এই সময়ের ভ্রমণে দায়িত্বশীলতা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ছকে আঁকা জীবনটা যাপন করতে করতে ফুরিয়ে যায় একেকটি বছর। ব্যস্ততার ডামাডোলে কেটে যায় প্রতিটি দিন। মানুষের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে মাঝে মাঝে দিনের শেষে একটু বুক ভরে বাতাস নেওয়ার ফুরসতটাই মেলে না। এই কোলাহলে ভরা শহরে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গাই–বা কোথায়। তাই তো সবাই একটু সুযোগ পেলেই চলে যেত পাহাড়ে, সমুদ্রে বা বনানীবিলাসে। কিন্তু গত দুটো বছরে সেটাও ছিল প্রায় বন্ধ। নিষেধের গণ্ডিতে আটকে ছিল মানুষের দিন আর রাত। তাই তো অনেকের কাছেই জাগতিক আহ্বানে পার করা গতানুগতিক জীবন অনেকটাই পানসে হয়ে গেছে। প্রায় সবার বুকেই এখন পাহাড়সম ভার, পাঁজর থেকে ঠেলে উঠছে এক অসহ্য চাপ—ঠিক যেন গুমোট হয়ে যাওয়া ব্যস্ত জীবনের দীর্ঘশ্বাস।


আস্তে আস্তে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে যাচ্ছে, বুকের চাপ আর গুমোট দূর করে একটু মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে সবাই ছুটছে একেক জায়গায়। তবে এখন প্রতিটি ট্যুর হতে হবে একটু আলাদা। যেখানেই যান না কেন, সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেই বের হতে হবে। ভ্যাকসিন নিয়েছেন বা সংক্রমণ কমে যাচ্ছে, এই চিন্তায় মোটেও সুরক্ষা বর্ম হালকা করা যাবে না। এখন বাইরে বের হলেই সব জায়গায় একটা পরিবর্তন দেখতে পারবেন—এটাই কিন্তু ‘নিউ নরমাল’।

বিজ্ঞাপন

এখন নতুন ট্যুর প্ল্যান করলে এই ‘নিউ নরমাল’ টার্মটাকে হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। একজন রেসপনসিবল ট্রাভেলার হিসেবে ‘নিউ নরমাল ট্রাভেল’ সিচুয়েশনকে মাথায় রেখে আপনাকে যা করতে হবে:

১. মেডিকেল চেকআপ: ঘুরতে গিয়ে মানুষের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধি ছড়াচ্ছেন না তো? তাই ট্রাভেলের ১২-২৪ ঘণ্টা আগে করে নিন কোভিড টেস্ট। বর্তমানে অনেক হাসপাতালেই ট্রাভেলারদের জন্য ইমার্জেন্সি কোভিড টেস্ট চালু করেছে। ফলে দ্রুততম সময়ে টেস্ট করে রেজাল্ট পাওয়া যাবে। সুস্থভাবে ট্রাভেল করুন, সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসুন।

২. মাস্ক পরুন এবং স্যানিটাইজার নিন: রোদে ঘুরতে রোদচশমা, সানস্ক্রিন, ফোনের চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক, ছবি তোলার জন্য ম্যাচিং টি-শার্ট বা প্যান্ট তো নেবেন; কিন্তু তার আগে চেক করে দেখুন তো পর্যাপ্ত মাস্ক, থার্মোমিটার আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়েছেন কি না? অনেকেই এখন একটা মাস্ক পরেই বেরিয়ে পড়েন। চিন্তা করেন জায়গামতো পৌঁছে মাস্ক কিনে নেওয়ার। কিন্তু পরে ভালো মানের মাস্ক না পেলেন তখন কী হবে? আর পকেটে থাকা স্যানিটাইজার শেষ হয়ে গেলে রিফিল করার মতো স্যানিটাইজার আছে কি না, সেটাও চেক করে নেওয়া জরুরি।

বিজ্ঞাপন

৩. ঘিঞ্জি স্পট এড়িয়ে চলুন: কিছু জায়গা আছে, যেখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। অনেক মানুষ এমনকি নন-কোভিড সিচুয়েশনেও এত জনসমাগম হওয়া স্পট পছন্দ করতেন না। আর এখন তো সুস্থ থাকতে এমন স্পটে না যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেখানে ভিড় কম, সেখানে যান। আর ভিড় কম পেতে চেষ্টা করুন ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে যেতে।

৪. ক্যাশলেস ট্রানজেকশন: ট্রাভেলে গেলে হয়তো একটু পরপর মানিব্যাগ বা পার্স খুলে এতাল-বেতাল কারণেও টাকা বের করতে হয়; আবার খুচরা টাকা নিয়ে পুনরায় ব্যাগে রাখতে হয়। এভাবে লেনদেন আগে স্বাভাবিক থাকলেও এই সময় এভাবে কিছু বিনিময় না করাই ভালো। বিলগুলো সব আপনার ফোন দিয়ে অনলাইনে দেওয়ার চেষ্টা করুন।

৫. ভ্যাকসিন কার্ড: আগে দেশের বাইরে গেলে যেমন পাসপোর্ট দেখানো লাগত, এখন এর সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্ডও দেখাতে হবে। ভ্যাকসিন কার্ড সঙ্গে নেওয়ার কথা তাই কোনোভাবেই ভোলা যাবে না।

৬. ভ্রমণসঙ্গী: পরিবারের শিশু বা বয়স্কদের নিয়ে ট্রাভেল করাটা এই সময় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যদি তাদের নিয়ে কোথাও যেতেই হয়, তাহলে চেষ্টা করুন নিজস্ব ট্রান্সপোর্টে যেতে। আর নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট সম্ভব না হলে ওপরে উল্লেখ করা সব সেফটি প্রটোকল মেইটেইন করে যেতে হবে। তা ছাড়া ভ্রমণসঙ্গী যদি হয় কাছের বন্ধু, তাহলে নিজের সঙ্গে সঙ্গে তার টেস্ট রেজাল্টও জেনে নেবেন। কারণ, একসঙ্গে ট্রাভেলে গেলে একসঙ্গে থাকতে হবে, আর বর্তমান শারীরিক অবস্থা না জেনে একসঙ্গে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

৭. সব প্রটোকল মানা: ‘নিও নরমাল’ সিচুয়েশনের জীবনযাপনে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা এখন থেকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে চলতে হবে। যেমন মাস্ক পরা বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, এই দুটো প্রটোকলের মতো আরও অনেক হেলথ প্রটোকল বের হয়েছে, একজন রেসপনসিবল ট্রাভেলার হিসেবে যা আপনাকে জানতে হবে এবং মানতেও হবে।

ট্রাভেল সব সময়ই মজার, এক্সাইটিং, ব্যস্ত জীবনে ক্ষণিকের মুক্তি। প্রতিটি ট্রাভেল দুর্দান্ত সব অভিজ্ঞতার ঝুলি। নিজে সুস্থ থেকে এবং কাউকে অসুস্থ না করে ট্রাভেল করা গেলে অল্প সময়ের এই অভিজ্ঞতা হবে আপনার সামনের দিনের নির্নিমেষ সুখের আকর। নতুন করে লেগে পড়ার সঞ্জীবনীও। তো আর দেরি কিসের? বন, সমুদ্র বা পাহাড় জয় করতে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন, তবে অবশ্যই একজন রেসপনসিবল ট্রাভেলার হিসেবে।

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩২
বিজ্ঞাপন