চীনে প্রাপ্তবয়স্কদের প্যাসিফায়ারের জনপ্রিয়তা হুট করে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এরই মধ্যে প্রায় ৬৮ মিলিয়নের বেশি ভিউ পেয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে এই খবর। চীনের একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, টাওবাও-এ একটি প্যাসিফায়ার দশ হাজার ইউনিট বিক্রি হয়েছে, যার দাম মাত্র ১৫.৯০ ইয়েন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা এই প্যাসিফায়ারগুলো কার্যকরী সুবিধার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে দাবী বিশেষজ্ঞদের।বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারীদের মতামত অনুযায়ী, এটি তাঁদের ধূমপান এবং অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি ঘুম বাড়িয়েছে কমিয়েছে দুশ্চিন্তা। এটি নাকি নাকডাকার অভ্যাসেও আনছে পরিবর্তন। এখন নাকডাকার কারণে পাশের ব্যক্তির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে না বলে খুশি তাঁরা।
ডুইইন প্ল্যাটফর্ম চীনের টিকটক নামে পরিচিত। সেখানে এক ব্যক্তি দাবী করেন, এই প্যাসিফায়ার তাঁকে অতিরিক্ত খাওয়া এবং কথা বলার অভ্যাস কমাতে সাহায্য করেছে! প্যাসিফায়ারের ট্রেন্ড শুধু মানসিক স্বস্তি ও দেহের আরাম দিচ্ছে তা-ই নয় , বরং এটি একটি নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডও হয়ে উঠেছে।
এর বিশেষ দিক হচ্ছে প্যাসিফায়ারগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা। আকারে সাধারণত শিশুদের চুষনি প্যাসিফায়ার থেকে বড়। এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও বেশি আরামদায়ক। দেখতে সুন্দর ও ফ্যাশনেবল। অন্তত চায়নার অনেকেই তা মনে করছেন।
তবে এর নেতিবাচক আছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, দীর্ঘসময় ধরে প্যাসিফায়ার ব্যবহার করে দাঁতের ক্ষতি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। বেইজিংয়ের অ্যারোস্পেস সেন্টার হাসপাতালের দন্ত বিশেষজ্ঞ ওয়াং শুয়েলিং-এর বয়ানে , যাঁরা বেশি উদ্বেগ অনুভব করেন, তারা শৈশবে ফিরে যেতে চান তাঁদের অবচেতন মনে। কারণ সেখানে আরাম ও নিরাপত্তা আছে। ফ্রয়েডের ভাষায় একে বলে 'ডিফেন্স মেকানিজম'। এই প্যাসিফায়ার তারই প্রতিফলন। তবে তিনি জানান যে, দীর্ঘকাল এই অভ্যাস চালিয়ে গেলে এটি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতেও পারে। এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন যে, যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কদের আরামদায়ক অভ্যাস হিসেবে প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে এটি শিশুদের মতো স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন নয়। শিশুদের জন্য প্যাসিফায়ার অপরিহার্য হলেও, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি একটি সাইকোলজিক্যাল থেরাপির মতো কাজ করছে, যা উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, তাদের মতে, এটি কখনোই দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে না, এবং যদি এই ধরনের অভ্যাস অত্যধিক হয়ে যায়, তাহলে একজন ব্যক্তি সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য সাহায্য গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এছাড়াও একবার এমন কিছুর অতিরিক্ত অভ্যাস হয়ে গেলে ,তা নেশায় পরিণত হতে সময় লাগে না।বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, চুষনি বা প্যাসিফায়ারের ব্যবহার দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে এটি সামাজিক এবং শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন দাঁতের সারির বিকৃত গঠন। এই ধরনের ব্যবহার শিশুদের জন্য ঠিক আছে। কারণ জন্মের পরে তাদের দাঁত থাকে না। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি অস্বাভাবিক। এজন্যই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
চুষনি বা প্যাসিফায়ার ব্যবহারের একদিক হলো সামাজিক প্রভাব। সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলে অনেক কিছুই রাতারাতি ট্রেন্ডে পরিণত হয়। বড়দের চুষনি বা প্যাসিফায়ার তেমনই এক ট্রেন্ড।প্যাসিফায়ার ব্যবহারের এই নতুন প্রবণতা চীনে বেশ আলোড়ন তুলেছে। মানুষ একে সাদরে গ্রহণ করেছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন বারবার। তাঁদের অভিমত, মানসিক সমস্যায় থেরাপি ও নাকডাকা অনিদ্রার মতো অসুখে যথাযথ চিকিৎসার বিকল্প কিছু হতে পারে না।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট
ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও টিকটক ভিডিওর স্ক্রিনশট