ছিমছাম দোতলা লঞ্চ। যাত্রী আমরা সব মিলিয়ে বিশ-পঁচিশেক। আর কিছু বাচ্চাকাচ্চা আছে। এরা বিপজ্জনক ভঙ্গিতে লঞ্চের রেলিং ধরে বাদুড়ের মতো উল্টে ঝুলে আছে। তা নিয়ে অবশ্য তাদের মা-বাবার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। পড়ে গেলে তো ঝপাৎ শব্দ হবেই। তাতেই বোঝা যাবে আছে না গেছে। তখন দেখা যাবে।
বাদুড়দের দেখাদেখি আমাদের বাঁদর দুজনও রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। তাফসু মিয়া তার আদুল পেটটায় ভর দিয়ে প্রায় উবু হয়ে নদী দেখছে। মুরব্বি সেজে বড় ভাই রন সাবধান করে দিল একচোট, ‘তাফসু, অমন করে ঝুঁকলে কিন্তু তুমি পড়ে যাবে টুপ করে।’ বলে সে নিজেও মারাত্মক রকম ঝুঁকে দেখাল। অবস্থা বেগতিক দেখে রেন আর আমি ছুটে গেলাম। দুজনকে ‘তিন মিনিটেই গরম পানি’ থেরাপি দিতেই কাজ হলো। তারা সুবোধ বালকের মতো মাঝ ডেকে চলে এল।
মুশকিল হলো, আমাদের রিভার ক্রুজ রিভারে ভাসছে, কিন্তু চলছে না। কারণ, হালকা গোল বেধেছে। ভুল করে একই কেবিন দুই পার্টির কাছে বুকিং দেওয়া হয়েছে। আর কী কপাল, এই দুই পার্টির এক পার্টি হলাম আমরা। যদিও ব্যাপারটা ট্যুর ম্যানেজার আর লঞ্চের লোকের হাতে ছেড়ে দিয়ে ডেকে বসে কফি টানছি। তবে চোখেমুখে সামান্য টেনশন। ব্যাপার বুঝে ঝুমু আপু আশ্বস্ত করল, ‘আরে, একদম খারাপ আর কী হবে। বড়জোর বুকিং মানি ফেরত নিয়ে খুলনা ফিরে যাব। তারপর চুইঝালের কোনো রেস্তোরাঁয় ঢুকে ইচ্ছেমতো খেয়ে মনের ঝাল মিটিয়ে ঢাকা রওনা দেব’। চুইঝালের কথা শুনে আমাদের চোখ পিটপিট করতে লাগল। ঝুমু আপুর টোপ আমরা ক্ষুধার্ত মাছের মতো গিলে চুপ হয়ে বসে রইলাম।
ম্যানেজার গোছের শুকনোমতো লোকটা একটু পরপর দৌড়ে এসে অভয় দিয়ে যাচ্ছে, ‘আর দশ মিনিট, স্যার। মামলা ক্লোজ করে চাবি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’ বেচারা অভয় দেবে কি, নিজেই ভয়ে অস্থির। জোর করে ফুটিয়ে তোলা কাঁদো কাঁদো নার্ভাস হাসিটাই বলে দিচ্ছে যে ভেতরে-ভেতরে কলিজা শুকিয়ে কাঠ। অতি বেকায়দার একান-ওকান কেঁদো হাসিতে তাকে ‘উন্মাদ’ পত্রিকার ক্যারিকেচারের মতো লাগছে। বাহারি প্রিন্স কোট গায়ে চাপানো লোকটার নামও প্রিন্স। আজকে দ্রুত মামলা ক্লোজ না হলে চাকরি খুইয়ে প্রিন্স থেকে এক ধাপে পপার হওয়া বোধ হয় কেউ আটকাতে পারবে না।
ঠন করে মাইক নামিয়ে ঘোষণা শেষ করতেই মাছের দোপেয়াজির দুর্বার ঘ্রাণ আমাদের ছোট্ট লঞ্চের পুরো ডেক দখল করে জাঁকিয়ে বসল। সাদা ভাতের ট্রে থেকে একরাশ ধোঁয়া ওঠা শুভ্রতা তাতে আরও মুগ্ধতা জুড়ে দিল যেন। চুইঝালের রেজালার ঘ্রাণ এসে প্রজাপতির মতো পাখনা মেলার আগেই দেখা গেল আমরা থালা হাতে সটান উঠে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
অবশেষে দুপুর ১২টা বাজিয়ে মুশকিল আসান হলো। প্রিন্স তার প্রিন্স কোটের ইজ্জত বজায় রেখে আরেক প্রস্থ কেঁদো হাসি দিয়ে বিদায় নিল। রূপসা নদীতে ঢেউ তুলে ধীরলয়ে এগিয়ে চলল আমাদের জলযান। সঙ্গে একটা পাতি জলযানও আছে। পাড়ে নামার জন্য ছোট নৌকা। ঢেউয়ের তালে সেটাও দুলছে দুলকি চালে।
রূপসা এক বিখ্যাত নদী। এর পানি ঘোলাটে ধূসর। জীবনানন্দ দাশ এই ঘোলা জল নিয়ে লিখেছেন, ‘রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বায়...’। জীবনানন্দের কথা সত্য করে দিয়ে কখানা ডিঙিনৌকা উদয় হলো মাঝনদী ফুঁড়ে। তাদের পালে সেলাইয়ের ছোট-বড় তাপ্পি বহুদূর থেকে থেকে চোখে পড়ে। ছেঁড়া পালের হাল ধরা মাঝির বয়সও নেহাত অল্প। জীবনবাবুর পঙ্ক্তিরা এখানে বড্ড জীবন্ত।
খুলনা থেকে মোংলা বন্দর খুব কাছেই।
একটু এগোতেই বন্দরের দেখা মিলল। সেখানে কার্গো জাহাজের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইয়া বড় বড় ক্রেন তাদের যন্ত্র-হাত দিয়ে লাল-নীল কনটেইনার জাহাজের খোল থেকে ডাঙায় তুলে সাজিয়ে রাখছে। তবে মাঝনদীতে আস্ত একটা কার্গো শিপকে আধাআধি ডুবে থাকতে দেখা গেল। তাকে ঘিরে কারও ব্যস্ততা নেই। কে জানে কতকাল হলো তার এই সলিলসমাধি হয়েছে। ডুবে যাওয়ার সময় তার সারেং আর লোকজন কি জ্যান্ত সাঁতরে বাঁচতে পেরেছে? নাকি তারাও লাল-নীল কনটেইনারসহ নদীর অতলে তলিয়ে গেছে?
চিকমিকে রোদ মেখে শরীরটা ওম ওম লাগছে। ওমটা চাগিয়ে ওঠা খিদেয় বেশ ডিমে তা দেওয়ার কাজ করছে। আবার বেশি ডিমে তা দিয়ে ফেললে খিদেটা ফটাস ফেটে দুদ্দাড় বেরিয়ে আসতে পারে। ডলি মামির লুচি-পরোটা হজম হয়ে গেছে সেই কখন।
এখন এরা কখন খেতে দেয়, মনে মনে তার প্রমাদ গুনছি। এই তিন দিনের ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মেন্যুটা আগেই যাত্রীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মুঠোফোন খুলে রেন আর আমি আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলাম মেন্যুর তালিকায়। ভেটকি মাছের দোপেয়াজা আর চুইঝাল দিয়ে রাঁধা মাটন রেজালা দেখে খিদের ডিমটা যেন ফাটল ধরিয়ে নড়েচড়ে বসল। আহ্, চুইঝাল খাওয়া হচ্ছে তাহলে আজকে।
লতানো সাধারণ চেহারার লিকলিকে এক গাছ এই চুইঝাল। কিন্তু লিকলিকে হলে হবে কী, কয়েক টুকরো ঝুইঝালের ডাঁটি কেটে রান্নায় ফেলে দিলে ইয়া বড় পালোয়ানও ঝাল আর ঝাঁজে কুপোকাত হয়ে যাবে। এই বস্তু খেতে হলে বড় কলিজার দরকার হয়। আমাদের পুরো পেটটাই অবশ্য কলিজা। সুতরাং নো চিন্তা।
মাইক হাতে আমাদের ট্যুর গাইড, বছর পঁচিশের অনীক ছেলেটা এসে জানিয়ে দিল, এখনই লাঞ্চ দিয়ে দেবে। আর বিকেল চারটায় যেন তৈরি থাকি আমাদের প্রথম স্টপেজ ‘করমজল’ পয়েন্টে নামার জন্য। প্রত্যেকের কেবিনে থাকা লাইফ জ্যাকেট পরে ট্রলারে উঠতে হবে। নইলে তাকে নেওয়া হবে না। ঠন করে মাইক নামিয়ে ঘোষণা শেষ করতেই মাছের দোপেয়াজির দুর্বার ঘ্রাণ আমাদের ছোট্ট লঞ্চের পুরো ডেক দখল করে জাঁকিয়ে বসল। সাদা ভাতের ট্রে থেকে একরাশ ধোঁয়া ওঠা শুভ্রতা তাতে আরও মুগ্ধতা জুড়ে দিল যেন। চুইঝালের রেজালার ঘ্রাণ এসে প্রজাপতির মতো পাখনা মেলার আগেই দেখা গেল আমরা থালা হাতে সটান উঠে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
মাছের শেষ কাঁটা চিবিয়ে এক কাপ রং চা হাতে নিয়ে উদাস বসে আছি সবাই। নিস্তরঙ্গ নদীপথ। করমজল পৌঁছাতে আর মাত্র ১৪ কিলোমিটার বাকি। এমন সময় দৃশ্যপটে ভেসে উঠল রামপাল। রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। সুদীর্ঘ এলাকাজুড়ে অতিকায় যজ্ঞ যেন। এখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ আসে। সিমেন্টের সুউচ্চ চিমনি দিয়ে কয়লাপোড়া ভকভকে ধোঁয়া বিষাক্ত সাপের মতো এঁকেবেঁকে রওনা দিয়েছে সুন্দরবনের দিকে। বছর ঘুরে কয়লার চালানও চলবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে। তারপর একসময় হয়তো সবার জান্তে কিংবা অজান্তেই কয়লার গুঁড়া আর সালফারে মরা মাছেরা ভেসে উঠবে সাদা চোখে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে। পেট ফুলে ঢোল মৃত বকের দল ঢেউ ধরে নির্বাক বয়ে যাবে। গাছেদের শ্বাসমূলে বিষ ঢুকে নীল হয়ে নুয়ে পড়বে। ভাবতেই সবার মন খারাপ হয়ে এল।
সংবিৎ ফিরে এল, ট্যুর গাইড, অনীকের হাঁকডাকে। নিয়ন কমলা লাইফ জ্যাকেট পরে তৈরি হয়ে একে একে সবাই নৌকায় চেপে বসলাম। মাঝি বইঠা ফেলল ছপাৎ। টলমল করতে করতে আমরা এগোলাম করমজলের জল কেটে। এই জল আর রূপসার জল নেই। এ নদীর নাম পশুর নদী। সুন্দরবনের নিজস্ব নদী।
তীরে ভিড়তেই দেখা গেল কতগুলো ধেড়ে বানর অভিনন্দন জানাতে ঘাটে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। ছানাপোনাও আছে কোলে কাঁখে। তাদের সবার নজর গাইডের হাতে থাকা কমলার থলেতে। গাইড অনীক আমাদের পই পই সাবধান করে দিল বানরকে যেন আপ্যায়ন করে না বসি। ঝাঁকে ঝাঁকে বানর এসে কাঁধে বসবে তখন। আর দ্বিতীয়ত, যেন কেউ দলছুট হয়ে না পড়ি। এটা সুন্দরবন। বাঘের ডেরা। অনীকের কথাগুলোই যেন বাঁশের কঞ্চিতে টাঙিয়ে রাখা সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ট্রেইল ও টাওয়ার ছাড়া বনের মধ্যে চলাচল করবেন না। নির্দেশ অমান্যকারীর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না’। পড়ন্ত বিকেলে হেলে পড়া সূর্যটাকে পেছনে ফেলে ছমছমে গায়ে রওনা দিলাম বনপথে।
করমজল জায়গাটা আসলে সুন্দরবনের সদর দরজার মতো। উঁকি দিলে বনের উঠান দেখা যায় বটে, কিন্তু অন্দরের দেখা মেলে না। সিনেমার প্রিভিউয়ের মতো আরকি। বনপথে কাঠের তক্তা বিছিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকোর ট্রেইল। পা রাখতেই ক্যাঁচকোঁচ আর্তনাদ করে উঠছে। এই শব্দে বাঘ নিজেই কানে তুলা গুঁজে পালিয়ে কূল পাবে না। তবে ভাঙা কাঠের ফোকরে পড়ে বেমক্কা পা আটকে গেলে আর বাঘ মামা কাছে পিঠে থাকলে ঘ্যাকাৎ কামড়ে ঠ্যাং নিয়ে ভোঁ–দৌড় দিলে আপত্তি জানানোর সময় মিলবে না। কাঠের ট্রেইলের দিন অবশ্য শেষ। কংক্রিটের সেতু বানানোর তোড়জোড় দেখলাম। প্রকৃতির ভেতরে বালু-সিমেন্টের ঢালাই না পড়লেই কি ভালো হতো না। ভাঙা তক্তাগুলো বদলে নিলেই তো খুব চলত।
সাঁকোর দুই পাশে সুন্দরী, বাইন, কেওড়া আর পশুরগাছের শ্বাসমূল লোনা কাদা ফুঁড়ে আকাশপানে চাইছে। এক-আধটা লাল কাঁকড়া খুব সাবধানে উঁকি দিয়েই আবার দ্রুত গর্তে সেঁধিয়ে উধাও। পিচ্ছিল কাদামাটিতে মাড-স্কিপার নামের মাছগুলো হুটোপুটিতে ব্যস্ত। ঠিক যেন গাঁয়ের দুষ্টু ছেলের দল। এই মাড–স্কিপার বড় অদ্ভুত এক চিড়িয়া। এরা উভচর। স্থানীয়রা বলে মেনা মাছ। মাথার ওপরে ছোট্ট কালো পুঁতির মতো চোখ। আর পাখনা বলতে গলার নিচে এক জোড়া আর গালের দুপাশে আরেক জোড়া। সব মিলিয়ে মজার এক কার্টুনিশ চেহারা। তাদের কয়েকজনকে দেখা গেল লেজে ভর দিয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। যেন শহুরে আগন্তুকদের এক পলক দেখতে চাইছে। তারপর আর লেজে কুলাল না। উল্টে গিয়ে একে অন্যের গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কারও বা মাথায় মাথা ঠুকে বোঁ করে উঠল। মাড-স্কিপারদের স্টান্টবাজি দেখে আমরা হেসেই খুন।
আধা ঘণ্টা হাঁটার পর আমরা পৌঁছালাম করমজলের কুমির আর হরিণ প্রজননকেন্দ্রে। জায়গাটায় চিড়িয়াখানা চিড়িয়াখানা ভাব প্রকট। বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হরিণের খামার। হরিণের পাল খেয়ে দেয়ে নাদুসনুদুস খোলতাই চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কুমিরের বাসায় উঁকি দিতেই দেখা গেল কুমিরছানা উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুম। কান পাতলে তাদের নাকডাকার শব্দও মিলতে পারে। কাছিমদেরও দেখা গেল বেজায় অলস জীবন। কিন্তু আমাদের আর আলসেমি করার উপায় নেই। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। ছোট ছোট বুনো মশা কামড়াতে শুরু করেছে। নৌকা করে লঞ্চে ফিরতে পারলে বাঁচি। তা ছাড়া, রাতের মেন্যুর জন্য তর সইছে না।
লঞ্চে ফিরতে না ফিরতেই সন্ধ্যার নাশতার ডাক পড়ল। গরমাগরম সবজি পাকোড়ার মচমচে স্বাদ আর চা-কফির টাটকা সুবাসে শীতের সন্ধ্যাটা কুসুম কুসুম আমেজে ছেয়ে গেল। আমরা হাত-পা ছড়িয়ে বসে আগুন গরম পাকোড়াগুলো গপাগপ খেয়ে নাক দিয়ে ড্রাগনের মতো ধোঁয়া ছাড়তে লাগলাম। এই হালকা নাশতা আমাদের খিদেয় যেন বারুদের কাজ দিল। যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের আগেই এরা খেতে দিলে হয়।
ঘড়ির কাঁটা যেন এবার ইচ্ছে করে ধীরে ঘুরতে লাগল। আকাশের মিটিমিটি তারা, কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ, নদীর মৃদুমন্দ ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ—সবকিছু উপেক্ষা করে আমরা বে-রোমান্টিকের মতো খিদেয় আঙুল কামড়াতে লাগলাম। তারপর রাত নয়টা বাজিয়ে লঞ্চের হেঁশেল থেকে উঠে এল বাবুর্চি-ওয়েটারের দল। চিনিগুঁড়া চালের পোলাওয়ের ওপর হালকা ঘিয়ের পোঁচ দেওয়া। টক-মিষ্টি চাইনিজ ভেজিটেবল আর ঝাল ঝাল চিকেন মাসালা মুহূর্তেই লঞ্চের আধখোলা ডেকটাকে থ্রি-স্টার বাংলা রেস্তোরাঁয় পাল্টে ফেলল। সঙ্গে বোনাস হিসেবে বাগদা চিংড়ির দেখা পেয়ে আবেগ ধরে রাখা রীতিমতো কঠিন হয়ে গেল।
ডিনারের পাট চুকতেই মাইকে ভেসে এল পরদিনের ভ্রমণসূচি। ট্যুর গাইড একনিশ্বাসে বলে গেল, ‘সকালে কটকা, দুপুরে ডিমের চর, বিকেলে কচিখালী আর সন্ধ্যায় টাইগার পয়েন্ট। কালকে বহু হাঁটাহাঁটি আছে। সেইমতো পোশাক পরে নেবেন। আর ভালো হয় আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে। ভোরে নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়ব।’
সুবোধ বালকের মতো আমরা ডেক ছেড়ে কেবিনে ফিরে গেলাম হাই তুলতে তুলতে। এত যে হাঁটাবে কালকে, তা সকালে কি খেতে দেবে, তাই ভাবছি। জম্পেশ কিছু না হলে কিন্তু খেলব না। তবে কালকে যে আসল সুন্দরবনের দেখা মিলবে, তার আঁচ পাওয়া গেল ভালোভাবেই। (চলবে)
লেখক: ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার জার্মানির মিউনিখে একটি ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সংস্থায় কর্মরত
ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার