আইসল্যান্ড ওরফে নাইসল্যান্ড ভ্রমণ ৪
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সকালে ঘুম ভাঙার পর প্রথমেই মনে পড়ল গত রাতে জাহাজের ক্যাপ্টেনের বলা সেই কথাগুলো, ‘যাত্রীদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, জুপেভর শহরের লোকসংখ্যা মাত্র ৫০০ আর আমাদের জাহাজে কয়েক হাজার। সুতরাং কাল সকালে আমরা এই শহরের দখল নিতে যাচ্ছি।’

জাহাজে এরকম ক্যাফেতে বসেই সহযাত্রীদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়া যায়
জাহাজে এরকম ক্যাফেতে বসেই সহযাত্রীদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়া যায়

ক্যাপ্টেন কথাগুলো মজার ছলে বলেছিলেন বটে, তবে এটাই কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর কয়েক শ বছরের সাম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাস। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজ, ইতালিয়ান, বেলজিয়ান, ড্যানিশসহ অনেক জাতিই জাহাজ থেকে টুক করে নেমে বুদ্ধিতে-ছলেবলে-কৌশলে-শক্তিতে অন্যদের জায়গা দখল করেই দুনিয়াব্যাপী কলোনি বানিয়েছে। এরপর কয়েক শ বছর ধরে চালিয়েছে নির্মম শাসন ও শোষণ, যার রেশ এখনো অনেক জায়গাতেই দৃশ্যমান। যাহোক, আমার অত হিসাবে কাজ কী? প্রথমবারের মতো আইসল্যান্ড অর্থাৎ নাইসল্যান্ডে ল্যান্ড করতে যাচ্ছি অথবা ক্যাপ্টেনের ভাষ্যমতে দখল করার সুযোগ পাচ্ছি, এতেই আমার এক্সাইটেড হওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

জাহাজ এখন থেমে আছে অর্থাৎ আইসল্যান্ডের জুপেভর শহরের কাছে পৌঁছে গেছে। এই শহরের বন্দরে বড় জাহাজ ডকে নেওয়ার সুবিধা নেই বলে কাছাকাছি কোথাও জাহাজ নোঙর করেছে। এখান থেকে যাত্রীদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে সিরিয়াল অনুসারে টেন্ডার বোটে উঠিয়ে বন্দরের ডকে আনা নেওয়া করা হবে। সারা দিন ধরেই টেন্ডার বোটগুলো চলাচল করবে, তবে বিকেল পাঁচটায় শেষ বোট ডক ছেড়ে যাবে। এটি মিস করলে এখান থেকে আজ আর জাহাজে ওঠা সম্ভব হবে না।

এই টেন্ডার বোটগুলোই জাহাজ থেকে যাত্রীদের বন্দরের ডকে নিয়ে আসে
এই টেন্ডার বোটগুলোই জাহাজ থেকে যাত্রীদের বন্দরের ডকে নিয়ে আসে

একবার ফ্লাইট ডিলে হওয়ায় আমিও অল্পের জন্য ইতালির ভেনিস বন্দর থেকে জাহাজ মিস করেছিলাম। এরপর অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে, ২০ ঘণ্টা জার্নি করে তবেই যাত্রাপথের অন্য এক বন্দরে গিয়ে জাহাজে উঠতে পেরেছিলাম, যা শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক—সবদিক থেকেই এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।

বন্দরের বাইরে নোঙর করলে জাহাজ থেকে নামাটা বেশ ঝামেলার। এখানেও গ্রুপ আর প্রায়োরিটি সিস্টেম। জাহাজ থেকে প্রথমে নামার সুযোগ পায় অনেক পয়সা খরচ করে যারা শোর এসকারশন প্যাকেজ কিনেছে তারা এবং প্রায়োরিটি পাসধারীরা। এরপর নামে জাহাজের নির্ধারিত ডেস্ক থেকে যারা আগে টোকেন নিয়েছে তারা। সবশেষে নামার সুযোগ পায় বাকি যাত্রীরা। তবে বন্দর থেকে জাহাজে ফেরার সময় কোনো নিয়ম নেই। যে যখন ফিরতে চায়, তখনই ফিরতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া যাত্রীদের ভিড় কমে যাওয়ার পর জাহাজে যারা কাজ করে, তবে ওই সময় বিরতি আছে এবং আবেদন করেছে এমন লোকেরা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়। এভাবেই জাহাজে কাজ করা লোকেরা বিনা পয়সায় সারা বছর ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন শহর ও বন্দর দেখার সুযোগ পায়।

আর্কটিক সাগরের মাছ এখানকার বড় প্রাকৃতিক সম্পদ
আর্কটিক সাগরের মাছ এখানকার বড় প্রাকৃতিক সম্পদ

যাহোক, ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে প্রথমে ছয়তলায় গিয়ে টেন্ডার বোটের টোকেন নিলাম। এরপর ব্রেকফাস্টের জন্য বুফে রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাউন্ড দিতেই স্প্যানিশ সহযাত্রী পেড্রো ও আর্জেন্টিনার আলেক্সকে দেখে ওদের টেবিলে বসে পড়লাম। সেদিন জাহাজের শোর এসকারশন প্যাকেজ আমি নেই বলে ভেবেছিলাম রিলাক্স মুডে শহরে গিয়ে আপন মনে এদিক–সেদিক ঘুরে দুপুরের পর জাহাজে ফিরে আসব। ওদের পরিকল্পনা একই রকম শুনে একসঙ্গে যাওয়ার কথাই স্থির হয়। অ্যালেক্স সকালে গিয়েই তিনটা টোকেন নিয়েছে বলে আমিও ব্রেকফাস্টের পর ওদের সঙ্গে নামতে পারব। অর্থাৎ আমার নিজের সিরিয়ালে দশটা বাজত, এখন নয়টার মধ্যেই নামতে পারব। ইন্টারনেটে এই শহরের কিছু খোঁজখবরও পেড্রো নিয়েছে শুনে বাড়তি ভরসা পেলাম।

ধীরেসুস্থে ব্রেকফাস্ট সেরে চা খাওয়ার পর তিনজন টেন্ডার বোটে ওঠার জন্য পাঁচতলায় চলে গেলাম। জাহাজ থেকে নামার জন্য পাঁচতলার মাঝামাঝি বড় গেটে রেলিং দেওয়া কয়েক ফিট লম্বা লোহার প্যাসেজ এবং সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোহার প্যাসেজ ধরে কিছুটা নেমে যাওয়ার পর ডানে ও বাঁয়ে দুই দিকেই দুটি সিঁড়ি নেমে গেছে, এরপরই প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকেই টেন্ডার বোটে ওঠানামা করতে হয়। দুপাশ থেকে দুটি টেন্ডার বোট কাছাকাছি সময়ে ছাড়ে, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য দুটি যাত্রীদের বন্দরে নামিয়ে এখানে ফিরে আসে।

জাহাজে ব্রেকফাস্ট!
জাহাজে ব্রেকফাস্ট!

একবার গুনে দেখেছি, একটি টেন্ডার বোট ৫০ জনের মতো যাত্রী বহন করতে পারে। জাহাজে এ রকম বেশ কয়েকটি টেন্ডার বোট রাখা হয়। সমুদ্রে চলাচলের উপযুক্ত শক্ত ঢালাই করা প্লাস্টিক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি শক্ত আবরণে ঢাকা এসব টেন্ডার বোট ক্রেন দিয়ে জাহাজের ছয়তলায় লম্বালম্বি করে তুলে রাখা হয়।

জুপেভর ছোট শহর। লোকসংখ্যা ৫০০ জনের মতো, যা আমাদের দেশের হিসাবে একটি পাড়া অথবা মহল্লার চেয়েও কম। এই শহরের অর্থনীতি ঐতিহাসিকভাবে মাছ ধরা ও ট্রেডিংয়ে সীমাবদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ক্যাম্প গ্রাউন্ড, দোকান সবই হয়েছে। আরও রয়েছে হেরিটেজ মিউজিয়াম, স্পোর্টস গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল, ভাস্কর্য, সঙ্গে বিস্ময়কর ও ফটোগ্রাফিক আইসল্যান্ডিক ল্যান্ডস্কেপ। বন্দরে নামার পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমাদের শহর ঘোরা শেষ হয়ে যায়। এখানে নতুন কিছু দেখার সুযোগ না থাকায় পেড্রোর পরামর্শে ট্রেকিং রুট ধরে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিই।

আইসল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অফরোড ঘোরাঘুরিতে এধরণের গাড়ি ব্যবহার হয়
আইসল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অফরোড ঘোরাঘুরিতে এধরণের গাড়ি ব্যবহার হয়

আমি অবশ্য শুরুতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে রুটটা সে ঠিকঠাক বুঝেছে কি না। জাতিতে স্প্যানিশ বলে কথাবার্তায় আবেগ–উচ্ছ্বাস বেশি, তার ওপর সেলস নিয়ে কাজ করে, সুতরাং তার কথার তোড়ে আমার সন্দেহ শুরুতেই চাপা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে শহর ছাড়িয়ে, টিলা মাড়িয়ে, মেঠো পথ ধরে আমরা হাঁটতে লাগলাম। আলাপে আলাপে ঘণ্টাখানেক কখন পার হয়ে গেছে বুঝিনি। ল্যান্ডস্কেপ উঁচুনিচু হওয়ায় শহরও আর দেখা যায় না। সামনের হাঁটাপথও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। একসময় রাস্তা দূরে থাকুক, সামান্য হাঁটার দাগ পর্যন্তও উধাও। সামনে বিস্তীর্ণ প্রান্তর আর তারপর বিশাল এক পর্বতমালা। সময়টা সামার হলেও পর্বতের মাথায় কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট সাদা বরফের আস্তরণ দেখতে পেলাম। হায় কপাল, যাকে ভরসা গাইড মানলাম, সেও কিনা শেষে পথ হারাল!

পেড্রো নিজেও কিছুটা বিব্রত হয়েছে বুঝতে পেরে এ নিয়ে আর কথাবার্তা না বাড়িয়ে জিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কথাবার্তা বলেই–বা কী লাভ, সে তো আমাদের পায়ে ধরে নিয়ে আসেনি। নিজের ইচ্ছায় একসঙ্গে এসেছি, এখন একসঙ্গেই ফিরব। পাথরের ওপর বসে জাহাজ থেকে আনা কলা, ডিম, ব্রেড ও পানি খেলাম। এরপর অ্যালেক্সের ইচ্ছায় যে পথে এসেছি, সেই পথে না ফিরে বরং গন্তব্যের দিকটি ঠিক রেখে খোলা মাঠে হেঁটে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেলাম যে এটিও ভুল সিদ্ধান্ত। কেননা, এখানে খোলা মাঠে হাঁটা আর বাসার সোফাসেটের ফোমের ওপর হাঁটা একই কথা। পায়ের নিচে শক্ত মাটি নেই, ছোট ঘন ঘাসের নরম গালিচার ওপর দিয়ে হাঁটার সময় মনে হবে যেন ঘন কাদার ওপর দিয়ে হাঁটছি। আরাম লাগে ঠিক, তবে এতে শক্তি বেশি ক্ষয় হয়।

জুপেভর শহরের টিলায় লেখক, পিছনে জাহাজ
জুপেভর শহরের টিলায় লেখক, পিছনে জাহাজ

যাহোক, ঘণ্টা দেড়েক হাঁটার পর শহরে ফিরলাম। দোকান থেকে একটি চিপস ও সফট ড্রিংক কিনে আমি পাশের বড় টিলায় উঠে পাথরের ওপর বসে ৩৬০ ডিগ্রি ল্যান্ডস্কেপ ভিউ দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পেড্রো খোঁজখবর নিয়ে এসে জানাল যে কাছাকাছি একটি আউটডোর আর্ট স্থাপনা আছে, যেখানে এই অঞ্চলে বাসা বাঁধে এমন প্রজাতির ৩৪টি পাখির ডিমের বড় বড় প্রতিলিপি বা ভাস্কর্য রাখা। চারপাশের ল্যান্ডস্কেপ দেখতে আমার ভালো লাগছিল বলে ওদের এগিয়ে যেতে বলে জানালাম, ঘণ্টাখানেক এখানে বসে আমি জাহাজে ফিরে যাব। মনে মনে অবশ্য বললাম, এক দিনে এক গাইডের সঙ্গে দুবার পথ হারানো মোটেই ভালো কথা নয়!

দুপুরের পরে জাহাজে ফিরে এলাম, এরপর বিশ্রাম অর্থাৎ ভাতঘুম। ছুটিতে এসে বেশি ছোটাছুটি করা আমার মতো ভেতো বাঙালির ঠিক পোষায় না। আমার কাছে ছুটি মানেই কিছু না করে শুয়ে-বসে–খেয়ে দিন কাটানো। এই যেমন সকালে নাশতার পর বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম, এরপর বিকেলের চা-নাশতা সেরে একটু জিরিয়ে রাতের খাবারের পর আবারও ঘুম। অবশ্য আমাদের অনেকের কাছেই ছুটি মানে কিছু না করে বিশ্রাম করা অথচ পশ্চিমাদের কাছে ছুটি মানেই বেশি অ্যাকটিভিটি। অর্থাৎ ছুটিতে এসেও অকারণে পাহাড়–পর্বতে হাঁটার মতো অকাজ করে বেড়ানো। কী আর করার, দেশি বুনিয়াদি শিক্ষা বলে কথা। হাজার মাইল দূরে গেলেও সেটি আমার সঙ্গেই যায়। তাই তো কথায় বলে, আমি যাই যেখানে, আমার কপালও যায় সেখানে!

সন্ধ্যায় আবারও পেড্রোর সঙ্গে দেখা, সঙ্গে মাইকেল ও একজন ভদ্রমহিলা। তারা ডিনারে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। আমাকেও ওদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। যদিও আমার ক্ষুধা তেমন ছিল না, তবু গেলাম। কেননা, ডিনার টেবিলে জম্পেশ আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়। এটিও পশ্চিমাদের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য। আমরা খাবার রান্না করি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়ে অথচ সেই খাবারই হাপুসহুপুস করে গিলে কিছুক্ষণের মধ্যে উঠে পড়ি। আর পশ্চিমারা রান্না করে হুটহাট করে অথচ সেই খাবারই খায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই আমাদের পারিবারিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় যে খাওয়ার সময় কথা বলা ঠিক নয়, যত দ্রুত পারো খেয়ে উঠে যাও।

ডিনারের টেবিলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে ভালো করে পরিচয় হলো। উনি এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, তবে আদতে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। পেশায় চিকিৎসক; মাসখানেক আগে এক হাসপাতাল থেকে অবসর নিয়েছেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই আরেকটি ক্লিনিকে যোগ দেওয়ার অফার পেয়েছেন। মাসখানেকের জন্য ছুটি কাটাতে বের হয়েছেন। ফিরে গিয়ে সেই ক্লিনিকে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। পেশার কথা বলার পরেই ওনার প্রথম কথা, এত বছরের চিকিৎসা পেশায় উনি কখনো কেস খাননি। বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ দেখালে উনি জানান, মার্কিনরা নাকি প্রচণ্ড রকমের মামলাবাজ। সুযোগ পেলেই চিকিৎসকের নামে ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকে দেয়।

স্প্যানিশ সহযাত্রী পেড্রোর সঙ্গে ডিনার টেবিলে লেখক
স্প্যানিশ সহযাত্রী পেড্রোর সঙ্গে ডিনার টেবিলে লেখক

আইন পেশায় যুক্ত অনেকে নাকি ক্ষতিপূরণ পেলে ভাগাভাগি করার শর্তে সেসব মামলা বিনা পয়সাতেই লড়ে দেয়। আর চিকিৎসকেরাও নাকি মামলার ভয়ে আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে তারপর রোগীর চিকিৎসা করে। ওনার নামেও নাকি একবার এক রোগী অভিযোগ করেছিল। তবে শুরুর আগেই উনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে ভুলটি হয়েছিল রোগীর মিথ্যা বলার কারণে। সুতরাং এতে ওনার কোনো দোষ নেই।

পরিবার প্রসঙ্গে উনি বললেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন ডাবল এজেন্ট!’ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে বললেন, ওনার বাবা একসময় দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তবে একই সঙ্গে উনি কোনো এক পরাশক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিজ দেশের তৎকালীন একনায়ক শাসকের পতনের লক্ষ্যে কাজ করতেন। সৌভাগ্য এই যে ওনার এই গোপন কর্মকাণ্ডের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার আগেই উনি সপরিবার দেশত্যাগ করতে পেরেছিলেন।

জুভেপর শহরের বাইরেই পেলাম এই বাড়ি ও খামার
জুভেপর শহরের বাইরেই পেলাম এই বাড়ি ও খামার

আমাদের এই ভদ্রমহিলা সবে ডাক্তারি পাস করে তখন নিজ দেশেই ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। ঠিক সেই সময়েই বিনা নোটিশে সুটকেস গুছিয়ে সপরিবার দেশ ত্যাগ করতে হয়। এরপর আবার নতুন দেশে গিয়ে নতুন করে স্ট্রাগলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হন। তবে তাঁর বাবা নাকি আর কখনোই জন্মভূমিতে ফিরতে পারেননি। আলাপে আলাপে সন্ধ্যাটা বেশ ভালোই কাটল। মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতা ‘কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই, দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।’ (চলবে)

লেখক: কামরুল হাসান সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন