ে শওঞ্চের পথ ধরি।

পরিকল্পনা করে যা হয় না, সেবারে শওঞ্চে হাজির হয়ে বুঝলাম, অনেক সময় নিরুদ্দেশ হলেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যাওয়া যায়।
শওঞ্চ দুর্গে পৌঁছে আগের মতো কিছু দূর হাঁটতে হলো। গাড়ি পার্ক করতে ১০ জুয়োতি ব্যয় হলো।

এরপর যখন দুর্গের প্রায় কাছে এসেছি, দেখি, একটা জলাধারে শাপলা ফুল ফুটে আছে। দেশের বাইরে এসে সুদূর পোল্যান্ডে শাপলা দেখতে পাব, ভাবিনি। জলাধারের পাশে অনেকক্ষণ বসে থাকলাম। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জমিদার বাড়ির সামনে বসে আছি।

দুর্গের গেটে গিয়ে বুঝলাম, টিকিটের লাইনে দাঁড়াতে হবে। লম্বা লাইন। ২০০–৩০০ লোক হবে। যে হারে এগোচ্ছে, তাতে ঘণ্টা দুই লাইনেই থাকতে হবে।
হঠাৎ মাথায় ঢুকল, অনলাইনে টিকিট কেটে ফেলতে পারি। লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে অনলাইনে টিকিট কিনে ফেললাম। ৬০ জুয়োতি টিকিটের দাম। সঙ্গে অডিও গাইড। কানে এয়ারফোন লাগিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলাম। একতলা শেষ হলে অন্য তলায় যাচ্ছি।

ভেতর দেখা শেষ হলে বাইরে এলাম। দুর্গের বাইরে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানের মতো স্তরে স্তরে বাগান। বাইরে থেকে আবার ভেতরে। অভ্যর্থনায় জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো গাইড পাওয়া যাবে কি না। অভ্যর্থনায় থাকা তরুণীরা বিচলিত হয়ে পড়লেন।
আমার কথা অর্ধেক বুঝেছেন, অর্ধেক হয়তো বোঝেননি। নিজেরা আমাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলেন পোলিশ ভাষায়। আমি কিছুই বুঝিনি। তবে ‘চেকাই চেকাই’ ধরনের শব্দ শুনে বুঝলাম, আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন।

তাঁরা অপেক্ষার কিঞ্চিৎ মূল্য দিলেন। এয়ার কন্ডিশনড ঘরে জায়গা হলো আমার। কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ চা এল। দুর্গের ওপর ইংরেজি বুকলেট এল। এরপর প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমি ঠিক ঠিক একজন ইংরেজি বলা গাইড পেলাম।

শওঞ্চ দুর্গের গোপন সুড়ঙ্গের মডেলঃ হিটলারের আসা যাওয়ার পথ
শওঞ্চ দুর্গের গোপন সুড়ঙ্গের মডেলঃ হিটলারের আসা যাওয়ার পথ
ছবি: লেখক

গাইডের নাম ক্যাথি। ক্যাথি মানে ক্যাথরিন। আমাকে ৪৫ মিনিট বসে থাকতে হয়েছে বলে তিনি যারপরনাই দুঃখ প্রকাশ করতে থাকলেন। আমি সহজ হওয়ার জন্য বললাম, ‘আপনি নিশ্চই পোলিশ? তার মানে আপনার নাম হবে কাতারজেনা বা সংক্ষেপে কাশ্যা। তা–ই না?
কাশ্যা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আপনি না ইংরেজি বলা গাইডের জন্য অপেক্ষা করছিলেন?’
আমি বললাম, ‘অবশ্যই। আমার পোলিশ তাক-নিয়ে-দব্রা—এ পর্যন্তই।’
কাশ্যা হেসে বললেন, ‘দব্রা নয়, দবসজা—মানে ভেরি গুড।’
আমি আবারও বললাম, ‘দবসজা, চলুন, আমাকে হিটলারের পদচিহ্ন দেখান। দুর্গের বাকি সবকিছু আমার দেখা হয়ে গেছে।’

গাইড আমার আগ্রহ শুনে আমাকে ভিন্ন পথে বেজমেন্টে নিয়ে গেলেন। অনেক কিছুই এখন বিধ্বস্ত। অনেক অংশই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু গাইড সাবলীল ভাষায় বলে চললেন শওঞ্চ দুর্গের বিকল্প এই গল্প।

নাৎসিদের রকেট গবেষণাকেন্দ্র ছিল বাল্টিকের তীরবর্তী উসেদম শহরে। ১৯৪৩ সালের ১৭ ও ১৮ আগস্ট মিত্রবাহিনীর উপর্যুপরি বোমার আঘাতে রকেট গবেষণাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে নাৎসিরা বিকল্প চিন্তা করতে থাকে। তখন তাদের মাথায় আসে ‘অয়লেনবার্গে’।

‘অয়লেনবার্গে’ জার্মান শব্দ, যার মানে প্যাঁচার পাহাড়। ভ্রসউয়াফ শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই দুর্গম পর্বতমালা। সবচেয়ে উঁচু চূড়া ৩ হাজার ৩০০ ফুটের মতো, কিন্তু ঘন বন-জঙ্গল ও ঘন ঘন ভূমির উঁচু-নিচু ভাঁজের কারণে পাহাড়টি দুর্গম। আর পাহাড়ের স্থানে স্থানে কঠিন শিলা আছে।

হিটলারের সাঙ্গপাঙ্গদের মধ্যে সামরিক বিশারদ কম ছিলেন না। তাঁদের পরামর্শে ও হিটলারের নিজস্ব বিচক্ষণতায় অয়লেনবার্গের পাহাড়ি এলাকা তাঁদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়েছে।

মনোপল হোটেলঃ দোতলার ব্যালকনিটি এখন কাঁচ দিয়ে ঘেরা
মনোপল হোটেলঃ দোতলার ব্যালকনিটি এখন কাঁচ দিয়ে ঘেরা
ছবি: লেখক

মাজুরিয়া এলাকায়, যেখানে হিটলার তখন তাঁর সদর দপ্তর নির্মাণ করছিলেন, সেখানে ইতিমধ্যে তাঁকে হত্যার একটা চেষ্টাও হয়েছিল। সে জন্য হিটলার তাঁর সদর দপ্তরের জন্যও বিকল্প খুঁজছিলেন।

অয়লেনবার্গে এখন পোল্যান্ডের সীমানাভুক্ত। পোলিশ ভাষায় এর নাম ‘গোড়ে সোবিয়া’ বা ‘সোবিনা’। এর অর্থ ওই একটাই—প্যাঁচার পাহাড়।

নাৎসিরা প্যাঁচার পাহাড়ে প্রাথমিক কাজে হাত দেওয়ার সময় শওঞ্চ দুর্গের গুরুত্ব বেড়ে যায়। প্রাথমিক পরিকল্পনায় না থাকলেও দ্রুত পুরো পরিকল্পনা শওঞ্চ দুর্গকে ঘিরেই শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো শওঞ্চ, ভয়োভজেগ ও দুর্গম প্যাঁচার পাহাড়ে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় নাৎসিরা। সমগ্র পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয় রিজে প্রকল্প। টোঠ কোম্পানির ফ্রিৎজ টোঠ সাহেব তত দিনে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। নাৎসি সামরিক শিল্পমন্ত্রী আলবার্ট স্পিয়া নিজেই টোঠ কোম্পানির দায়িত্ব নেন। আস্তানা গাড়েন শওঞ্চ দুর্গে।

আশপাশের নাৎসি বন্দীশালা ও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বন্দীদের ধরে এনে টোঠ কোম্পানিতে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত করেন। তাঁদের বেতন-ভাতা তো দেওয়াই হতো না, শ্রম ছিল শাস্তির অংশ।

এর মধ্যে আউশভিৎস ও গ্রোস-রোজেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এবং গুশিৎছা, ইয়েদলিঙ্কান ও রগোনিৎসার বন্দিশালা ছিল। বন্দীদের অধিকাংশই ইহুদি, যাদের হাঙ্গেরি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ছাড়া পোলিশ, চেক, স্লোভাক ও ইউক্রেনিয়ানও ছিল। একপর্যায়ে প্রায় ১৪ হাজার বন্দী শ্রমিক টোঠে কাজ করেছেন। তবে আলবার্ট স্পিয়া নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ১৯৪৪ সালের জুনে প্যাঁচার পাহাড়ে ২৮ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো হিটলারের পতন ও তাঁর আত্মহত্যার ১০ দিন পর ১০ মে পর্যন্ত এই নির্মাণকাজ চলছিল। কারণ, জায়গাটা দুর্গম হওয়ায় তখন পর্যন্ত সমগ্র এলাকা সোভিয়েত রেড আর্মির দখলে আসেনি।

বন্দী শ্রমিকদের মধ্যে কর্মরত অবস্থায় অনাহারে, রোগে ভুগে, অধিক পরিশ্রমে ও নির্যাতনে কতজন মারা গেছেন, তাঁর হিসাব নেই। তবে গবেষণা ও অনুমাননির্ভর সংখ্যাটা পাঁচ হাজারের ওপর।

১৯৪৪ সালে সুড়ঙ্গতে কর্মরত বন্দীদের মধ্যে মহামারি দেখা দেয়। ফলে একপর্যায়ে নির্মাণকাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তখন আরও বেশি বন্দী আনা হয় ক্যাম্প থেকে।
এসব মৃত্যুর জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। মৃতের কোনো সৎকারও হয়নি। হাজার হলেও তাঁরা যুদ্ধবন্দী ছিলেন। কোনো না কোনোভাবে তাঁদের তো হত্যাই করা হতো। যে কদিন কাজ করে যেতে পেরেছেন, সে কদিন নিজেদের আয়ু বাড়াতে পেরেছেন।

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর গেটের গায়ে সুন্দর করে লেখা থাকত, ‘আরবেত মাখ ফাই’—কর্মেই মুক্তি।

বন্দীদের জন্য এ মুক্তি ছিল কেবল চিরমুক্তি, মাঝামাঝি কিছু ছিল না।
রিজে প্রকল্পের পুরোটা জানা না গেলেও পাওয়া গেছে প্যাঁচার পাহাড়জুড়ে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ। প্যাঁচার পাহাড়জুড়ে সুড়ঙ্গপথে হিটলার তাঁর হাত–পা ছড়িয়ে রাখলেও শওঞ্চ দুর্গ যেন ছিল তাঁর হৃৎপিণ্ড। রিজে প্রকল্পের যে নকশা পাওয়া গেছে, তাতে সে রকম ধারণা মেলে।

শওঞ্চ দুর্গের নিচ থেকে দুই কিলোমিটারের মতো সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গেছে। সুড়ঙ্গে পৌঁছার জন্য গোপন একটা লিফটও পাওয়া গেছে, যা আগে কখনো দুর্গের মধ্যে ছিল না।

নাৎসিরা যখন সোভিয়েতের মাটিতে পরাজিত, আফ্রিকা থেকেও সৈন্যরা পিছিয়ে এসেছে, হিটলার তখন আর্থিক সংকটে পড়ে। ফলে ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রিজে প্রকল্পের কাজ কার্যত থুবড়ে পড়ে।

শেষ দিকে নাৎসিরা সুড়ঙ্গের মুখগুলো বন্ধ করে দিচ্ছিল যেন ভেতরের খবর কেউ জানতে না পারে। একজন–দুজন বন্দী যাঁরা শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন, তাঁরা বলেছেন, নাৎসিরা মূল্যবান সামগ্রী যেমন অমূল্য আর্টিফ্যাক্টস, পেইন্টিং, অমূল্য রত্ন, স্বর্ণ, সাংস্কৃতিকভাবে মূল্যবান সামগ্রী—এসব সুড়ঙ্গের ভেতর মজুত করছিল।

আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের গেইটের সামনে লেখক। আরবেত মাখ ফাই - কর্মেই মুক্তি
আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের গেইটের সামনে লেখক। আরবেত মাখ ফাই - কর্মেই মুক্তি
ছবি: লেখক

আলবার্ট স্পিয়া তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ২২ কিলোমিটারের মতো সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হয়েছিল। ৯ কিলোমিটারের মতো সুড়ঙ্গ এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সেখান থেকে কিছু মূল্যবান ধনরত্ন, নথিপত্র ও পেইন্টিং পাওয়া গেছে।

কাশ্যা আমাকে শওঞ্চ দুর্গের নিচ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। যাওয়ার পথে লিফটের জায়গাটা দেখিয়ে বলেছেন, ‘জার্মানদের কাজ তো। পুরো প্রাসাদের সঙ্গে বেমানান একটা শ্যাফট ঢুকিয়ে দিয়েছে এখানে। এখন না পারা যাচ্ছে এইটা সরাতে, না ভালো লাগছে দেখতে। কুৎসিত একটা কাজ।’

আমি বললাম, ‘জার্মানদের তো অনেক সুনাম নির্মাণশিল্প ও শিল্পজাত সামগ্রী নির্মাণে।’
কাশ্যা বললেন, ‘হয়তো। কিন্তু যুদ্ধের সময় যা করেছে, তার মধ্যে কোনো নান্দনিকতা নেই। আর এগুলো করানো হয়েছে সব যুদ্ধবন্দিদের দিয়ে, যাঁদের কারোরই হয়তো নির্মাণ ক্ষেত্রে কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা ছিল না।’

আমি এ প্রসঙ্গে কথা বাড়াই না। বরং ভিন্ন প্রসঙ্গ এনে জিজ্ঞাসা করি, ‘তাহলে হিটলার মহোদয়ের ব্যাপারে তো কিছু বললেন না। সে কি এ প্রাসাদে ছিলেন?’
কাশ্যা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন, ‘মোজে—হয়তো। সঠিক কোনো রেকর্ড নেই। মাজুরিয়ায় তাঁর ওপর বোমার আক্রমণ হওয়ার পর থেকে তিনি অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। সে জন্য রেকর্ড পাওয়া যায় না। আপনি তো কনরাড কক্ষটা দেখেছেন। সবচেয়ে বড় শোবার কক্ষ। পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিচার করে নিশ্চিত বলতে পারি, হিটলার মহোদয় এখানেই ছিলেন। একাধিকবার। হয়তো সুড়ঙ্গপথে এসেছেন। সেভাবেই ফিরে গেছেন। নয়তো অর্থহীনভাবে অর্থ ব্যয় করার মতো গর্দভ তিনি নন।’

আমি গাইডকে ধন্যবাদ দিলাম। কিছু উপহার নিয়ে এসেছিলাম, সেগুলো দিলাম। তিনি খুশি হলেন। বললেন, ‘আমার অফিশিয়াল ডিউটি শেষ। তবে আমার সঙ্গে আসেন। আপনাকে একটা জিনিস দেখাব।’

আমি তাঁর পিছু পিছু চার-পাঁচতলার মতো নিচে নামলাম সিঁড়ি বেয়ে। নিচ দিকে কিছুটা অন্ধকার। সিঁড়িও সরু। কাশ্যার হাতে টর্চ। আমার চোখ সতর্ক।
কাশ্যা একটা খয়েরি বাদামি ছাই রঙা বিশাল পাথরখণ্ডের সামনে নিয়ে গেলেন আমাকে। বললেন, ‘এই পাথরখণ্ড দেখেছেন। এইটি ভাগ্যবানদের পাথর। একে স্পর্শ করতে পারেন। আপনার জীবনেও সৌভাগ্য আসবে। এই পাথরখণ্ডের ওপরই সমগ্র দুর্গটির ফাউন্ডেশন স্থাপিত।’

আমি বললাম, ‘সুন্দর কথা। কিন্তু আমাকে আরও একটু খোলাসা করে বলেন এই সৌভাগ্যের কথাটা।’

কাশ্যা বললেন, ‘এটা বিশ্বাস। তবে নিছক সাধারণ বিশ্বাস নয়। আমরা যারা এখানে চাকরি করি, আমরাও সবাই তা বিশ্বাস করি। আমাদের সবাই কখনো না কখনো এখানে আসে। পাথরখণ্ড স্পর্শ করে সময় কাটায়। এরপর মন শান্ত করে ফিরে যায়।’
এই প্রাসাদ বা দুর্গের ওপর কম ঝক্কি তো যায়নি। তবু দেখেন, শওঞ্চ দুর্গ এখনো হাজার হাজার দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত আছে। কতজন এ পথ মাড়িয়েছে। দুর্গ কিন্তু টিকে আছে। দিন দিন কদর বাড়ছে।

সিঁড়ি বেয়ে এবার ফেরার পালা। গাইড বললেন, ‘আমার একটা অনুরোধ আছে। আমাদের কাছে দর্শনার্থীদের মন্তব্যের জন্য বই আছে। আপনি সেখানে আপনার মন্তব্য লিখে যাবেন।’
আমি বললাম, ‘না পেভনো’—অবশ্যই।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে কম সময় লাগলেও উঠতে বেশ সময় লাগে। লম্বা সময়টুকুতে কাশ্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে ভুললাম না। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তিনি ইতিহাসে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি জানালেন, এ দুর্গ বা প্রাসাদে বিভিন্ন সময়ে বিখ্যাত অতিথিরা এসেছেন। কেবল সম্রাট-সম্রাজ্ঞী বা রাজা-রানিদের হিসাব করলেও তা তিরিশের ওপর গিয়ে ঠেকবে।

এ তালিকায় আছেন প্রুশিয়ান রাজা ফ্রেড্রিখ দ্বিতীয়, ফ্রেড্রিখ উইলহেল্ম তৃতীয়, উইলহেল্ম প্রথম, মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন কুইন্সি এডামস, রাশান সম্রাট নিকোলাস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, গ্রিসের রানি সোফি, রোমানিয়ার রানি মেরি, জার্মানির সম্রাট উইলহেল্ম দ্বিতীয়, গ্রিসের রাজা কন্সতানতিন প্রথম, নেদারল্যান্ডসের রানি ভিলহেলমিনা, পোলিশ রাষ্ট্রপতি ফাসনিয়েবস্কি, কোমোরবস্কি—এ রকম আরও অনেক রথী-মহারথী।

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাঁরাও নিশ্চয় মন্তব্যের খাতায় কিছু না কিছু লিখে গেছেন। সেসব কি দেখা যাবে?’

গাইড হতাশ করলেন। বলল, ‘হু। অনেকেরই স্বাক্ষর আছে। তবে আজ কোনোটাই দেখাতে পারব না। আগে থেকে বলতে হবে।’
অগত্যা বিদায় ছাড়া আর কিছু করার নেই। হ্যান্ডশেক করার সময় কাশ্যা যখন জানলেন, আমার সঙ্গে গাড়ি আছে, তখন অন্য আরও তিনটি জায়গায় যেতে বললেন—ভালিম, ভুয়োদয়াশ ও ওসুফকা। আমি তিনটি জায়গাতেই গিয়েছি। তবে আজ আর সেই অভিজ্ঞতা লিখছি না।

ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি বড় বিচিত্র। এ রকম বিচিত্র পথ ধরেই সভ্যতা এতদূর এসেছে। এ পথ নির্মাণে অনেককেই আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। কোথাও কোথাও তাঁদের স্মরণে এখনো মোমবাতি জ্বলে, কেউ কেউ ফুলের তোড়া দেয়।
ভ্রসউয়াফের নান্দনিক স্থাপনা, উপভোগ্য পরিবেশ আর রঙ্গরসে ভরা জীবনের পাশাপাশি এই হতভাগাদের কথাও তাই লিখলাম।

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২২, ০৬: ১৭
বিজ্ঞাপন