খুমজুংয়ের অবস্থান উত্তর-পূর্ব নেপালে। এটি সাগরমাতা জাতীয় উদ্যানের ভেতরে একটি খুম্বু উপ-অঞ্চলে। সাগরমাতা জাতীয় উদ্যান আবার ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সমুদ্র সমতল থেকে এর উচ্চতা ৩ হাজার ৭৯০ মিটার বা ১২ হাজার ৪৩০ ফুট।
খুমজুং একটি সুন্দর গ্রাম, যেখানে গিয়ে ছোট ছোট ঘর দেখলে মনে হবে, কেউ যেন সবুজ ছাদে সাদা মেঘ এঁকে রেখেছে। এটি খুম্বু অঞ্চলের বৃহত্তম এবং পবিত্র শিখর খুম্বিলার পাদদেশে অবস্থিত। এটি ‘লুকানো গ্রাম’ নামেও পরিচিত। এই গ্রাম মূলত শেরপা অধ্যুষিত। এখানে আপনি খুমজুং মঠ দেখতে পাবেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে একটি বিশ্বাস। তারা মনে করে এই মঠ শত শত বছর ধরে একটি ইয়েতির মাথার খুলি ধারণ করে আছে।
ফাকডিংয়ের অবস্থান লুকলার উত্তরে কোসি নদীর উপত্যকায়। এর উচ্চতা ২ হাজার ৬১০ মিটার বা ৮ হাজার ৫০০ ফুট।
এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যাওয়ার পথে এক রাত থাকার জন্য ফাকডিং একটি জনপ্রিয় স্থান। এর উচ্চতার কারণে অভিযোজন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একে একটি আদর্শ স্থানে পরিণত করেছে। এখানকার স্থানীয় লোকজন খুবই আন্তরিক ও বন্ধুভাবাপন্ন, যা একজন পর্যটকের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। এই গ্রামে থাকার জন্য অনেক গেস্টহাউস রয়েছে। এই গ্রাম একবার আপনার কাছে ভালো লেগে গেলে আপনি সময় করে কাছাকাছি মনোরম কোসি নদীতে ভোরে ও সন্ধ্যায় হেঁটে আসতে পারেন। নিশ্চিত করেই বলা যায় পাহাড়ি এই নদী আপনার ভালো লাগাকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলবেই।
নামচেবাজার অবস্থান উত্তর–পূর্ব নেপালের খুম্বু অঞ্চলে। এর উচ্চতা ৩ হাজার ৪৪০ মিটার বা ১১ হাজার ২৮০ ফুট।
আপনি নামচেবাজারের কাছাকাছি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার উত্তেজনার মাত্রা অনেক বেড়ে যাবে; কারণ, এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতের প্রবেশদ্বার। এখানে গেলেই আপনি এভারেস্টের আভাস পাবেন এবং মন আপনাকে তার দিকে যাত্রা শুরু করতে টানবেই। নামচেতে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বাজার এবং খুম্বু অঞ্চলের বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল। এখান থেকে মূলত পর্যটকরা অধিক উচ্চতায় কীভাবে টিকে থাকবে, তার অভিজ্ঞতা নেয়। গ্রামটি পাহাড়ের ধারে অবস্থিত এবং নিকটবর্তী একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ইন্টারনেট, ক্যাফে, বাসস্থান এবং অনেক দোকানসহ পাহাড়ের মাঝখানে একটি গ্রাম কতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারে এখানে এসে তা দেখে আপনি অবাক হবেন। এ ছাড়া এখানে আপনি সাপ্তাহিক সকালের বাজার এবং সস্তা পণ্য বেচাকেনার একটি দৈনিক তিব্বতি বাজার পাবেন।
ছোমরংয়ের অবস্থান কাঠমান্ডুর উত্তর-পশ্চিমে অন্নপূর্ণা অঞ্চলে। এর উচ্চতা ২ হাজার ১৭০ মিটার বা ৭ হাজার ১০০ ফুট।
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ছোমরং তার ইউরোপীয় ঘরনার বেকারির জন্য বিখ্যাত। এই গ্রামের বিভিন্ন ঘরে তৈরি চকলেট ক্রোসাঁ এবং আপেল পাইগুলো সত্যিই জিভে জল আনে। গ্রামটি পাহাড়ের ধারে বিস্তৃত এবং অন্নপূর্ণা ও মাচুপুচরের অবিশ্বাস্য দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়। খুব ভোরে উঠে পাহাড়ের চূড়ায় প্রথম আলো পড়ার দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন পুরো বরফের পাহাড় প্রকৃতির খেয়ালে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মাচুপুচরে নেপালিদের কাছে একটি পবিত্র পর্বত হিসেবে বিবেচিত। তাই এর চূড়ায় আরোহণ নিষিদ্ধ। ফলে এটি এখনো অজেয় থেকে গেছে।
তোলকার অবস্থান পোখরার উত্তর-পশ্চিমে অন্নপূর্ণা অঞ্চলে। এর উচ্চতা ১ হাজার ৭০০ মিটার বা ৫ হাজার ৫৭০ ফুট।
তোলকা গ্রামটি অন্নপূর্ণা অভয়ারণ্য ট্রেকের জন্য একটি জনপ্রিয় স্টপেজ। অন্নপূর্ণা প্রবেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই গ্রামটি অ্যাডভেঞ্চার উদ্যাপন করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গাও বটে। এখানে আপনি চাইলে খুব সহজেই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সন্ধ্যা-রাতে গল্প-গানে মেতে উঠতে পারবেন। তাদের কাছে গল্পচ্ছলে শুনতে পারবেন। এই রাস্তা ধরে তাঁরা যেসব জায়গায় গিয়েছিলেন এবং যে লোকেদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, এই অভিজ্ঞতা আপনাকে পরবর্তী ট্রেকিংয়ে সাহায্য করবে। তোলকায় সূর্যোদয় দর্শনীয়। কারণ, এখান থেকে পাহাড়ের তুষারময় শিখরগুলোকে দেখলে মনে হবে তারা যেন গোলাপি রঙে পরিণত হয়ে একটি নতুন দিনকে নিখুঁতভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। এই গ্রামের রাস্তার ধারে ইয়াক চরা ও পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কাউকে গভীরভাবে মুগ্ধ করবেই।
চুসাংয়ের অবস্থান উত্তর নেপালের মুস্তাং জেলায়। এর উচ্চতা ২ হাজার ৯৩০ মিটার বা ৯ হাজার ৬০০ ফুট।
চুসাং মুস্তাং একটি অসাধারণ সুন্দর ও শ্বাসরুদ্ধকর প্রাচীন গ্রাম। একে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন মরুভূমির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া কোনো মরীচিকা। এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ প্রাচীর এবং বিশাল ধূসর-লাল ক্লিফ দ্বারা বেষ্টিত। প্রাচীন বাসস্থানের গুহারও দেখা মেলে এই গ্রামে। এখানে শিলার গঠনগুলো এমন কিছুর মতো, যা সচরাচর কোথাও পাওয়া যায় না। গুহাগুলোর প্রাচীনতা যে কাউকে কল্পনায় নিয়ে যাবে বহুবছর আগে।
চারংয়ের অবস্থান উত্তর নেপালের মুস্তাং অঞ্চলে (চীন সীমান্তে)। এর উচ্চতা ৩ হাজার ৫০০ মিটার বা ১১ হাজার ৪৮০ ফুট।
চারং মুস্তাংয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বসতি এবং এই অঞ্চল ট্রেকারদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্টপিং পয়েন্ট। এই গ্রামে একটি প্রাসাদ রয়েছে, যা অত্যাশ্চর্য ঐতিহাসিক পটভূমি বুকে ধারণ করে চলেছে। যদিও এটি এখন পাহাড়ের ওপর একটি ধ্বংসস্তূপ হিসেবে পড়ে রয়েছে, তবুও তা যেকোনো পর্যটকের জন্য স্বপ্নের জায়গা। বিশাল প্রাকৃতিক রঙের চোরটেন, ভিন্নভাবে ডোরাকাটা গুম্পা এবং পাহাড়বেষ্টিত বায়ু-প্রবাহিত মালভূমিসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যের এই গ্রাম সত্যিই সবার অনুভূতিতে নাড়া দিয়ে যায়।
ছবি: রোহিত গিরি, পোখারা, নেপাল