সাইগন যুদ্ধ জাদুঘরে বাংলা পোস্টার
শেয়ার করুন
ফলো করুন

৩০ এপ্রিল ১৯৭৫। ভোর ৫টা ২০ মিনিট।
আমেরিকান দূতাবাস ভবনের ছাদ, সাইগন, দক্ষিণ ভিয়েতনাম।
হেলিকপ্টারের রোটর ব্লেডের ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট বাতাসের ধাক্কায় চারপাশ কাঁপছে। অবাধ্য চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন উলফগ্যাং জে লেহম্যান সদর দরজার দিকে ফিরে তাকালেন। হাজারের ওপর মানুষ জটলা পাকিয়েছে সেখানে। যেকোনো মুহূর্তে দরজা ভেঙে এই জনস্রোত ভেতরে চলে আসবে। ঠেকানোর সাধ্য নেই কারও। অবশ্য ঠেকানোর মতো কেউ নেইও আর। সাত হাজারের বেশি মানুষ, যাঁদের দুই–তৃতীয়াংশই দক্ষিণ ভিয়েতনামের বাসিন্দা, তাঁরা দূতাবাসকর্মীদের সহায়তায় সাইগন ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন। শেষ ব্যক্তি হিসেবে আরও পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে শেষ ফ্লাইটে চেপেছেন লেহম্যান। চশমার কাচ থেকে ময়লাটুকু পরিষ্কার করে চোখে চাপিয়ে ব্যাগ থেকে লালরঙা ডায়েরিটা বের করলেন। শেষবারের মতো আকাশ থেকে সাইগন শহরের দিকে তাকিয়ে কালো কালিতে ছোট্ট করে লিখলেন—
‘05 20 – Left Saigon’

যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমা
যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমা

লেহম্যান যখন এই পলায়ন পর্ব তদারক করছিলেন, তখন সেই ঘটনার ছবি তুলে বিখ্যাত হয়ে যান এক ডাচ আলোকচিত্রী, হুবার্ট ভ্যান ইজ যাঁর নাম। দূতাবাসের অনতিদূরে অবস্থিত ক্যারাভেল হোটেলের ব্যালকনি থেকে তিনি ছবিগুলো তুলেছিলেন, যেগুলো পরে ছাপা হয় পৃথিবীর প্রায় সব বিখ্যাত সংবাদপত্রে। গুগলে ‘ফল অব সাইগন’ লিখে সার্চ দিলে সবার আগে এই ছবিগুলোই দেখা যায়। হুবার্ট কিংবা লেহম্যান আদতে ইতিহাসের এক বাঁকবদলের সাক্ষী হয়েছিলেন। যেই ঘটনার প্রতিঘাতে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যায় দক্ষিণ ভিয়েতনামের নাম, যবনিকাপাত ঘটে ২০ বছর ধরে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের, যাত্রা শুরু হয় অখণ্ড ভিয়েতনামের। যেই ঘটনায় কূটনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমেরিকার ভাবমূর্তি। যেই ঘটনার ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের তট থেকে সাময়িকভাবে বিলুপ্তি ঘটে পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থ ও শাসনব্যবস্থার, ভিয়েতনাম ছাড়াও লাওস ও কম্বোডিয়া প্রবেশ করে সমাজতান্ত্রিক ব্লকে। বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে এসব প্রেক্ষাপট নিয়েই লেহম্যান ২০১৯ সালে লিখেছেন আত্মজীবনী ‘আ সিট ইন দ্য ফ্রন্ট রো’ নামে। ভিয়েতনামের যুদ্ধ জাদুঘরের গেটে দাঁড়িয়ে কেন জানি সেই বইটার কথাই মনে পড়ল।

যুদ্ধ যাদুঘরের মূল ভবনের সামনে লেখক
যুদ্ধ যাদুঘরের মূল ভবনের সামনে লেখক

২০ হাজার ডং মূল্যের টিকিট কেটে ভেতরের খোলা উদ্যানে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে সারি সারি ট্যাংক, হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ ইত্যাদি যুদ্ধযান, যেগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং তাদের মিত্র পশ্চিমা বাহিনীর সদস্যরা। আরও আছে যুদ্ধে নিক্ষেপ করা বিশালাকৃতির সব বোমার খোলস। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি সম্ভবত ব্লু-৮২ সিসমিক বোমা। ৫ হাজার ৭০০ কেজি ওজনের প্রায় ১১ ফুট দীর্ঘ বোমাটি ১৯৭০ সালে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। অবাক হয়েছি একটা প্রার্থনা ঘণ্টা দেখে। ঘণ্টাটি তৈরি হয়েছে ২৫০ কেজি ওজনের একটি অবিস্ফোরিত বোমার খোলস থেকে। বিন থুয়ান রাজ্যের বু লাম প্যাগোডা থেকে ঘণ্টাটি সংগ্রহ করে ২০২০ সালে জাদুঘরের সংগ্রহশালায় সংযোজন করা হয়।

যুদ্ধবিরোধী ব্যাজের নমুনা রাখা আছে একটা কক্ষে
যুদ্ধবিরোধী ব্যাজের নমুনা রাখা আছে একটা কক্ষে

তিনতলা জাদুঘরটির নিচতলায় বেশ বড় একটি কক্ষে আছে নানা ধরনের ব্যাজের সংগ্রহ। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যাজ পরিধান করে মিছিল কিংবা প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে অংশ নিতেন। সেই সব ব্যাজের বেশ বড় একটা অংশই এখানে আছে।

বিজ্ঞাপন

দোতলার হলঘরে একই সঙ্গে যুদ্ধকালীন প্রচুর আলোকচিত্র এবং যুদ্ধসরঞ্জাম, বিশেষ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদের নমুনা রাখা আছে। বিশালাকৃতির ৯০ মিলিমিটার বাজুকা রকেট লঞ্চার যেমন আছে, তেমনি আছে ৭৫ মিলিমিটার রিকোয়েল রাইফেল, ৮১ মিলিমিটার মর্টার, ব্রাউনিং এম২ মেশিনগান, কোল্ট লাইট মেশিনগান, বিভিন্ন মডেলের কারবাইন রাইফেল, বেলজিয়াম অটোমেটিক রাইফেল, এম৭৯ কেমিক্যাল গ্রেনেড লঞ্চার, থমসন রাইফেল, কোল্ট পিস্তলসহ বিভিন্ন মডেলের বন্দুক ও পিস্তল। মর্টার শেল, কামানের গোলা, গ্রেনেড, বন্দুক ও পিস্তলের গুলির বিশাল সংগ্রহ কাচের আবরণের ভেতর সাজানো আছে। বই পড়া কিংবা মুভি দেখার সুবাদে অনেকগুলো নাম পরিচিত হলেও কার্যকারণ সম্বন্ধে ভালো ধারণা নেই। বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন।

যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র
যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র

দেয়ালে যেসব আলোকচিত্র ঝোলানো আছে, সেগুলোতে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং আমেরিকান সৈনিকদের নিষ্ঠুরতা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্য চোখে পড়ে। দুই যুদ্ধে প্রায় একই সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার জন্য সময় লেগেছিল যেখানে ২০ বছর, সেখানে বাংলাদেশে সময় লেগেছিল মাত্র ৯ মাস। পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার মাত্রা কতটা বীভৎস ছিল, সেটি সহজেই অনুমেয়।

যুদ্ধে মারা যাওয়া ফটোসাংবাদিকদের ছবি
যুদ্ধে মারা যাওয়া ফটোসাংবাদিকদের ছবি

আমেরিকান বাহিনীর নৃশংসতার মাত্রাও কম ছিল না। ছবিতে বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে। তার মধ্যে নজর কেড়েছিল বব কেরির ঘটনাটি। যুদ্ধের সময় লেফটেন্যান্ট বব কেরি ছিলেন আমেরিকান সিল রেঞ্জার্স গ্রুপের একজন প্লাটুন কমান্ডার। ১৯৬৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বব কেরির প্লাটুন ভিয়েতকং গেরিলাদের খোঁজে থান ফং নামের গ্রামে অভিযান চালায়। সেই অভিযানে প্রায় ২০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ষাটোর্ধ এক দম্পতি এবং তাঁদের তিন নাতিনাতনি। বাচ্চা তিনজন একটা সুয়্যারেজ পাইপের ভেতরে লুকিয়ে ছিল ভয়ে। সেখান থেকে বের করে এনে ঠান্ডা মাথায় দুজনকে গুলি করে, আরেকজনের নাড়িভুঁড়ি বের করে হত্যা করা হয় বব কেরির সরাসরি নির্দেশে। বাচ্চা তিনটি যেই সুয়্যারেজ পাইপের ভেতরে লুকিয়ে ছিল, সেই পাইপ সংরক্ষণ করা আছে এখানটায়।

এজেন্ট অরেঞ্জের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা
এজেন্ট অরেঞ্জের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা

এই অভিযানের জন্য পরের বছর কেরিকে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ‘মেডেল অব অনার’ পদক দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। বব কেরি পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং মার্কিন সিনেটের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে কেরি ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন এবং স্বীকার করেন যে গত ৩২ বছর ধরে এ ঘটনা তাঁকে মানসিকভাবে পীড়া দিয়ে চলেছে। তা–ও ভালো যে কেরি নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য যদিও কোনো পাকিস্তানি সৈনিক বা কর্মকর্তাকে দোষ স্বীকার করতে দেখিনি।

বিজ্ঞাপন

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সবচেয়ে আলোচিত ছবিটি কিম ফুকের। ১৯৭২ সালের ৮ জুন ত্রাং বাং গ্রামে দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিমানবাহিনীর এক প্লেন থেকে নাপাম বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেই বোমায় ঝলসে যায় ৯ বছরের কিম ফুকের পিঠসহ পেছনভাগ। তারস্বরে চিৎকার করে দৌড়াতে থাকা কিম ফুকের ছবিটি তুলেছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আলোকচিত্রি নিক উট। পরদিন নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কিম ফুক পরিচিত পান ‘নাপাম কন্যা’ হিসেবে। ছবিটি ১৯৭৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি নিক উটের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার বয়ে এনেছিল। তৃতীয় ডিগ্রির পোড়া শরীর নিয়ে কিম ফুকের বেঁচে থাকাটাই ছিল অনিশ্চিত। ১৭টি অপারেশন আর ১৪ মাসের হাসপাতালবাসের পর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। কিম ফুক এখনো বেঁচে আছেন, থাকছেন কানাডায় স্বামীকে নিয়ে। প্রতিষ্ঠা করেছেন কিম ফুক ফাউন্ডেশন, যেটি যুদ্ধাহত শিশুদের চিকিৎসা ও মানসিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। জাদুঘরে কিম ফুকের ছবিটি বেশ বড় করেই সাজানো আছে, সহজেই চোখে পড়বে।

যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা অস্ত্র
যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা অস্ত্র

ভিয়েতনাম যুদ্ধে ১৩৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন। সেই সব সাংবাদিকদের তোলা ছবিও প্রদর্শিত হচ্ছে এই জাদুঘরে। এমন ছবিও আছে, যেখানে এক সাংবাদিক আরেকজন নিহত সাংবাদিককে বয়ে আনার ছবি তুলছেন। ১৩৩ জনের মধ্যে ৫৬ জনের ছবি জাদুঘরের দেয়ালে ঝোলানো আছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার ২০ বছরে এতজন সাংবাদিকের মৃত্যুর ব্যাপারটা ফলাও করে প্রকাশ করলেও ইসরাইলি আগ্রাসনে তিন মাসে গাজায় দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহতের ঘটনা অবশ্য রেখেঢেকে প্রকাশ করে। পশ্চিমা মিডিয়ার এই বেহায়াপনা খুব বাজে লাগে।

এজেন্ট অরেঞ্জ গ্যালারি
এজেন্ট অরেঞ্জ গ্যালারি

জাদুঘরের এক পাশে গ্যালারির রং গাঢ় কমলা। টকটকে ক্যানভাসে ফুটে আছে অসংখ্য সাদা–কালো ও রঙিন আলোকচিত্র। আলোকচিত্রের চরিত্রগুলোর শারীরিক বিকৃতি মনে ভীতির সৃষ্টি করে। এই বিকৃতির পেছনে আছে আমেরিকান সৈন্যদের রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার। রাসায়নিক অস্ত্র আছে এই অজুহাতে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। অথচ এই আমেরিকাই ভিয়েতনাম যুদ্ধে আশি মিলিয়ন লিটারেও বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করেছিল, যার অর্ধেকের বেশি ছিল ডাইঅক্সিন–সমৃদ্ধ এজেন্ট অরেঞ্জ। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ডাইঅক্সিন এতটাই বিষাক্ত যে এর মাত্র ৮৫ গ্রাম দিয়ে ৮০ লাখ মানুষের একটা শহরকে জনশূন্য করে ফেলা যাবে। এই রাসায়নিকের প্রভাবে যুদ্ধের মধ্যেই যে কেবল মানুষ মারা গেছে, তা–ই নয়। যুদ্ধের পরেও প্রচুর বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়েছে। এমনই এক শিশু ছিল জেনিফার, যার বাবা ড্যানিয়েল আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। যুদ্ধকালে ড্যানিয়েল নিজেও এজেন্ট অরেঞ্জ স্প্রে করেছিল ভিয়েতনামবাসীর ওপর। অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস, দেশে ফেরার পর ড্যানিয়েলের স্ত্রীর কোল আলো করে আসে শিশু জেনিফার। বাবা এজেন্ট অরেঞ্জের সংস্পর্শে থাকার কারণে দেবশিশুর মতো রূপ নিয়ে আসা জেনিফারের জন্ম হয় শারীরিক বিকৃতি নিয়ে। এভাবেই সে বড় হতে থাকে, সেই সঙ্গে শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে অন্যান্য অসুখ। মেয়ের এই অবস্থা ড্যানিয়েল মেনে নিতে পারেননি। নিজের কৃতকর্মের শাস্তি মেয়ে পাচ্ছে, এই বিষয়টা তাকে কুরে কুরে খেতে থাকে। অবশেষে আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজেকে নিষ্কৃতি দেন।

স্কুলের বাচ্চারা ঘুরে দেখছে জাদুঘর
স্কুলের বাচ্চারা ঘুরে দেখছে জাদুঘর

সত্যি বলতে কী গ্যালারিটা ঘুরে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেছে। মানুষ কেন যুদ্ধ করে? কীভাবে ঠান্ডা মাথায় একজন আরেকজনকে হত্যা করে? যুদ্ধের রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষত হয়তো চোখে দেখা যায়; কিন্তু যেই মানসিক ক্ষত যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনা কিংবা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা বহন করে, সেটি কি মুছে ফেলা সম্ভব? এত এত যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা, রাজনৈতিক প্রচেষ্টা কেন বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে? আজ রাশিয়া ইউক্রেনে রক্ত ঝরছে, ফিলিস্তিনের বাচ্চাদের হত্যা করে একটা জেনারেশনকে মুছে ফেলা হচ্ছে। অথচ মানবতার বুলি কপচানো জাতিসংঘ কিংবা তথাকথিত মানবতাবাদী দেশগুলো কেন নিশ্চুপ?

বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত যুদ্ধবিরোধী পোস্টার ও আলোকচিত্র
বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত যুদ্ধবিরোধী পোস্টার ও আলোকচিত্র

বিষণ্নতার ভার কাঁধের ওপর বহন করে নিচতলায় নামলাম। ওঠার সময় নিচতলার একপাশটা দেখেছিলাম। অন্যপাশে এসে দেখি, হরেক রকম যুদ্ধবিরোধী পোস্টারে দেয়াল ঢাকা পড়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, কিউবা, ইতালি, সুইডেন, সিরিয়া, কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশের পোস্টার এবং যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের আলোকচিত্র শোভা পাচ্ছে দেয়ালে। এত কিছুর মধে৵ আমার দৃষ্টি কেড়ে নেয় একটা পোস্টার, যেখানে বাংলায় লেখা— ‘বিজয়ী ভিয়েতনাম লাল সেলাম। হো চি মিন লাল সেলাম।’ লাল রঙের ‘ভি’ চিহ্নের ভেতরে আঙ্কেল হোয়ের ছবি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এই পোস্টার ছাপিয়েছিল ১৯৭৬ সালে। সুদূর ভিয়েতনামের সাইগন শহরের এক জাদুঘরে বাংলা ভাষার এই পোস্টার আমাকে অনেকখানিই আন্দোলিত করতে সক্ষম হয়েছে। যুদ্ধ হয়তো আমরা বন্ধ করতে পারব না; কিন্তু প্রতিবাদ তো জারি রাখতে পারব। বিন্দুবৎ এই প্রতিবাদগুলোই একদিন হয়তো সুনামিতে পরিণত হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পৃথিবীর সব অন্যায় আর অবিচার।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন