তাঁবুতে শীতের কোনো সন্ধ্যায় ফ্লাস্কভরা কফি নিয়ে নিয়ন আলোয় কুয়াশা উপভোগ করতে মন্দ লাগার কথা নয়। ক্যাম্পিং বিষয়টা বেশ আগে থেকে আমাদের দেশে প্রচলিত। গার্ল গাইডস, স্কাউট, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট—এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণদের উদ্যোগে শিশু–কিশোররা পেয়েছে তাঁবুবাসের স্বাদ। বাইরের দেশগুলোতে গ্রীষ্ম বা শীতের অবকাশে স্কুল–কলেজের কিশোর বা তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয় সুন্দর সব ক্যাম্পসাইটে। রীতিমতো নাম্বার দেওয়া হয় তাঁবুবাসের জন্য। কারণ, এই বিষয়কেও জীবনযাপনের অংশ হিসেবে তারা তরুণেদের শেখাতে চায়। রোমাঞ্চের ভিন্ন স্বাদ নিতেই এখন অনেকেই তাঁবু রাখেন নিজের কাছে, কোনো এক অবসরে প্রকৃতি আর সবুজের মধে৵ নিজেকে খুঁজে পেতে। যারা এই শীতকে উপভোগ করতে চান, তাঁরা কিন্তু চলে যেতে পারেন ঢাকার কাছে কিছু দারুণ ক্যাম্পসাইটে।
এর অবস্থান গুলশানে। নতুন বাজারের ভাটারা থানা থেকে সিএনজিতে মাত্র ২০ মিনিটের পথ। ১০০ ফুট রাস্তার শেষ প্রান্তে বেরাইদ। সেখানেই দেখা মিলবে ৩০ ফুট প্রশস্ত এই ক্যাম্পিং সাইট। সিএনজি ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২৫ টাকা। এখানে ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি আছে বারবিকিউর সুবিধা। ক্যাম্পের নিভুনিভু আলোয় নদের পাড়ে দারুণ সময় কাটবে নিঃসন্দেহে। চাইলে ট্রলারে করে বালু নদে ঘুরে খানিকটা সময়ও কাটাতে পারেন।
কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢাকার কাছের এই ক্যাম্পসাইট। এর আশপাশের নীরবতা ভালো লাগবে আপনার। এখানে আছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা।
ঢাকা থেকে যাত্রাবাড়ী গিয়ে সেখান থেকে জুরাইন রেলগেট। এর পর পোস্তগোলা ব্রিজ পার হলেই পাওয়া যাবে সারিঘাটের সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এই পুরো যাত্রায় খরচ হতে পারে প্রায় ৪০-৭০ টাকার মতো।
এটি মূলত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীর ঠিক মাঝখানে জেগে ওঠা ত্রিভুজ আকৃতির একটি চর। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে পেয়েছে দারুণ সাড়া। বাইকার ও সাইক্লিস্টরা তাঁবু নিয়ে যান থাকার জন্য।
গুলিস্তান থেকে বাসে করে মোগরাপাড়া; সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বৈদ্যের বাজার বা আরও একটু ভেতরে আনন্দবাজার ঘাট। সেখান থেকেই নৌকা নিয়ে রওনা হওয়া যাবে মায়াদ্বীপের উদ্দেশে। পুরো যাতায়াতে খরচ পড়তে পারে বাস, অটোরিকশা ও নৌকায় সর্বমোট ৮০-১৫০ টাকার মতো।
ঢাকার কাছেই সুন্দর গ্রাম দেখতে চাইলে যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জের এই উপজেলায়। প্রতিটি গ্রামই নয়নাভিরাম। বিশেষত বিশনন্দি ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামকে অনেকেই মিনি কক্সবাজার নামে ডেকে থাকেন। এই গ্রামগুলোর যেকোনোটিতেই ক্যাম্পিং করে একটা পুরো দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কালাপাহাড়িয়া, খালিয়ারচর, কদিমচর, রাধানগর, খাগকান্দা ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা।
গুলিস্তান থেকে প্রথমে বাসে করে আড়াইহাজার আসতে হবে। আড়াইহাজার থানার মোড় থেকে খাগকান্দা ঘাটে এলেই দূর থেকে চোখে পড়বে চৌদ্দার চর। এটিই এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যাম্পসাইট। আড়াইহাজার পৌঁছাতে খরচ পড়তে পারে ৫০-১৩০ টাকা।
ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক ও এর আশপাশ ইতিমধ্যে দর্শনার্থীদের মধ্যে পেয়েছে জনপ্রিয়তা। শীতের এই সময়ে হ্যালিপ্যাড চত্বর ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা। ঘুটঘুটে অন্ধকার ও পিনপতন নীরবতা রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের কোনো পাহাড়ি অঞ্চল অথবা কোনো নির্জন দ্বীপে ক্যাম্পিংয়ের জন্য এখানকার ক্যাম্পিং সাইটটি প্রাথমিক অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করতে পারে।
কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে পূর্বাচলের ৯ নম্বর সেক্টরের বাসস্ট্যান্ড বা নীলা মার্কেটের পরে নেমে অটোরিকশায় করে হ্যালিপ্যাড চত্বর। খরচ পড়বে ৩০-৫০ টাকা।
কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় নৌখোলা নদীর পাড়ে সরু রাস্তার পাশে অবস্থিত এই ক্যাফে। এখান থেকে পাবেন দারুন লেকভিউ এবং একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ। প্যাকেজ জনপ্রতি ১ হাজার ১৯৯ টাকা। পাশেই গাড়ি অথবা বাইক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যাম্পিংয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা এই ক্যাফে। ক্যাম্পিং ছাড়াও প্যাকেজের মধ্যে আছে লেকের পানিতে সুইমিং, সাইক্লিং, সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, বারবিকিউ ও স্ন্যাকসের ব্যবস্থা।
গুলিস্থান থেকে বাসে, এরপর অটোরিকশায় ক্যাম্পসাইট ক্যাফে আসতে খরচ পড়তে পারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থেকেও সিএনজিতে এই ক্যাফেতে যাওয়া যায়; প্রায় একই রকম খরচ পড়বে।
বিস্তারিত পাবেন তাদের ফেসবুক পেজে https://www.facebook.com/CampsiteCafeBD
গাজীপুরের এই ক্যাম্পসাইট সবচেয়ে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। এখানে ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি ব্যবস্থা আছে সাইক্লিং, ক্লাইম্বিং, আর্চারিসহ দারুণ কিছু আউটডোর অ্যাক্টিভিটির। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দ্য বেজ ক্যাম্প বাংলাদেশ ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে। অ্যাক্টিভিটির ওপর নির্ভর করে স্কুল, পরিবার অথবা করপোরেট গ্রুপগুলোর ক্যাম্পিং প্যাকেজ ভিন্ন হয়ে থাকে। ২০ জনের একটি দলের প্রতি দুই সদস্যের এখানে তাঁবুতে থাকার জন্য ভাড়া পড়ে আড়াইহাজার টাকা।
গুলিস্তান বা অন্য যেকোনো জায়গা থেকে বিভিন্ন উপায়ে গাজীপুর বেজ ক্যাম্পে যাওয়া যেতে পারে। টঙ্গী রুট ধরে গাজীপুর চৌরাস্তা। তারপর বাঁয়ে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল হাইওয়ে ধরে কিছুদুর এগোলেই পড়বে সফিপুর। সেখান থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে মাধবপুর সড়ক ধরে গেলেই পৌঁছানো যাবে বেজ ক্যাম্পে।
বিস্তারিত পাবেন তাদের ফেসবুক পেজে
https://www.facebook.com/basecamp.bangladesh
গাজীপুরের অনেকগুলো রিসোর্টের মধ্যে বৃন্দাবন রিসোর্টটি আলাদা হওয়ার মূল কারণ হলো সবুজের সমারোহ। ঢাকার যারা ক্যাম্পিং করতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি দারুণ গন্তব্য। ঢাকা থেকে মাওনা ফ্লাইওভার দিয়ে ‘শিশুপল্লী’ পার হয়ে কিছুদূর সামনে গেলেই গাজীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নে পড়বে এই বৃন্দাবন রিসোর্ট। পুরো যাত্রায় বাস ও রিকশায় মোট খরচ হতে পারে ১৭০ টাকার মতো। এই রিসোর্ট এরিয়ার মধ্যে ক্যাম্পিং খরচ জনপ্রতি ২০০ টাকা।
পরিবার নিয়ে নৌকাভ্রমণ ও ঘুড়ি ওড়ানো, সব মিলিয়ে ক্যাম্পিংয়ের আদর্শ জায়গা নীলা বর্ষা রিভার কুইন। ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাভারের এই রিসোর্ট। এখানে পৌঁছাতে হয় নৌকা দিয়ে বংশী নদী পার হয়ে। ঢাকা থেকে প্রথমে সাভার থানা স্ট্যান্ডে গিয়ে সেখান থেকে মিনিট দশেক হাঁটলে ভাগলপুর ঘাট। এই ঘাট থেকে নৌকায় নদী পার হলেই ক্যাম্পিং সাইট।