বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। কিগালিতে এসেছি দুদিন আগে। রুয়ান্ডায় আসার আগে একটিমাত্র জায়গায় যাওয়ার জন্য অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। নিয়ানযা নামক স্থানে রাজার প্রাসাদে যাব। বৃষ্টির মধ্যেই কিগালি থেকে রওনা দিলাম। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এমন জিনিস দেখলাম, যা রুয়ান্ডায় আগে দেখিনি—প্রচুর মানুষ। কিগালি শহরে ঘোরাফেরা করার সময় তো মানুষই দেখিনি। পাহাড়ের ওপর বাড়িঘর, পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা চলে যাচ্ছে। একবার চড়াই, আরেকবার উৎরাই, কিন্তু কোনো মানুষের দেখা নেই। ছোট একটা দেশ, জনসংখ্যায় এত ছোট তা কে জানত!
পাহাড়, মেঘ, বারিধারা—বাসের জানালা ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে, ছুটে যাচ্ছে কোনো এক দূরের দেশে। ওই দেশে মেঘ পাহারা দেয়, ওই দেশে মাঘ মাসে মেঘ জমে, মেঘ ঝরায়। ওই দূরের পাহাড়ের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে, জল ঝরায়।
নিয়ানযা একটা ছোট্ট মফস্সল শহর। রাজার প্রাসাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও বেশ খানিকটা ভেতরে, গ্রামের দিকে। পথের দুপাশে সোনালুগাছের সারি। ফুল ফুটে, ফুল ঝরে হলুদ করে দিয়েছে পুরো পথটা। বৃষ্টিও ফুলের এই ফুটে ওঠা থামাতে পারেনি।
রাজার প্রাসাদে প্রবেশ করার সময় টিকিটঘর থেকেই একজন গাইড দিয়ে দেয়। আমার গাইডের নাম জর্জ। সাদা লুঙ্গি, সাদা শার্ট আর সাদা একটা চাদরের মতো কাপড় কাঁধের ওপর আড়াআড়ি করে পরে আছেন তিনি। বিশাল লম্বা। জর্জ বললেন, তিনি যে পোশাক পরে আছেন, তা–ই একসময় ছিল রাজাদের পোশাক। কাপড়ের বদলে তাঁরা ব্যবহার করতেন পশুর চামড়া। শার্ট পরতেন না। শুধু দুই খণ্ড কাপড়ে আবৃত থাকত তাঁদের শরীর। নারীদের পোশাকও ছিল একই রকম।
আমি আর জর্জ রাজার প্রাসাদের দিকে হাঁটতে থাকলাম। লাল মাটির ওপর সারি সারি কঞ্চির বেড়ার সামনে এসে জর্জ থামলেন। বললেন, এ–ই হলো রাজার প্রাসাদের বাউন্ডারি। বলে কী! বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রাসাদের দেয়াল! তখনকার আমলে রাজার সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে হলে এই দেয়াল বা বেড়ার প্রবেশপথের সামনে দাঁড়িয়ে পূর্বের সাতপুরুষের নাম বলতে হতো।
যদি রাজা মনে করতেন, পূর্বপুরুষেরা রাজার শত্রু নন, তাহলে সাক্ষাৎপ্রার্থী বেড়ার অভ্যন্তরে প্রবেশের উপযুক্ত। বেড়া পার হয়ে সামনে একটুকরো আঙিনা। আঙিনার সামনে ছোট্ট একটা গোলাকার কুঁড়েঘর। বাঁশের বেড়া দেওয়া একটি অতি সাধারণ ছনের ঘর। অবশ্য চালে ছনের বদলে এ দেশীয় একধরনের চিকন পাতা ব্যবহার করা হয়েছে। দেখতে ছনের মতোই। এখানে নাকি রুয়ান্ডার রাজা বসবাস করতেন ১৯৫৯ সাল অবধি। অনিন্দ্যসুন্দর পাহাড় আর সবুজের ছড়াছড়িতে সমৃদ্ধ একটি দেশের অতি সাধারণ রাজার প্রাসাদ বাইরে থেকে দেখতে একজন সাধারণ মানুষের ছনের ঘরের মতো।
বংশপরম্পরায় এই ছোট্ট কুটির ছিল ষোড়শ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি অবধি রাজার আবাসস্থল। রুয়ান্ডার প্রথম রাজা ছিলেন গিহাঙ্গা গোমা ইজানা।
বেলজিয়াম রুয়ান্ডা অধিগ্রহণের সময় মানে ১৯৫৯ সালে রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন রাজা রুদাহিংগওয়া। রাজা রুদাহিংগওয়া এই কুটিরেই বসবাস করতেন। এরপর অবশ্য তাঁর ভাই কিগালি রাজ্য শাসনের চেষ্টা করেছিলেন বছর দুয়েক। কিন্তু বেলজিয়ান সরকারের অধিগ্রহণের কারণে তাঁকে রাজ্যহারা হতে হয়। ১৯৬১ সালে অনেক চেষ্টা করেও রাজ্য ফিরে না পেয়ে পরে তিনি আমেরিকায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। দুই বছরের রাজ্য শাসনের অবসান হয় রাজা কিগালির। অবশ্য রাজা কিগালি তাঁর পূর্বপুরুষদের মতো ছনের ঘরে থাকতেন না বা ঐতিহ্যবাহী পোশাক গুসাবা পরিধান করতেন না। তিনি থাকতেন সেই ছনের ঘরের অদূরে একটি পাকা ভবনে, পরিধান করতেন সাধারণ মানুষের মতো শার্ট–প্যান্ট। ২০১৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাঁর মৃতদেহ রুয়ান্ডায় এনে সমাহিত করা হয়।
আঙিনার যেখান থেকে কুঁড়েঘর শুরু হয়েছে, সে জায়গার সামনে ক্ষুদ্র একটি গোলাকার বারান্দা আছে। সেখানে বসে রাজা রাজকার্য পরিচালনা করতেন। রাজ্য শাসনের জন্য রাজার কোনো সিংহাসন ছিল না। একটা কাঠের নিচু টুলে বসে রাজ্যের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। গ্রামের আর দশটা ঘরের মতোই ছিল রাজার ঘর। ঘরের ভেতর প্রথমে একটি লিভিং রুম বা বসার ঘর। বসার ঘরের দরজায় একজন প্রহরী থাকতেন। তাঁর হাতে থাকত বল্লম এবং কোমরে গোঁজা থাকত ছোরা। আত্মরক্ষার অস্ত্র বলতে এটুকুই।
বসার ঘরের মাঝখানে একটা ছোট পাত্রে জ্বলন্ত কয়লা রাখা হতো ঘর গরম রাখার জন্য। রুয়ান্ডায় প্রায়দিনই রাতে ঠান্ডা পড়ে। বসার ঘরের এককোনায় বাঁশের চিক দিয়ে ঘেরা রাজার বেডরুম বা শোবার ঘর। শোবার ঘরের দেয়াল হিসেবে দাঁড় করানো আছে কয়েকটি নকশাদার শীতলপাটি। শোবার ঘরে একটি কিংসাইজ বিছানা। সেখানে বিছানো আছে গাছের বাকল দিয়ে তৈরি কাপড় বা স্থানীয় ভাষায় ইমপুযুর চাদর। রুয়ান্ডা বা উগান্ডায় ফাইকাস নাটালেনসিস বা ফিগ গাছের বাকল দিয়ে একধরনের কাপড় তৈরি হয়, যা এ দেশের ঐতিহ্য। এই কাপড় বোনা হয় না। গাছের বাকলকে পিটিয়ে পাতলা করে তারপর কাপড়ের মতো করে নেওয়া হয়। এখনো এই কাপড় দিয়ে তৈরি করা ব্যাগ বা ওয়াল হ্যাঙ্গিং কারুশিল্পের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। রাজার আমলেও বিছানায় ইমপুযু বিছানো হতো।
এই প্রাসাদ ছিল রাজা ও পাটরানির। অন্য কোনো রানি এখানে রাত কাটাতে পারতেন না। রুয়ান্ডার সামাজিক নিয়ম অনুসারে রাজা তাঁর রাজ্যের যেকোনো নারীকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে পেতে পারতেন। যেকোনো নারীর স্বামীর জন্য এটা খুব ভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে তাঁর স্ত্রীকে রাজা শয্যায় নিচ্ছেন। রাজা একাধিক বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারতেন; তবে আলাদা রানি বা নারীর জন্য আলাদা কুটিরের ব্যবস্থা করে তবেই। এটুকু জানার পর আমি জর্জকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, ‘কী বাজে নিয়ম। নারীদের কী অবমাননা! এ রকম নিয়মের কথা শুনতে আমার বিশ্রী লাগছে।’
এই কুটিরপ্রাসাদে একটি বিছানা ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই। অতি সাধারণ রাজার শোবার ব্যবস্থা ছিল সাধারণ। আর অস্ত্র বলতে ছিল একটি ছোরা আর তির-ধনুক। পৃথিবীর বহু দেশে আমি রাজা–বাদশাহর জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ দেখেছি, কঠিন নিয়মকানুন আর নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখেছি। কিন্তু এমন প্রজা–অন্তপ্রাণ সাদাসিধে, শান্তিময় রাজার প্রাসাদ কোথাও দেখিনি।
কুটিরের ভেতর কয়েকটি ঢাকনাসহ ঝুড়ি সাজিয়ে রাখা। এগুলো একসময় ব্যবহার করা হতো রাজার ফল, খাবার ইত্যাদি রাখার জন্য।
সকালে গান গেয়ে রাজার ঘুম ভাঙাতে আসত আঠারো বছরের কমবয়সী একদল কুমারী কন্যা। রাজার সিথানে এসে তারা গান গেয়ে গেয়ে রাজার ঘুম ভাঙাত।
রাজার কুটিরের পেছনে একই আদলের একটু ছোট আকারের আলাদা বেড়া দেওয়া গোয়ালিনীর কুটির। রাজার গোয়ালিনীকে হতে হতো কুমারী এবং যাঁর শরীরের কোথাও কোনো দাগ নেই। গোয়ালিনীর দায়িত্ব ছিল রাজার নিজস্ব খামারের ইনইয়াম্বো গরুর দুধ দোহন করে রাজার সামনে পরিবেশন করা। গোয়ালিনীর কুটিরে গোয়ালিনী একাই বসবাস করতেন। প্রতিটি কুটির দেখতে একই রকম। রাজার দুধ খাওয়ার পাত্র হিসেবে কাঠের গ্লাস ও শুকনা লাউয়ের খোলের পাত্র ব্যবহার করা হতো। গোয়ালিনীর কুটিরে একটি ছোট বিছানা ছিল তাঁর শোবার জন্য।
গোয়ালিনীর কুটিরের পাশে ভিন্ন বেড়া দেওয়া আরও একটি ছোট কুটির আছে। সে কুটিরে রাজার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে মদিরা তৈরি করা হতো। মদিরা তৈরির উপকরণ ছিল পাকা কলা। রুয়ান্ডা ও উগান্ডায় প্রচুর কলা উৎপাদন হয়। সে জন্য এখানকার স্থানীয় পানীয় হিসেবে পাকা কলার তৈরি মদিরার বেশ কদর। এই মদিরা রাজার জন্য রাখা হতো মাটির কলসিতে। এই সুদূর আফ্রিকায় আমাদের দেশের মতো মাটির কলসি দেখে আহ্লাদিত হলাম। মদিরা তৈরির কাজ দেওয়া হতো কোনো দক্ষ পুরুষকে। নারীকে কেন দেওয়া হতো না, এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
বাইরে তখন বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছে। প্রাসাদের আরও অনেক কিছু দেখার বাকি। মদিরাকুটিরের পেছনে রাজবাড়ির গোয়ালঘর। রাজা বা তাঁর বংশধরেরা কেউই এখানে এখন বসবাস করেন না, যেহেতু রাজবাড়িকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, তাই আগে ঘরবাড়ি বা গোয়ালঘর যেমন ছিল, সংস্কার করে তেমনই রেখে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কুটিরগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে এর ওপর নতুন কুটির গড়া হয়েছে।
গোয়ালঘরে মাথা নিচু করে একমনে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে ইনইয়াম্বো জাতের গরু। বিশালাকৃতির হৃষ্টপুষ্ট গাঢ় খয়েরি বাদামি রঙের এই গরুর ধবধবে সাদা শিং হয় আরও বড়। শিং দেখতে হাতির দাঁতের মতো। এদের পালন–পোষণের জন্য এখন আলাদা লোক আছেন। তাঁরা একটি গরু আমার সামনে নিয়ে এলেন আর সুমধুর সুরে গান গাইতে লাগলেন। গান শেষে রাজার বন্দনা করে হলো প্রার্থনা। গানের সুর ভুবন ভুলিয়ে দিল।
আমি গরুটির পাশে গিয়ে দেখলাম, এর একটি শিং লম্বায় আমার সমান। গরুটি নেহাতই শান্তশিষ্ট বলে আমি যে শিং ধরে মাপছি বা ঝাঁকানোর চেষ্টা করছি, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাল না। উল্টো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। গরুর গলায় নীল–সাদা পুঁতির মালা, মাথায় পুঁতি দিয়ে তৈরি টায়রা। আমি জর্জকে জিজ্ঞেস করলাম, রাজার গোয়ালে কয়টি গরু আছে? তিনি বললেন, গোনা নিষেধ। কী সব সংস্কার যেন আছে! আমি তাঁর কথার তোয়াক্কা না করে জোরে জোরে গোনা শুরু করলাম—ওয়ান, টু, থ্রি…
জর্জ তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, সতেরোটা গরু আছে। আমি বললাম, এই তো লাইনে এসেছ!
এরপর জর্জ আমাকে নিয়ে গেলেন পাশে রাজা কিগালির প্রাসাদে। সাদা রঙের একতলা পাকা আয়তাকার ভবনকে অবশ্য কোনোভাবেই প্রাসাদ বলা যাবে না। বাইরে থেকে দেখতে একটা সাধারণ বাড়ির মতো। ভেতরে হোটেলরুমের মতো সারি সারি কক্ষ। প্রথম কক্ষটি রাজমাতার শোবার ঘর। পরের কক্ষটি রাজার শোবার ঘর। এই প্রাসাদের ভেতর ছবি তোলা নিষেধ। আর ঘরগুলোয় কোনো আসবাবপত্রও নেই। কারণ, ১৯৯৪ সালে যখন রুয়ান্ডায় গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, তখন প্রাসাদের সব জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়। রাজা কিগালির পর বেলজিয়াম অধিগ্রহণের সময় এই প্রাসাদ সরকারি কাজে ব্যবহার করা হতো। এখন জাদুঘরের অংশ। ভেতরে আরও কয়েকটি কক্ষ বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, মদিরা সংরক্ষণের কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ভবনের ভেতরের আঙিনায় গাড়ি রাখার জায়গা। বসার আর খাবার ঘরে কিছু প্রতীকী আসবাব রাখা আছে। তবে তা আদৌ রাজা কিগালি বা বেলজিয়াম সরকারের নয়।
রাজার প্রাসাদের আশপাশে অনেক দূর অবধি কোনো মানুষের বাড়িঘর নেই। জর্জ জানালেন, খানিক দূরেই রাজা কিগালি, তাঁর পিতা ও ভাইয়ের সমাধি আছে। যেহেতু আমার রাজপ্রাসাদে ভ্রমণ শেষ, তাই আমি ইচ্ছে করলে সমাধির দিকেও যেতে পারি। এখনো বাইরে বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছে। জর্জকে বিদায় জানিয়ে আমি গ্রামের পথ ধরলাম।
পথের দুপাশে রুদ্রপলাশ আর সোনালু ফুল রঙিন হয়ে আছে। সেই সঙ্গে ছবির মতো সুন্দর ভুট্টা আর ধানের খেত। একতলা পাকা বাড়িঘর, লাল টালি দেওয়া ছাদ। পূর্ব আফ্রিকার প্রায় সব বাড়িই চারচালা আকারের আর টালি দেওয়া থাকে। হঠাৎ চলতে চলতে একটা মাটির ঘর দেখলাম। একদম আমাদের দেশের মতো। তবে টালির চাল। গাছপালায় ঘেরা জায়গাটিকে মোটেও রুয়ান্ডা বলে মনে হলো না। মনে হলো যেন আমাদের বাংলাদেশ।
পথটা এঁকেবেঁকে দূরে চলে গেছে। দূরে পাহাড় মিশে যাচ্ছে দিগন্তের সঙ্গে। পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ বাসা বেঁধেছে গাছপালা। বৃষ্টিতে সব ধুয়ে ধুয়ে আরও সতেজ হয়ে যাচ্ছে। পাখিরা সমানে কথা বলে যাচ্ছে। অঝোর বরিষণে, না জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে এই গ্রামে ছাতা মাথায় দুজন মানুষ ছাড়া আর কাউকে দেখলাম না। এ রকম অজপাড়াগাঁয়ে এত সুন্দর পাকা রাস্তা আর ফুটপাত দেখে আশ্চর্য হলাম। পুরো দেশটা ভীষণ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন। কোথাও একটুকরো কাগজ বা ময়লা পড়ে থাকতে দেখিনি।
প্রকৃতি দেখতে দেখতে এক কিলোমিটার হেঁটে ঠিক পৌঁছে গেলাম রাজার সমাধিতে। ছোট একটা লোহার গেট পেরিয়ে মূল সমাধি ভবন। ভবনের দেয়াল কাচের এবং ছাদ পাকা। ভেতরে প্রথমে রাজা কিগালির পিতা রাজা মুতারা (৩), এরপর রাজা কিগালির ভাই রাজা রুদাহিংগওয়া (যিনি রাজা কিগালির পূর্ববর্তী রাজা ছিলেন এবং যিনি কুটিরে বসবাস করা শেষ রাজা) এবং সব শেষে রাজা কিগালির সমাধি। দেখতে খুবই সাধারণ সমাধিগুলো কালো টাইলস দিয়ে বাঁধানো।
আজ বোধ হয় বৃষ্টি আর থামবে না। সমাধি ভবনের কাচের দেয়াল বেয়ে ছন্দে ছন্দে গড়িয়ে পড়ছে বৃষ্টির জল। এখানকার দ্বাররক্ষীর আদতে সারা দিন কিছু করার থাকে না। অনেকেই রাজার প্রাসাদ দেখতে যান, কিন্তু সমাধির দিকে কেউ ফিরেও তাকান না। দ্বাররক্ষী ছেলেটি তাই নিজমনে গান ধরেন। অপার্থিব সে সুর। বর্ষার দিনে কোন দূরে চলে যাওয়ার আকুতি, যেন প্রকৃতি তার নিবেদন শুনতে পায়। সেই সুরের মৌতাতে বুঁদ হয়ে আমিও বেরিয়ে পড়ি, যেদিকে দুচোখ যায়, চলে যাওয়ার জন্য।
লেখক: সোলো ট্র্যাভেলার
ছবি: লেখক