ভ্রমণকে যদি আপনি উপভোগ করতে চান, তবে ট্রেনের কোনো বিকল্প নেই। ট্রেনে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারণ, এই ভ্রমণগুলো এতটাই মনোমুগ্ধকর হয় যে ভ্রমণক্লান্তি যেন ছুঁতে পারে না। ক্লান্তি ছোঁবেই বা কীভাবে, যখন ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে চিরসবুজ হরিয়ালি, নদী, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত কিংবা তারায় তারায় জ্বলজ্বল করা রাতের স্নিগ্ধ আকাশ। মন তো বলেই ওঠে এই পথ যদি না শেষ হয়...! পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এমন কয়েকটি স্থান রয়েছে, যেখানে জীবনে একবার হলেও আপনার ট্রেনভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত। যদি আপনি ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন এই স্থানগুলো।
১. অরোরা উইন্টার ট্রেন, আলাস্কা, যুক্তরাষ্ট্র
যাদের অরোরার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, তাঁদের জন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মে পর্যন্ত রয়েছে এই ট্রেনে ১২ ঘণ্টা ভ্রমণের এবং উত্তরের সেই বিস্ময়কর আলো উপভোগের সুযোগ। এমনকি মাঝেমধ্যে ট্রেন থেকে নেমেও উপভোগ করতে পারেন এই অপার্থিব সৌন্দর্য।
২. জ্যাকোবাইট স্টিম ট্রেন, স্কটল্যান্ড
হ্যারি পটার–ভক্তদের জন্য এই ট্রেনভ্রমণ নিয়ে বাড়তি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তবে স্কটল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জ্যাকোবাইট স্টিম ট্রেন এক অনন্য সুযোগ।
ব্রিটেনের সর্বোচ্চ পর্বত বেন নেভিসের নিকটবর্তী ফোর্ট শুরু করে পশ্চিম উপকূলের ম্যালাইগ পর্যন্ত চলমান এই ট্রেনে অত্যাশ্চর্য উপত্যকা, প্রাচীন গ্রাম ও মনোরম সব দৃশ্য আপনাকে বিস্মিত করতে বাধ্য। এ ছাড়া বিখ্যাত গ্নেনফিনান ভায়াডাক্ট ব্রিজও চোখে পড়বে এই যাত্রায়।
৩. দ্য বেলমন্ড অ্যান্ডিয়ান এক্সপ্লোরার, পেরু
১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় এই ট্রেন ঐতিহাসিক টিটিকাকা হ্রদের তীরে অবস্থিত পুনোর মধ্য দিয়ে এক বা দুই রাতের যাত্রায় কুসকো পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ ট্র্যাক অতিক্রম করে।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম বিলাসবহুল স্লিপার এই ট্রেনটিতে একটি ওপেন ডেক অবজারভেশন কার রয়েছে, যা যাত্রীদের দেয় পিসকো সাওয়ারের মন্ত্রমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগের সুযোগ।
৪. ট্রান্স আলপাইন ট্রেন, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগের একটি অসাধারণ উপায় হলো এই ট্রেনভ্রমণ। জানালা দিয়ে দেখতে পাবেন গভীর গিরিখাত, ব্রিজ আর ছুটে চলা ভেড়ার দল।
এ ছাড়া চোখে পড়বে নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপকে বিভক্ত করেছে এমন সৌন্দর্যকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে পাহাড়ের সারি।
৫. রকি মাউন্টেনিয়ার, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র
এই ট্রেনভ্রমণের মাধ্যমে পাবেন বহমান জলপ্রপাত, সুন্দর কিছু গিরিখাত, হিমবাহ হ্রদ ও সশব্দে বয়ে চলা খরস্রোতা নদীগুলো দেখার সুযোগ। এই ট্রেনের বিশেষত্ব হলো এর জানালাগুলো বসার সিট থেকে ছাদ পর্যন্ত বিস্তৃত।
জ্যাস্পার ন্যাশনাল পার্ক থেকে শুরু করে ট্রেনটি কানাডার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক পর্যন্ত সংযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের উটাহের মোয়াব, কলোরাডোর ডেনভার, লাসভেগাসেও রয়েছে এই ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ।
৬. দ্য ঘান, অস্ট্রেলিয়া
এটি বিশ্বের দীর্ঘতম যাত্রীবাহী ট্রেন। দ্য ঘানে পাবেন অস্ট্রেলিয়ার রেড সেন্টার দিয়ে ভ্রমণের তিন দিনের সুযোগ।
উত্তরে ডারউইন থেকে দক্ষিণে অ্যাডিলেড পর্যন্ত চলতে থাকে এই ট্রেন। এই ট্রেন থেকে যাত্রীরা যাত্রাপথে বেশ কয়েকটি স্থানে নেমে গাইডেড ট্যুর, হেলিকপ্টার যাত্রা, বেশ কিছু গুহা এবং ক্যাথরিন গর্জে ভ্রমণেও যেতে পারেন।
সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট
ছবি: উইকিপিডিয়া ও উইকিমিডিয়া কমনস