মার্লিওনের শহরে: জাতীয় জাদুঘর থেকে জানা যায় সিঙ্গাপুরের যে ইতিহাস
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পর্ব ২
আমাদের হাতে কেবল দুটি বিকল্পই আছে। হয় অতি দ্রুত প্রতি–আক্রমণের মধ্য দিয়ে জাপানিদের কাছ থেকে হারানো জায়গাগুলো উদ্ধারের মাধ্যমে খাদ্য ও পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা, অথবা আত্মসমর্পণ। আপনাদের কী পরামর্শ।

সময়টা  ১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৯টা ৩০ মিনিট।

ফোর্ট কানিং বাংকারের দমবন্ধ হয়ে আসা ছোট্ট কক্ষটিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রশ্নটি সবার দিকে ছুড়ে দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর্থার পার্সিভাল, ব্রিটিশ কমনওয়েলথ বাহিনীর সিঙ্গাপুর অঞ্চলের কমান্ডার। এই বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে নব্বই হাজার সৈন্যসহ অগণিত সিঙ্গাপুরবাসীর ভবিষ্যৎ। আলোচনায় উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সিঙ্গাপুরের পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ট্রেলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল গর্ডন বেনেট, উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির লেফটেন্যান্ট জেনারেল লুইস হিথ ও দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্রিটিশ মেজর জেনারেল ফ্রাঙ্ক সিমন্সসহ বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

পার্সিভালের প্রশ্নে উপস্থিত ব্যক্তিরা একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকেন। সবার মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতির কথা তো তাঁদের কল্পনাতেও আসেনি। সিঙ্গাপুরের আকাশে যুদ্ধের ঘনঘটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকেই ছিল। দ্বীপ দেশটির প্রতিরক্ষায় তাই কম খরচ করেনি ব্রিটিশ সরকার। সৈকতজুড়ে দুর্গ আর বাংকার তৈরি হয়েছে, কমনওয়েলথ সৈন্যবাহিনীর বিশাল এক দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, এর বাইরে রিজার্ভ ফোর্স তো আছেই। সিঙ্গাপুরকে বলা হতো ‘প্রাচ্যের জিব্রাল্টার’, যা কিনা ভেদ করা অসম্ভব।

ডিজিটাল ক্যামেরা কিংবা মোবাইলের যুগে এইসব ক্যামেরা আজ অতীত
ডিজিটাল ক্যামেরা কিংবা মোবাইলের যুগে এইসব ক্যামেরা আজ অতীত

তাই ডিসেম্বরের ৮ তারিখ যখন সিঙ্গাপুরে প্রথম জাপানি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হয় এবং জাপানি সৈন্যদল দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সিঙ্গুরা, পাটানি আর উত্তর মালয়েশিয়ার কোটাভারু শহরে অবতরণ করে, তখনো তাঁরা এতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়নি। কারণ, সিঙ্গাপুরে আসতে হলে এই সৈন্যদলকে পাড়ি দিতে হবে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দুর্ভেদ্য জঙ্গল, যেখানে তাঁদের প্রতিরোধের জন্য ব্রিটিশ সেনাদের পাশাপাশি আছে স্থানীয় মালয়বাহিনী; কিন্তু লেফটেন্যান্ট জেনারেল তোমোয়ুকি ইয়ামাশিতার নেতৃত্বে পরিচালিত জাপানি সৈন্যদল অসাধ্য সাধন করে মাত্র দুই মাসের মধ্যেই সিঙ্গাপুরের প্রবেশদ্বার কজওয়ের (মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে বিভক্তকারী প্রণালির ওপর নির্মিত ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক) উপকণ্ঠে পৌঁছায়।

বিজ্ঞাপন

এইখানে পার্সিভাল একটা ভুল চাল দেন। তিনি ভেবেছিলেন, জাপানি সেনাদল কজওয়ে দিয়েই সিঙ্গাপুরে প্রবেশের চেষ্টা করবে। তিনি কজওয়ের একটা অংশ ভেঙে দেন এবং লুইস হিথের নেতৃত্বাধীন সৈন্যদলের শক্তিশালী অংশটিকে সেখানে অবস্থানের নির্দেশ দেন। কিন্তু ইয়ামাশিতার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে তাঁর সৈন্যরা ভাসমান নৌযানে পশ্চিম দিকের জোহর প্রণালি অতিক্রম করে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করেন। গর্ডন বেনেটের সৈন্যদল তাঁদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এবং পশ্চাদপসরণে বাধ্য হন। ১১ তারিখ জাপানি বাহিনী বুকিত তিমা অঞ্চল দখল করে এবং সেখানকার ফোর্ড ফ্যাক্টরিতে ইয়ামাশিতা তাঁর কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪ তারিখ ব্রিটিশ বাহিনী পাসির পাঞ্জাং অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণ হারায়। জাপানিরা এই সময় আলেক্সান্দ্রা মিলিটারি হাসপাতালের দখল নেয় এবং হাসপাতালের রোগী, ডাক্তার ও নার্সদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালায়। একই সঙ্গে তাঁরা সব খাবার, গোলাবারুদ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ লাইনেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। সেনাদের বাঁচাতে চাইলে ব্রিটিশ কমান্ডারদের হাতে তাই আত্মসমর্পণের কোনো বিকল্পও ছিল না।
এ কারণেই আলোচনা সভায় উপস্থিত সবাই আত্মসমর্পণের পক্ষে মত দেন।

পার্সিভালের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদলকে পাঠানো হয় ইয়ামাশিতার সঙ্গে আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নিয়ে আলোচনার জন্য। সেদিন বিকেলেই পার্সিভাল নিজে ফোর্ড ফ্যাক্টরিতে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। ৩০ হাজার সৈন্যের জাপানি বাহিনীর কাছে ৯০ হাজার সৈন্যের ব্রিটিশ বাহিনীর এই পরাজয় অপরাজেয় ব্রিটিশদের ভাবমূর্তিকে চূড়ান্তভাবে ভূলুণ্ঠিত করে। ব্রিটিশদের ইতিহাসে এটিই সব থেকে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা, যার ক্ষত এখনো তারা বয়ে বেড়াচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের জীবনীকারের বর্ণনা অনুযায়ী, চার্চিল দীর্ঘদিন পরাজয়ের এই ট্রমা থেকে বের হতে পারেননি।

টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছল ক্যাথি। একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছিল। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্রী ক্যাথি তার কারিকুলামের অংশ অনুযায়ী একটা সার্ভে করতে এসেছে সিঙ্গাপুরের জাতীয় জাদুঘরে। আর আমার তো আগে থেকেই যেকোনো দেশের জাদুঘর কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের প্রতি আগ্রহ, সেই সুবাদে এখানে ঘুরতে আসা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর আলাদা একটা গ্যালারি আছে জাদুঘরে, সেখানেই ক্যাথির সঙ্গে পরিচয়।

সিঙ্গাপুরে দেখার জায়গার অভাব নেই। ইউনিভার্সাল স্টুডিও, স্যান্তোসা দ্বীপ কিংবা অর্কিডবাগান ছেড়ে ১৫ ডলারের টিকিট কেটে কারই–বা পুরোনো ইতিহাস ঘাঁটতে জাদুঘরে আসার ইচ্ছা হয়? পুরো জাদুঘরেই তাই গুটিকয়েক আদম সন্তানের আনাগোনা। ক্যাথির সার্ভে যে খুব ভালো চলছে না, সেটার কারণ বুঝতে কষ্ট হয় না। আমাকে পেয়ে এ কারণেই সে দারুণ উৎসাহিত ছিল। মুফতে একজন গাইডের সার্ভিস পাওয়ার সুযোগ পেলে আমিওবা সেটা কেন হারাব? স্বার্থ মিলে যাওয়ায় দুজনেরই লাভ। যেটাকে রাজনীতির পরিভাষায় ‘উইন উইন সিচুয়েশন’ বলে আরকি!

সিঙ্গাপুর জাতীয় জাদুঘরের সামনে
সিঙ্গাপুর জাতীয় জাদুঘরের সামনে

জাতীয় জাদুঘরের অবস্থান স্ট্যামফোর্ড রোডে। পাশেই ফোর্ট কানিং পার্ক, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে এক চমৎকার স্মৃতিস্তম্ভ। জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৮৪৯ সালে। পুরো সিঙ্গাপুরে মোট ছয়টি সরকারি জাদুঘরের মধ্যে এটিই সব থেকে পুরোনো। ১৮৮৭ সালে বর্তমান অবস্থানে আসার আগে কয়েকবারই এর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। গম্বুজাকৃতির ছাদ টার্কিশ স্থাপত্যরীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সিঙ্গাপুরে বেশ কিছু জাদুঘর আছে, এর মধ্যে কোনোটাতে ঘুরে দর্শনার্থীরা অধিক আনন্দ পেয়ে থাকেন, কোন দর্শনীয় বিষয়টি তাঁদের চিত্তে অধিক চাঞ্চল্য ঘটায়, জাদুঘরের কর্মীদের সেবার মান উন্নয়নে দর্শনার্থীদের মতামত কী, ভবিষ্যতে তাঁরা আবার এখানে আসবেন কি না ইত্যাদি বিষয় সার্ভের অন্তর্ভুক্ত। আমাকে খুব করে ধরল চায়না টাউনের হেরিটেজ সেন্টার ঘুরে আসতে। এত জায়গা থাকতে এখানে যাওয়ার পেছনে জোরাজুরির কারণ অবশ্য স্পষ্ট হলো খানিক বাদেই। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে চীন থেকে অনেকেই সিঙ্গাপুরে অভিবাসী হয়। মূলত চায়না টাউনের হেরিটেজ সেন্টারে সেই নিদর্শনগুলো সংরক্ষিত আছে। ক্যাথি সেই অভিবাসীদেরই বংশধর, তাই জায়গাটার প্রতি তাঁর বিশেষ আবেগ কাজ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানিরা বেশ ভালোই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল সিঙ্গাপুরে। সেসবের অনেক স্থিরচিত্র এই গ্যালারিতে দেখা যায়। একটা বাংকার আর দেয়ালের ধ্বংসাবশেষের নমুনা রাখা আছে। যুদ্ধের সময় শিশুদেরও শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করত জাপানি বাহিনী। এমনই এক সাত বছর বয়সী শিশুর একটি উক্তি লেখা আছে দেয়ালে, ‘Life had to go on. Everybody just tried their best to survive and hope for better times.’

এই গ্যালারিতেই সময় বেশি দেওয়া হলো, সেটাও মূলত ক্যাথির কারণেই। অন্যান্য গ্যালারিতেও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ইতিহাসের টুকরা চিত্র বিধৃত আছে। ভারতীয়দের সংখ্যা প্রচুর এখানে। ভারতীয় চলচ্চিত্রও তাই অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক পুরোনো সিনেমার পোস্টার ঝোলানো আছে এক গ্যালারির দেয়ালে। পুরোনো বিভিন্ন মিউজিক এবং যোগাযোগের উপকরণ যেমন গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিফোন ইত্যাদি সাজানো আছে কাচের বাক্সে।

অলিম্পিকে জেতা পদক
অলিম্পিকে জেতা পদক

আরেক বাক্সে দেখা গেল সিঙ্গাপুরের প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ীর ছবি। সেই পদকটিও গ্যালারির সৌন্দর্যবর্ধন করছে। তান হোয়ে লিয়ান নামের এই ভারোত্তোলক রৌপ্য জিতেছিলেন ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর পাঁচটি অলিম্পিক পদক জিতেছে, যার মধ্যে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে জেতা স্বর্ণপদকও আছে। পদকটি দেখে না চাইলেও একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে একটিও পদক জিততে পারেনি, যা কিনা করে দেখিয়েছে ছাপ্পান্ন লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর। ফি বছর অলিম্পিকে প্রমোদভ্রমণে যায় কর্মকর্তাদের এক বিরাট বহর। ফলাফল শূন্য এবং এই নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই।

সিঙ্গাপুরের উন্নতির পেছনে এখানকার অভিবাসীদের অবদান কম নয়। সাধারণত দেখা যায় যে অভিবাসীরা নিজেদের কমিউনিটিতে একসঙ্গে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর ভালো দিক যেমন আছে, খারাপ দিকও আছে। যার ভয়াল রূপ দেখেছিল সিঙ্গাপুরের মানুষ, ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময়। সরকার সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে। যেহেতু সিঙ্গাপুরে জমির পরিমাণ কম, তাই সরকারি আবাসন গড়ে উঠেছে বহুতল সব ভবনে এবং ভবনগুলোয় সরকার নিয়ম করে দিয়েছে সব জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাই এক হয়ে বসবাস করবে। এতে করে আলাদা কোনো নৃতাত্ত্বিক কমিউনিটি গড়ে ওঠেনি। দেশের শতকরা আশি ভাগ মানুষই সরকারি আবাসনে বাস করে; তাই একটা মিশ্র কমিউনিটি গড়ে উঠেছে সেখানে। ফলে সবাই সবার প্রতি সংবেদনশীল। মানবসম্পদ উন্নয়নে সিঙ্গাপুর এ কারণেই রোল মডেল।

চৈনিক তৈজসপত্র-১
চৈনিক তৈজসপত্র-১

জাদুঘরের একটা কক্ষে চৈনিক ডিজাইনের প্রাচীন তৈজসপত্রের সমাহার চোখে পড়ল। আরেক কক্ষে দেখা মিলল বিশাল এক জাহাজের প্রতিরূপের। এমন জাহাজে করেই বণিকেরা বাণিজ্যের উদ্দেশে দিগ্‌বিদিক ছড়িয়ে পড়তেন। বাইরের প্যাসেজে ভিন্নধর্মী এক ব্যাপার দৃষ্টিগোচর হলো। সেটি হচ্ছে, সিঙ্গাপুরের বর্তমান জনমিতির বাস্তব সমস্যার চিত্র। সিঙ্গাপুর ছোট দেশ, কিন্তু সেই তুলনায় জনসংখ্যা ছিল বেশি। সেই চিত্রটা পঞ্চাশ বছরেই পাল্টে গেছে। নারীদের ফার্টিলিটি রেট ৪ দশমিক ৬৬ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ২, যা কিনা এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এই একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হিমশিম খাচ্ছে চীন, জাপান ও কোরিয়া। আরও ৩০ বছর পর দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আরও কমে যাবে, যেটা নিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই চিন্তিত। একেক দেশের আসলে একেক রকম সমস্যা।

জাদুঘরের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক গ্যালারিতে তখনো যাইনি। তাই একদিকের গ্যালারিগুলো দেখা শেষ করে মধ্যখানের প্যাসেজ পার হয়ে অপর পাশের প্রায়ান্ধকার গ্যালারিতে প্রবেশ করে বিস্ময়ের কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম। এটিকে আদতে গ্যালারি না বলে মুভি থিয়েটার বলা ভালো। নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টোরি অব দ্য ফরেস্ট’। সর্পিলাকার পথে প্রদক্ষিণ করে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়। পুরো সময়টুকুয় মনে হয় যেন গভীর কোনো জঙ্গলের ভেতরে আছি, এখনই হয়তো লাফ দিয়ে কোনো বন্য প্রাণী সামনে চলে আসবে। মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সেই আবহটুকুকে পূর্ণতা দিয়েছে। ওপরে ওঠার পর একটা দরজা পার হয়ে অন্ধকার আরেকটা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে চমকাতে হয়।

পুরান ভারতীয় সিনেমার পোস্টার
পুরান ভারতীয় সিনেমার পোস্টার

গোলাকার কক্ষটির গম্বুজের মতো ছাদ আর চারপাশের দেয়ালে লাখ লাখ জোনাকির আলো জ্বলছে। কখনো সেগুলো চাঁদ–তারকায় বদলে যাচ্ছে, আবার কখনো ভিন্ন কোনো প্রাণীতে, ঠিক যেন ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় দেখা জ্বলজ্বলে শৈবালের সমারোহ। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বদলে গেছে। অনেকটা নভোথিয়েটারের গ্যালারির কাছাকাছি একটা আবহ তৈরি হয়েছে অল্প জায়গাটুকুতে। খুব বেশিদিন হয়নি গ্যালারিটা সংযোজিত হয়েছে জাদুঘরে। কেবল এটুকু দেখার জন্য হলেও এখানে আসা সার্থক। শিশুরা দারুণ মজা পাবে।

এমনিতে বলা যায়, এই জাদুঘরের সংগ্রহ খুব আহামরিগোছের নয়। আমাদের শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে সংগ্রহ এর থেকে ঋদ্ধ। তবে এদের ব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। মোটামুটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখা শেষ। বাইরে বের হয়ে ভাবছিলাম, আমাদের সত্যিই কত কিছু আছে। সঠিক পরিকল্পনা আর অদক্ষ কর্মীদের কারণে আমরা আমাদের ব্র্যান্ডিংটা করতে পারছি না। তবে আমি আশাবাদী। ঐতিহ্যপ্রেমী অথচ সময়ের সঙ্গে থাকা কেউ না কেউ একদিন দায়িত্বে আসবেন। সেদিনই হয়তো আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধিত হবে।
ছবি: লেখক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৪৯
বিজ্ঞাপন