আইসল্যান্ড ওরফে নাইসল্যান্ড ভ্রমণ ২
শেয়ার করুন
ফলো করুন

উত্তর ইউরোপের নর্ডিক অঞ্চলের একটি দেশ নরওয়ে। দেশটি আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ বড় হলেও লোকসংখ্যা মাত্র ৫৫ লাখ। ম্যাপে দেখতে লম্বা ও চ্যাপটা আকৃতির এই দেশের তিন দিকে সাগর আর এক দিকে প্রতিবেশী সুইডেনের সঙ্গে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত। দেশটির উত্তর-পূর্বে ফিনল্যান্ড এবং রাশিয়ার সঙ্গেও কিছুটা স্থলসীমান্ত রয়েছে। নরওয়ে একসময় অন্য অনেক দেশের মতোই সাধারণ মানের একটি দেশ ছিল।

শহরের পাশেই নৌযান ঘাট
শহরের পাশেই নৌযান ঘাট

তবে উত্তর সাগরে পাওয়া তেল ও গ্যাসের খনিই একে পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে। তবে এই তেল ও গ্যাসের টাকা কিন্তু অন্য অনেক তেলসমৃদ্ধ দেশের মতো তারাও বিলাস-ব্যসন, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি আর বিদেশে পাচার করে নষ্ট করেনি। এই সম্পদ থেকে কিছুটা তারা দেশের মানুষের সুখ-সুবিধার পেছনে ব্যয় করেছে আর বাকিটা জমা রেখেছে ভবিষ্যতের জন্য, যা এখন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল। পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসাতেই এই টাকা বিনিয়োগ করে রাখা আছে দুঃসময়ে কাজে লাগবে বলে।

বিজ্ঞাপন

নরওয়ে অত্যন্ত ব্যয়বহুল দেশ। সবকিছুর দামই এখানে আকাশছোঁয়া। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে তাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় কিন্তু কোটি টাকার কাছাকাছি। আবার এ দেশের সাধারণ নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিমা, ভাতা, পেনশন ইত্যাদি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। কেননা, রাষ্ট্রই এগুলোর সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। প্রকৃতি যেমন দেশটিকে উজাড় করে দিয়েছে, এ দেশের মানুষও তেমনি সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার করছে। সবকিছু মিলিয়ে পৃথিবীতে ভালো কয়েকটি দেশের উদাহরণ কেউ আমাকে দিতে বললে আমি অবশ্যই নরওয়ের নাম বলব। যাহোক, এত হিসাবে আমার কাজ কী? দুই দিনের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছি, পয়সা খরচ করব, ঘুরব, মজা করব, ফিরে চলে যাব। আমি আদার ব্যাপারী নই ঠিকই, তবে আইসল্যান্ডে যাওয়ার জাহাজ ধরতে যেহেতু নরওয়ে এসেছি, তাই না চাইলেও কিছু খোঁজখবর নিতে ও দিতে হচ্ছে!

পুরনো বাড়ির দেয়ালের আর্ট
পুরনো বাড়ির দেয়ালের আর্ট

আর্কটিক ট্রেনে টানা ২২ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ট্রেন থেকে নামার পর আপাতত আমার চিন্তা সবার আগে নারভিক রেলস্টেশন থেকে ট্রমসো শহরে যাওয়ার ১০০ নম্বর বাস থামার নির্ধারিত স্থানে গিয়ে দাঁড়ানো। কেননা, শহরের মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে যদি বাস ভর্তি হয়ে আসে অথবা এই স্টপেজেও যদি আমার আগে অনেক যাত্রী এসে জমা হয়, তাহলে বাসে সিট পেতে সমস্যা হতে পারে। নারভিক থেকে ট্রমসোয় দিনে মাত্র তিনটা বাস যায়। এদিকে আমার হাতে সময় আছে মাত্র ১৫ মিনিট, সুতরাং এই বাস মিস করলে পরদিন সকালের আগে আর কোনো বাস পাব না। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম থেকে একটানা ট্রেনভ্রমণ করে এসে এখানে আটকে গেলে সবদিক থেকেই ক্ষতি হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

ট্রেন থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ হয়। উনিও একই বাসে ট্রমসো শহরের দিকে যাবেন। নারভিক স্টেশনে এসে থামার পর আমি ট্রেন থেকে নেমে ওনার ব্যাগ নামাতে সহায়তা করি। এরপর কেন জানি না ওনাকে গুডবাই সি ইউ জানিয়ে দৌড় না দিয়ে বরং ওনার সঙ্গেই কথা বলতে বলতে আস্তে–ধীরে হেঁটে স্টেশন থেকে বের হয়ে বাসস্টপের দিকে রওনা হই এবং মিনিট সাতেকের মধ্যেই বড় রাস্তার পাশে বাসস্টপে গিয়ে পৌঁছাই। আমাদের সামনে তখন মাত্র তিনজন যাত্রী দাঁড়িয়ে। বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় অবশ্য মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল, বাসে সিট পাব তো? কিছুক্ষণ পর ১০০ নম্বরের দোতলা বাস এসে সামনে দাঁড়ায়, অন্য সবার মতো ড্রাইভারের সহায়তায় আমিও লাগেজ কম্পার্টমেন্টে লাগেজ রেখে এবং ব্যাংক কার্ড দিয়ে ড্রাইভারের কাছ থেকে ট্রমসো যাওয়ার টিকিট নিই। এরপর বাসের দোতলায় গিয়ে সামনের দিকের একটা খালি সিট পেয়ে বসে পড়ি। আপাতত নিশ্চিন্ত। উত্তর নরওয়ের বিশুদ্ধ প্রকৃতি দেখতে দেখতে সাড়ে চার ঘণ্টা পরই ট্রমসো শহরে পৌঁছানো যাবে। ওখান থেকেই পরদিন আইসল্যান্ড ওরফে নাইসল্যান্ড যাওয়ার জাহাজে উঠব।

ট্রমসো শহরের পুরনো বাড়ি
ট্রমসো শহরের পুরনো বাড়ি

অনেক বছর ধরে আমি নিজেই অনলাইনে হোটেল বুক করি। আমি যে পোর্টাল ব্যবহার করি, তারাও আমাকে ‘জিনিয়াস’ ট্যাগ করে দিয়ে হোটেলভাড়ায় বাড়তি কিছু ছাড় দেয়। যদিও একবার এক হোটেল মালিকের সঙ্গে আলাপ করে বুঝেছি যে আমাকে এই বাড়তি ছাড় দেওয়ার পরও পোর্টালটির কমিশন খুব একটা কম থাকে না। কোথাও বেড়াতে গেলে আমি সব সময় হোটেলেই উঠি। তবে অতীতে বিভিন্ন সময় মোট তিনবার স্টুডেন্ট ডরমিটরি ও দুবার হোস্টেলেও উঠেছিলাম। তবে এখনপর্যন্ত এয়ার বিঅ্যান্ডবি ভাড়া করিনি। যাহোক, ট্রমসোয় আগে থেকেই রাতে থাকার ব্যবস্থা করা ছিল। মাত্র একজনের এক রাতের ঘুমের জন্য বলেই এবার হোটেল না নিয়ে হোস্টেল নিয়েছি। কেননা, এতে ভাড়া বেশ কম পড়ে। এখানে মোটামুটি মানের হোটেলে থাকতেও এক রাতের জন্য বিশাল অঙ্কের ভাড়া গুনতে হয়। গতবার ট্রমসো ঘুরতে এসে বেশ কয়েক রাতের জন্য আরামদায়ক একটা হোটেলে উঠেছিলাম, আর সেই হোটেলের ভাড়া বাবদ বিশাল অঙ্কের টাকা দেওয়ার ‘সুখস্মৃতি’ এখনো আমার পরিষ্কার মনে আছে! আর এবার তো একটানা ২৪ ঘণ্টার ওপর জার্নি করে আমার অবস্থা যেখানে রাত, সেখানেই কাত। হোটেল রুমের আয়তন, বেডের সাইজ কিং, কুইন, নাকি সিঙ্গেল, ম্যাট্রেস কেমন, বালিশ কয়টা, কম্বল নরম ও গরম কি না, রুম থেকে বাইরের ভিউ কেমন দেখা যায়, টয়লেট ও শাওয়ারের কী অবস্থা—এত চিন্তা করার সুযোগই এবার নেই।

এখানে বলে রাখা ভালো, ইউরোপজুড়েই হোস্টেল বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী অথবা যারা কম পয়সায় শহরের কেন্দ্রস্থলে থাকতে চায় তাদের জন্য; যদিও অপরিচিত মানুষের সঙ্গে রুম, টয়লেট, শাওয়ার ইত্যাদি শেয়ার করাটা অনেকের পছন্দ না–ও হতে পারে। প্রথমবার যখন হোস্টেলে উঠেছিলাম, তখন আমারও এ রকম সমস্যা হয়েছিল, তবে এবার নিয়ে মোট তিনবার হোস্টেলে উঠছি বলে এ নিয়ে এখন আমার তেমন ছুতমার্গ অবশিষ্ট নেই। হোস্টেলের অনেক কিছু আমার ভালো না লাগলেও কয়েকটা জিনিস আবার বেশ ভালো লাগে। এই যেমন কিচেন, যেখানে নিজের পছন্দমতো খাবার বাইরে থেকে এনে গরম করে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়, ইচ্ছেমতো চা বা কফি তৈরি করা যায়, লিভিং রুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়, বুকশেলফ থেকে বই নিয়ে পড়া যায়, ডাইনিং রুমে বসে খাওয়ার সময় আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি।

বিখ্যাত নরওয়েজিয়ান পোলার এক্সপ্লোরার রোলান্ড আমুন্ডসেনের মূর্তি
বিখ্যাত নরওয়েজিয়ান পোলার এক্সপ্লোরার রোলান্ড আমুন্ডসেনের মূর্তি

এসব হোস্টেলের কিছু সাধারণ নিয়মকানুন অর্থাৎ কোড অব কনডাক্ট আমার বেশ ভালো লাগে। এই যেমন রাতের বেলায় রুমে লাইট না জ্বালিয়ে রাখা, মোবাইলে কথা বলা, আড্ডা দেওয়া অথবা অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে, এমন কিছু না করাটা সবাই মেনে চলে। হোস্টেলের কিচেনে রান্না করে ডাইনিংয়ে বসে খাওয়া যায় ঠিকই, তবে রান্না ও খাওয়ার পর নিজের ব্যবহার করা তৈজসপত্র, এই যেমন প্যান, প্লেট, গ্লাস, চামচ সব নিজেকেই ধুয়েমুছে যেমন ছিল তেমন করে রেখে দিয়ে হয়। অর্থাৎ তুমি যেমনভাবে পেয়েছ, ঠিক সেভাবেই পরের জনের জন্য রেখে দিতে হবে।

ট্রমসোয় আগেও এসেছি বলে শহরের অনেক কিছুই আমার পরিচিত। ওখানে পৌঁছে মূল বাসস্ট্যান্ডে নেমে গুগল ম্যাপ দেখে হেঁটেই শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সেই হোস্টেলে যাই। এটা পুরোনো টাইপের, কিন্তু এখানকার ঐতিহ্য কাঠের দোতলা বাড়ি। হোস্টেল থেকে আমাকে আগেই ই–মেইল করে জানিয়েছিল যে হোস্টেলে কোনো রিসেপশন নেই। এ ছাড়া আমি যখন পৌঁছাব, তখন এদের কোনো লোক ওখানে থাকবে না। সুতরাং রুম নম্বর, ভেতরে ঢোকার পিনকোড, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, নিয়মকানুন ইত্যাদি সব তথ্যই আমার কাছে ছিল।

ট্রমসো ব্রিজ থেকে দেখা শহর
ট্রমসো ব্রিজ থেকে দেখা শহর

২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় হলো প্রপার কোনো মিল খাওয়া হয়নি। তাই হোস্টেলে ঢুকেই গরম পানিতে গোসল করে নিয়ে রাতের খাবারের জন্য বের হলাম। আশপাশে অনেক রেস্টুরেন্ট দেখলাম, তবে এখানকার সবচেয়ে বড় একটা চেইন গ্রোসারিতে ঢুকে সকালের জন্য একটা আপেল, কমলা, কলা এবং এক প্যাকেট বিস্কুট নিলাম। এরপর রাতের খাবারের জন্য এদের তৈরি গরম খাবারের শেলফ থেকে প্যান কেক, চিকেন বাটার মাসালা এবং নরওয়েজিয়ান স্যামন ফিশ কেক কিনে বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে হোস্টেলে ফিরে খেয়ে নিলাম। এরপর লিভিং রুমে বসে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে হাই হ্যালো করে এবং কিছুক্ষণ কিছুক্ষণ টিভি দেখার পর বিছানায় গিয়ে ঘুম দিলাম। আমি ছিলাম ক্লান্ত, বিছানা ছিল চমৎকার, অতএব এক ঘুমেই রাত্রি পার!

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে বিশাল মগে সঙ্গে থাকা দার্জিলিং টি নিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে বসলাম। তখন ওখানে আরও কয়েকজন ব্রেকফাস্ট করছিল। তাদের সঙ্গেও পরিচিত হলাম এবং একটা পিরিচে সুইডেন থেকে নিয়ে আসা ড্রাই ক্রানবেরি ও বাদাম অফার করলাম। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনাও বেশ জমে উঠল। তাদেরই একজন নেদারল্যান্ডস থেকে ঘুরতে আসা বছর পঁচিশের যুবক জেনস। ছেলেটা এখানে এসেছে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে। সে আগেও কয়েকটা ম্যারাথনে অংশ নিয়েছে, তবে এবার পাহাড়ি জায়গা এবং ইনজুরির কারণে নার্ভাস বোধ করছে। কত সময়ের ভেতরে শেষ করতে পারবে—এ নিয়ে কোনো টেনশন নেই, তবে ম্যারাথন সম্পূর্ণ করতে পারাটাই তার একমাত্র টার্গেট।

অনেকে করে পর্বতারোহণ আর লেখক করলেন পাথরোহণ
অনেকে করে পর্বতারোহণ আর লেখক করলেন পাথরোহণ

এখানে আসার পরে সে অনলাইনে পুরোনো একটা বাইসাইকেল কিনেছে। ম্যারাথন শেষ হওয়ার একদিন পরেই সেই সাইকেল নিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য বের হবে। কোনো ভ্রমণপরিকল্পনা নেই, যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই চলে যাবে। পাহাড়ে, বনে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে আর প্রকৃতি দেখবে। এরপর সাইকেলটা এখানে রেখে অথবা কেউ কিনতে চাইলে বিক্রি করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাবে। ছেলেটার মিউজিকের শখ এবং অদ্ভুতভাবে গিটার বাজায়। অনলাইনে তার কিছু মিউজিক ভিডিও দেখলাম। আফসোস যে আমরা শুধু মুখেই বলে যা–ই দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাব, আর এরা মুখে কিছু না বলেও দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যায়!

পরিচয় হলো আর্জেন্টিনা থেকে আসা আলেক্সের সঙ্গে। আর্জেন্টিনার মানুষ হলেও দীর্ঘদিন প্যারিস এয়ারপোর্টে চাকরি করার সুবাদে ফ্রান্সের নাগরিকত্বও পেয়েছে। চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করে এখন বছরের অর্ধেক সময় নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় থাকে আর বাকি সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ায়। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে সে একবার ট্রানজিটে ঢাকায় গিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য বেবিট্যাক্সি নিয়ে সংসদ ভবনসহ আরও কিছু জায়গা ঘোরার অভিজ্ঞতার কথাও জানাল। বয়স সত্তরের আশপাশে হলেও সে ভ্রমণে ওস্তাদ লোক। সে একই জাহাজে আইসল্যান্ড যাচ্ছে শুনে একসঙ্গেই হোস্টেল থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করলাম। পরবর্তী সময়ে অবশ্য জাহাজে আলেক্সসহ আমাদের কয়েকজনের একটা ট্রাভেলার গ্রুপ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় একসঙ্গেই ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ায় খুব কম দেশই আছে, যেখানে সে যায়নি, আর তার ভ্রমণপদ্ধতিও আমার কাছে একটু অন্য রকম বলে মনে হয়েছে।

ট্রমসো শহরের পুরনো বাড়ি এবং কার্নিশে সিগ্যালের সাময়িক বাসস্থান
ট্রমসো শহরের পুরনো বাড়ি এবং কার্নিশে সিগ্যালের সাময়িক বাসস্থান

এরপর পরিচয় হলো স্পেন থেকে আসা পিটার ওরফে পেড্রোর সঙ্গে। পেড্রো স্পেনের ভূমধ্যসাগরের পারে এক ছোট শহরে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে। ইউরোপের অনেকেই আবহাওয়া, সমুদ্রসৈকত, খাবার, খরচ ইত্যাদি সুবিধার কারণে স্পেনের এ রকম শহরগুলোয় অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা হলিডেহোম কিনে রাখে। বিশেষ করে অবসরের পরে বছরের বেশ কয়েক মাস ওখানে থাকে। পেড্রো এ ধরনের রিয়েল এস্টেট বিক্রি করে, আবার নিজেই এগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং মালিকের পক্ষ থেকে অন্যদের সপ্তাহ বা মাসভিত্তিক ভাড়া দেয়। সেলসের লোকজন এমনিতেই একটু এক্সট্রোভার্ট হয়। এর ওপর পেড্রোর আবার স্প্যানিশ ব্লাড, অর্থাৎ কথাবার্তায় বেশ চালু, মনমেজাজে বিন্দাস, মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই জমে যায় ইত্যাদিসহ অনেক গুণ তার। সঙ্গে অবশ্য কয়েকটা ‘দোষ’ও পরে পেয়েছি, এই যেমন হুজুগে চলা। পেড্রোর বয়স আমার মতোই এবং একাই ঘুরতে এসেছে। পরে জাহাজে অবশ্য তার সঙ্গে দারুণ খাতির হয়েছিল।

যাহোক, সকাল আটটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত ওখানে বসেই আড্ডা দেওয়া হলো। এরপর রেডি হয়ে আমি আর আলেক্স একসঙ্গেই হোস্টেল থেকে বের হয়ে জাহাজঘাটায় যাওয়ার জন্য কাছের বাসস্টপে যাই। উত্তর নরওয়ের একটি শহর ট্রমসো, আয়তনে ২১ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। তবে গরমের সময় এ রকম শহরে এমনিতেই অনেক ট্যুরিস্ট আসে, আবার ম্যারাথনের মতো বড় ইভেন্ট এবং বড় কোনো জাহাজের এম্বারকেশন মানেই কয়েক হাজার বাড়তি লোক শহরে ঘোরাঘুরি করে, যা স্বাভাবিকভাবেই লোকাল ট্রান্সপোর্ট, দর্শনীয় স্থান বা দোকানপাটে চাপ সৃষ্টি করে। আমরা বাসে ওঠার লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এক ফাঁকে আমি মাথা গুনে দেখি, লাইনে আমাদের আগে ৩০ জনের মতো লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের প্রায় সবাই জাহাজের যাত্রী এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা, অর্থাৎ ভিনদেশি।

ট্রমসো শহরের নতুন গির্জা
ট্রমসো শহরের নতুন গির্জা

সবার সঙ্গেই ছোট–বড় লাগেজ আছে। বাসস্টপেজটা যেহেতু শহরের মাঝখানে, তাই ভিড় থাকলে এখান থেকে বাসে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে আমার মনে সন্দেহ ছিল। বাস আসার পর সেটাই সত্যি হলো। বাস আগে থেকে ভর্তি, অনেক যাত্রী ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। বাসের দরজা খোলার পরেই দেখি, বাসের সামনের গেটের কাছে লাইন ঠিক আছে, তবে মাঝের গেট এবং পেছনের গেটের কাছাকাছি যারা ছিল, তারা সবাই লাইন ভেঙে যে যার মতো ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমার পেছনে দাঁড়ানো আলেক্স আমাকে চলো উঠে পড়ো বলেই পেছনের গেট দিয়ে ঠেলেঠুলে কোনোরকমে তার ছোট ট্রলিব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকে আমাকে ইশারায় বাসে উঠতে বলল।

কিন্তু আমি বাসে উঠব কী করে? একে তো লাগেজ নিয়ে ঢোকার জায়গা নেই, তার ওপর আবার টিকিটও কাটা হয়নি। ভেবেছিলাম বাসে উঠে ড্রাইভারের কাছ থেকেই টিকিট কিনব। এখন কোনোরকমে ঠেলেঠুলে লাগেজ নিয়ে বাসে উঠতে পারলেও ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে ড্রাইভারের কাছ থেকে টিকিট নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে না, তাই ভাবছিলাম কী করা উচিত? আর আমাকে এই ভাবনার মধ্যে রেখেই ইতিমধ্যে বাস চোখের সামনে দিয়েই চলে গেল। আমি বাসের জানালা দিয়ে আলেক্সের হাত নাড়া দেখলাম। আমার সম্পর্কে সে কী ভেবেছে জানি না; তবে অনেক বছর ঢাকায় বসবাস করেও এভাবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভিড়ের জন্য উঠতে না পারাটা যে লজ্জার, সেটা ঠিকই বুঝলাম। তবে সান্ত্বনা এটাই যে বহুদিন অব্যবহৃত থাকলে ধারালো ছুরিতেও জং পড়ে যায়, আর আমি তো সামান্য মানুষ, তার ওপর অনেক দিন ঠেলাঠেলি করে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ওঠার প্র্যাকটিস নেই!

বাসগুলো পথে এসব জায়গাতেই সাময়িক বিরতি দেয়
বাসগুলো পথে এসব জায়গাতেই সাময়িক বিরতি দেয়

সাপ্তাহিক ছুটির দিন সেদিন রাস্তায় বাসের চলাচল কম ছিল। এই রুটের পরের বাস আসবে আধা ঘণ্টা পর। তবে আমার লাভের লাভ এটাই যে আমি এখন নতুন লাইনের একেবারে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে। আমার সামনে একই পরিবারের কয়েকজন ছিল, যারা কিছুক্ষণ পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে লাইন ছেড়ে চলে গেল। এখন আমিই হলাম লাইনের প্রথম ব্যক্তি, অর্থাৎ পরের বাসে যাওয়াটা আমার নিশ্চিত। ট্রলি ব্যাগটা লাইনে রেখে আমি আশপাশের দু-একজনের সঙ্গে হালকা কথাবার্তা শুরু করলাম। এরই মধ্যে এশিয়ানদের মতো দেখতে একজন আমার দিকে এগিয়ে এসে নিজের পরিচর দিল। চার্লি ওর নাম, এসেছে আমেরিকা থেকে। এখান থেকে সে–ও জাহাজে উঠবে আইসল্যান্ড যাওয়ার জন্য। ওখান থেকেই আবার যুক্তরাষ্ট্র ফেরত যাবে। আমি বাংলাদেশি শুনে জানাল যে সে–ও আদতে ফিলিপিনো, তবে অনেক বছর হলো যুক্তরাষ্ট্রে আছে। ওখানে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং নিজেরও কিসের একটা ব্যবসা আছে। এখন সবকিছু বন্ধ এবং বিক্রি করে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

জাহাজঘাটায় প্রতীক্ষায় লেখক
জাহাজঘাটায় প্রতীক্ষায় লেখক

আমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর সে পেছন থেকে ওয়াইফকে ডেকে এনে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রমহিলা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন তবে সম্প্রতি রিটায়ার্ড করেছেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে, আর মেয়ে আপাতত হাউস ওয়াইফ হলেও আমেরিকান জামাই ওখানকার হাসপাতালের ডাক্তার। পরবর্তী সময়ে অবশ্য জাহাজেও চার্লির সঙ্গে কিছুটা খাতির হয়েছিল আর তার ওয়াইফ পায়ের সমস্যার কারণে বেশি হাঁটাহাঁটি করতে পারে না বলে সে–ও ঘোরাঘুরির জন্য আমাদের সঙ্গেই চলাফেরা করত। পরে অবশ্য জেনেছি যে চার্লির আসল নাম কার্লোস। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সে নিজের নাম পরিবর্তন করেছে; কারণ তার মতে সে একজন মজার মানুষ বলে চার্লি নামটাই তার পক্ষে মানানসই। আমার কাছেও চার্লিকে বেশ হাসিখুশি এবং রসিক বলেই মনে হয়েছে, তবে তার জোকসগুলো বিশেষ করে আদি রসাত্মকগুলোর ব্যাপারে সাবধানে থাকতে হতো, কেননা তার স্থানকালপাত্রবোধ একটু কম ছিল।

কথাবার্তা বলতে বলতেই পরের বাস এসে গেল। এটাতেও ভিড়, তবে লাইনের প্রথম বলে আমার উঠতে এবার কোনো সমস্যা হয়নি। বাসে উঠেই ড্রাইভারের কাছে টিকিট চাইলাম এবং মানিব্যাগ থেকে ব্যাংক কার্ড বের করলাম। ড্রাইভার জানাল যে এখানে ব্যাংক কার্ড চলবে না। অনলাইনে টিকিট কাটতে হয় অথবা নগদ টাকা দিতে টিকিট নিতে হয়। কী বিপদ, আমি এখন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার অর্থাৎ স্থানীয় টাকা কোথায় পাব। এদিকে আমার পেছনেও যাত্রীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কেননা আমি ভেতরে না গেলে তারাও বাসে উঠতে পারছে না। ড্রাইভার নিজেই সমাধান দিল এই বলে যে তুমি ভেতরে যাও এবং অ্যাপের মাধ্যমে কিনে নাও। আমিও তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম যে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করব। সৌভাগ্যক্রমে সামনের দিকেই দাঁড়ানোর জায়গা পেলাম এবং মুঠোফোনে এদের লোকাল ট্রান্সপোর্টের অ্যাপ ডাউনলোড করে কয়েকবারের চেষ্টায় একটা টিকিট কেটে ফেললাম। এরপর ভিড় ঠেলেঠুলে আবার সামনে গিয়ে ড্রাইভারকে জানিয়ে দিলাম যে টিকিট কিনেছি। অবশ্য কয়েক মিনিট পরেই বাস জাহাজঘাটায় এসে যায় এবং পুরো বাসই প্রায় খালি হয়ে যায়; যদিও এটাই বাসের শেষ স্টপেজ ছিল না।

নরওয়েজিয়ান বিখ্যাত কোস্ট লাইনার হুরতিগ্রুতেনের একটা জাহাজ
নরওয়েজিয়ান বিখ্যাত কোস্ট লাইনার হুরতিগ্রুতেনের একটা জাহাজ

কথায় বলে বড় বানরের লেজ বড়ই হয়। ক্রুজ শিপের বেলায়ও সেটাই হলো। আড়াই থেকে তিন হাজার যাত্রীর সঙ্গে দেড় থেকে দুই হাজার জাহাজের ক্রু মেম্বার, অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ হাজার লোকের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। একটা প্লেনে দু–এক শ লোক তুলতে যে রকম আয়োজন করতে হয়, এখানেও সে রকমই আয়োজন, তবে বড় স্কেলে। প্রথমে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট দেখিয়ে লাগেজ জমা দিতে হয়, যা তারা নিজ দায়িত্বে সন্ধ্যার আগে প্রত্যেক যাত্রীর রুমের দরজার ঠিক বাইরে পৌঁছে দেয়। এরপর কাউন্টারে গিয়ে টিকিট, পাসপোর্ট, ভিসা (যদি প্রযোজ্য হয়) দেখিয়ে রুমের কার্ড নিতে হয়। তারপর কাস্টমস (যদি প্রযোজ্য হয়) পার হয়ে, সিকিউরিটি চেক করিয়ে, ফরম পূরণ করে, ছবি তুলে তারপর রুমে যাওয়া যায়। যাত্রীদের জন্য জাহাজের প্রতিটি রুমই স্ট্যান্ডার্ড হোটেল রুমের মতো, অর্থাৎ এতে পরিপাটি বিছানা, বালিশ, ওয়ার্ডরোব, বেসিন, টয়লেট, শাওয়ার, টিভি, টেম্পারেচার কন্ট্রোল—সবই আছে। তবে টিকিটের দামের পার্থক্য হয় মূলত রুমের টাইপ এবং বিভিন্ন প্যাকেজের সুযোগ-সুবিধার কারণে। ঠিকমতো সবকিছু করেই আমি জাহাজে উঠলাম। আমার রুম নয়তলায়। যদিও এখন রুমে গিয়ে কোনো লাভ নেই; কারণ লাগেজ আসবে সন্ধ্যায়। তারপরও পিঠের ছোট ব্যাগটা রুমে গিয়ে রেখে এলাম। এরপর ১২ তলায় বুফে রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটু দেরিতে হলেও দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। বুফেতে বিভিন্ন দেশের রান্নার স্টাইলে কয়েক পদের মাছ, মাংস, সবজি, সালাদ, রুটি, রাইস, পিৎজা, পাস্তা, ফলফলাদি, মিষ্টি, আইসক্রিম, জুস, চা, কফি—সবই তৈরি ছিল। বাকি শুধু প্লেটে উঠিয়ে নিয়ে একটু কষ্ট করে খাওয়া!

আমি খাবার নিয়ে বসেছি, তখনই দেখি অ্যালেক্স কোথা থেকে উদয় হয়ে হাসিমুখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তার হাতে একটা কফির কাপ, অর্থাৎ খাওয়া শেষ। আমার টেবিলের অপর পাশের একটা চেয়ারে বসে আমি কখন ও কীভাবে পৌঁছেছি, এ নিয়ে কথা হলো। এরপর সে জানাল, জাহাজ থেকে নেমে কয়েক মিনিট হেঁটে গেলেই নাকি একটা বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে। সে একবার ওখানে যাবে আর আমি চাইলেও ঘুরে আসতে পারি। এরপর সে চলে যায়, আমিও হালকার ওপর কিছু খেয়ে চা নিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকি। ভাবলাম হাতে যেহেতু ঘণ্টা দুয়েক সময় এখনো আছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনটা একটু দেখেই আসি। আমার এম্বারকেশন তো হয়ে গেছে, এখন জাহাজে থেকে নামা–ওঠা অনেক সহজ ব্যাপার।

বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ফেয়ার পথে জাহাজের সঙ্গে একটা সেলফি
বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ফেয়ার পথে জাহাজের সঙ্গে একটা সেলফি

ট্রমসো শহরে আর্কটিক ইউনিভার্সিটি অব নরওয়ে নামের একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যা পৃথিবীর সর্বোত্তরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। এর পাশেই সেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। জাহাজ থেকে নেমে মিনিট সাতেক হাঁটার পরেই সাইন অনুসরণ করে আর্কটিক-আলপাইন বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে পৌঁছাই। খুব বড় জায়গাজুড়ে নয় ঠিকই, তবে খুবই সুন্দর আর অন্য রকম। পাহাড় বা টিলার মতো জায়গায় জুমচাষের মতো ধাপে ধাপে বিভিন্ন ফুল ও গাছের বাগান করা আছে, মাঝবরাবর হাঁটার জন্য পাথরের রাস্তা বা সিঁড়ি। বেশ কয়েক জায়গায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পাহাড় থেকে তুলে আনা পাথরের স্যাম্পল ঢিবি করে রাখা। সঙ্গেই ছোট ছোট বোর্ডে এগুলোর নাম লেখা। হিমালয়, আল্পস, আন্দিজ, রকিসহ ছোট–বড় অনেক পাহাড়–পর্বতের পাথরই এখানে আছে। আমার এক জীবনে যেহেতু সব পাহাড়ে ওঠা সম্ভব হবে না, তাই ওই সব টিবির ওপর বসেই পাহাড়ে চড়ার শখ মিটিয়ে নিলাম। সাত সাগর পাড়ি দিয়েছি, এবার কুড়ির বেশি পাহাড়ের ওপরেও ওঠা হলো! এ সময় মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এসেছিল যে হাতুড়ি–বাটালি এনে এদের স্যাম্পল থেকে কিছু স্যাম্পল নিজের বাসায় সাজিয়ে রাখার জন্য নিয়ে গেলে কেমন হয়? অথবা দেশি কায়দায় নিজের নামটা অন্তত পাথরে লিখে দেওয়া যায়। পরে ভাবলাম, যস্মিন দেশে যদাচার, অর্থাৎ সভ্য জায়গায় এসে সভ্য আচরণ করাই উচিত। তাই ভালো মানুষের মতো শুধু ছবি তুলেই ক্ষান্ত দিলাম। জাহাজে ফেরার পথে অবশ্য মুঠোফোনে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কথায়, নচিকেতা ঘোষের সুরে মান্নাদের গলায় সেই পুরোনো বাংলা গানটা শুনে নিলাম—‘যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।’ (চলবে)

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন