
দ্বীপ-দ্বীপান্তর ঘুরে আমার শেষ গন্তব্য হলো মালে সিটি। মাফুশি আইল্যান্ড থেকে স্পিডবোটে করে অনায়াসে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর যাওয়া যায় রাত ১০টা অবধি। কিন্তু আমার এবার শখ চাপল সরকারি বোট বা ফেরিতে করে যাওয়ার। এমনিতে স্পিডবোটে যেতে সময় লাগে পৌনে এক ঘণ্টা কিন্তু ফেরিতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এই অভিজ্ঞতা অনন্য হবে। ফেরিতে ৫-৬ জন ট্যুরিস্টের সঙ্গে যাচ্ছেন ২০-২৫ জন বাংলাদেশি ভাই। কেউ সিলেট, কেউ কুমিল্লা, কেউ ভোলা থেকে এসেছেন। একেকজন একেক কাজে নিয়োজিত। বেশির ভাগই রং বা রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ করে মালে ফিরে যাচ্ছেন। যাঁরা হোটেলে কাজ করেন তাঁরা কোনো প্রয়োজনে যাচ্ছেন।

ফেরি চলা শুরু হতেই ঘন নীলের রাজত্ব শুরু। একমাত্র ফেরিচালক ছাড়া ফেরির স্টাফ সবাই বাংলাদেশি। ফেরিচালকের নাম ইনফান, বয়স হবে ৬০। চুল সব সাদা হয়ে গেছে।
ফেরির ডেকে গিয়ে দাঁড়ালে বোঝা যায় উত্তাল সমুদ্রের দুরন্তপনা। ডেকের দরজা ধরে না দাঁড়ালে এতক্ষণে উড়েই যেতাম। এই ফেরি আজই ফিরে যাবে দুপুরে। যাওয়ার সময় ফেরি ভর্তি করে নিয়ে যাবে প্রয়োজনীয় ফল, সবজি, ভবন নির্মাণের জিনিস। মাফুশি আইল্যান্ডে এখন নতুন নতুন হোটেল নির্মাণ হচ্ছে।
দুই ঘণ্টা পর ফেরি যখন মূল জেটিতে নামিয়ে দিল, তখন নামার সময় অনেক বাংলাদেশি ভাইয়েরা দোয়া চেয়ে বিদায় নিলেন। সালাম দিলেন। আহা রে প্রবাসজীবন। বেশির ভাগের আবার অবৈধ বাস। এরা কবে যে ঘরে ফিরতে পারবে, কে জানে!
জেটি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে গেলাম। জায়গাটার নাম রোয়াশান মাগু। মালে সিটি অন্যান্য দ্বীপের মতো ছোট নয়, তবে আয়তন ৭ বর্গকিলোমিটার। হোটেল থেকে সব দর্শনীয় স্থান হাঁটাদূরত্বে অবস্থিত। পাঁচতলায় আমার রুম থেকে সোজাসুজি সমুদ্র দেখা যায়। এখন জলের রং গাঢ় নীল।

হোটেল থেকে বের হয়ে খানিক এগোলে একটা জেটি। সারি সারি স্পিডবোট পার্ক করা আছে। দু–একটা যাচ্ছে–আসছে। আর এর পাশেই মূল সড়ক। সড়কে রাজধানীর কায়দায় গাড়ি, মোটরবাইক সব চলছে। পাবলিক বাসও আছে। খুব সুন্দর চকচকে এসি বাস। সড়ক লাগোয়া যে সবুজ উদ্যান, তার নাম ‘জমহুরে ময়দান’। সবুজ ঘাসে ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর চড়ে বেড়াচ্ছে।
জমহুরে ময়দানের পাশেই দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদ আল সুলতান মোহাম্মদ থাকুরুফানু আল আনজুম। এই মসজিদে ইসলামি জ্ঞানচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের আলোচনারও আয়োজন করা হয়।

সবুজ গাছপালায় ছাওয়া মসজিদের বাইরের আঙিনা এখন ধোয়ামোছার কাজ চলছে। বিশাল এই মসজিদের গম্বুজের রং সোনালি আর বাইরের দেয়াল সাদা। মিনার সাদা আর নীলে নকশা কাটা। এরও ওপরে পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে নীল আকাশ। একতলা পুরোটাই ইসলামিক সেন্টার।
আমি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলাম। আর সিঁড়ি পার হতে হতে দেখলাম সবুজে মিশে গেছে জমহুরে ময়দান। এত যত্ন করা হয়েছে সব গাছপালার যে দেখলেই মনে একধরনের মায়া জাগে। দেয়ালের জানালায় ইসলামিক নকশা কাটা কাঠের গ্রিল। ফোকর গলে সবুজ, শ্যামল তরুরাজি উদার হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। মসজিদের মূল নামাজকক্ষও পরিষ্কারের কাজ চলছে। কর্মীরা সবাই একই ইউনিফর্ম পরা। সবুজ শার্ট, কালো প্যান্ট। মেহরাবে রাজসিক কারুকাজ! আবলুস কাঠের ওপর কোরআনের আয়াত লেখা। তিনতলার সিলিং থেকে ঝুলছে বেশ কয়েকটি বড় আকারের ঝাড়বাতি। চারদিকে খোলামেলা থাকার কারণে নামাজ পড়ার জায়গায় এয়ার কন্ডিশনার প্রয়োজন পড়েনি।
দোতলায় পুরুষদের নামাজ পড়ার স্থানে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসিমুখে মেঝে পরিষ্কার করে যাচ্ছিলেন। মসজিদের ভেতরে আমার মাথা ঢাকা ছিল না; কিন্তু আমাকে কিছুই বললেন না। আরও হাসিমুখে এগিয়ে এলেন কথা বলতে। জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই মসজিদে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সাহেব বিনা দ্বিধায় একজন সাধারণ মানুষের মতো এসে নামাজ পড়ে যান।
নারীদের জন্য নামাজের স্থান আছে তিনতলায়। মালদ্বীপের সব মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার জন্য আলাদা জায়গা করে দেওয়া আছে। বাইরে বিশাল বিশাল গাছ মাথা নুইয়ে, পাতা নাড়িয়ে, হাত বাড়িয়ে আমায় ছুঁয়ে যেতে চাইছে।
তিনতলার ভেতরের বারান্দা থেকে মূল নামাজের স্থান আরও ভালোভাবে দেখা যায়। মূলত দেয়ালে কাঠের ওপর কোরআনের আয়াত খোদাইয়ের সৌন্দর্য আরও কাছ থেকে দেখে নেওয়া যায়। এই তলায় নারীরা পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত। একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। ভালোই ইংরেজি জানেন। কী হাসিখুশি চেহারা! এখানেও পর্দা করিনি বলে কিছুই বলল না আমাকে।
এই বিশাল মসজিদ ঘুরে ঘুরে দেখতে বেশ খানিক সময় চলে গেল। সত্যি বলতে কি এত শান্ত, সবুজ আর শান্তির মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে আসতেও ইচ্ছে করছিল না।
মালে শহরের এ জায়গায় পাশাপাশি প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে খানিক হাঁটলে পাশাপাশি ৫-৬ তলা ভবনগুলো এ দেশের সব মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট সাহেবের অফিস। প্রেসিডেন্টের অফিস আর দশটা সাধারণ অফিসের মতোই বহুতল ভবন কিন্তু বাইরে কোনো দেয়াল নেই, নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। খুবই আশ্চর্য হলাম।
ডানে–বাঁয়ে ঘুরে পথের মাঝেই খুঁজে বের করে ফেললাম প্রেসিডেন্ট প্যালেস। প্যালেসের সামনে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। সাদা রঙের এই প্রাসাদকে এ দেশি ভাষায় বলা হয় মুলিয়াগে। বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটি ১৯১৪ সালে নির্মাণ করেছিলেন তৃতীয় সুলতান মোহাম্মদ সামসুদ্দিন। প্রাসাদটি তখনকার সময়ের সিংহলি নকশার অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ অবধি এই ভবন মালদ্বীপের সুলতান ও পরে প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

মরক্কো দেশের একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি আবু বকর ইউসুফ আল বেরবেরি ১১৫৩ সালে এ দেশে আসেন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার করতে থাকেন। তাঁর সমাধি এই প্রেসিডেন্ট প্যালেসের ভেতরে আছে। অবশ্য আমাদের যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই বাইরে থেকেই এই সাদা শরীরের সুদর্শনকে দেখে বিদায় নিতে হবে। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে তালাবদ্ধ এক বাংলো, ভেতরে কেউ নেই। অনুচ্চ সাদা দেয়াল আর দোতলা ভবনের বদ্ধ নীল জানালা যেন মালদ্বীপের নীল সমুদ্র আর সাদা তট। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ভবনটি আকারে আমাদের ঢাকার আহসান মঞ্জিলের চেয়েও ছোট, আড়ম্বরহীন। এ দেশের পথেঘাটে ছেলেমেয়েদের পোশাক-আশাকেও আমি তেমন আড়ম্বর দেখিনি। সাধারণ প্যান্ট আর শার্ট পরে সবাই যে যার কাজে যাচ্ছে। মালদ্বীপে আমার উকিল বন্ধু আসরা বলেছিল যে ওদের অফিসে নাকি ছেলের চেয়ে মেয়ের সংখ্যা বেশি।
প্রেসিডেন্ট প্যালেসের উল্টো দিকে ছোট একটা পার্কের সামনে যে তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে তারা বাংলাদেশি। আমাকে মাফুশি আইল্যান্ড থেকে দেশি ভাইয়েরা বলেছিলেন যে মালে শহরেও আমার ঘুরেফিরে বেড়াতে তেমন অসুবিধা হবে না। কারণ, সবাই ইংরেজি জানে আর প্রতি স্ট্রিটে দেশি ভাই খুঁজে পাওয়া যাবেই।
প্রেসিডেন্ট প্যালেসের ঠিক উল্টো দিকে এ দেশের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ ‘হুকুরু মিসকি’। সুলতান মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ১১৫৩ সালে প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরে ১৬৪৮ সালে সুলতান ইব্রাহিম ইস্কান্দার একই ভবনের ওপর আরেকটু মজবুত মসজিদ নির্মাণ করেন। মালদ্বীপে আমি এখন পর্যন্ত টিনের চালের ঘর দেখিনি। এই মসজিদের চাল টিনের। দেখতে ঠিক আমাদের দেশের টিনের চালের একতলা ঘরের মতো।

মসজিদের বাইরের দেয়াল সাদা মসৃণ প্রবাল দিয়ে তৈরি। প্রবালের গায়ে খুব সুন্দর ফুল–লতা খোদাই করা। বাইরের তাপমাত্রা পুড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু জীবনে প্রথমবার দেখা প্রবালের দেয়ালের কারুকাজ আমার সারা মনে শীতল হাওয়া বইয়ে দিল।
কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে দালানঘেরা বারান্দা। ছাদে, স্তম্ভে কাঠের কারুকাজ।
দেখতে অনেকটাই ভারতের কেরালার মন্দিরের কারুকাজের মতো। বারান্দা পেরোলে মূল মসজিদ। ভেতরে একজন মুসল্লি নামাজ পড়ছেন। আমি ছোট এ মসজিদের ভেতরের ছাদে করা কাঠের নকশা দেখতে চৌকাঠ পেরিয়ে পা দিতেই সেই মুসল্লি রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে। মাছি তাড়ানোর মতো হাত দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলেন নামাজের জায়গা থেকে। ভদ্রলোককে দেখে এদেশীয় বলে মনে হলো না। কারণ, এ দেশের কেউ মসজিদ থেকে কখনোই আমায় তাড়িয়ে দেয়নি, বরং খাতির করেছে। অথচ আমি গিয়েছিলাম পাটাতনের মতো ছাদে কারুকাজ দেখতে। যাহোক বাইরের প্রাঙ্গণে অনেকগুলো পুরোনো কবর।

মরক্কো দেশের একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি আবু বকর ইউসুফ আল বেরবেরি ১১৫৩ সালে এ দেশে আসেন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার করতে থাকেন। তাঁর সমাধি এই প্রাঙ্গণে। সুলতান, বেগমদের কবর দেখতে মসজিদের ছোট সংস্করণ যেন। একই আদলে টিনের চাল আর প্রবালের সাদা দেয়ালে ঘেরা। রাজবংশের অন্যদের কবর আছে সারি সারি। সেসব কবরের মাথায় সমাধিফলকে নানা নকশা খোদাই করা।

মসজিদ দেখে বেরোতেই দুজন বাংলাদেশি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। আমি ডাউনটাউনের রাস্তা খুঁজছিলাম। ভাইয়েরা অলিগলি পার হয়ে কীভাবে যেতে হবে দেখিয়ে দিলেন।
অলিগলিতেই অনেক সুপারশপ আর রেস্তোরাঁ। একটি রেস্তোরাঁর সামনে বাংলায় লেখা ‘এখানে চটপটি, ফুচকা পাওয়া যায়’। আরেকটু সামনে একটা সুপারশপের কাচের দেয়ালে আবার বাংলায় লেখা, ‘এখানে বাংলাদেশি মাছ, মাংস পাওয়া যায়।’ খুব কৌতূহল হলো দেখার আসলে কী মাছ পাওয়া যায়। ভেতরে একজন বাংলাদেশি ভাই মহানন্দে মোবাইলে গেম খেলছে। জিজ্ঞেস করলাম কী কী মাছ পাওয়া যায়। কারণ, মাংস তো আর দেশ থেকে আসে না। রুই বা পাঙাশ মাছ আসলে আসে পাকিস্তান বা ভিয়েতনাম থেকে। দেশ থেকে মাছ আনায় খরচ বেশি।
অলিগলিতে শুধু বাংলাদেশি খাবারের দোকানের ছড়াছড়ি। মালে শহর মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় শহর, আর জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি ভাইয়েরাও কাজ করে বেশি এখানে।
একটা গলির দেয়ালে দেখি কাগজ সাঁটা। যথারীতি বাংলায় লেখা, ‘কফ–থুতু ফেলবেন না, সাইকেলের ওপর বসা নিষেধ।’ লজ্জা পেলাম লেখাটা দেখে। দেয়াল লাগোয়া সারি সারি মোটরবাইক পার্ক করা। আর দেশি ভাইদের সামান্য ইচ্ছা তো জাগতেই পারে অন্য কারও পার্ক করা বাইকে বসে খানিক আড্ডা মারার। সবাই তো আর দেশ থেকে আদবকেতা শিখে আসে না।

মালে শহর আসলেই খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোথাও কোনো ময়লা জমা নেই, কেউ রাস্তায় কিছু ফেলে না, রাস্তায় ধুলোও নেই। চারদিকে অগুনতি বড় গাছপালার ছায়া, এ কারণে রোদ সরাসরি গায়ে আঁচড় কাটছে না।
মূল মার্কেটপ্লেসে এসে দেখি রাস্তার দুপাশে গাছের সারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাজানো-গোছানো দোকান। প্রতিটি দোকানে এয়ার কন্ডিশনার আছে। একই পথ দিয়ে হাঁটতে থাকলে মিলবে একটা বহুতল হাসপাতাল। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও একটিমাত্র ইউনিভার্সিটি। কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলো সব মালে শহরেই অবস্থিত। দ্বীপগুলোতে বাচ্চারা শুধু স্কুল অবধি পড়তে পারে। মালে শহরের প্রতিটি স্কুলের সামনে বড় খেলার মাঠ আছে। আর সবচেয়ে ভালো লাগার ব্যাপার হলো শহরের পিচঢালা পথেও কোনো ময়লা–আবর্জনা পড়ে নেই। এমনকি গাছের পাতাও পড়ে নেই।
মালে শহরের এত নিজস্ব আত্মীয়সম রূপ আমি আর কোনো শহরে দেখিনি। আমি এখন আবার যাব মূল মসজিদের দিকে। সেখানে সুলতান পার্কে বসে বসে পাখির গান শুনব।

সুলতান পার্ক খোলে বিকেল চারটায়। আমাদের ঢাকার বলধা গার্ডেনের সমান সবুজের বাড়াবাড়ি একটা উদ্যান। এর মাঝখানে বিশাল এক কড়ইগাছকে কেন্দ্র করে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক কাচের রেস্তোরাঁ। এক পাশে আবার খোলা, যেন গাছের সঙ্গে নিশ্বাস নিচ্ছে। রোদ মরে আসছে, রেস্তোরাঁর দোতলা থেকে কড়ইয়ের চিরল পাতা দিয়ে হাওয়া নড়াচড়া করে, হালকা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায় দিনভরের যত ক্লান্তি। এ শহরে এলে ক্লান্তি আসে না মনে, বিস্ময় আসে চোখে। এমন সবুজ, সতেজ শহরে সন্ধ্যা নামে জগতের সব শিশিরবিন্দু জমা করতে করতে। একেক শিশির একেক আবেশ জড়ায় চোখের পাতায়, হাতের আঙুলে। শিশির হতে থাকে তখন কোনো বনানীর রাতজাগা স্বপ্ন। (শেষ)