সকালে খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা খারাপ। কারণ, তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সর্বশেষ তাঁর আর আমার দেখা হয়েছিল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে।
তখনো কথা হয়। যখন যেখানেই দেখা হয়েছে, আপাতগম্ভীর এই মানুষ হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবস্থান সবারই জানা। বাংলাদেশের লোকাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও যে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন, সেটা হয়তো সবার জানা না–ও থাকতে পারে। তাঁর ব্র্যান্ড ‘টুয়েলভ’ এরই মধ্যে একটা বড়সড় অনুরাগী শ্রেণি তৈরি করে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ ২০২৩ সালের জুন মাসে। কোরবানির ঈদের ঠিক আগের দিন। তিনি সেদিনও অফিসে ছিলেন। অনেকক্ষণ সময় দিয়েছিলেন। যদিও সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়। কিন্তু তা নিয়ে কোনো দিন কোনো কথা বলেননি। বরং প্রকাশের পর ধন্যবাদ জানাতে কুণ্ঠিত হননি।
তাঁর মৃত্যুর খবরটা পেলাম এবারের কোরবানির ঈদের এক দিন পর। কী অদ্ভুত মৃত্যু! সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ। অথচ কী অবিশ্বাস্য মৃত্যু! তাও ক্যানোয়িং করতে গিয়ে। তিন বন্ধু মিলে চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ নৌকা উল্টে গেলে তিনি আর তাঁর এক বন্ধু ডুবে যান। এক বন্ধু সাঁতরে তীরে ওঠেন।
২০০৯ সালে তিনি টিম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে টিম গ্রুপের ১২টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে আছে ২০ হাজারের বেশি কর্মী। তিনি বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচবার। সর্বশেষ বোর্ডে তিনি ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
টুয়েলভ নিয়ে তাঁর যেমন স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও ছিল বিশেষ ভাবনা। সে সময় কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, স্থানীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে সরকারের উচিত গবেষণা আর মাঠপর্যায়ে কাজ করা। এ জন্য ১০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা করা দরকার।
দারুণ অ্যাগ্রেসিভ পরিকল্পনা ছিল তাঁর টুয়েলভকে নিয়ে। বলেছিলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য দেশের ভেতরে ১২০টি আউটলেট করা। পাশাপাশি দেশের বাইরেও আমি চাই ২০-২৫টি আউটলেট আমাদের থাকুক।’
পরিকল্পনামাফিকই এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই সব কেমন যেন থমকে গেল।
এখন এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরাই হয়তো চেষ্টা করবেন এই স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে। সেটাই হবে তাঁর প্রতি যথার্থ ভালোবাসার প্রতিফলন।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও টিম গ্রুপ