ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজা কংসনারায়ণ তাহেরপুরে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এগুলো হলো গোবিন্দ মন্দির, শিবমন্দির, দুর্গামাতা মন্দির ও কালীমন্দির। বর্তমানে জায়গাটি রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভায় অবস্থিত। এখানকার এই মন্দিরে প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন রাজা কংসনারায়ণ। পূজার আদি স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে এখানে এক টন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি ব্রোঞ্জের প্রতিমা ২০১৮ সালে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়। ফলে এই মন্দিরের দুর্গাঠাকুর আর বিসর্জন দেওয়া হয় না।
মা দুর্গার জন্ম স্বর্গে। তবে পৃথিবীতে দেবীর প্রথম আবির্ভাবস্থল রাজশাহীর তাহেরপুর। যে সময় রাবণের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দশরথপুত্র রামচন্দ্র দুর্গার অকালবোধনে পূজা করেন। সেই পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে রাবণবধের বর প্রদান করে দুর্গা। সেই বর পেয়ে রাম লঙ্কারাজ রাবণকে বধ করতে সক্ষম হন।
৮৮৭ বঙ্গাব্দে (১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে) কংসনারায়ণের আহ্বানে পুরোহিত রাজপণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী পূজার সব ব্যবস্থা করেন। এটি ছিল শরৎকালে, আশ্বিন মাসের মহাষষ্ঠী তিথি। এই তিথিতে দেবীর বোধন হয়। মা দুর্গার প্রথম পদধূলিতে ধন্য এই পুণ্যভূমি। এই পুণ্যভূমি থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা।
এর পর থেকে দুর্গাপূজা সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এই পূজা সর্বজনীন দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসব কালের পরিক্রমায় আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণভাবে এখন পালিত হয়। রাজা কংসনারায়ণের তৈরি সেই চার মন্দিরে এখনো পূজা–অর্চনা চলছে; যা দুর্গাপূজার আদি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আসছে।
১৯৬৭ সালে রাজার বংশধরেরা ভারতে চলে গেলে রাজবাড়িসহ সব জমি লিজ নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ। ২০১৩ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবির প্রেক্ষিতে মন্দিরটি খুলে দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ছবি: লেখক