উজবেকিস্তান। একটি বিশাল অঞ্চল। ইতিহাস ও সভ্যতার গ্রন্থিতে বাঁধা। খিভা, সমরখন্দ, বোখারা, তাসখন্দ, ফারগানা, আন্দিজান, মারগিলন, কোকান্দ—কত নগর, জনপদ। আমু দরিয়া, সির দরিয়ার মতো সাগর। ইরানি, তুর্কি, তাতার, তাজিক, উজবেক, মোঙ্গল—কত জাতির উত্থান আর পতনে মুখর হয়েছে এই ভূখণ্ড। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের পদভারে মুখর ছিল এই অঞ্চল। কে নেই সেই তালিকায়। সম্রাট বাবর, চেঙ্গিস খান, তৈমুর লং, আলিশের নভয়, ওমর খৈয়াম, ইবনে সিনা, নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। বীরত্বে, মহত্ত্বে, হিংস্রতায়, জ্ঞানে–বিজ্ঞানে, শিল্পকলায়, সৃষ্টিতে, বৈচিত্র্যে এমন প্রাচুর্যপূর্ণ ভূখণ্ড আর কয়টাই–বা আছে পৃথিবীর মানচিত্রে! এই সভ্যতার পিরামিডে রয়েছে অনেক ভাষা, অনেক জাতি। শুধু কি তাই, তাদের খাদ্য সংস্কৃতিও ঐতিহ্যপূর্ণ।
উজবেকিস্তানে দুবার ভ্রমণ করেছি। ভ্রমণে দুই ঋতুর স্বাদ পেয়েছি। খাবার থেকে শুরু করে প্রকৃতিতেও সেই ভিন্নতা দেখেছি। আগেই এই ভূখণ্ডের রুটির কথা বলেছি। উজবেকিস্তানের মতো মিসরেও আমি দেখেছি আইশ বালাদি রুটির তিনবেলা ব্যবহার। শুধু মিসর নয়, তুরস্ক, মরক্কো ও জর্ডানেও রুটির বহুল ব্যবহার আছে।
তবে উজেবক রুটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের আবেগ একেবারে অন্য মাত্রার। হাত দিয়ে ছিঁড়ে রুটি খায় উজবেকবাসী। রুটির ওপর ছুরি চালানো ঠিক ভালো চোখে দেখা হয় না। কত ধরনের রুটি আছে, তার হিসাব গাইড মির্জাও দিতে পারেননি। তবে মূলত দুই ধরনের রুটি বেশি জনপ্রিয়—ওবি নান আর পাতির।
ওবি নান সব সময় খাবারের জন্য আর পাতির উৎসব–অনুষ্ঠানে। রুটির ওপর বিভিন্ন ডিজাইন করার জন্য ছাঁচ ব্যবহার করা হয়। এই ছাঁচকে বলা হয় চেকিস। পুরো উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরের রুটির বিশেষ সুনাম রয়েছে। সমরকন্দের সেই বিখ্যাত রুটির নাম গালা ওসেগি।
উজবেকিস্তানে রুটি আর নুডলসই বেশি প্রচলিত খাদ্য। উজবেক রন্ধনশৈলীকে ‘নুডলসে সমৃদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। উজবেকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া থাকায় এর মাংস খুব জনপ্রিয়। বিভিন্ন উজবেক খাবারের অংশ হিসেবে থাকে এটি। এবার তাদের কয়েকটি পদ সম্পর্কে জানানো যাক।
উজবেকিস্তানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাবারের আইটেম হলো পিলাভ বা পালভ। এটাকে উজবেকদের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় খাবার বলা হয়। কেউ উজবেকিস্তান ভ্রমণ করেছেন কিন্তু পিলাফের স্বাদ গ্রহণ করেননি, এমন হওয়ার কথা নয়।
পিলাফ নামটির সঙ্গে আমাদের পোলাও নামটির মিল রয়েছে। সহজ করে বললে, পিলাফ হচ্ছে রিবিয়ানিজাতীয় খাবার। উজবেকবাসী রুটিকে ঈশ্বরের দান মনে করেন এবং পিলাফ তাদের উৎসবের খাবার। প্রায় সব শহরের রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায়। কিন্তু রাজধানী শহর তাসখন্দের পিলাফ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। এই পিলাফ সেন্টারের নাম ‘বেশ কোজনে’। সেখানে পৌঁছে গাইড মির্জা প্রথমে নিয়ে গেলেন পিলাফ রান্নার ঘরে। ও মা, উৎসব তো এখানেই! ১৫টির মতো প্রকাণ্ড উনুনে রান্না হচ্ছে। যাঁরা রান্নার কাজে নিয়োজিত, তাঁরা ভীষণ ব্যস্ত। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই তাঁদের।
আমাদের মতো অনেক পর্যটক রান্নাঘরের ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন; কিন্তু পিলাফ তৈরিতে কর্মরত সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। হাতে গ্লাভস ও কালো অ্যাপ্রন পরা বাবুর্চির সহকারীরা মাংস প্রক্রিয়াজাত করছেন, তন্দুরে সেঁকা হচ্ছে রুটি, চুলায় আগুনে সেদ্ধ হচ্ছে সুবাসিত চাল, কষানো হচ্ছে ভেড়া কিংবা গরুর মাংস। আবার তৈরি হয়ে যাওয়া পিলাফ অর্ডার স্লিপ মিলিয়ে পরিবেশকের দল পৌঁছে দিচ্ছে নির্ধারিত খাবার টেবিলে।
প্রবেশপথের ডান হাতে রুটি তৈরি হচ্ছে। একটু এগিয়ে দেখা গেল সারি সারি চুলা জ্বলছে। আমাদের পুরান ঢাকার সাবান কারখানায় এত বড় বড় উনুনে সাবান জ্বাল দিতে দেখেছি। একটা বড় টেবিলে মাংসের স্তূপ থেকে কেটে প্রয়োজন অনুযায়ী সাইজ করা হচ্ছে। কড়াইগুলোয় পোলাও ছাড়াও সেদ্ধ হচ্ছে সবজি, বিভিন্ন পর্যায়ের চাল ফুটছে এক একটা কড়াইতে, কোথাও তেল ঢালা হচ্ছে আবার কোথাও ছড়ানো হচ্ছে লবণ বা কোনো মসলা।
একটি ছোট টেবিলে কোয়েলের ডিমের সারি সাজাচ্ছেন দুজন। কোনো কড়াইয়ের খাবার পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে গেলে বড় বড় পাত্রে তুলে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে পরিবেশনের জন্য রাখা দীর্ঘ টেবিল থেকে প্রতিমুহূর্তে সাজানো প্লেট নিয়ে ছুটছে কালো পোশাক পরা কোজানের কর্মী বাহিনী।
কিচেন থেকে রেস্তরাঁর দিকে গেলাম। দ্বিতল রেস্তোরাঁয় তিলধারণের স্থান নেই। মির্জা একটি খালি টেবিলের সন্ধানে গেল। লাঞ্চ শুরু হলো ঝুড়িতে রাখা নানা ধরন আর আকৃতির রুটি ও সালাদ দিয়ে। সঙ্গে দইয়ের তৈরি রায়তার মতো কিছু একটা। আর ছিল জগভর্তি আনারের জুস। মির্জা জানতে চেয়েছিল, পিলাফের সঙ্গে কোয়েলের ডিম নাকি ঘোড়ার মাংসের কাবাব—কোনটি নেব? আমি সাহস করে কোয়েলের ডিম ও ঘোড়ার মাংস—উভয়ই অর্ডার করি। কিশমিশ, পেস্তাবাদাম আর গরু, ভেড়া বা খাসির মাংসে সমৃদ্ধ পিলাফ অনেকটা আমাদের কাচ্চি বিরিয়ানির মতো। ঘোড়ার মাংস একদমই ভালো লাগেনি। পুষ্টিগুণসম্পন্ন পিলাফ খেয়েছি, কিন্তু মুগ্ধ হইনি। তবে রান্নার প্রক্রিয়া মুগ্ধ করেছে।
স্থানীয় লোকজন কেউ কেউ পিলাফকে বলে ওশ। বুখারা অঞ্চলে একে বলে শোশ সোফি (sosh sofi), আরবিতে বলে রুঝ বুখারি (رز بخاري)। ইংরেজি নাম পিলাফ। বুখারার লোকদের দাবি, তাঁদের এলাকার পিলাফই শ্রেষ্ঠ। যা হোক, উজবেকিস্তান সফরে গেলে পিলাফের স্বাদ পরখ করতে ভুলবেন না।
খিভা শহর থেকে তাসখন্দ ফেরার পথে উরগাঞ্জ শহরে থেমেছি আগেভাগে ডিনার করতে। পথে আগে থেকেই মির্জা বলছিল উরগাঞ্জ গিয়ে মজার একটা জিনিস খাওয়াবে, সেটি হলো উজবেক বার্গার (হিরো ইমেজ)। আমি ভেবেছিলাম, উজবেক বার্গার হবে সাধারণ বার্গারের মতোই একটা কিছু। কিন্তু উজবেক বার্গার সামনে এলে দেখলাম, বিশাল লম্বা একটা রুটির রোল। যার মধ্যে মাংস আর সবজি দেওয়া আছে। বার্গারে যা যা থাকে, সবই আছে। শুধু সেগুলো রুটি দিয়ে রোল করা। একটা একজনে খাওয়ার মতো না। ভাগ করে খেতে হয়। ভাগ করেও সেটি আমার জন্য অনেক বেশি ছিল।
খিভা শহরে মার্চ মাসের সন্ধ্যার তাপমাত্রা শূন্য। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার জো নেই। বেলা তিনটা থেকেই শীতের তীব্রতা বেড়ে গেল। গাইড মির্জা সন্ধ্যা ছয়টা বাজতে না বাজতেই ডিনারের তাড়া দিতে থাকল। রেস্তোরাঁর ভেতরে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। শীতের সময় প্রতিটি রেস্তোরাঁতেই হিটার চলে। খাবার অর্ডার করার সময় মির্জা বললো, ‘গ্রিন নুডলস খাও। বেশ মজার।’ আমিও এককথায় রাজি হয়ে গেলাম।
তর্কযোগ্যভাবে সবচেয়ে প্রাণবন্ত উজবেকিস্তানের খাবার শিভিট ওশি। সামনে এল সবুজ রঙের নুডলস ও নুডলসের ওপরে সস মেশানো মাংসের গ্রেভি। সহজ করে বলতে গেলে, শিভিট ওশি আসলে পালং শাকের নুডলস। খিভার জনপ্রিয় খাবার এবং এই অঞ্চল থেকেই শিভিট ওশি উজবেকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, অন্তত এ রকমই বলল মির্জা।
শুর্পা হলো একটি হৃদয়গ্রাহী স্যুপ, যা ভেড়ার মাংস বা গরুর মাংস সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, গাজর, আলু এবং বিভিন্ন মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। নানান মসলার ব্যবহার শুর্পাকে একটি স্বতন্ত্র এবং সুগন্ধযুক্ত স্বাদ দেয়।
শুর্পা তৈরিতে প্রায়ই মাংস সেদ্ধ করা হয়, যতক্ষণ না কোমল হয়। শুর্পা সাধারণত তাজা রুটির সঙ্গে গরম–গরম পরিবেশন করা হয়।
আমাদের দেশের সমুচার মতোই মুখরোচক উজবেক খাবারটি। উজবেকিস্তানের সামসা একটি সুস্বাদু স্ন্যাক এবং স্ট্রিটফুড হিসেবে জনপ্রিয়। মসলাদার মাংস, পেঁয়াজ এবং কখনো কখনো আলু বা কুমড়ার মিশ্রণ দিয়ে ময়দার একটি পাতলা স্তর পূরণ করে সামসা তৈরি করা হয়। তারপর ময়দার একটি ত্রিভুজাকার দেওয়া হয়। সামসা একটি বিশেষ মাটির চুলায় বেক করা হয়। বেকারি ও পথের ধারে বিক্রি হয়। চা বা ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে গরম–গরম পরিবেশন করা হয়।
তাসখন্দের চরসু বাজারের শুকনা ফলের কথা বলার আগে এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট না বললেই নয়। প্রাচীন নগর কিংবা সমাজজীবনে হাট-বাজার ছিল একটি শহরের মূল কেন্দ্র। গাইড মির্জা বলছিলেন, এই বাজারে কেবল বেচাকেনা হতো না, মানুষের বিকেলে হাওয়া খাওয়ার স্থান কিংবা মিটিং–মিছিলও হতো। এতক্ষণ তাসখন্দে ঘুরতে ঘুরতে ফিরোজা–নীল রঙের গম্বুজ অনেকগুলোই দেখা হলো। কিন্তু এই চরসু বাজারের গম্বুজটি অনেক বড় ও ভিন্ন আকৃতির। মূল বড় গম্বুজটি ছাড়াও আরও কয়েকটা অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ দেখা যায়।
কী নেই এই বাজারে! কার্পেট, চাদর, বালিশ, কারুপণ্য, শীতের কাপড়, স্যুভেনির। আমরা প্রথমেই গেছি শুকনো ফলের দোকানগুলোর দিকে। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠেই দোকানগুলো। মধ্য এশিয়ায় এসে শুকনো ফল কিনব না, তাই কি হয়! বাকি সব ভ্রমণকারীদের মনোভাব দেখে এমন বুঝলাম। আমি শুধু ছবি তুলছিলাম আর ভিডিও করছিলাম।
গাইড মির্জার কাছে এই বাজারের ইতিহাস যেমন শুনেছি। রাশিয়ানরা এই অঞ্চলে আসার আগে তাসখন্দ ছিল চারটি উপশহরের একটা শহর। এসব উপশহর শাসন করতেন চারজন খলিফা। সভা কিংবা বিচার–আচার করবার জন্য তারা এই স্থান ব্যবহার করতেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন সংঘর্ষও বাধতো এই চরসু বাজারে। চার খলিফার শাসনের অবসান হয় আঠার শতকে।
‘চরসু’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ চার শহরের মিলনস্থল। চার শহরের বাসিন্দাদের মিলনস্থল ছিল এই স্থান। বিশাল গম্বুজটি এই বাজারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য; সেটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬৬ সালের ভূমিকম্পের পর। মনে হচ্ছিল, ভালো একটি সময় অতিবাহিত করেছি চরসু বাজারে। কিন্তু তারপরও গাইড বলছিল, আমরা নাকি চরসুর মাত্র ২০ ভাগ দেখেছি।
স্থানীয় উজবেকরা প্রচুর চা পান করে। রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার টেবিলে দেওয়া হয় কেটলিভর্তি চা। ঐতিহ্যবাহী ছোটো ছোটো চিনামাটির বাটিতে অর্ধেক পরিমাণ চা ঢেলে পান করে। পূর্ণবাটি চা ঢেলে খাওয়া তাদের কাছে অশোভন। তারা খাওয়ার শুরুতে বা মাঝখানে গ্রিন–টি খায়। তাদের বিশ্বাস, এতে চর্বিজাতীয় খাবার খেলেও চর্বি গলে যায়।
মির্জাকে দেখেছি, চায়ের কেটলি এলে তিনবার চা কাপে ঢেলে আবার তা কেটলিতে ঢালে। তারপর পান করতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে মজার একটা গল্প বলল মির্জা। একবার রুশ কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব লিওনিদ ব্রেজনেভ, উজবেকিস্তানে বেড়াতে এলে উজবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজের কাপে কেটলি থেকে তিনবার চা ঢেলে তা আবার কেটলিতে দিয়ে তারপর নিজের ও ব্রেজনেভের কাপে চা দিলেন। সফরে ব্রেজনেভ উজবেক প্রেসিডেন্টের আতিথিয়েতায় মুগ্ধ হলেও চা ঢালার ঘটনাটি ভালোভাবে নেননি। রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার পর ব্রেজনেভকে যখন তার স্ত্রী আদর-আপ্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলেন, তখন তিনি দুঃখ করে বললেন, আদর-আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখেনি উজবেক প্রেসিডেন্ট। তবে একটা ব্যাপারে তিনি আহত হয়েছেন, তা হলো উজবেক প্রেসিডেন্ট কেটলি থেকে চা ঢেলে নিজের কাপ পরিষ্কার করলেও আমার কাপটি পরিষ্কার না করেই চা দিয়েছিল। গল্প শেষে বেশ হাসাহাসি হলো।
আসলে প্রথম কাপ চা কেটলিতে ঢেলে দেওয়া হয় পেয়ালা পরিষ্কার করার জন্য। তারপরের দুবার কেটলিতে ঢালা হয় চা তৈরি করার জন্য। আর কাপ ভরে চা না ঢালার অর্থ অতিথিকে পুনরায় চা নেওয়া বা চাকে গরম রাখতে সাহায্য করে।
উজবেকদের চা-সংস্কৃতির আরও দিক আছে। অতিথিকে চা এগিয়ে দেওয়ার সময় অবশ্যই ডান হাত ব্যবহার করতে হবে আর বাঁ হাতটা হৃৎপিণ্ডের উপর রাখতে হবে। চা খুব গরম হলেও ফুঁ দেয়া যাবে না। আলতো করে কাপ দুলিয়ে চা ঠান্ডা করতে হবে। চা ঠান্ডা হয়ে গেলে রিফিল করার আগে কাপের অবশিষ্ট চা ফেলে দিয়ে গরম চা ঢালতে হবে।
উজবেকবাসীদের মাংসের শাশলিক কিংবা কাবাব খুব প্রিয়। একই শাশলিকে থাকে ভেড়া, গরু বা মুরগি। শিক কাবাবেও থাকে আলাদা আলাদা মাংস অর্থাৎ গরু, ভেড়া বা মুরগি। পেঁয়াজের আচার দিয়ে এই কাবাব পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ কাবাব মেইন অথবা সাইড ডিশ হিসাবে আলাদাভাবে গ্রহণ করে। অনেক ক্যাফেতে, গরম কয়লার ওপর বারবিকিউতে প্রস্তুত করা মুরগির ডানা বা বিভিন্ন ধরনের শাশলিকও পাওয়া যায়। কাবাবের মাংস দিয়ে তৈরি ডাম্পলিংও খুব জনপ্রিয় ।
তুখুম বারাক একটি অনন্য খাবার। ডিম ভরা ডাম্পলিং যা প্রাথমিকভাবে পশ্চিম উজবেকিস্তানের খোরেজমে তৈরি হয়। এই হৃদয়গ্রাহী থালাটি প্রস্তুত করতে ময়দা, পানি, ডিম ও লবণ দিয়ে তৈরি একটি ডাম্পলিংয়ের ময়দা প্রস্তুত করে বাষ্পে সেদ্ধ করা হয়। অনেকটা নেপাল ও ভারতের মোমোর মতো খাবার।
উজবেকিস্তানে আমাদের দেশের মতো রান্না করা সবজি বা ঝোলবিশিষ্ট ব্যঞ্জন কোথাও পাবেন না। মাছের ব্যবহার নেই বললেই চলে। তাসখন্দ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে চারবাগ লেকে বেড়াতে গিয়ে মাছ খেয়েছিলাম। মনে হলো এতদিনে একবারও উজবেক মাছের স্বাদ গ্রহণ করা হয়নি। রেস্টুরেন্টে মাছ পেলাম কিন্তু তেলে ভাজা কড়কড়ে এবং মসলা ছাড়া। একান্তই ঝোল পেতে চাইলে রেস্টুরেন্টে ‘শুরওয়া’র অর্ডার করবেন; তাহলে সবজি, গোসত ও চর্বিযুক্ত একধরনের পাতলা ঝোলবিশিষ্ট ব্যঞ্জন সামনে আসবে, যাকে স্যুপও বলা যেতে পারে। উজবেকিস্তানে পিলাফ ছাড়া ভাতের ব্যবহার চোখে পড়েনি। রুটি আর কাবাব। সঙ্গে সালাদ আর বিভিন্ন ফলফলাদি।
ছবি: লেখক