বৃষ্টি না থামলেও পেঁজা তুলার মতো কাশবন জানান দিচ্ছে শরৎ এসে গেছে। শরৎ এলেই স্বপ্নময় মেঘের ভেলার মতো সাদা এ ফুলের বন এক মায়াবী আবহ তৈরি করে খোলা মাঠে আর প্রান্তরে। দিগন্তজুড়ে নীল আকাশ আর সাদা শুভ্র কাশফুল, এ যেন প্রকৃতির এক দারুণ শারদ আয়োজন। এমন দিনে কাশবনে ঘুরতে গেলে যেমন পরম প্রশান্তি পাওয়া যায়, তেমনি তোলা যায় অসাধারণ সব ছবি।
প্রযুক্তির কল্যাণে ক্যামেরাবন্দি করে ফেলা যায় সেই সুন্দর দৃশ্যপটে নিজেদের কিছু সুন্দরতম মুহূর্ত। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের শেষ এ সময়ে কাশফুলের মৌসুম। তাই আজ হাল ফ্যাশনের পাঠকদের জন্য রইল পাঁচটি কাশবনের সন্ধান। ঢাকার মধ্যেই এসব জায়গায় সহজেই যেতে পারবেন এবারের ছুটিতে।
৩০০ ফিট রাস্তা
খাদ্যরসিক আর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ৩০০ ফিট সড়কের কাশফুলের রাজত্ব অনেক বেশি জনপ্রিয় বেশ কয়েক বছর ধরে। যদিও খাবারের রেস্তোরাঁগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তবে প্রকৃতির নিয়মে এখানকার বিস্তৃত খোলা প্রান্তরে প্রতিবছর শরৎ এলেই কাশফুল আসে তাঁর অপার সৌন্দর্য নিয়ে। এখন ৩০০ ফিটের রাস্তাটা সুন্দর করে পিচঢালাই করায় কালো রাস্তার বিপরীতে আরও বেশি সুন্দর দেখায় দুই পাশের শ্বেতশুভ্র কাশফুল। মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কল্যাণে এখন সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। এ ছাড়া সব সময়ের মতো ঢাকার বাস সার্ভিস তো আছেই ।
দিয়াবাড়ি
বেশ আগে থেকেই ব্যস্ত জীবনে খানিকটা স্বস্তির আশায় মানুষ ছুটে যায় উত্তরার দিয়াবাড়ির খোলামেলা পরিবেশে। বিভিন্ন ফুড কার্ট, নদীর তীর আর নতুন করে পিচঢালা সুন্দর রাস্তা থাকায় এখন অনেকেই যান এখানে একটু ভালো সময় কাটাতে। তবে শরতের মৌসুমে এখানে মানুষের উপচে পড়ে ভিড়। কারণ একটাই, দিয়াবাড়ির নদীর ধারের কাশবনের এক মায়াবী সৌন্দর্য। ফটোগ্রাফার আর এমনিতেই ছবি তুলতে ভালোবাসেন যাঁরা, তাঁদের এই শরতে সাদা কাশফুলের মধ্যে একটা মনমতো ছবি তো তুলতেই হবে! তাই বৃষ্টি-বাদলের মতিগতি বুঝে চলে যেতে পারেন এখানে যেকোনো ছুটির দিনে ।
আফতাবনগর
রামপুরা ব্রিজ থেকে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে জহিরুল ইসলাম সিটির ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে কাশবনের শুভ্র দুনিয়া। ঢাকার ঠিক মাঝখানে এই কাশবনে চাইলেই চলে যেতে পারেন শরতের কোনো এক নিরিবিলি বিকেলে।
হযরতপুর
কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের কালীগঙ্গার তীরে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে রয়েছে কাশফুলের বন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রজাপতি বাসে ১০ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারেন ঘাটারচর। সেখান থেকে টমটম বা সিএনজিতে করে চলে যাওয়া যায় কেরানীগঞ্জ। বছিলা সেতুর পরে আঁটিবাজার পার হলেই হযরতপুর। নৌকা পার হয়ে চলে যেতে পারবেন কাশের চরে। জায়গাটিতে ভিড়ভাট্টা একটু কম হয়।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ
এখানে নদীর তীরে বালুময় চরে রয়েছে কাশফুলের রাজ্য। চিরচেনা বুড়িগঙ্গা তীরের মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কাছেই এই কাশবন। বছিলা সড়ক ধরে সামনে গেলে অনেকখানি জায়গাজুড়ে ফাঁকা জমিতে দেখতে পাবেন অবারিত কাশবন। আদাবর হয়ে ঢাকা উদ্যানে নৌকা পার হয়ে চলে যাওয়া যায় এই কাশবনে।
কাশবনগুলো কিছুটা নিরিবিলি ও জনমানবহীন স্থানে হয়ে থাকে। তাই কয়েকজন মিলে গেলে ভালো। আর সন্ধ্যার পর সেখানে না থাকাই শ্রেয়।অ্যালার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা থাকলে কাশবনে না যাওয়াই শ্রেয়। কাশফুলের রেণু পোশাকে আটকে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সিনথেটিক বা জর্জেট পোশাক পরতে পারেন। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে সেদিন বৃষ্টি হয়ে থাকলে না যাওয়াই ভালো, কারণ এ সময় কাশফুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
ছবি: পূর্ণ দাস
মডেল: আরোহী