মাত্র এক হাজার টাকায় বান্দরবানের পাহাড়ের রাজা কিংবা রানি হতে চান
শেয়ার করুন
ফলো করুন

অনেক দিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে, তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাত না।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পাহাড় চূড়ায়’ কবিতাটা পড়লে হুট করে মনে হতেই পারে, সত্যি যদি একটা পাহাড় কেনা যেত। আদতে সম্ভব না হলেও এক রাতের জন্য একটা পাহাড় কিন্তু ভাড়া নেওয়া সম্ভব আমাদের দেশেই। মাঙ্কি ফরেস্ট নামে খ্যাত বাংলাদেশের বান্দরবানের আলীকদমে রয়েছে এমন এক পাহাড়, যার নাম মাইতা তৈম। মাত্র এক হাজার টাকায় পুরো এক দিন ভাড়া নিতে পারবেন আপনি এই পাহাড়। যাঁরা ট্র্যাকিং ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য হালের ক্রেজ এই মাইতা তৈম পাহাড়। যদিও ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় আলীকদমের মারায়ন তং-এ ৮৫০ টাকায় তাঁবুবাসের প্যাকেজ পাবেন, কিন্তু সেখানে প্রচুর জনসমাগম হওয়ায় প্রকৃতির নিস্তব্ধতা যাঁরা ভালোবাসেন আর জুমঘরে বসে হাজার নক্ষত্রের নিচে একটা মুগ্ধ রাত্রি কাটাতে চান; সেই সব অভিযাত্রীর জন্য মাইতা তৈমে রাতযাপন দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

মাইতা তৈম চৌত (মাইতা তৈম পাহাড়) দুপ্রু ঝিরিপাড়ার স্থানীয় অধিবাসীরা এই নামেই চেনেন। ঢাকা থেকে বাসে করে চকরিয়া হয়ে আপনাকে যেতে হবে আলীকদম, বাসভাড়া পড়বে ৯০০ থেকে ১ হাজারর ৮০০ টাকা। হানিফ, সেন্ট মার্টিন, সৌদিয়া—এই বাসগুলো এসি, নন-এসি ভেদে চলে যাওয়া যাবে সরাসরি আলীকদমে। চাইলে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে গিয়ে বা কক্সবাজারের ট্রেনে চকরিয়া নেমে সেখান থেকে চান্দের গাড়ি বা সিএনজি করে চলে যেতে পারবেন আলীকদমে। এবার আলীকদম আবাসিকের আগে নেমে যেতে হবে। সেখানে নেমেই যেতে হবে ইয়াসিনের হোটেলে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন মাইতা তৈম পাহাড়টি লিজ নিয়েছেন। তিনিই জনপ্রতি এক হাজার টাকায় এই পাহাড় ভাড়া দিয়ে থাকেন। তাই এই প্যাকেজ পেতে আপনাকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে আগে থেকেই বুকিং দিতে হবে। এখানে এসেই আপনার জন্য ডাল, আলুভর্তা, ডিমভাজা আর মুরগি মেনুতে দুপুরের খাবার থাকবে।

খাওয়া শেষে বিশ্রাম নেওয়ার পর একজন গাইডসহ নিয়ে যাওয়া হবে পাহড়ের চূড়ায়, যিনি আপনাকে পথ চিনিয়ে দেওয়া এবং রাতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। আপনি যদি পাহাড় বাইতে খুব অভ্যস্ত হন, তবে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে আর একেবারে নতুন হলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। চলতি পথে পাবেন মনোরম ঝিরি, উঁচু-নিচু টিলা আর দারুণ সব ভিউ পয়েন্ট। খানিকটা বিরতি দিয়ে ছবি তুলতে তুলতে পৌঁছাতে পারেন গন্তব্যে।

পাহাড়ের মাচানের ওপর রয়েছে জুমঘর আর সেই সঙ্গে তাঁবু। কয়েকজন মিলে গ্রুপ এলে পুরো জুমঘরটাই নিয়ে নিতে পারবেন। হাজার হাজার তারার আকাশের নিচে মাচানে পা দুলিয়ে নিঃসন্দেহে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার কিছুটা সময় জীবনের অন্যতম সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে ইট-পাথরের নগরী থেকে কিছুটা সময় পাহাড়চূড়ার নিভৃত অরণ্যে। এমন ভ্রমণে গেলে নির্ঘুম একটা রাত কিন্তু খুব একটা মন্দ হবে না পাহাড়চূড়ায় বসে। রাতের খাবারে থাকবে কোয়াটার বারবিকিউ এবং চার পিস পরোটা। পরদিন সকালে পাহাড় থেকে নেমে ইয়াসিন ভাইয়ের হোটেলে থাকবে ডিম-খিচুড়ি দিয়ে সকালের নাশতা। এরপর আবার বাসে চড়ে চলে যাবেন নিজ গন্তব্যে শহরের পথে। তিনবেলার খাবার, গাইড এবং জুমঘর—সব মিলিয়ে খরচটা এক হাজার টাকা। এই ছুটিতে সবাই যখন যাচ্ছেন কোলাহলে মুখর জনারণ্যে, তখন আপনি চলে যেতে পারেন নিস্তব্ধতার সৌন্দর্যে মাখা মাইতা তৈম পাহাড়ে। যোগাযোগ ইয়াসিন—০১৭৯০৬১০৩২৬।

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ২৯
বিজ্ঞাপন