অস্ট্রেলিয়ায় একটা কথা বহুল প্রচলিত। নেভার বিলিভ থ্রি ডব্লিউজ। এর মানে হলো ডব্লিউ দিয়ে শুরু হওয়া তিনটা বিষয়কে বিশ্বাস না করা। সেই তিন বিষয় হলো ওয়েদার, ওয়ার্ক ও ওয়াইফ। কারণ, এগুলো যেকোনো সময় যেকোনো রূপ নিতে পারে। প্রথম ডব্লিউ, মানে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া নিয়ে কথাটা খুবই সত্যি। বলা হয়ে থাকে, অস্ট্রেলিয়ায় আপনি একই দিনে চার ঋতুরই দেখা পেতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার ঋতুগুলো হলো সামার, অটাম, উইন্টার ও স্প্রিং। এখানে আলাদাভাবে বর্ষাকাল, শরৎকাল বা হেমন্তকাল নেই। তবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। সেই বৃষ্টি শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই সেটা আমাদের দেশের মতো উপভোগ্য নয়। আর অটামের সময়টাকে শরৎ ও হেমন্ত উভয়ই বিবেচনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে অটামের শেষ দিকের সময়টাকে হেমন্ত হিসেবে ধরা যেতে পারে। এ সময় শীতকালকে স্বাগত জানানোর জন্য গাছের পাতা ঝরে পড়া শুরু করে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই পাতা ঝরে পড়ার আগে বাহারি রং ধারণ করে।
অনেকগুলো গাছের পাতায় বাহারি রঙের সাজ দেখা যায় মূলত জাপানিজ ম্যাপল, এসার, সুগার ম্যাপল, আমেরিকান সুইটগাম, চায়নিজ পিস্টাশিয়ো, চায়নিজ টালো, স্কারলেট ওক, টাপেলো, ইউরোপিয়ান অ্যাশ, ক্লারেট অ্যাশ, পিয়ার, হানি লোকাস্ট আর পারসিমনে। এসব গাছের পাতা ঝরে পড়ার আগে পাতাগুলো সবুজ থেকে বিভিন্ন ধরনের রং ধরে। তারপর ঝরে পড়ে শীতনিদ্রায় চলে যায়। অটামে অস্ট্রেলিয়ার রাস্তাঘাটের দুই পাশে, পার্কে তাই নানা রঙের সমাহার দেখতে পাওয়া যায়। আর ফুটপাতগুলো ঢেকে যায় ঝরে পড়া পাতায়। সেখান দিয়ে হাঁটলে ঝরে পড়া পাতা পায়ের নিচে পড়ে মচমচ শব্দ করে। সাতসকালে ঝাড়ুদারেরা তাঁদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পাতাগুলো পরিষ্কার করতে।
অস্ট্রেলিয়ায় অটামের এই রঙের মেলাকে একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন করা হয়। বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন বাগানে এ সময় অটামের টিকিট ছাড়া হয়। মানুষ টিকিট কেটে সেসব বাগানে যান সপরিবার অনেকটা বনভোজনের আমেজে। সারা দিন ঘুরেফিরে বাগানের নানা রং দেখেন, ছবি তোলেন, খাওয়াদাওয়া করেন এবং দিন শেষে বাসায় ফিরে আসেন। এই পুরো বিষয়ের মধ্যে একধরনের মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ, পুরোটাই প্রাকৃতিক আর প্রকৃতির সান্নিধ্যেই তো কাটানো।
আমরাও এবার এমনই একটা বাগানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বাগানটির নাম মেফিল্ড গার্ডেন। এটি নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের ওবেরন শহরতলিতে অবস্থিত। এটি অস্ট্রেলিয়ার এমনকি দক্ষিণ গোলার্ধের সর্ববৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান। ৬৫ হেক্টর জমিতে দুটি বাগান মিলে এই বাগান তৈরি। মেফিল্ড গার্ডেন আর হকিন্স পরিবারের পারিবারিক এস্টেট গার্ডেন। ৬৫ হেক্টরের মধ্যে ১৫ হেক্টর বছরের প্রতিদিনই খোলা থাকে। আর বাকি ৫০ হেক্টর বছরে চারবার খুলে দেওয়া হয় উৎসবকে কেন্দ্র করে।
সিডনি থেকে মেফিল্ড গার্ডেনের দূরত্ব গাড়িতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। আমাদের বাসা থেকে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। শুরুতে মোটরওয়ে এম৭ ধরে আধা ঘণ্টা চলার পর শুরু হয় মোটরওয়ে এম৪। এরপর মোটরওয়ে এম৪ একসময় গ্রেট ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে নাম নিয়ে শেষ হয়ে যায়। গ্রেট ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে ধরে ঘণ্টাখানেক চলার পর শুরু হয় স্থানীয় রাস্তা। স্থানীয় রাস্তায় এক ঘণ্টার ড্রাইভটা দারুণ উপভোগ্য ও রোমাঞ্চকর। রাস্তাটা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে ছুটে চলেছে। তাই ড্রাইভারকে সাবধানতা অবলম্বন করে চালাতে হয়। তবে আপনি যদি দুই পাশের দৃশ্য দেখে সময় পার করতে চান, তাহলে ড্রাইভ না করে জানালার পাশে বসে থাকাই উত্তম।
কচ্ছপের পিঠের মতো পাহাড়গুলো ঘুমিয়ে আছে। তার গায়ে কোথাও ঘন বন আবার কোথাও বাদামি–সবুজ ঘাসের মাদুর। সেই মাদুরের মধ্যে চরে বেড়াচ্ছে গরু, ভেড়া বা ঘোড়া। আবার কোথাও সেই পাহাড়গুলোর ফাঁকে ফাঁকে উপত্যকার মধ্যে কাকচক্ষু জলের সুন্দর হ্রদ অনেকটা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী অঞ্চলের মতো।
এই রাস্তা ধরে যতই আপনি এগোবেন, সবুজ ততই বাদামি থেকে বাংলাদেশের সবুজের চেহারা নেবে। একটা সময়ের পর মনে হবে, আপনি যেন শ্রীমঙ্গলের রাস্তা ধরে যাচ্ছেন। এরপর একসময় আপনি ওবেরনে পৌঁছে যাবেন। সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের মধ্য দিয়ে যখন যাবেন, তখন মুগ্ধ হয়ে কারখানার চিমনির মুখগুলো দেখতে হবে। কারণ, চিমনি দিয়ে অবিরাম সাদা মেঘের মতো ধোঁয়া বেরিয়ে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। সেটা আরও ভালোভাবে দেখার জন্য আমরা সেখানে কিছুক্ষণ থেমে থাকলাম।
এটা দেখে আমি ছেলেমেয়ে দুটোকে বললাম, দেখো, মেঘের কারখানা। ওরাও আমার সঙ্গে একমত হলো। এরপর একসময় মেফিল্ড গার্ডেনের রাস্তায় পড়বেন। সেই রাস্তা ধরে মিনিট পাঁচেক গেলেই কাঙ্ক্ষিত বাগানের প্রবেশপথ। এই প্রবেশপথ ঠিক পাকা নয় আবার কাঁচাও নয়। তাই সামান্য একটি–দুটি গাড়ি গেলেই ধুলা উড়ছে। সেটা পার হয়ে মেফিল্ড গার্ডেনের পার্কিং। সেখানে গাড়ি পার্ক করার জন্য একজন সাহায্যকারী আছেন।
আমরা কর্তা–গিন্নি আর মেয়ে তাহিয়া ও ছেলে রায়ান মা দিবসের দিন বেরিয়ে পড়েছিলাম। তাই যথেষ্ট ভিড় ছিল। আমাদের পার্ক করতে হলো মূল পার্কিংয়ের বাইরে সবুজ ঘাসের ওপর। পার্কিং করে গেটে গিয়ে আপনি টিকিট করতে পারেন। আর আগে থেকে টিকিট করা থাকলে সেটা দেখালেই হবে। হাতের তালুর বিপরীত পাশে স্ট্যাম্পের মতো একটা সিল লাগিয়ে দেবে। প্রবেশপথের পাশেই আছে খাবারের দোকান। সেখানে আরও আছে গাছগাছালি ও মুরগির খামার। আছে একটা চেকপোস্টের মতো উঁচু পাটাতন। তার পাশেই আছে বড় দাবার কোর্ট। আরেক পাশে একটা বড় চিমনিতে জ্বলছে আগুন। শীতের সময় গেলে সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে একটু উষ্ণ করে নিতে পারেন। এরপর প্রসাধনকক্ষে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বাগানে ঢুকে পড়তে পারেন।
এরপর আপনি টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া মানচিত্র ধরে আপনার মনমতো ঘুরে বেড়াতে পারেন। যে অংশ সব সময়ই খোলা থাকে, সেই অংশ ঘুরে দেখতে মোটামুটি ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। আর পুরো বাগান দেখতে সময় লাগে ঘণ্টা চারেক।
বাগানের সৌন্দর্যের পুরোপুরি বর্ণনা করার মতো আমার ভাষাজ্ঞান সমৃদ্ধ নয়। তবু চেষ্টা করব। বাগানটা আবার বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট বাগানে ভাগ করা। ১৫ হেক্টরের বাগানটার বিভিন্ন অংশের নামগুলো এমন—ওয়াটার গার্ডেন দ্য কি ফিচার অব মেফিল্ড গার্ডেন, দ্য ভ্যালি অব ফাইভ পন্ডস, দ্য ব্লুস্টোন ব্রিজ, দ্য গ্রোটো, দ্য আয়রন অ্যান্ড স্টোন অ্যান্ড ওয়েস্টেরিয়া ওয়াক, দ্য কপার ট্রি ফাউন্টেন, দ্য ১২.৫ মিটার ওবেলিস্ক পন্ড, আইল অব লন্ডন প্লেন ট্রিজ ও স্যান্ডস্টোন গ্যালারি। ৫০ হেক্টরের ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের অংশগুলোর নাম হচ্ছে ক্যাসকেড অ্যান্ড টেম্পল, অস্ট্রেলিয়াজ লার্জেস্ট প্রাইভেট বক্স হেজ মেজ, অ্যাম্ফিথিয়েটার, ফ্যামিলি চ্যাপেল, দ্য স্টাম্পেরি, চায়নিজ প্যাগোডা অ্যান্ড মেফিল্ড লেক, ক্রোয়েট কোর্ট অ্যান্ড রোজ গার্ডেন, হার্বেসিয়াস বর্ডার, গ্লাস হাউস অ্যান্ড পোটজার, সাংকেন গার্ডেন রুমস, ল্যাভেন্ডার পার্টরি আর বির্চ ওয়াক।
আমরা এবারের ভ্রমণে শুধুই ১৫ হেক্টরের বাগানটা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেটুকু দেখেই আমার মনপ্রাণ জুড়িয়ে গিয়েছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ওয়াটার গার্ডেনের পানিতে অনেক শাপলা ফুটেছিল। এখন তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সেগুলো মরে গেছে। কিন্তু ওয়াটার গার্ডেনের পাড়ের নানা রঙের গাছ আর নীল আকাশে সাদা মেঘের প্রতিচ্ছবি পানিতে পড়ে সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে। একটা ঢালু জায়গার মধ্যে ওপর থেকে নিচে সারি ধরে ছোট ছোট পাঁচটি পুকুর। ছোট্ট রায়ান পুকুরগুলো দেখে বলে উঠল, এগুলো হার্টের আকৃতির। পুকুরের চারপাশে ঘাসের সবুজ মখমলের বিছানা। সেখানে বাচ্চারা অনেকেই গড়াগড়ি খেলছে। রায়ানও কয়েকটা গড়ান দিয়ে দিল।
রায়ানের গড়াগড়ি দেখে আমাদের পেছনের দল থেকে একজন বলে উঠলেন, এটা ওদের জন্য ভালো একটা খেলা। আমি বললাম, ঠিক তাই। ওদের আসলে খেলার জন্য কোনো কিছু লাগে না। উনি বললেন, তুমি শুধু ওদের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখো, দেখবে ওরা নিজেদের মতো করে খেলা আবিষ্কার করে নেবে। আমি বললাম, ঠিক এই চেষ্টাই আমি করি। অবশ্য আমাদের নিজস্ব কিছু খেলা আছে। যেমন আমরা বাইরে থেকে ফিরে বাসার কলিং বেল চেপে আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। আমি শুধু একবার দেখিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর রায়ান এটা নিজে থেকেই করে। এমনকি আমরা আমাদের পাড়ার বন্ধুদের বাসার কলিং বেল চেপে পালিয়ে আসি। পরে তারা সিসিটিভি ক্যামেরায় আমাদের দেখে কল দিয়ে জানতে চাই, কোনো দরকারে এসেছিলাম কি না? আমরা বলি, না, ওই দিকে ঘুরতে গিয়েছিলাম, ভাবলাম আপনাদের একটু জ্বালিয়ে যাই।
নীল পাথরের সেতুটা দারুণ। সেতুর নিচ দিয়ে একটা ঝরনা বয়ে চলেছে। সেতুর ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে গাছগুলোর পুরোটা দেখা যায়। সবাই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম আগের মানুষদের ছবি তোলা শেষ হওয়ার জন্য। এরপর বললাম, এটা আসলে এমন জায়গা যে এখানে ছবি তুলে নিজেকে সন্তুষ্ট করা যায় না। তাঁরাও আমার কথায় সায় দিলেন। এরপর হ্রদের পাড় ধরে হাঁটলেই সামনে পড়ে দ্য গ্রোটো। এখানেও একটা ঝরনা আছে এবং এই ঝরনার পেছনে গুহার মতো জায়গা দিয়ে চলাচল করা যায়। ওখানে ঢুকলেই শীতল হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যায়।
সেদিক দিয়ে এগিয়ে গেলেই স্যান্ডস্টোন গ্যালারি। গ্যালারির দেয়ালে প্রদর্শন করা হচ্ছে পুরো মেফিল্ড বাগানের ইতিহাস। কারা, কীভাবে, কবে, কোথা থেকে উৎসাহ পেয়ে এটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আছে তার বিশদ বিবরণ। এ ছাড়া আছে হকিন্স পরিবারের প্রতিষ্ঠাতাদের সবার ছবিও। আর মেঝেতে উঁচু বেদির ওপর আছে একটি বাগানের বিশাল একটি মানচিত্র। স্যান্ডস্টোন গ্যালারির সামনে দাঁড়ালে চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে ওবেলিস্ক পন্ড। অন্য পাশে সবুজ কচ্ছপের পিঠের পাহাড়ের গায়ে চরে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা বিন্দুর মতো ভেড়ার পাল।
এরপর নিচে নেমে এসে আমরা গেলাম কপার ট্রি ফাউন্টেন দেখতে। সেখানে একটা ধাতব গাছের সারা শরীর থেকে ঝরনার মতো পানি বের হচ্ছে। আমি শুরুতে মনে করেছিলাম এটা প্রাকৃতিক গাছ। কিন্তু তাহিয়া আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দিল। তখন আমি বললাম, পুরো বাগানে তাহলে এই একটাই কৃত্রিম গাছ। এই গাছের সামনেই দুটো পরিবার তাদের একদঙ্গল বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছিল দেখে আমরা তাদের পেছনে অপেক্ষা করছিলাম। বাচ্চাগুলোকে হাসির পোজ দিতে বললে একেবারে মাড়ি বের করে হাসি দিল। এরপর মজা করে কান্নার পোজ দিতে বললে তারা নাকি কান্না শুরু করে দিল। আমিও ওদের সঙ্গে গলা মেলালাম। ওদের ছবি তোলা শেষ হলে বাচ্চাগুলোকে বললাম, তোমাদের কান্না আমার খুব ভালো লেগেছে। শুনে ওরা যে হাসি দিল, সেটা ছিল স্বর্গীয়।
কপার ট্রির সামনেই ওয়েস্টেরিয়া ওয়াক। সেখানে সুন্দর ধনুকের মতো করে জাপানিজ ওয়েস্টেরিয়া গাছ লাগানো। তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হয় যেন গাছগুলো সামনের দিকে ঝুঁকে আমাদের কুর্নিশ করছে। এখন অটাম, তাই ওয়েস্টেরিয়া গাছে কোনো ফুল নেই, শুধুই সবুজ পাতা। তার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলাম দেখে আমাদের সামনে থেকে একজন বললেন, চাইলে আমি তোমাদের ছবি তুলে দিতে পারি। এটা অস্ট্রেলিয়ার খুবই সহজ সৌজন্য, গায়ে পড়ে সাহায্য করতে চাওয়া। আমি বললাম, তাহলে তো খুবই ভালো হয়। তাঁরা ছবি তুলে দিয়ে বললেন, আগে দেখো ঠিকঠাক তুলেছি কি না? আমি ছবি দেখে বললাম, দারুণ তুলেছেন। শুনে তাঁরা খুশি হলেন। এরপর তাঁদের বিদায় জানিয়ে বের হওয়ার রাস্তা ধরলাম।
বের হওয়ার রাস্তায় পড়ল কয়েক সারি ঝাউগাছ। দেখেই গিন্নিকে বললাম, ঠিক আমাদের কক্সবাজারের সৈকতের মতো। গিন্নিও আমার সঙ্গে একমত হলো। এরপর ঝাউগাছের সারির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিলাম। বাগান থেকে বের হয়ে রায়ান বড় দাবার কোর্ট দেখে দাঁড়াল কিন্তু সেখানে আগে থেকেই লোকজন খেলছিল বলে আমরা চলে এলাম। পুরো সময়টা রায়ান ‘মেজ’ খুঁজছিল। আমরা কাউন্টারে এসে মেজের কথা জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, সেটা শুধু খোলা থাকে উৎসবের সময়গুলোতে। এরপর আমরা পাশে জ্বলন্ত আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের উষ্ণ করে নিলাম। খাবারের লাইন অনেক লম্বা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, বন্ধু আশিকের পরামর্শ অনুযায়ী হ্যাম্পটন হাফওয়ে হোটেলে দুপুরের খাবার খাব আমরা। এতে বাসার দিকে এগিয়ে যাওয়াও হবে আবার খাওয়াও হবে।
হ্যাম্পটন হাফওয়ে হোটেলে পৌঁছে চারটা চিকেন স্নিটজেল বার্গার অর্ডার করে হোটেলের পেছনে রাখা টেবিলে গিয়ে বসলাম আমরা। সেখান থেকে দেখা যায় পাহাড়ের একটা দুর্দান্ত ভিউ। আশিক এটার কথাই বলেছিল। পাহাড়ের মাঝের সবুজ উপত্যকা। আর ওপরে মেঘের ভেলা। খাওয়া শেষ করে আমরা কফি নিয়ে নিলাম। কারণ, আরও দুই ঘণ্টার রাস্তা ড্রাইভ করতে হবে। কাউন্টারের ভদ্রমহিলাকে গল্প প্রসঙ্গে বললাম, আমরা মেফিল্ড গার্ডেনে গিয়েছিলাম। শুনে উনি বললেন, আমাদের এত কাছে কিন্তু যাওয়া হয় না। প্রতিবারই পরিকল্পনা করি কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। আমি বললাম, এখন যেতে পারেন, দারুণ রং ছড়াচ্ছে গাছগুলো। শুনে উনি বললেন, ধন্যবাদ। আপনাদের বাসায় ফেরা নিরাপদ হোক। আমি তাঁকে প্রতি–শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।
ছবি: লেখক