রাইন নদীর এলোকেশী ২
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পরদিন সকালে ঝুড়িতে রুটির বদলে মিলল হুমদো এক কালো বিড়াল। ডিমে তা দেওয়ার ভঙ্গিতে আয়েশি বসে আছে। তা-এর জোরে আমাদের রুটিগুলো গরম পরোটা হয়ে গেল কি না, দেখতে হুমদো বাবাকে আলতো কোলে তুলে নিলাম। ঠিক তখনই চোখে পড়ল, আরে রুটির থলেটা তো আসলে দরজার হাতলে ঝোলানো আছে। বিড়াল ছেড়ে থলেটা হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখতেই মৌরি আপুর চিল চিৎকার, ‘অ্যাই, অ্যাই, ওটাকে সরাও, ইইইইইকক্...!’ কোন ফাঁকে যেন কালো বিড়াল ভালো মানুষ সেজে ঘরে ঢুকে পড়েছে অনাহূত মেহমান হয়ে। ব্যাপার দেখে নূর আর তাফসুও তারস্বরে হল্লা করে উঠল। মুহূর্তেই তাণ্ডব বেধে গেল। মৌরি আপুর হাতে ডিম ভাজার খুন্তি। বিপজ্জনক অস্ত্র। এমন হাউকাউ দোজখে হানা দিয়ে বিলাই বেচারা পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা। জল বেশি ঘোলা হওয়ার আগেই খপ করে সেটিকে ধরে বারান্দায় নামিয়ে দরজার আগল তুলে দিলাম।

বাম থেকে  হলুদ ও লাল টি–শার্টে নূর ও তাফসু আর বেগুনী–কমলায় মৌরি আপু আর লেখিকা
বাম থেকে হলুদ ও লাল টি–শার্টে নূর ও তাফসু আর বেগুনী–কমলায় মৌরি আপু আর লেখিকা

গ্যাঞ্জামটা শুরু না হতেই ফুরিয়ে গেল দেখে বাচ্চারা হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে ঘুরতে লাগল। মৌরি আপুও ঠান্ডা হয়ে খুন্তি নামিয়ে নাশতায় মন দিলেন। হাঁকডাকে হাদি ভাই আর রুমিও চোখ ডলতে ডলতে টেবিলে এসে বসেছে। নাশতার আয়োজন নেহাত কম না। বেকারির মচমচে রুটির সঙ্গে ডিমভাজা, মাখন আর ধোঁয়া ওঠা কাপে ব্ল্যাক কফি। হাদি ভাই কোত্থেকে এক কৌটা দামি মধু বের দিলেন। খানাখাদ্যের ব্যাপারে তিনি খুব শৌখিন। আমার ধারণা, হাদি ভাইকে ঝাঁকাঝঁকি করলে ছোট ছোট শিশি-বোতল মিলবে। এই যেমন হট সস, অলিভ অয়েল, ক্যারামেল সিরাপ ইত্যাদি। আপাতত আমরা মধুর ওপরেই মৌমাছির মতো ঝাঁপিয়ে পড়লাম আর রুটির পিঠে ছড়িয়ে মুখে পুরতে লাগলাম গোগ্রাসে।

বিজ্ঞাপন

চটজলদি ব্রেকফাস্টের পাট চুকিয়ে বেরিয়ে পড়েছি দল বেঁধে। গাড়িতে করে বোপার্ড ট্রেন স্টেশনের কাছে। সেখান থেকে চড়ে বসব হুন্সর‍্যুকবান নামের এক মজার রেলগাড়িতে। হুন্সর‍্যুক রেললাইনকে বলা হয় জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর ট্র্যাক। তাই আগ্রহ জমেছে মনে। তড়িঘড়ি টিকিট কেটে স্টেশনের সামনে অলস দাঁড়িয়ে ইতিউতি চাইছি। হাতে সময় আছে খানিকটা। মেঘলা দিন। ঝেঁপে বৃষ্টি না নামলেই হলো।
হঠাৎ পথের ধারে একটা ভাস্কর্য নজরে এল। ছানাপোনা হাতে এগিয়ে গেলাম।

রূপকথার হান্সেল আর গ্রেটেলের সঙ্গে খেলায় মশগুল বিখ্যাত জার্মান কম্পোজার এঙ্গেলবের্ট হুম্পারডিঙ্ক
রূপকথার হান্সেল আর গ্রেটেলের সঙ্গে খেলায় মশগুল বিখ্যাত জার্মান কম্পোজার এঙ্গেলবের্ট হুম্পারডিঙ্ক

ওভারকোট চাপানো মোচওয়ালা রাশভারী এক ভদ্রলোক হালকা মেজাজে খেলছেন দুই শিশুর সঙ্গে। কংক্রিটের বেদিতে খোদাই করা তার নাম, এঙ্গেলবের্ট হুম্পারডিঙ্ক—জার্মান কম্পোজার। আর বেদির বাঁ পাশে ঝাপসা হরফে লেখা, ‘হান্সেল আর গ্রেটেল’। গ্রিম ভাইয়ের লেখা রূপকথার দুই চরিত্র। বাবা আর সৎমা একদিন বনে ফেলে রেখে যায়। কেউ দয়া করে পোষ্য নিলে অভাবী বাবার দায়মুক্তি হয় আর ভালুকে খেয়ে ফেললে সৎমায়ের ঝামেলা চুকে যায়। পথহারা ভাইবোন খিদে নিয়ে এসে দাঁড়ায় কেক-রুটি দিয়ে বানানো এক অদ্ভুত বাড়ির ফটকে। আর অমনি পড়ে ডাইনির খপ্পরে। বুড়ির ইচ্ছা—খাইয়েদাইয়ে ভাই হান্সেলকে মোটাতাজা বানিয়ে চুলায় চড়িয়ে রেঁধে খাবে। কিন্তু বোন গ্রেটেলের ধাক্কায় একদিন চুলোয় পড়ে বুড়ির নিজেরই ভবলীলা সাঙ্গ হয়। তারপর বুড়ির লুকানো মণি-মুক্তা নিয়ে ভাইবোন ফিরে যায় গরিব বাবার কাছে। এই গল্প দিয়েই এঙ্গেলবের্ট এক ক্রিসমাসের সন্ধ্যায় লিখলেন তাঁর বিখ্যাত অপেরা ‘হান্সেল আর গ্রেটেল’। গ্রিম ভাইদের রূপকথা নতুন প্রাণ পেল এঙ্গেলবের্টের সুরের দ্যোতনায়।

বিজ্ঞাপন

‘ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে, দৌড় দৌড় দৌড়...!’। মৌরি আপুর অস্থির ডাকে সম্বিত ফিরল। খেলায় মশগুল এঙ্গেলবের্টকে বিদায় জানিয়ে ঝেড়ে একটা দৌড় দিলাম ছানা দুটো হাতে পেঁচিয়ে। ‘আউ, আউ, লাগছে তো’ অভিযোগ পাত্তা দেওয়ার সময় নেই এখন।
হুন্সর‍্যুকবান নামের দুই বগির ছোট্ট খেলনা রেলগাড়িটা ছেড়ে যাবার ঠিক পাঁচ সেকেন্ড আগে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলাম সবাই। হাঁপাতে হাঁপাতে আসনে গা এলিয়ে দিলাম। পাশের সিটের গোমড়ামুখো বয়স্ক দম্পতি হতাশ মাথা নাড়লেন, ‘এই বিদেশিগুলো আর তাদের ছাওপাও এখন হল্লা জুড়ে আরাম হারাম করে দেবে, উফ্!’ মনের ভাবটা পড়ে নিয়ে ইচ্ছা করে পিত্তি জ্বলানো হাসিতে হ্যালো জানালাম। বাচ্চাদের ‘কী রে, কেমন লাগছে?’ বলে উসকে দেওয়ার খুব ইচ্ছাটা চাপা দিয়ে দুষ্টু হেসে জানালার কাচে ডুব দিলাম।

ট্রেনের উৎসুক দুই যাত্রী
ট্রেনের উৎসুক দুই যাত্রী

পাহাড় এখানে সবুজে মোড়ানো। ঘন গাছের সারি হাত ধরাধরি করে আলিঙ্গনে দাঁড়িয়ে। সমতল ছেড়ে আমরা পাহাড় কেটে ওপরে উঠছি। বোপার্ড ছেড়ে এমেলহাউসেন পর্যন্ত যাব আমরা প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে। বোপার্ডের এদিকটায় ট্রেন উঠে গেছে প্রায় সাড়ে তিনশো মিটারের মতো। উনিশ শতকের শেষে শুরু হয় এই হুন্সর‍্যুক লাইনের কাজ। সে সময় বসে এত উঁচুতে রেললাইন বানানো দুঃসাহসই বটে। তবে জার্মান কারিগরি বলে কথা। কোথাও সরু ব্রিজ দিয়ে লাইন চলে গেছে তো কোথাও আবার গ্র্যাভিটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সোজা আকাশের পানে চলেছে এই রেলগাড়ি। আরে, হঠাৎ একটা হরিণ দেখলাম মনে হলো। রেলগাড়ির ঝিকঝিক শব্দে চমকে উঠে চকিতে মিলিয়ে গেল গহিনে।

এ পথ দিয়ে চমৎকার ট্রেইল চলে গেছে রেললাইনের সমান্তরালে। কেউ হাইকিংয়ে যেতে চাইলে মাঝের কোনো ষ্টেশনে নেমে যেতে পারে। নিয়মিত ম্যারাথন দৌড়ানো বেজায় ফিট হাদি ভাই একটু নড়েচড়ে শুধাল, ‘কী রুমি, ফেরার পথটা হাইকিং করে ফিরবে নাকি? জমবে কিন্তু।’ হাইকিং পরিশ্রমের কাজ। দৌড়ঝাঁপের নাম শুনলে রুমি সাহেবের ‘ফ্যাকাল্টেটিভ হিয়ারিং’ শুরু হয়। মানে ‘ইচ্ছা শ্রবণ’। কিছু কথা তখন সে ইচ্ছা করেই শোনে না। ‘অ্যাঁ, হাদি ভাই, কিছু বললেন নাকি? শুনতে পাচ্ছি না তো।’ হাদি ভাই আরও বারকয়েক একই প্রশ্নের একই জবাব পেয়ে খাপ্পা মেরে অফ গেলেন। কিন্তু যেই না মৌরি আপু লাঞ্চের কথা পাড়লেন, অমনি রুমির বন্ধ কান ফটাস খুলে গেল। দুম করে সে মতামত ঠুকে দিল, ‘মেঘলা দিনে গরমাগরম ইন্ডিয়ান বা তুর্কি খাবার হলে জমবে কিন্তু।’

রাইন নদীর অপরূপ রূপ
রাইন নদীর অপরূপ রূপ
হান্সরুক ট্রেনের জানালা থেকে চারপাশ
হান্সরুক ট্রেনের জানালা থেকে চারপাশ

এমেলহাউসেন ছুঁয়ে হুন্সর‍্যুকবান আমাদের বোপার্ডে ফিরিয়ে আনল। রুমির সাধের ইন্ডিনিয়ান-তুর্কি ডিশ বাদ দিয়ে আমরা এক ভিয়েতনামি রেস্তোরাঁয় হানা দিলাম। স্যামন সুশি, সয়াসসে স্টার-ফ্রায়েড নুডলস আর সুইট-সাওয়ার ফিশ সাবড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম জবর একটা ঢেকুর তুলে। এখন গন্তব্য কেব্‌ল-কার স্টেশন বরাবর।
কেব্‌ল কারের ‘কার’ অংশে ঘাপলা আছে। ভেবেছিলাম, চারকোনা বাক্স মতো হবে। ঢুকে হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকব। এখন যে দেখছি, দুজনের বসার মতো হুডখোলা নীলরঙা আসন আর তাতে নড়বড়ে হুড়কো। এর নামও ভিন্ন—জেসেলবান বা কেব্‌ল-চেয়ার। এই বাহনে চেপে পাহাড়ের এমাথা-ওমাথা পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবতেই মাথা ঝিমঝিম করছে। মৌরি আপুর আবার উচ্চতাভীতি আছে। আমাদের ব্যাকপ্যাকগুলো জমা নিয়ে স্টেশনের বেঞ্চে চোখ বুজে জিরোতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। মা-ঘেঁষা নূর রয়ে গেল মায়ের সঙ্গেই।    

হক মাওলা বলে ঝুলে পড়লাম জেসেলবান চেয়ারের হাতল ধরে। হুড়কো ভালো করে লাগানোর আগেই লোকটা জোরসে এক ঠেলা দিল হেইয়ো। ঠেলা খেয়ে ভয়ের চোটে কলিজাটা গলা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল যেন। নিরুপায় এক ঢোক গিলে সেটিকে আবার পেটের ভেতর সুশী আর নুডুলসের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। মৌরি আপুর সঙ্গে থেকে গেলেই ভালো হতো বোধহয়। তাফসুটা ভয় পাচ্ছে না তো? হাদী ভাইয়ের সঙ্গে বসেছে। মাঝ আকাশে ভ্যাক কান্না দিলে বিরাট বিপদ।

জেসেলবান বা কেবল্ চেয়ারের স্টেশন
জেসেলবান বা কেবল্ চেয়ারের স্টেশন

আশংকা ভুল প্রমাণিত করে সামনে থেকে হল্লা ভেসে এল, ‘মা, দেখো আমরা কত উঁচুতে, কী দারুণ, কী মজা।’ এখন অতি আনন্দে সে উল্টে পড়ে না গেলেই হয়। হাদী ভাইয়েরও আনন্দ আর ধরে না। আবেগ মিশিয়ে রুমিকে আরেকবার প্রস্তাব দিলেন, ‘ওপাশে নেমে হাইকিং করে ফিরে যাই, কী বলো?’ রুমি কানের পর্দায় তালা মেরে পাল্টা শান্ত স্বরে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘হ্যাঁ? কী বলেন? শুনি না তো। খুব বাতাস।’ এই মামদোবাজি হাদী ভাইয়ের ভালো লাগল না। জেসেলবানের লোহার রড ধরে ঝাঁকি শুরু করলেন। আমাদের আসন প্রবল বেগে দুলে উঠল। কাণ্ড দেখে তাফসু মিয়া খিলখিলিয়ে হাসছে। মা–বাবার যে আত্মা শুকিয়ে খাঁক, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কোনো।

টাপুরটুপুর বৃষ্টি এসে লাগল চোখেমুখে। মেঘের দেশটা এখন হাতের নাগালে। কুয়াশার মতো কী যেন ভেসে গেল পাশ দিয়ে। একটুকরো মেঘ। ঝুম বৃষ্টি নামলে পালাবার পথ নেই। তাই হাত বাড়িয়ে টুপটাপ ফোঁটাগুলোকে আলতো ছুঁয়ে দিলাম। লক্কড়ঝক্কড় নীল কেব্‌ল-চেয়ার মুহূর্তেই পাল্টে গেল ময়ূরকণ্ঠি উড়ালপঙ্খীতে। হালকা ডানায় উড়ে চলছি যেন কোনো কল্পরাজ্যে। আর পাখির চোখে অবাক দেখছি তটিনী রাইনের সর্পিল গতি বাধাহীন।

কেবল্ চেয়ারে চড়ে মেঘবিলাস। ছবিতে বিন্দু হয়ে আসা হাদি ভাই আর তার সঙ্গী তাফসু
কেবল্ চেয়ারে চড়ে মেঘবিলাস। ছবিতে বিন্দু হয়ে আসা হাদি ভাই আর তার সঙ্গী তাফসু

মেঘের রাজ্যে মেঘবিলাসের এই দুর্লভ দুপুরটাকে সযত্নে পকেটে পুরে ফেললাম সবার অলক্ষ্যে।

আকাশ থেকে মর্ত্যের পাতালে নেমে এসেছি। রাইন পাড়ের পথঘাটও নদীর মতোই আঁকাবাকা। আমরা এগলি-ওগলি ধরে এলোমেলো হাঁটছি ছন্নছাড়া। আজ বিকেলে আর তাড়া নেই। ফিরতি পথে তাই খোলা হাওয়া টেনে নিচ্ছি বুক ভরে। দুই পাশের বাড়িগুলো সেকেলে আদলের। নানা নকশার আঁকিবুঁকি তাদের বুকে-পিঠে। ইটরঙা বাড়ির পাল্লাকে রুইতনের তাস বলে ভুল হতে চায়।

সৌখিন বাড়িটার জন্মকাল ১৭৩৭
সৌখিন বাড়িটার জন্মকাল ১৭৩৭
রাইনপাড়ে বাড়িগুলোর দেয়ালে বিচিত্র অলঙ্করণ
রাইনপাড়ে বাড়িগুলোর দেয়ালে বিচিত্র অলঙ্করণ

আবার কোনো দেয়ালে সোনালি তুলির জমকালো ছোঁয়া। কোনো বাড়ির মিনার জাদুর টুপির মতো খুব চোখা। তবে সব দালানেই খোদাই করা সেটির জন্মকাল। আন্নো ১৭৮৭, আন্নো ১৭০২ ইত্যাদি। লাতিন ‘আন্নো’ মানে সাল বা বছর। এমন তিন শ বছরের পুরোনো একটি বাড়ি কিনতে পারলে মন্দ হতো না। সঙ্গে দু–একটা ভূত জুটে যেত ফাউ। ভূতকে তার পেতনি সমেত শান্তিতে থাকতে দিয়ে এক কাপ চা আর প্রিয় বই নিয়ে বসে যেতাম রুইতন জানালা খুলে। নদীর জল-হাওয়ায় বিকেলগুলো উড়ে যেত গল্পে কবিতায়। খালি রাতের বেলায় ভূতের ছাওগুলো কার্নিশ থেকে নেমে এসে মিহি স্বরে চিঁ চিঁ ডাক ছাড়লে সামান্য ভয় লাগত আর কি।  

সূর্য ডুবিয়ে আমাদের লাল গাড়ি আর কালো গাড়ি ফিরে এল খামারবাড়িতে। কালো বিড়াল ডিনার রেখে গেছে পাপোশের ওপর। নধর একটা মরা ইঁদুর। সকালের কাণ্ডে বেচারা বোধহয় অনুতাপে পড়ে এই উপহার নিয়ে এসেছে। শিকারের পাশে তাকে পাহারায় ঠায় দাঁড়িয়ে তা–ই তো মনে হলো! তাছাড়া রক্তমাখা, ঘাড় মটকানো ইঁদুর দেখে বিহ্বল মৌরি আপু কাঁদবেন না চেঁচাবেন বুঝতে পারছেন না। কী আর করা। হাদী ভাইয়ের লুকানো দামি অলিভ অয়েলে মচমচে ইঁদুর ভেজে ওঠানোর ইচ্ছেটা বাদ দিতে হলো। তাছাড়া এক পিসে কারও পেট ভরবে না। তাই হাঁটু গেড়ে বিলাইমশাইকে বিড়ালীয় ভাষায় বলতে হলো, ‘মিঁউ ম্যাও, ইঁউ ন্যাও’। বেচারা আহত চোখে উপহার মুখে তুলে নিয়ে সিড়ি ভেঙে উধাও হয়ে গেল।

এই রেস্তোরাঁ অটল দাঁড়িয়ে সেই ১৭৬২ সাল থেকে
এই রেস্তোরাঁ অটল দাঁড়িয়ে সেই ১৭৬২ সাল থেকে
রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতিতে ক্যাডেট হাদী ভাই, যিনি 'পামোশ'-এর যুগান্তকারী স্রষ্টা
রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতিতে ক্যাডেট হাদী ভাই, যিনি 'পামোশ'-এর যুগান্তকারী স্রষ্টা

রাতের খাদ্যপর্ব অল্পের ভেতর চুকিয়ে বারান্দায় এসে জমালাম সবাই। আকাশে মেঘ সরে তারা ফুটেছে ঝিকিমিকি। আধখানা চাঁদের আলোয় চারদিক বড্ড মায়াবী। শুধু কাছে কোথাও ঝিঁঝিঁ ডাকছে একটানা। গল্পে না মেতে আমরা নিঝুম পাহাড়ের নৈবেদ্য শুনতে লাগলাম কান পেতে। আর রাত পেরোলেই রওনা দেবো আরেক সুরের খোঁজে। রাইনের এলোকেশী লোরালাইয়ের সন্ধানে।

লেখক: ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার, জার্মানির মিউনিখের একটি ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সংস্থার মেডিকেল রাইটার
ছবি: আহমেদ রুমি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন