ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতিদেবী শেরপুর থেকে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর; যোগাযোগব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো না হওয়ায় কম পর্যটক ভিড় জমান এখানে। পাহাড়ঘেরা এই সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে আছে সবুজ প্রান্তর, উঁচু-নিচু টিলা আর ছায়াময় অরণ্য। সব মিলিয়ে শেরপুর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। এই শেরপুরের পাঁচটি দারুণ ভ্রমণ গন্তব্য নিয়ে কথা বলা যাক, যেগুলো এক দিন বা দুই দিনের সফরে ঘুরে আসা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

পানিহাটা-তারানী পাহাড়

পাহাড়ে ঘেরা এই দুটি গ্রাম নিয়েই এই এলাকা
পাহাড়ে ঘেরা এই দুটি গ্রাম নিয়েই এই এলাকা
ছবি: লেখক

জেলা শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া এলাকায় অবস্থিত। সারি সারি পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রাম দুটি স্থানীয়ভাবে ‘পানিহাটা-তারানী পাহাড়’ নামে পরিচিত। তারানী পাহাড়ের উত্তরে আছে ভারতের তুরা পাহাড়। তুরা পাহাড়ের দূরের টিলাগুলো মেঘের সঙ্গে মিতালি করে তৈরি করে এক অপূর্ব দৃশ্যপট। পাহাড়ি ভোগাই নদীর স্বচ্ছ জলে যখন রোদের আলো পড়ে, তখন নিচের রঙিন নুড়িপাথরগুলো চকচক করে ওঠে। নদীর পাড়ে আছে একটি খ্রিষ্টান উপাসনালয়, বিদ্যালয়, আবাসিক হোস্টেল ও চিকিৎসাকেন্দ্র। এখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েক ঘণ্টা কাটাতে পারেন খুব স্বচ্ছন্দে।

বিজ্ঞাপন

বারোমারী মিশন ও মরিয়ম নগর গির্জা

এথাসে গড়ে উঠেছে বারোমারী মিশন
এথাসে গড়ে উঠেছে বারোমারী মিশন
ছবি: লেখক
গির্জা পরিদর্শনের আগে প্রয়োজন প্রশাসনের অনুমতি
গির্জা পরিদর্শনের আগে প্রয়োজন প্রশাসনের অনুমতি
ছবি: লেখক

১৯৪২ সালে গারো পাহাড়ঘেঁষা বারোমারী এলাকায় গড়ে ওঠে এই খ্রিষ্টান মিশন। ৩৯ একর জমির ওপর নির্মিত মিশন চত্বরে আছে গির্জা, বিদ্যালয় এবং আবাদি জমি। এটি বর্তমানে একটি দর্শনীয় ধর্মীয় স্থান ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন হিসেবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। গির্জা পরিদর্শনের আগে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়।

গজনী অবকাশকেন্দ্র

গারো পাহাড়ের পাদদেশে   অবস্থিতি এই অবকাশকেন্দ্র
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিতি এই অবকাশকেন্দ্র
ছবি: লেখক

ঝিনাইগাতী, শেরপুরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে এই অবকাশকেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। সারি সারি শাল, সেগুন আর গজারিগাছ, পাহাড়ি ঝরনা, কৃত্রিম লেক ও ব্রিজ মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ ভালো লাগবে আপনার। পাহাড়ের চূড়ায় আছে ৬ কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক রেস্টহাউস এবং পদ্মা সিঁড়ি নামে আঁকাবাঁকা পথ, যা পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে যায়। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে কার পার্কিং, খেলার মাঠ, স্যানিটেশন এবং রান্নার ব্যবস্থা। অনেকেই এখানে এসে পিকনিক করেন।

মধুটিলা ইকোপার্ক

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা এই ইকো পার্কের
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা এই ইকো পার্কের
ছবি: উইকিপিডিয়া

এটি পোড়াগাঁও, নালিতাবাড়ীতে অবস্থিত। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই ইকোপার্কটি সবুজে ঘেরা এক অনন্য উদ্যান। এখানে আছে বিরল ও ঔষধি গাছের বনায়ন, স্টার ব্রিজ, রাইড, রেস্টহাউস এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া ছোট চিড়িয়াখানা, ক্যান্টিন, দেশি নৌকা, প্যাডেল বোটসহ নানা আকর্ষণ রয়েছে। দিনের বেলায় মহুয়া রেস্ট হাউস ব্যবহার করা গেলেও রাত্রিযাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।

সুতানাল দিঘি

নানা কিংবদন্তী আছে এই দিঘি নিয়ে
নানা কিংবদন্তী আছে এই দিঘি নিয়ে
ছবি: প্রথম আলো

এর অবস্থান শালমারা গ্রাম, নালিতাবাড়ীতে। প্রায় ৬০ একর জমির ওপর খনন করা এই দিঘির সঙ্গে জড়ানো আছে নানা লোককথা। বর্তমানে এর আয়তন প্রায় ১৯ দশমিক ৭০ একর। কেউ বলেন এটি ‘কমলা রানীর দিঘি’, কেউ বলেন ‘রানী বিরহিনী’। তবে এলাকাজুড়ে এটি ‘সুতানাল দিঘি’ নামেই পরিচিত। প্রাচীন এ জলাধারটি ইতিহাস, সৌন্দর্য ও কৌতূহলে পরিপূর্ণ, আর বছরের প্রায় প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যেতে হবে নালিতাবাড়ী। বাস ছাড়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে। সকাল ৫টা ৫০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অন্তর। ভাড়া ৪০০–৫৫০ টাকা। নালিতাবাড়ী নেমে গড়কান্দা মোড় যেতে হবে রিকশায় (৩০–৪০ টাকা)। এরপর অটো বা সিএনজি রিজার্ভ (৫০০–৭০০ টাকা) করে। ঢাকা থেকে শেরপুরের বাসভাড়া ৪০০–৬০০ টাকা। শেরপুর গিয়ে খোয়াড়পার স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন বিভিন্ন গন্তব্যে।
চারআলী বাজার বা নাকুগাঁও থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ করলে ভাড়া ২৫০–৪০০ টাকা পড়বে; আর ভাগাভাগি করলে ভাড়া হবে ৫০–১২০ টাকা।

শেরপুরের বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন আজ অবহেলার কারণে বিলীন হওয়ার পথে। বিশেষ করে পৌনে তিনআনি জমিদারদের দৃষ্টিনন্দন রংমহলটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এ–জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০: ০০
বিজ্ঞাপন