পাহাড়, নদী আর ঝরনা যেমন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জ ঘুরে বেড়ানোটা আমার নেশা। সুযোগ পেলেই ছুটে যাই এদিক-ওদিক। সমতল থেকে পাহাড়, পর্বত, নদী—যা-ই হোক না কেন। তবে এবার ছুটি পেয়ে বেরিয়ে পড়ি বান্দরবানের উদ্দেশে। সাতসকালের সূর্য উঠছে। পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে রোদের আলোকছটা। পাহাড়চূড়ায় মেঘ জমেছে। এর মধ্যে পাহাড়ের ফাঁকফোকরে গড়ে উঠেছে বসতি। পাহাড়ি মানুষের বসবাস সেখানে। নির্জনতায় ঘেরা আমাদের এই নয়নাভিরাম বান্দরবান।

বিজ্ঞাপন

প্রথম দিন

রাতে বাসে একাই উঠে পড়ি। সকালে হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়েই শুরু হলো ঘোরাঘুরি। মোটরসাইকেলে চেপে বসি আমি ও মংহাইসিং মারমা। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছে-নামছে আঁকাবাঁকা পথ। দুই পাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়চূড়ায় সাদা কুয়াশা। বনের মধ্য দিয়ে ছুটে চলতে লাগল আমাদের মোটরসাইকেল। আজ গন্তব্য বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি। সেখান থেকে শিলবান্ধা পাড়া হয়ে দেবতাখুম। বেলা একটার মধ্যে রোয়াংছড়ি পৌঁছালাম। পাহাড়ের মাঝখানে ঝিরিপথ। দুই পাশে পাহাড়, মাঝখানে সাঙ্গু নদের রেখা। সেখান থেকে দেবতাখুম। অল্প পাহাড়ি পথে হেঁটেই দেবতাখুম পৌঁছে গেলাম। পায়ে হেঁটে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়ে বিশাল আকৃতির সব পাথর।

সাঙ্গুর সর্পিল গায়ে থরে থরে পাথর বিছানো। পাথরগুলো যেন নদীকে আগলে রেখেছে। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে পথ বের করে চলেছে সাঙ্গু নদের ধারা। শীতকালে এ নদে পানি কম থাকে। বর্ষাকালে এর প্রকৃত রূপ দেখা যায়। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে শীলবান্ধা পাড়ায় পৌঁছালাম। সেখানে পাহাড় থেকে ছোট্ট একটা ঝরনা দেখা যায়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা চারদিকে শুধুই নীরবতা। এককথায় অপূর্ব! দূর থেকে এই ঝরনার শব্দ পাওয়া যায়। ঝরনায় গা ভিজিয়ে শীলবান্ধা পাড়ায় ফিরে ছোট্ট একটা খাবারের দোকানে দুপুরের খাবার সেরে আমি আর মংহাইসিং মারমা সারা দিন সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম বান্দরবান শহরে।

বিজ্ঞাপন

বাইক থেকে পুরো পথটা এক স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল, যা ভিডিওতে আসলেও বোঝানো কঠিন। তবুও চেষ্টা করলাম স্মৃতি ধরে রাখতে।

দ্বিতীয় দিন

গন্তব্যস্থল এবার বান্দরবান শহর থেকে থানচি হয়ে আলীকদম। ১০৮ কিলোমিটার পথ। খুব সকালে উঠে আবার পথচলা শুরু। ঠান্ডা সত্ত্বেও বেরিয়ে পড়লাম। এবারও মোটরসাইকেলেই যাত্রা। তবে পথ অনেক দীর্ঘ আর দুর্গম। দুজন যাত্রা শুরু করলাম। পাহাড়ি সড়ক উঠছে আর নামছে। যত দূর চোখ মেলা যায়, নীল আর সবুজে মাখামাখি। চলার পথে আমরা একটু চায়ের বিরতি নিলাম। এরপর আবারও চলতে শুরু করলাম। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই পথের প্রতিটি বাঁকেই সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে। হালকা বাতাস বইছে, বাতাসে কী এক অদ্ভুত গন্ধ। পাহাড়ের কি আলাদা গন্ধ আছে?

পথে পথে দুলছে বুনো ফুল। থানচি বাজারে এসে মোটরসাইকেল থামিয়ে অনেকটা সময় জিরিয়ে নিলাম। সেখান থেকে দুপুরের খাবার শেষে আবার আলীকদমের উদ্দেশে যাত্রা শুরু। পাহাড়ের গা ঘেঁষে এগিয়ে যাচ্ছি। কখনো সমতল পথ, কখনো খাড়া। পথে মোটরসাইকেল থামিয়ে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা উপভোগ করা হলো। বেশ কিছু সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করলাম।
প্রায় আট ঘণ্টা পর রোমাঞ্চকর অভিযান শেষে আমরা দুজন আলীকদমে পৌঁছালাম। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। সেখানে একটা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হলো। রাতটা পার করে সাতসকালে আবার পথচলা শুরু। তবে এবার লামার পথ ধরে আমরা ফিরে এলাম। বান্দরবানের পাহাড় নদী আর ঝরনার স্মৃতিটুকু হৃদমাঝারে রয়ে গেল সারা জীবনের জন্য।

ছবি ও ভিডিও: লেখক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন