গাজীপুর, চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক আর বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়ায় অবস্থিত বেসক্যাম্পের অন্যান্য শাখাগুলোতে আগে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। তাই ঢাকায় নতুন শাখা চালু হয়েছে শুনে দেরি না করে বাচ্চাদের নিয়ে সস্ত্রীক হাজির হয়ে গিয়েছি। ফ্যামিলি ডে ট্রিপের জন্য রীতিমতো ট্রেন্ডের শীর্ষে এখন এই জায়গাটি।
প্রবেশমুখে আমাদের পছন্দমতো প্যাকেজ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই শুরুতে একটা সবুজ মাঠের দেখা পেলাম। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে নানারকম অনগ্রাউন্ড অবসট্যাকল এ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটি দিয়ে সাজানো।
প্রতিটা অ্যাকটিভিটি খুব চ্যালেঞ্জিং আর মজার। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সবাই মিলে দল বেঁধে এসে একসঙ্গে এই টাস্কগুলো করতে দারুণ মজা লাগবে। মাঠের এক কোণে আছে একটা উঁচু ক্লাইম্বিং ওয়াল।
ক্লাইম্বিং ওয়ালের ওপরে জিপ লাইন করার ব্যবস্থা। জিপ লাইনিং করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে বা ক্লাইম্বিং ওয়ালে রক ক্লাইম্বিং করতে বেশ রোমাঞ্চকরএকটা অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা।
অন্য গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি জোনের পাশেই আছে নানারকম ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি জোন যেগুলো গাছে গাছে সাজানো। এই জোনটাতেও আছে বেশ কিছু মজার অ্যাকটিভিটি। ঠিক পাশেই সেটআপ করা হয়েছে ডে ট্রিপে আসা গেস্টদের জন্য গ্ল্যাম্পিং টেন্ট আর রাতে যাঁরা থাকতে চান, তাঁদের জন্য ক্যাম্পিং জোন।
আরো আছে একটা খুব সুন্দর ইয়োগা ও মেডিটেশন সেন্টার। পুরো বেসক্যাম্প জুড়ে খানিক পরপরই আছে বসার জন্য ব্যবস্থা।
চারপাশ সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা। এমন সতেজ, শান্ত পরিবেশে কোন অ্যাকটিভিটি না করে শুধু বসে থাকতেও ভালো লাগছিল।
অ্যাকটিভিটি জোন পেরিয়ে আমরা সুন্দর একটা ওয়াকওয়ে বা পায়ে হাঁটা রাস্তা ধরে এখানকার রেস্তোরাঁর দিকে গেলাম। আশেপাশে নানারকম সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছপালা দিয়ে সাজানো।
রেস্তোরাঁটি ইনডোর আর আউটডোর এই দুই ভাগে বিভক্ত। কাউন্টারে চায়ের অর্ডার দিয়ে আমরা আউটডোরে এসে বসলাম।
রেস্তোরাঁর সঙ্গেই লাগোয়া বাচ্চাদের লেগো জোন, ক্লে জোন আর প্লে জোন। আমার ছেলেমেয়ে সেদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি আর বাচ্চাদের মা তখন গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে শীতের সকাল উপভোগ করছিলাম।
বাচ্চারা কিছুক্ষণের মধ্যেই আবিষ্কার করে ফেলেছে এখানকার কিডস এ্যাডভেঞ্চার জোনটা। বাচ্চাদের নিয়ে সেদিকে গিয়ে দেখলাম বড়দের জন্য যেসব অনগ্রাউন্ড আর ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি একটু আগে দেখেছিলাম, বাচ্চাদের জন্যও এখানে একইরকম সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে তাদের উপযোগী করে।
আমার অসীম সাহসী কন্যা একে একে জিপ লাইনিং আর ট্রি টপ অ্যাকটিভিটির ৫টা স্টেপ সফলভাবে শেষ করলেও, তার বড় ভাই অর্থাৎ আমার কিছুটা শান্তশিষ্ট পুত্র জিপ লাইনিং করে আর ট্রি টপ করার সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি।
সবার শেষে তারা ভাইবোন মিলে তীরধনুক নিয়ে মজা করে আর্চারি অনুশীলন করল।
নানারকম হুলুস্থুল অ্যাকটিভিটি শেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে আবার রেস্তোরাঁয় ফিরে এসে খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। সব মিলিয়ে, চমৎকার একটা শীতের সকাল কাটল ঢাকার এই নতুন এয়ারফোর্স বেসক্যাম্পে। আপনারাও পরিকল্পনা করে ফেলুন আর ঝটপট ঘুরে আসুন এখান থেকে এই সপ্তাহান্তেই।
ছবি: লেখক